শিশুদের ডায়রিয়ার কারণ, লক্ষণ এবং নিরাময়ের উপায় – Diarrhea In Babies: Causes, Symptoms And Treatment

Written by MomJunction MomJunction
Last Updated on

ডায়রিয়া বাচ্চাদের জন্য খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ছোট্ট শিশু তার সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে, খুব তাড়াতাড়ি দুর্বল বোধ করে। তাকে সুস্থ করে তুলতে সমস্ত প্রচেষ্টা, একটা সময় বৃথা বলে মনে হয়। যখন মায়ের বুকের দুধ পর্যন্ত বাচ্চা হজম করতে পারে না। ঘনঘন পাতলা জলের মতো এবং মিউকাস ভরা মল ত্যাগ করে এই সময় ।

ডায়রিয়া যে কোনও বয়সের বাচ্চাদের হতে পারে। বিশেষ করে দুর্বল শিশুদের জন্য ডায়রিয়া মারাত্মক হতে পারে। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চা যাদের সামগ্রিক স্বাস্থ্য খারাপ তাদের ডায়রিয়া সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি। অপুষ্টি ও সচেতনতার অভাব বাচ্চাদের রুগ্ন ও দুর্বল করে তোলে, তাদের জন্য এই সংক্রমণ মারাত্মক। আমাদের এই প্রতিবেদনে বাচ্চার ডায়রিয়া, তার কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধ এবং কিভাবে ছোট্ট সোনার যত্ন নেবেন এই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আলোচনা করা হল।

বাচ্চাদের মধ্যে ডায়রিয়া কী ?

ডায়রিয়া হল একটি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ। খাবার ও জলের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। শিশু তখন ঘন ঘন খুব পাতলা ও মিউকাস ভরা মল ত্যাগ করে এবং সারাদিনে যদি তিনবার ও তার বেশিবার পাতলা জলের মতো পায়খানা করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (World Health Organization) সেটিকে ডায়রিয়া বলে চিহ্নিত করে (1)। তবে বারবার পায়খানা করা মানেই ডায়রিয়া নয়। বাচ্চারা যদি একাধিক বার পায়খানা করে কিন্তু মল যদি পাতলা না হয়, তা ডায়রিয়া নয়।

সাধারণত এটি একটি ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাল সংক্রমণ। আবার নির্দিষ্ট কোনও খাবারের প্রতি সংবেদনশীলতার কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে।
ডায়রিয়ার প্রকারভেদ – দ্য অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স নিম্নলিখিত ভাগে ডায়রিয়ার তীব্রতার সংজ্ঞা দেয় (2)

অল্প ধরণের ডায়রিয়া

দিনে যদি দুই থেকে পাঁচবার পাতলা জলের মতো পায়খানা হলে এটি অল্প ধরণের ডায়রিয়া ধরা হয়।

মাঝারি ধরণের ডায়রিয়া

সারাদিনে ছয় থেকে নয় বার পাতলা জলের মতো পায়খানা হলে তা মাঝারি ধরণের ডায়রিয়া হিসেবে ধরা হয়।

তীব্র ডায়রিয়া

এটা হঠাৎ শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন স্থায়ী হতে পারে। সারাদিনে দশ ও তার বেশিবার পাতলা জলের মতো পায়খানা হয়।
এছাড়াও ডায়রিয়ার বিভিন্ন উপসর্গ রয়েছে যা বাচ্চাদের মধ্যে দেখা দিতে পারে।

বাচ্চাদের মধ্যে ডায়রিয়ার লক্ষণ

সদ্যোজাত শিশু ঘন ঘন মল ত্যাগ করা স্বাভাবিক, তাতে চিন্তার কিছু নেই। মায়ের বুকের দুধ খেলে বাচ্চার পায়খানা নরম হয়। তবে ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ালে পায়খানা শক্ত হতে পারে।

ডায়রিয়ার উপসর্গ গুলি হল –

  • শিশু স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি ঘন ঘন মল ত্যাগ করে
  • মল পাতলা গন্ধযুক্ত এবং মিউকাসে ভরা হয়
  • জ্বর থাকে এবং বাচ্চার ওজন কমে যাচ্ছে বলেও মনে হয়
  • সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে এবং খিদে পায় না
  • ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন চোখ বসে যাওয়া, মুখগহ্বর শুকনো হয়ে যায়, গাঢ় হলুদ প্রস্রাব এবং কাঁদার সময় চোখে জল না আসা। শরীরে জলের পরিমান কমে যাওয়া
  • জ্বর আসা ও বমি হওয়া।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া হওয়ার কারণ

১. পেট বা অন্ত্রের সংক্রমণ

পাচনতন্ত্রে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে বাচ্চাদের মধ্যে ডায়রিয়া হতে পারে। খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। অনেক বাচ্চা আছে বার বার মুখে হাত ঢোকায়, ফলে হাতে লেগে থাকা নোংরা ও জীবাণু লালার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ফলস্বরূপ ডায়রিয়া সংক্রমণ হয়। তখন উপসর্গ হিসেব দেখা দেয় বমি ভাব, জ্বর, পেটে ব্যথা ও যন্ত্রণা। এই ভাইরাসগুলির মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল রোটাভাইরাস, ক্যালিসিভাইরাস, এডিনোভাইরাস, অ্যাস্ট্রোভাইরাস এবং এইফ্লুয়েঞ্জা।

  • রোটাভাইরাস

বেশিভাগ সময় রোটাভাইরাস সদ্যোজাতর পাচনতন্ত্রকে সংক্রমিত করে, পরবর্তীকালে তা ডায়রিয়ার রূপ নেয় (3) । WHO এর মতে রোটাভাইরাসের সংক্রমণ শিশু মৃত্যুর অত্যতম কারণ, তবে টিকাদানের মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা সম্ভব (4)

  • এডিনো ভাইরাস

একাধিক ভাইরাস সম্মিলিত এডিনোভাইরাস শরীরের বিভিন্ন অংশকে সংক্রমিত করে। হাঁচি, কাশির মাধ্যমে এবং সংক্রমিত ব্যাক্তির সংস্পর্শে এলে খুব সহজেই ছড়ায় এই ভাইরাস ।

  • সালমোনেলা

এই ব্যাকটেরিয়া পেট ও অন্ত্রকে প্রভাবিত করে এবং ডায়রিয়া মারাত্মক আকার নেয় (5)। দূষিত খাবার, জল এবং সংস্পর্শের মাধ্যমে ইনফেকশন ছড়ায়। যে সমস্ত বাচ্চাদের মুখে নানা জিনিসপত্র ভরে নেওয়ার স্বভাব, তাদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।

ই. কোলাই ( Escherichia coli বা E. coli)

এটি তীব্র পেটে ব্যথা এবং ডায়রিয়ার কারণ। অনেক সময় তা রক্তযুক্ত মল সহ গুরুত্বর ডায়রিয়ার আকার নেয় (6)। দূষিত খাবার এবং অপরিষ্কার জিনিসের থেকে এই ব্যাকটেরিয়া ছড়ায়।

  • প্যারাসাইটিক ইফেকশন

মাইক্রোস্কোপিক পরজীবী দ্বারা এই সংক্রমণ ছড়ায়। পরজীবী জাতীয় প্রাণীরাও ডায়রিয়া ঘটাতে পারে। দূষিত জল এবং খাবার থেকে এটি ছড়ায় (7) (8)

২. খাবারে অ্যালার্জি

বাচ্চাদের অনেকসময় বিশেষ কোনও খাবারে অ্যালার্জি থাকে। নির্দিষ্ট কোনও খাবার তাদের সহ্য হয় না। বাচ্চারা সেই খাবার হজম করতে পারে না। ফলস্বরূপ গ্যাস, পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া এবং রক্তযুক্ত মল ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।

৩. খাদ্য অসহিষ্ণুতা

অ্যালার্জির থেকে এটি আলাদা। খাদ্য অসহিষ্ণুতা হল সেই ধরনের প্রতিক্রিয়া যা ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে জড়িত নয়। এই ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা নামেও পরিচিত। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা এনজাইম ল্যাকটোজের কম উৎপাদন দ্বারা সৃষ্টি হয়। লক্ষণগুলি হল ডায়রিয়া, পেট ফাঁপা, পেটে ব্যাথা এবং গ্যাস।

৪. ফলের রস

ফলের রস পুষ্টিকর উপাদান সমৃদ্ধ ঠিকই কিন্তু অনেক সময় তা বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে। বাচ্চাকে ফলের রস দেওয়ার আগে অবশ্যই হাইজিনের কথা মাথায় রাখা দরকার, নয়তো ডায়রিয়া হতে পারে (9)। দ্য অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স এক বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের ফলের রস না খাওয়ানোর পরামর্শ দেয় (10) । সেক্ষেত্রে গোটা ফল অনেক বেশি উপকারী, ফাইবার সমৃদ্ধ এবং তা বাচ্চাদের পুষ্টি জোগায়।

৫. অতিরিক্ত তাপমাত্রা

বাচ্চারা অতিরিক্ত তাপ সহ্য করতে পারে না। গরমকালে বাচ্চার ডায়রিয়ার ঝুঁকি বাড়ে। প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা দেখা দেয়, শরীরে জলের মাত্রা কমতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তা ডায়রিয়ার আকার নেয় (11)। তাই এইসময় ওদের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন। বাচ্চাকে যতটা সম্ভব ঠান্ডা অথবা মাঝারি তাপমাত্রায় রাখুন এবং প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ান।

৬. অ্যান্টিবায়োটিক

বাচ্চাদের যখন অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়ার পর ডায়রিয়া হয়, ওষুধগুলি ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সাথে অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়াগুলোকেও মেরে ফেলে (12)। তাতে বাচ্চার শরীর আরও দুর্বল হয়ে পরে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

শিশুর বয়স ৩ মাসের কম হলে এবং ডায়রিয়া হলে অবশ্যই দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি শিশুর বয়স ৩ মাসের বেশি হয় এবং ২৪ ঘণ্টায় অবস্থার উন্নতি না হয় তাহলে ডাক্তারের কাছে যান। নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিলে অবশ্যই আপনার বাচ্চার চিকিৎসার সাহায্য প্রয়োজন –

  • ঘন ঘন বমি
  • কয়েক ঘণ্টার ৩-৪ বার জলের মতো পাতলা পায়খানা
  • ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ যেমন শুকনো মুখগহ্বর, অশ্রু ছাড়াই কাঁদতে থাকা, চোখ বসে যাওয়া। পুরো ৬ ঘণ্টায় একটাও ন্যাপি না ভেজা, মাথার সামনের দিকের অংশ (মাথার নরম জায়গা) বসে যাওয়া
  • হাত ও পা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া
  • ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বর
  • দুধ, জল বা অন্য কোনও তরল খাবার খেতে না চাওয়া
  • মলে রক্ত থাকা
  • পেট ফুলে যাওয়া

ডায়রিয়ার পাশাপাশি জ্বর না কমলে অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যান।

৩ মাসের কম বয়সী বাচ্চার ডায়রিয়া হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসার সাহায্য নেওয়ার পরামর্শ দেয় দ্য আ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (13)

বাচ্চাদের মধ্যে ডায়রিয়ার চিকিৎসা

শিশুর ডায়রিয়া প্রায়শই হয়ে থাকে। অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হতে এবং ডায়রিয়ার পর্ব শেষ হতে বেশ কয়েকদিন সময় লেগে যায়। তবে আপনাকে যে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে তা হল, শিশু যাতে ডিহাইড্রেটেড না হয়। ডায়রিয়ার সবচেয়ে বিপদজনক দিক হল ডিহাইড্রেশন এবং সময় মতো এর চিকিৎসা না করালে তা মারাত্মক হতে পারে। ডায়রিয়া চিকিৎসার প্রথম পদক্ষেপ হল শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া তরল প্রতিস্থাপন করা।

বাচ্চাদের ডায়রিয়ার জন্য ওষুধ

ডায়রিয়ার পিছনে কারণ নির্ণয় করার পর তবেই একজন ডাক্তার চিকিৎসা শুরু করে। শারীরিক সমস্যার উপর নির্ভর করে কী ওষুধ প্রয়োজন তাই দেওয়া হয়, সবার ক্ষেত্রে তা এক নাও হতে পারে। ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে ডায়রিয়া হলে সাধারণত ডাক্তাররা অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার পরামর্শ দেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে থেকে কোনও ওষুধ বাচ্চাদের না দেওয়ায় ভালো, নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। শিশুর যে কোনও সমস্যা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন (14)

বাচ্চাদের ডায়রিয়া প্রতিকারের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

সহজ কিছু ঘরোয়া উপায় নিচে উল্লেখ করা হল যা ডায়রিয়া প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য সাহায্য করতে পারে।

১. প্রচুর পরিমাণে পানীয়

ছোটো বাচ্চাদের দুধ বা ফর্মূলা মিল্ক খাওয়াতে পারেন, যদি বমি না করে। একটু বড় বাচ্চাদের জল, ইলেক্ট্রোলাইট দ্রবণ বা ORS (Oral Rehydration Solution) অল্প অল্প করে বার বার দেওয়া যেতে পারে। ডাবের জলও দিতে পারেন, এটি ইলেক্ট্রোলাইটের সমৃদ্ধ। তবে মায়ের বুকের দুধ এইসময় অনেক বেশি নিরাপদ। ৬ মাসের ছোটো বাচ্চাদের ডায়রিয়া হলে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানোর পরমর্শ দেয় দ্য আ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (15)

২. অল্প পরিমাণে ঘরের খাবার

ডায়রিয়া খুব তাড়াতাড়ি শিশুদের দুর্বল করে তোলে। তাই শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছে দিতে সঠিক খাবার খাওয়ানো খুব জরুরি। একদম ছোটো বাচ্চা যা কেবলমাত্র মায়ের বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল তাদের ঘন ঘন দুধ খাওয়াতে বলা হয়ে থাকে । আর যাদের বয়স একটু বেশি তাদের ঘরে তৈরি হালকা খাবার ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে।

·৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা :

খাওয়াদাওয়ার পাশাপাশি শিশুকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিয়মমত ডায়পার বদলানো, ভালো করে সাবান জল দিয়ে বাচ্চার নিচের অংশ পরিষ্কার করা, শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে তবেই নতুন ডায়পার পড়ানো ইত্যাদি । প্রয়োজনে ডায়পার পড়ানোর আগে ক্রিম বা পাওডার দিয়ে দিতে পারে। নয়তো ডাইপার জন্য র‍্যাশের সমস্যা দেখা দিতে পারে (16)

ডায়রিয়া হলে বাচ্চাকে কী খাওয়াবেন

মায়ের বুকের দুধ বাচ্চার জন্য সবথেকে নিরাপদ। কোনও রকম সংক্রমণ হলে ডাক্তারেরাও শিশুকে স্তন্যপান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফর্মুলা মিল্কও দিতে পারেন, সেক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো (17)। আর বাচ্চার বয়স ৬ মাসের বেশি হলে এগুলো খাওয়াতে পারেন –

  • কলা – ডায়রিয়ার কারণে শিশুর শরীর দুর্বল হয়ে পরে। কলাতে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন এ ও বি৬ থাকে যা শিশুর শরীরে পুষ্টি জোগায়।
  • সেদ্ধ আলু – এইসময় বাচ্চারা মুখের স্বাদ হারিয়ে ফেলে। আলু সেদ্ধ করে সামান্য নুন দিয়ে মেখে দিতে পারেন, তাতে ওরা খেতে পছন্দও করবে এবং তা শরীরের জন্যও ভালো।
  • আদা – পাচনতন্ত্রের জন্য আদা উপকারী। সামান্য আদার রস, একটু দারুচিনি গুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো এবং এক চামচ মধু একসঙ্গে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন, এটি ডায়রিয়ায় খুব ভালো কাজ দেয়।
  • মুড়ি – মুড়ি ভেজানো জল এইসময় খুব ভালো কাজ দেয়। এক বাটি মুড়ি একগ্লাস জলে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ডায়রিয়া থেকে উপশম পেতে ঘন ঘন বাচ্চাকে মুড়ি ভেজানো জল খাওয়ান। মুড়ি প্রায় সবার ঘরেই থাকে, এটি খুব সহজে হজমও হয়।
  • আপেল – ভালো করে জলে ধুয়ে আপেল সিদ্ধ করে খাওয়াতে পারেন। সহজে হজম হয় এবং শরীরে প্রযোজনীয় শক্তি সরবরাহ করে।
  • দই – ডায়রিয়া হলে দই অন্যতম উপকারী খাবার। বাড়ির তৈরি দই শিশুর পাচনতন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া ফিরে পাওয়ার জন্য উপকারী।
  • সবজি সেদ্ধ – যেমন গাজর, বিটরুট সেদ্ধ করে বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন। গাজরের রস করেও খাওয়াতে পারেন। শিশুর হারিয়ে যাওয়া শক্তি ফিরিয়ে দিতে গাজর খুব গুরুত্বপূর্ণ।

যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন

  • গরুর দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য যেমন চিজ়, বাটার।
  • দুধ এবং বেশি মিষ্টিজাত খাবার যেমন, পেস্ট্রি, ক্রিম বিস্কুট ইত্যাদি এড়িয়ে চলা ভালো।
  • ফলের রস
  • ফল ও সবজি যেগুলো থেকে গ্যাস ও পেট ব্যাথার সম্ভাবনা থাকে। যেমন, মটর, ছোলা, সবুজ শাকসবজি, ব্রকলি।

বাচ্চাদের ডায়রিয়া প্রতিরোধ

বাচ্চাদের থেকে সব ধরণের সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা খুব জরুরি। বাচ্চার পরিচর্যায় স্বাস্থ্যবিধি সম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করলে ওদের ডায়রিয়া হওয়া রোধ করতে পারবেন।

  • শিশুর চারপাশের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখুন

মুখে হাত ঢোকানো, কুঁড়িয়ে খাওয়া এবং হাতের কাছে যা পেল মুখে ভরে নেওয়া এমন স্বভাব অনেক বাচ্চার থাকে। যা থেকে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে, ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে। তাই বাচ্চার চারপাশ এবং খেলনা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা খুব জরুরি। পাশাপাশি কিছু সময় অন্তর অন্তর বাচ্চার হাত ধুয়ে দিন।

  • শুধুই পুষ্টিকর নয়, বাচ্চাকে সুস্বাস্থ্যকর ভাবে প্রস্তুত খাবার দিন

শিশুকে পরিষ্কার এবং যথাযথভাবে রান্না করা খাবার দিন। ফ্রিজে রাখা খাবার বাচ্চাদের না দেওয়াই ভালো কারণ এর থেকে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে। অবশ্যই বাচ্চাকে পরিশোধিত বা ফোটানো জল খাওয়ান।

  • পরিবারের সকলের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি

বাচ্চাকে নেওয়ার আগে অবশ্যই ভালো করে হাত পরিষ্কার করে নিন। তাতে আপনার থেকে শিশুর মধ্যে জীবাণু সংক্রমণ রোধ করতে পারবেন।

আশা করি, এই প্রবন্ধে উল্লেখিত তথ্যগুলি আপনাদের শিশুদের ডায়রিয়া সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।

আপনার ছোট্ট সোনার যত্ন নিন ও নিজেও সুস্থ থাকুন।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী :

  • বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের কি ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে?

উঃ হ্যাঁ, বুকের দুধ খাওয়ানো বাচ্চাদের ডায়রিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটায় কম থাকে। গরুর দুধ বা ফর্মুলা মিল্ক খাওয়ালে সবসময়ই রোগজীবাণু বহন করার ভয় থাকে। দুধ, নিপল এবং বোতলের সঙ্গে অথবা দুধ তৈরিতে ব্যবহৃত জলের মাধ্যমে জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার সম্ভাবনা থাকে। তখনই বাচ্চারা ঘন ঘন অসুস্থ হয়। এক বছরের ছোটো বাচ্চাকে গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত নয়, তাতে একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফর্মুলা মিল্ক খাওয়াতে পারেন। তবে বাচ্চার জন্য মায়ের বুকের দুধের কোনও বিকল্প হয় নয়, ডাক্তাররাও তাই প্রথম ৬ মাস বাচ্চাকে কেবলমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। বুকের দুধ খেলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়াও বুকের দুধ খাওয়া বাচ্চার মধ্যে ডায়রিয়া খুব কম সময় স্থায়ী হয়। বুকের দুধে বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে যা জীবাণুর সংক্রমণ রোধ করে এবং শিশুর শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

  • বাচ্চার ডায়রিয়া হলে কি শক্ত খাবার বন্ধ করা উচিত?

উঃ ডায়রিয়া হলেও বাচ্চাকে শক্ত খাবার দিতে পারেন। যে সব বাচ্চারা নিজের হাতে খেতে শিখেছে বা টেবিলে খাওয়া শুরু করেছে, তাদের শক্ত খাবার দেওয়া যেতে পারে। ডায়রিয়ায় যেহেতু বাচ্চার শরীর খুব দুর্বল হয়ে যায়, তাই ওদের জরুরি স্বাস্থ্যকর খাবার। অতি সুষম আহার ওদের শরীরে পুষ্টি উপাদানগুলি ফিরিয়ে এনে বাচ্চাকে সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষমতা জোগাবে। খুব কম সময়েই ডায়রিয়া রোধ করতে পারবে। এইসময় বাচ্চাকে ভাত, রুটি, দই, ফল ও সবজির মতো খাবার প্রতিদিন ঘন ঘন সামান্য পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে।

References

1. Diarrhoeal disease By WHO
2.Diarrhea By healthychildren.org
3.Rotavirus By KidsHealth
4.Rotavirus By WHO
5.Salmonella Infections By healthychildren.org
6.Escherichia Coli in Diarrheal Disease By NCBI
7.Giardiasis By KidsHealth
8. Food poisoning By MAYO CLINIC
9. Fruit Juice in Infants, Children, and Adolescents: Current Recommendations By PEDIATRICS
10. AAP Recommends No Fruit Juice for Children Under 1 Year By healthychildren.org
11. Antibiotic-associated diarrhea By AboutKidsHealth
12. Diarrhea in Babies By healthychildren.org
13. How to Treat Diarrhea in Infants and Young Children By FDA
14. Diarrhea in infants By MedilinePlus
15. Treating Dehydration with Electrolyte Solution By healthychildren.org
16. Use of Soy Protein-Based Formulas in Infant Feeding By PEDIATRICS
17. When your child has diarrhea By MedilinePlus

 

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Latest Articles