একজন ভালো বাবা হতে চান ? জানুন কী কী গুণ থাকা উচিত
বাচ্চাদের জন্য একজন বাবা ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ ? গবেষণা থেকে জানা যায় যে, একটি শিশুর সুস্থতা, শিক্ষা, আচরণ এবং মানসিক শক্তি সবই নির্ভর করে তার বাবা তাকে মানুষ করার পিছনে কতটা জড়িত ।
একজন ‘প্রকৃত’ বাবা হওয়ার পিছনে কোন কোন গুণগুলি থাকা প্রয়োজন ? আপনি জানেন কি ? আমরা আপনাকে একটি ভাল বাবা হওয়ার সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি বুঝতে ও আপনি কীভাবে আপনার বাচ্চার সাথে তাদের জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হতে পারেন তা জানাবো।
একজন প্রকৃত বাবা হওয়ার বৈশিষ্ট্য
১. তিনি সংরক্ষণশীল
একজন ভাল বাবা তার সন্তানকে যে কোনো ব্যাপারে তার কতটা সীমা বুঝতে সাহায্য করে। সন্তানের কী পছন্দ এই নিয়ে কথা বলেন তার সাথে ও তাকে গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করে। তার কোনটা আগ্রহ বিবেচনা করেন এবং সচেতনতা ব্যাপারটা কি বা কখন কোনো ব্যাপারে সচেতন হতে হবে তা বুঝতে শেখান । তিনি তার বাচ্চার কোনো ভুল পছন্দ সম্পর্কে তাকে সতর্ক করেন।
২. স্নেহশীল
একজন প্রকৃত বাবা তার সন্তানদের প্রতি স্নেহশীল হন । যদিও তিনি মায়ের মতো সন্তানকে জড়িয়ে ধরেন না বা চুমু দেন না , তবুও তার স্নেহ কিন্তু কোনো অংশে মায়ের চেয়ে কম নয়। তিনি বাচ্চাকে বুঝতে দেন যে সে তার উপর নির্ভর করতে পারে।
৩. ভরসা ও সুরক্ষার স্থান
বাচ্চারা বিশ্বাস করে যে, তাদের বাবা সর্বদা সঠিক। তিনি কখনও তাদের কাছে মিথ্যা বলবেন না, তিনি তাদের সাথে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না । সেই বিশ্বাসই একজন সন্তানের মধ্যে একজন ভাল বাবা তৈরি করে। বাচ্চারা জানে যে তার বাবার কাছে সে যখনই কোনও সাহায্য চাইবে বা যখনই সে কোনও সমস্যায় পড়বে তিনি সর্বদা থাকবেন ।
৪. উৎসাহ দিন
আপনি কি জানেন আপনি আপনার বাচ্চাদের উৎসাহ দেওয়ার মূল ব্যক্তি। কোনও ফুটবল ম্যাচ বা তর্ক বিতর্ক যাই হোক না কেন, সেই জায়গাতে আপনার উপস্থিতি আপনার সন্তানের আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তোলে। তারা সফল হওয়ার পরে আপনি সবচেয়ে বেশি সুখী হন এবং যদি ব্যর্থ হয় তবে আপনিই তাকে আরও ভাল করার চেষ্টা করতে বলেন।
৫. কথা শোনার ধৈর্য্য রয়েছে
একজন ভালো বাবা তাদের বাচ্চার কথা শোনার জন্য সময় দেন । তিনি তার সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে জিনিস গুলো বোঝার চেষ্টা করেন।
৬. জীবনের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে শেখান
বাবা তার বাচ্চাকে সুন্দর জীবন দান করার জন্য দায়বদ্ধ। মাথার ওপর ছাদ, খাবার, শিক্ষা, ভালোবাসা ও সুরক্ষা দিয়ে নিজের সন্তানকে আগলে রাখতে চান।
৭. সন্তানের মাকে শ্রদ্ধা
বাচ্চারা যখন তাদের বাবা-মাকে এক সাথে কাজ করতে দেখে তখন তারা বেশ খুশি হয় । একজন প্রকৃত বাবা তার সন্তানকে শেখায় যে কীভাবে তার মাকে শ্রদ্ধা করতে হবে এবং তার পাশাপাশি তিনি নিজেও তার সঙ্গীকে শ্রদ্ধা করেন ও সঠিক মর্যাদা দেন। তিনি তার সঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করেন এবং বাচ্চাদের সামনে তার সাথে তর্ক করেন না। এটি সন্তানের ওপর খুব সুন্দর একটি প্রভাব সৃষ্টি করে এবং সন্তান বুঝতে শেখে যে তার উভয়কে সমানভাবে সম্মান করা প্রয়োজন।
কীভাবে আপনি আপনার সন্তানের সাথে তার জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যুক্ত হতে পারেন?
সন্তান বড় হওয়ার সাথে সাথে একজন বাবার ভূমিকাও তার জীবনে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে থাকে এবং তার পাশাপাশি ভূমিকারও পরিবর্তন হয়।
১. স্ত্রীয়ের প্রেগন্যান্সির সময় – যত্নশীল স্বামী
এই সময় আপনার স্ত্রী তার জীবনে একটি বড় পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তার শরীর ও মন পরিবর্তন হতে প্রস্তুত হলেও আপনার স্ত্রী আপনাকে পাশে চাইবে।
আপনার স্ত্রীর সাথে ডাক্তারের কাছে যান, তাঁকে কখনোই একা যেতে দেবেন না এবং আপনার যদি কিছু প্রশ্ন থাকে, তবে তা জিজ্ঞাসা করুন। আপনার সঙ্গীর যত্ন নিন, তাকে পুষ্টিকর খাবার বানিয়ে দিন , তাকে বিশ্রাম দিন এবং বাড়িতে একটি আনন্দময় পরিবেশ তৈরি করুন। গর্ভাবস্থা এবং বাচ্চার জন্ম সম্পর্কে পড়ুন ও জানুন । আপনার অনাগত সন্তানের সাথে কথা বলুন এবং তার নড়াচড়া অনুভব করুন। বাচ্চা আপনাদের জীবনে আসার পরে দায়িত্বগুলি ভাগ করে নেওয়ার বিষয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করুন।
২.আপনার শিশুর প্রথম দিনগুলিতে – নতুন জিনিস শেখার সময়
সদ্যজাত শিশু বাড়িতে আসার পর নতুন বাবারা ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করেন তাদের জীবনেও পরিবর্তন আসছে । তারা বুঝতে পারেন যে তারা আগের চেয়ে কম ঘুমাচ্ছে, সঙ্গীর সঙ্গে কম সময় কাটাতে পারছেন। আপনার শিশুর প্রতি অনুভূতি আসতে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
পরিবারের সাথে সময় কাটান এবং এখন বাবা হওয়ার জন্য পিতৃত্বের ছুটি পাওয়া যায় জানেন কি ? পারলে তা নিন। আপনার শিশুর প্রতি আগ্রহী হোন, তার সাথে থাকার সময়টি উপভোগ করুন। কীভাবে আপনার সন্তানকে ডায়াপার পরানো হয়, স্নান করানো হয় তা দেখুন ও শিখুন। আপনার সন্তান মাতৃদুগ্ধ পান করার সময় আপনার স্ত্রী ও সন্তানের পাশে থাকুন। আপনার সঙ্গীকে প্রসবের পরে তাকে নানা কাজে সহায়তা করুন।
৩. বাচ্চা বড়ো হচ্ছে ধীরে ধীরে- তখন আপনি শিক্ষক
এই সময়টি খুব তাড়াতাড়ি পেরিয়ে যায় , মনে হয় এই তো সেদিন আপনি ওকে কোলে করে বাড়িতে নিয়ে এলেন বা সেদিন হাঁটতে শিখলো। এই সময় বাচ্চাকে চোখে চোখে রাখবেন। তাদের সবকিছুতেই জানার খুব আগ্রহ থাকে , তাই তাকে নতুন জিনিস শিখতে বা জানতে সাহায্য করুন।
৪. বাচ্চা যখন স্কুলে যাবে – দায়িত্ব বাড়ছে
শিশু স্কুলে যেতে শুরু করেছে মানে আপনার দায়িত্ব অনেকটাই বেড়ে গেলো। আপনাকে তার পড়াশোনাতে সহায়তা করতে হবে। সকালে স্কুলের জন্য তাকে প্রস্তুত করুন। আপনার বাচ্চাকে বাড়ির ছোট্ট ছোট্ট কাজ করতে শেখান। যেমন রাতের খাবার টেবিলটি সেট করতে শেখাতেই পারেন। আপনার বাচ্চার বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে পারেন তাতে আপনার সন্তান আপনার সাথে বন্ধুর মতো মেশার চেষ্টা করবে ।
৫. বয়সঃসন্ধিকাল – তাদের স্বাধীনতা দেওয়ার সময়
এই সময় বাচ্চাদের স্বাধীনতা দেওয়া প্রয়োজন। সারাক্ষণ তাদের পিছনে লেগে থাকবেন না, তারা এই সময় মোটেই পছন্দ করবে না যে আপনি তার বিষয়ে বেশি আগ্রহী। তবে এর অর্থ এই নয় যে আপনি তাদের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব থেকে সরে আসুন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তাদের কথা বোঝার চেষ্টা করুন আর আপনি আপনার নিজের এইসময় ঠিক কীভাবে কাটিয়েছিলেন, সেটাও ভাবুন।
এরপর আপনার সন্তান ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে কলেজ যাবে, বিভিন্ন মানুষের সাথে মিশবে। এই সময় তাদের প্রয়োজন ভালো বন্ধুর। অযথা শাসন করবেন না। বন্ধুর মতো করে তার সমস্যা শুনুন এবং তাকে গাইড করুন।
উপরে উল্লেখিত টিপসগুলি পড়ে কি উপলদ্ধি করলেন যে আপনার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যগুলি কি আছে না নেই ? যদি না থাকে তবে অবশ্যই চেষ্টা করুন যে সেগুলি মানার। কারণ আপনার ভাবমূর্তি আপনার সন্তানের ওপর পড়তে বাধ্য।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.