4 মাস বয়সী শিশুর ক্রিয়াকলাপ, বিকাশ এবং যত্ন । Four Month Baby Development In Bengali

Written by Aastha Sirohi linkedin_iconfacebook_iconinsta_icon Experience: 3 years
Last Updated on

সন্তান জন্মের পর মুহূর্ত থেকেই প্রত্যেক মা-বাবার জীবনেই এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। জীবনের অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত হয় সন্তান প্রতিপালনের গুরু দায়িত্ব। শিশুর জন্মের পর থেকেই সময়ের সাথে সাথে তার শারীরিক, মানসিক বিকাশ পরিলক্ষিত হয়। আর এই বিকাশের সময় স্বাভাবিক ভাবেই শিশুর মা-বাবা তার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই সময় প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রেই অত্যন্ত যত্ন সহকারে পরিচর্যার প্রয়োজন হয়, যার ফলাফল তার জীবনের পরবর্তী সময়েও সুস্পষ্টভাবে পাওয়া যায়। এই প্রবন্ধে দুই মাস বয়সী শিশুদের শারীরিক, মানসিক বিকাশ এবং তাদের পরিচর্যার পদ্ধতি সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হয়। আশা করা যায় আলচিত তথ্য এবং বিষয়াদি প্রত্যেক পাঠক তথা মায়েদের ব্যবহারিক জীবনে সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে সহায়তা করবে।

২ মাস বয়সে  একজন শিশুর ওজন এবং উচ্চতা কত হওয়া উচিৎ?

ইতিমধ্যে শিশুর বয়স ২ মাস হয়ে গেছে। এই সময় একজন শিশুকন্যার স্বাভাবিক ওজন ৪.১ কিগ্রা থেকে ৫.৬ কিগ্রা এবং উচ্চতা বা দৈর্ঘ্য ৫৭.১৫ সেন্টিমিটার হওয়া উচিৎ। একই বয়সী একজন শিশুপুত্রের ক্ষেত্রে ওজন ৪.৫ – ৬.১ কিগ্রা এবং উচ্চতা ৫৮ সেন্টিমিটার হওয়া উচিৎ। (1)

পুনশ্চ- আপনার শিশুর বয়স অনুযাই উচ্চতা এবং ওজন সঠিক আছে কিনা জানার জন্য অবশ্যই একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিৎ।

২ মাস বয়সী শিশুর বিকাশের মাপকাঠি কী হওয়া উচিৎ –

এই বয়সে একজন শিশুর শারীরিক, মানসিক এবং আবেগ সংক্রান্ত বিষয়গুলি অনেক স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আলোচ্য প্রবন্ধে এই সবকটি বিষয়েই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

মানসিক বিকাশ –

১। মুখের দিকে গুরুত্ব সহকারে তাকানো ২ মাস বয়সী শিশুরা তার আসেপাশে থাকা মানুষের মুখের দিকে বিশেষ নজর দেয়। এবং সামাণ্য পরিচিত কোনো চেহারা আসেপাশে না দেখতে পেলে সেটা খোঁজার চেষ্টা করে। (2)

২। কন্ঠস্বর বা গলার আওয়াজ শোনাএকটি ২ মাসের শিশু যখন তার আসপাশ থেকে কোনো কন্ঠস্বর শোনে তখন স্বাভাবিক ভাবেই তার মনোযোগ ঐ শব্দের উৎসের প্রতি চলে যায়। কোথা থেকে ঐ শব্দ আসছে শিশু সেটা খোঁজার চেষ্টা করে।

৩। ভিন্ন গলার স্বর এবং ভঙ্গিমায় কান্না এই সময় যে কোনো শিশুরই ভাব প্রকাশের ভাষা মূলত হাসি এবং কান্না হয়। কোনোরকম শারীরিক অস্বস্তি, খিদে-তেষ্টা বা  যাবতীয় অপছন্দের প্রকাশ শিশু ভিন্ন স্বরে কান্নার মাধ্যমে করে থাকে। নিজের অনুভূতি গুলির সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্যই শিশুরা এমনটা করে থাকে বলে মনে করা হয়। (3)

৪। দূর থেকে মানুষজন কে দেখে সনাক্ত করা একজন ২ মাস বয়সী শিশু মানসিকভাবে এতোটাই বিকশিত হয়ে ওঠে যে সে তার আসেপাশের মানুষজনকে দূর থেকে দেখেও সহজে চিনে ফেলে।

শারীরিক বিকাশ –

১। পেশীর গঠন শক্তিশালী মাস বয়সী শিশুর ঘাড়ের পেশি কিছুটা হলেও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। তবে এতোটাও শক্তিশালী নয় যে শিশুকে কোলে বা বিছানায় বসিয়ে রাখলে সে ঘাড় – মাথা সোজা করে বসতে পারবে। (4)

২। মাথা উঁচু করতে পারে এই সময় শিশুর অন্যান্য সব শারীরিক বিকাশের মধ্যে অন্যতম একটি হলো মাথা উঁচু করতে পারা। ২ মাসের একটি শিশুকে শুইয়ে রাখলে তখন সে মাথা উঁচু করার চেষ্টা করে। প্রায় ৪৫ ডিগ্রী পর্যন্ত মাথা উঁচু করতে পারে এই সময় শিশুরা। (5)

৩। শরীর ওপরে তোলার চেষ্টা ২ মাস বয়সী শিশুর কাঁধের পেশি বেশ কিছুটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই সময় শিশুদের শুইয়ে রাখলে সে তার দুই হাতের সাহায্যে শরীর ওপরে তলার চেষ্টা করে।

৪। গতিশীল জিনিস এবং মানুষ দেখে যদি কেউ শিশুর চারপাশে ঘুরে বেড়ায় অথবা কোনো কিছু কেঁপে ওঠে তাহলে সে ঐ জিনিস দেখতে পায়। উদাহরণ দিয়ে বললে, যদি কোনো ব্যক্তি, শিশুর সামনে দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায় তাহলে শিশু ঐ ব্যক্তির চলে যাওয়া ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে পারে এবং যতদূর পর্যন্ত দেখা সম্ভব সে দেখতে থাকে। (6)

৫। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নিয়ন্ত্রন ২ মাস বয়সী শিশুর নিজের হাত এবং পায়ের ওপর নিয়ন্ত্রন চলে আসে। যখন কোনো শিশু হাওয়ার অভিমুখে জোরে হাত পা নাড়তে পারে সেটা দেখেই শিশুর হাত পায়ের প্রতি নিয়ন্ত্রন সম্পর্কে জানা যায়।

৬। উন্নত দৃষ্টি শক্তি এই সময় থেকে শিশুর দৃষ্টি শক্তি উন্নত হতে শুরু করে। জিনিস পত্রের ওপর পূর্ববর্তী সময়ের থেকে ভালোভাবে নজর দিতে শিশু এই সময়। সেভাবে দেখলে একজন ২ মাস বয়সী শিশু একটা গতিশীল বস্তুর ওপর নজর রাখতে পারে।

সামাজিক এবং আবেগ অনুভূতির বিকাশ –

১। হাসি প্রত্যেক মা বাবা তার সন্তানের হাসি মুখ দেখতে চায়। শিশুর ২ মাস বয়স থেকেই তার মুখে হাসি দেখতে পাওয়া যায়। এই বয়স থেকেই বিভিন্ন সময়ে শিশুকে হাসতে দেখা যায়।

২। কন্ঠস্বরে প্রতিক্রিয়া আপনি ২ মাস বয়সী শিশুর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে দেখতে পাবেন আপনার কথার জবাবে গলায় নানারকম অস্পষ্ট আওয়াজ করেও সে তার ভাব প্রকাশ করার চেষ্টা করছে।

৩। কিছু সময়ের জন্য শান্ত ২ মাস বয়সী শিশুরা কাঁদার সময় মুখের মধ্যে নিজের হাত ঢুকিয়ে ফেলে। এতে করে কিছু সময়ের জন্য হলেও সে চুপ করে যায়। এরফলে ঐ শিশুর জন্য একটা আরামদায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

৪। পছন্দ মাফিক খেলনা না পেলে কান্না ২ মাসের শিশুর মধ্যে তাদের খেলনার প্রতি আকর্ষন তৈরী হতে শুরু করে। কখনও কখনও পছন্দের খেলনা না পেলে শিশুটি কাঁদতে শুরু করে দেয়। এই সময় শিশুদের এমন আচরণ খুবই গুরুত্ব পূর্ণ একটি ঘটনা।

২ মাস বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে কোন কোন টীকাকরণ করা জরুরী-

একটি ২ মাস বয়সী শিশু শারীরিক ভাবে খুবই দুর্বল প্রকৃতির হয়। সহজেই রোগ জীবানুর সংক্রমনে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকে এই সময় শিশুদের। তবে রোগ জীবানু সংক্রমন থেকে শরীরকে সুস্থ্য রাখার জন্য শিশুদের জন্য বিভিন্ন টীকাকরণের প্রয়োজন। কোন সময়ে কোন টীকা করণ জরুরী তা জানার জন্য শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। শিশুর জন্মের পর ষষ্ঠ থেকে নবম সপ্তাহের মধ্যে যে যে টীকা গুলি একজন শিশুর গ্রহণ করা জরুরী সেগুলি হলো যথাক্রমে – (7)

  •  ডি ট্যাপ টীকা ( ডিফথেরিয়া, টিটেনাস, এসিটুলার পারটাসি প্রভৃতি সংক্রমন প্রতিরোধক টীকা)
  • এইচআইবি টীকা ( হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা টাইপ বি)
  • আইপিবি ১ (পোলিও টীকা)
  • পিসিবি (নিউমোকেক্যাল) টীকা
  • আরবি (রোটা ভাইরাস ভ্যাকসিন মাসিক টীকা)
  • এইচভিবি (হেপাটাইটিস বি টীকা, যদি আগে দেওয়া না হয়ে থাকে।)

২ মাসের শিশুদের জন্য কতটা দুধ পান করা জরুরী –

জন্মের পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত শিশুদের পাচনতন্ত্র দুর্বল প্রকৃতির হয়। সেইজন্য এই সময় শিশুদের প্রধাণত মায়ের দুধ খাওয়ানোই দরকার। তবে পরিস্থিতি ভেদে শিশুদের ফর্মূলা ১ দুধ পান করানো জরুরী হয়ে পরে। এখানে এই দুইরকম দুধের ব্যাপারেই আলোচনা করা হচ্ছে।

  • স্তনপান – ১-২ মাসের শিশুদের প্রতিদিন ৭-৯ বার স্তনপান করানো যেতে পারে। দৈনিক মোট ৭৫০-৮০০ গ্রাম দুধ এই বয়সের একজন শিশু পান করতে পারে। (8)
  • ফর্মূলা দুধ – শিশু দৈনিক ৭৩৯ মিলিলিটার-৮৮৭ মিলিলিটার ফর্মূলা দুধ পান করতে পারে। (9)

২ মাসের শিশুদের দৈনিক কতক্ষণ সময় ঘুমের প্রয়োজন –

২ মাস বয়সী শিশুরা একবারে ৬-৮ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারে। এইভাবে শিশুরা প্রতিদিন ১৫-২০ ঘন্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারে। আর একবারে ১-৩ ঘন্টা পর্যন্ত জেগে থাকতে পারে। (10)

২ মাস বয়সী শিশুদের খেলাধূলা এবং শারীরিক ক্রিয়াকলাপ –

১। শিশুর সাথে কথা বলা জন্মের পর সপ্তম – অষ্টম সপ্তাহ বয়স থেকে শিশুরা গলা থেকে নানা রকম স্বর বের করতে শুরু করে। এই সময় আপনি তাদের সাথে যত বেশি কথা বলবেন খেলা করবেন, তত দ্রুত গতিতে সে কথা বলা শিখে যাবে।

২। গলা জড়িয়ে আদর শিশুদের কে কোলে নিয়ে গলা জড়িয়ে ধরাকে আলিঙ্গন করা বা কার্ডলিং বলে। যত বেশি করে শিশুদের কোলে নিয়ে গলা জড়িয়ে আদর করা হবে বাবা-মা এর প্রতি শিশুর ভালোবাসা এবং বিশ্বাস জন্মাবে।

৩। পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুর করে শুইয়ে রাখা শিশুকে পেটের ওপর ভর দিয়ে বিছানায় উপুর করে শুইয়ে রাখুন এবং খেলা করতে দিন। এতে করে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশের প্রক্রিয়াটি নির্বিঘ্নে চলতে থাকবে। একইসাথে এইভাবে শুইয়ে রাখার ফলে শিশুর ঘাড় এবং কাঁধের পেশি শক্তিশালী হয়ে উঠবে। (11)

৪। গল্প বলা২ মাস বয়সের শিশুকে আপনি গল্প শোনাতে পারেন অথবা তাকে রঙ বেরঙের ছবির বই দেখাতে পারেন। এই ধরণের কাজের ফলে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ত্বরান্বিত হয়। অবশ্য এই গল্প বা ছবি কোনো কিছুই তার পক্ষে মনে রাখা সম্ভব নয় তবুও গল্প শুনলে বা ছবি দেখলে সে শান্ত ভাবে ঘুমোতে পারবে এবং মনটাও হাসি খুশি থাকবে।

৫। পরিবারের সকলের সাথে পরিচিতি শিশুটি যখন জেগে থাকে সেই সময় পরিবারের সকল সদস্য তার সাথে কথা বলা বা গল্প করা ও খেলা করা উচিৎ। এইভাবে শিশুটি পরিবারের সকলের সাথে পরিচিত হতে পারবে।

৬। মালিশ করা শিশুর পরিচর্যার জন্য মালিশের খুব প্রয়োজন। এই মালিশের একাধিক উপকারিতা রয়েছে যেমন ওজন বৃদ্ধি, হজম শক্তি বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখা, হাল্কা চোট আঘাতজনিত ব্যথা কমানো ইত্যাদি। শিশুদের মালিশের জন্য তেল বা শিশুদের ত্বকের উপযোগী ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। এই মালিশ করার সময়ও আপনি শিশুর সাথে কথা বলতে পারেন।

২ মাস বয়সের শিশুদের মা-বাবার সাধারণ স্বাস্থ্য চিন্তা –

যে কোনো কারণে আপনার শিশু হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই আপনার কাছে একটা অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরী হয়ে যায়। অসুস্থ্য শিশুদের সামলানোও বেশ কঠিন হয়ে যায়। শিশুরা যাতে সহজে অসুস্থ্য হয়ে না পড়ে সেইজন্য মা-বাবা কে খুবই সচেতনভাবে সন্তানের যত্ন নিতে হয়। এখানে শিশুদের সাধারণ কয়েকটা শারীরিক সমস্যা এবং সেই সমস্যার উপশমকারী চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।

১। ত্বকের সমস্যা শিশুদের ত্বক খুবই নরম হয়। এই সময়ে তাদের ত্বকের বিশের যত্ন গ্রহণ করা জরুরী। তা নাহলে ত্বকে নানারকম সমস্যা দেখা যেতে পারে। এখানে বেশ কয়েকটি ত্বকের সমস্যা এবং তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। (12)

  • ডায়পার র‍্যাশ বা ফুসকুরি – দীর্ঘ সময় ধরে ভেজা অপরিষ্কার ডায়পার অথবা ন্যাকড়া পরে থাকার ফলে শিশুদের এই ধরণের ত্বকের সমস্যা দেখা যায়। এই ধরণের ফুসকুরি শিশুদের যৌনাঙ্গ এবং এবং নিতম্বের চারিদিকে দেখা যায়। সাধারণত লাল বর্ণের হয় ফুসকুড়িগুলি।
  • চিকিৎসা পদ্ধতি – একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর শিশুদের ডায়পার বদল করতে থাকুন। ডায়পার বদলের সময় শিশুদের ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে এবং ত্বকে বেবি পাওডার বা ময়েশ্চারাইজার লাগানো দরকার। তবে দিনের কিছুটা সময় শিশুদের ডায়পার ছাড়া রাখা দরকার তাতে ত্বক বাতাসের আর্দ্রতার সংস্পর্শে আসতে পারে।
  • হিট র‍্যাশ বা উত্তাপের ফলে ঘামাচি – রোম কূপ বন্ধ হয়ে গেলে ঘাম ত্বকের নীচে আটকে থাকে। যা ত্বকে ঘামাচি জন্ম দেয়। সাধারণত গ্রীষ্মকালেই এমনটা হয়। শিশুর শরীরে ছোটো ছোটো, লাল রঙের, তরল পূর্ণ ফোস্কা আকারে এই ঘামাচি বা র‍্যাশ দেখা যায়।
  • চিকিৎসা পদ্ধতি – গ্রীষ্মকালে শিশুদের শরীর থেকে অতিরিক্ত পোষাক খুলে ফেলুন। শিশুদের জন্য হালকা, নরম, ঢিলে ঢালা আরামদায়ক পোষাক ব্যবহার করুন। ত্বকের এইসব সমস্যা থেকে শিশুদের সাবধানে রাখার জন্য গ্রীষ্মকালে তাদের ঠাণ্ডা এবং আরামদায়ক পরিবেশে রাখা দরকার। এছাড়াও গরমের সময় ত্বকের সমস্যা থেকে শিশুদের দূরে রাখতে হলে বেবি পাওডার ব্যবহার করুন।
  • এগজিমা- এটি এক ধরণের ত্বকের সংক্রমন। সাধারণত শুষ্ক, ঘন, মরমরে ছাল যুক্ত ছোট লাল গোলাকারে আবির্ভূত হয়। এই ধরণের ত্বকের সমস্যা শিশুদের কপাল, গাল, বা মাথার ত্বকে দেখতে পাওয়া যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নাহলে ত্বকের এই সংক্রমন শিশুদের হাত, পা, বুক এবং শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পরে।
  • চিকিৎসা পদ্ধতি – এই ধরণের ত্বকের সমস্যায় অবিলম্বে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা দরকার। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন। আর ত্বকের সময়ার ক্ষেত্রে শিশুদের পাতলা, নরম, এবং ঢিলেঢালা জামা পড়ানো দরকার।

২। কাশির সমস্যা কাশির ফলে গলা এবং শ্বাসনালী পথ পরিষ্কার থাকে একথা ঠিকই। কিন্তু শিশুদের ক্ষেত্রে কাশি যদি সহজেই না কমে সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা জরুরী।

মাস বয়সী শিশুর দর্শনেন্দ্রিয়, শ্রবণেন্দ্রিয় এবং অন্যান্য ইন্দ্রিয়  (13)

  •  আমার সন্তান কী দেখতে পায়?

২ মাস বয়সী শিশুরা কাছের জিনিস এবং আসেপাশের মানুষজনকে স্থির ভাবে দেখতে পায়।

  • আমার সন্তান কী শুনতে পায়?

গর্ভাবস্থা থেকেই শিশুরা বাইরের আওয়াজ শুনতে পায়। ঐ সময় থেকে একইভাবে তারা নিজেদের প্রতিক্রিয়াও জানাতে পারে। জন্মের পরেও তারা আসেপাশের আওয়াজে প্রতিক্রিয়া জানায়। শুধু তাই নয় শিশুরা আওয়াজের উৎস সন্ধান করার চেষ্টাও করে।

  • আমার সন্তান কী স্বাদ গন্ধ চিনতে পারে?

২ মাস বয়সের শিশুরা স্বাদ গন্ধ অনুভব করতে পারে। একইসাথে সে তেঁতো এবং মিষ্টি স্বাদ সনাক্ত করতেও পারে। মুখে কোনো তেঁতো জিনিস দিলে সে কাঁদতে শুরু করে। একইভাবে কোনো সুগন্ধ তার নাকে এলে সে বেশ খুশি হয়ে যায়। আর খারাপ গন্ধ পেলে বিরক্তি প্রকাশ করে।

শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিশেষ নজর দেওয়া দরকার-

প্রত্যেক মা – বাবা চায় তাদের সন্তান সুস্থ্য সবল হোক। শিশুদের সুস্বাস্থ্য গঠনের জন্য তাদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

১। শিশুর মুখ এবং মাথা পরিষ্কার করা আপনার সন্তানকে প্রতিদিন স্নানের পরিবর্তে একদিন অন্তর স্নান করাতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে প্রতিদিন শিশুর মাথা, মুখ এবং শরীর ঈষদোষ্ণ গরম জলে ভেজা নরম পাতলা কাপড়ের সাহায্যে পরিষ্কার করতে হবে। সাবানের ব্যবহার করা এই সময় খুব একটা জরুরী নয়।

২। নখ প্রতিদিন শিশুর নখ পরিষ্কার করা উচিৎ এবং একটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর শিশুদের নখ কাটা দরকার। অনেক সময়ই নখের মধ্যে ময়লা ঢুকে থাকে এবং সেই ময়লা যুক্ত নখওলা আঙুল শিশু মুখে দিলে শরীরের মধ্যে ময়লা প্রবেশ করার একটা সম্ভবনা তৈরী হয়। এছাড়াও নখের দৈর্ঘ্য বড় হয়ে গেলে তা দিয়ে শিশু নিজের অজান্তেই শরীরের ক্ষতি করতে পারে। শিশুদের নখ কাটার জন্য নির্মিত যন্ত্রের সাহায্যেই শিশুদের নখ কাটা উচিৎ। (14)

৩। গর্ভনালিকা এই নালিকা পরিষ্কার করার জন্য গরম হলে তুলো ভিজিয়ে এবং সেই তুলো থেকে অতিরিক্ত জল বের করে নিতে হবে। এরপরে ধীরে ধীরে প্লাসেন্টা এবং তার পার্শ্ববর্তী ত্বক পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারের কাজ সম্পন্ন হলে পরিষ্কার এবং শুকনো কাপড় দিয়ে সংশ্লিষ্ট স্থান মুছে নিতে হবে। মনে রাখবেন গর্ভ নালিকা যতক্ষণ স্বাভাবিক ভাবে অপসারিত হচ্ছে নিয়মিত এই নালিকা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা দরকার।  (15)

৪। যৌনাঙ্গের যত্ন আপনার সন্তানের ন্যাপির পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। নির্দিষ্ট সময় অতর ন্যাপি বদল করা জরুরী। তা নাহলে ভিজে ন্যাপি ত্বকের সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে ত্বকে সংক্রমন হওয়ার সম্ভবনা দেখা যায়। এছাড়াও শিশুর যৌনাঙ্গের পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা দরকার।

শিশু সন্তানের বিকাশে মা – বাবার ভূমিকা –

এখানে এমন কতকগুলি বিষয়ে আলোচনা করা হবে প্রত্যেক মা – বাবার ঐ বিষয় গুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ। মা –বাবার গৃহীত পদক্ষেপ গুলি শিশুর বিকাশে সহায়তা করে –

১। শিশুকে উপুর করে শুইয়ে রাখুন শিশুকে চিৎ করে শুইয়ে রাখলে তার কাঁধ, ঘাড় এবং হাতের পেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা তাই শিশুর শারীরিক বিকাশের কথা ভেবে এই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। দিনের বেশ কিছুটা সময় এইভাবে শিশুদের শুইয়ে রাখা দরকার। দিনে ৫ মিনিট করে অন্তত তিনবার এই ভঙ্গিমায় শিশুদের শুইয়ে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। (16) (17)

২। শিশুর সাথে খেলা করুন শিশুদের সাথে এমন খেলা খেলুন যাতে সে কোন দিক থেকে আওয়াজ আসছে এবং দূরে দেখা যাচ্ছে এমন বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে। এই ধরণের খেলায় শিশুদের সর্বাঙ্গীন বিকাশ সাধিত হয়।

৩। শিশুর সাথে সময় কাটান শিশুর সাথে কিছুটা সময় অতিবাহিত করুন। শিশুর সাথে কথা বলুন দেখবেন সে আপনার কথা শুনে নিজের মতন করে সাড়া দিচ্ছে। এইভাবে শিশুর শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি মানসিক বিকাশ হতেও দেখা যায়।

২ মাস বয়সী শিশুর মা – বাবার কখন তাদের সন্তানের বিকাশ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিৎ –

ইউএসএ সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যাণ্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) অনুসারে, শিশুর মধ্যে নিন্মলিখিত উ[পসর্গ গুলি দেখতে পাওয়া গেলে অবিলম্বে শিশুওরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শজ গ্রহণ করা উচিৎ। (18)

  •  শিশুকে পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুর করে শুইয়ে রাখাকালীন সময়ে সে যদি মাথা তোলার চেষ্টা না করে।
  •  শিশু নিজের মুখ পর্যন্ত হাত নিয়ে যেতে না পারলে বা কোনোরকম অসুবিধা হলে।
  •  চলন্ত বস্তু দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া না করলে।
  •  এমনকি কারোর গলার স্বর শুনতে পেলেও কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালে

বয়সের শিশুদের পরিচর্যার জন্য অবশ্য পালনীয় কিছু কার্যকলাপ

  • আপনার শিশুর বয়স ২ মাস পূর্ণ হলে প্রথমেই তাকে একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চেকআপের জন্য নিয়ে যান।
  • আপনার শিশু যদি স্তনপান করে তাহলে চিকিৎসকের থেকে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণের ব্যাপারে জেনে নিতে হবে।
  • এই মাসে ইতিমধ্যে যেসব টীকাকরণ করা হয়েছে তার একটি তালিকা প্রস্তুত করুন এবং বিগত মাসের নির্ধারিত টীকা গ্রহণের তালিকা থেকে যেগুলি বাদ পরে গেছে তার একটি তালিকা তৈরী করুন।
  • শিশুর ঘাড় এবং হাতের পেশির শক্তি বৃদ্ধি হচ্ছে কিনা জানার জন্য নিয়মিত শিশুকে পেটের ওপর ভর দিয়ে উপুড় করে একটা নির্দিষ্ট সময় শুইয়ে রাখুন।
  • সব থেকে জরুরী কাজ হলো আপনার ২ মাস বয়সী শিশুর অবশ্যই একটা সুন্দর ছবি তুলুন।

২ মাস বয়সী শিশু ফুলের মতন কোমল হয়। এইসময় তার খুবই যত্ন এবং সঠিক পরিচর্যার দরকার। এই প্রবন্ধ থেকে মা – বাবা তাদের ২ মাসের শিশুর সঠিক প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি পেয়ে উপকৃত হবেন বলে মনে করা হয়।

প্রায়শই জিজ্ঞাস্য প্রশ্নাবলী

আমি কী আমার সন্তানকে কাপড় জড়িয়ে রাখতে পারি?

উঃহ্যাঁ, শিশুকে পরিষ্কার কাপড় জড়িয়ে রাখা যায়। এটি শিশুকে ভালোভাবে ঘুমোতে সাহায্য করে। যদি শিশুর বয়স ২ মাস অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে বেশি আঁটোসাঁটো করে শিশুকে কাপড় জড়িয়ে রাখবেন না। (19)

আমার ২ মাস বয়সী সন্তানের জন্য সারারাত ধরে ঘুমোনো কী ঠিক?

উঃ ন্যাশানাল স্লিপ ফাউণ্ডেশানের মতানুসারে ৩ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুরা দৈনিক ১৪ – ১৫ ঘন্টা সময় ঘুমোয়। একজন সুস্থ্য শিশু রাতে ৭ – ৯ ঘন্টা ঘুমায় এমনকি দিনের বেলাতেও সে বেশ কিছুটা সময় ঘুমোতে পারে। (20)

২ মাস বয়সী শিশু কী রঙ দেখতে পায়?

উঃহ্যাঁ, এই বয়সের শিশুরা রঙ দেখতে পায়। বিশেষ করে, তারা উজ্জ্বল গাঢ় রঙ তাদের কে আকৃষ্ট করে তোলে।  (21)

References

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Aastha Sirohi
Aastha SirohiBeauty & Lifestyle Writer
Aastha Sirohi is a beauty and lifestyle content writer with over three years of experience in writing for different genres. She has a master’s degree in English Literature from The English And Foreign Languages University and a bachelor’s degree in education from the University of Mysore.

Read full bio of Aastha Sirohi
Latest Articles