শিশু মনোবিজ্ঞান
In This Article
মনোবিজ্ঞান বা মনোবিদ্যা নিয়ে যাঁরা পড়াশুনা বা চর্চা করে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে থাকেন তাঁদেরকে মনোবিজ্ঞানী বলা হয়। এই মনোবিজ্ঞানীদের নানা ধরণের কাজের মধ্যে একটি অন্যতম কাজের বিভাগ হল শিশু মনোবিজ্ঞান বা শিশু মনোবিদ্যা।
শিশু মনোবিজ্ঞানীরা শিশুদের মনস্তত্ত্ব নিয়ে কাজ করে থাকেন – যেমন স্কুলে পড়াশুনা করা শিশুদের মন এবং রোজকার জীবনের আনাগোনা নিয়ে তাদের সাথে কথাবার্তা বলা বা এমন কিছু শিশু যাদের কিছু বিশেষ মানসিক বিকাশ জড়িত সমস্যা দেখা যায়, তাদেরকে কিভাবে স্বাভাবিক জীবনে চলনসই করে তোলা যায়, তা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে তাদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলা। এই প্রবন্ধে আমরা শিশু মনোবিদ্যা নিয়ে বিস্তারিতভাবে আপনার জন্যে কিছু তথ্য প্রকাশ করতে চাই।
শিশু মনোবিজ্ঞান বা শিশু মনোবিদ্যা কি?
মনোবিজ্ঞানের একটি অন্যতম ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে পড়ে শিশু মনোবিজ্ঞান। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করার পর থেকে প্রাপ্ত বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত তার মানসিক, সামাজিক, শিক্ষাগত ও বিকাশ জড়িত যা যা পরিবর্তন ও অভিজ্ঞতা জীবনের প্রতিটা মুহূর্তে লাভ করে থাকে, সেটিই হল শিশু মনোবিজ্ঞান বা শিশু মনোবিদ্যা।
এই ধরণের পরিবর্তন বা অভিজ্ঞতা একটি শিশুর মধ্যে বিশেষ করে তিনটি বয়স সীমানার মধ্যে ঘটে থাকে- প্রথমটি হল ১ থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে, দ্বিতীয়টি হল ৩ থেকে ৭ বছর বয়সের মধ্যে ও তৃতীয়টি হল ৭ থেকে তারুণ্যের মধ্যে। শিশুরা বেড়ে ওঠার সময় নানা ধরণের সামাজিক অভিজ্ঞতা অর্জন করে ও তার সাথে তাদের খুব দ্রুত কিছু শারীরিক পরিবর্তনও ঘটে থাকে। এর ফলে তার মানসিক বিকাশের মধ্যেও ছাপ পড়ে।
শিশু মনোবিজ্ঞান এই সবকটি বিষিয়ের ওপর লক্ষ্য রাখে ও একটি শিশু যাতে বেড়ে ওঠার সময় তার এই নানা ধরণের পরিবর্তন ও অভিজ্ঞতাগুলিকে খুব স্বাভাবিক ও ইতিবাচকভাবে নিজের জোবনে কাজে লাগাতে পারে তার দিকেও খেয়াল রাখে।
বিশ্ব বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েডের মতে, একটি শিশু যখন জন্মায় তখন তার মতি গতির ধরণ থাকে একেবারেই স্বার্থপর ও ঔদ্ধত্যে ভরপুর। যত সে দিনে দিনে বড় হয়, সে বাস্তবের সাথে তার অভিভাবকদের দ্বারা পরিচিত হয় যার ফলে তার ঔদ্ধত্য ও স্বার্থ থেকে বেরিয়ে এসে সে সামাজিক সংস্কার, রীতি, ও নীতিগুলি বুঝে নিজের আদর্শ তৈরী করতে সক্ষম হয়।
একটি শিশুর মানসিক বিকাশের পেছনে তার অভিভাবকের ভূমিকা অপরিসীম। অভিভাবকত্ব কাউকে শিখে বা পড়ে করতে হয়না, এটি এমন একটি প্রাকৃতিক ভূমিকা যা স্বাভাবিকভাবেই তার শিশুর প্রতি স্নেহপরায়ণ ও মানসিক শক্তি অর্জন করার একটি মাধ্যম। শিশু কি পছন্দ করে বা না করে, তাকে কি কি ভাল জিনিস শেখাতে হয় বা কোন কোন খারাপ জিনিসগুলি ত্যাগ করতে হয়, কিভাবে তার মনের জোড় বাড়াতে হয়, ইত্যাদি সবকিছুই একজন অভিভাবক হিসাবে আপনি নিশ্চই করে থাকেন। এই সমস্ত ভূমিকাগুলি শিশু মনোবিজ্ঞানের ওপর ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
শিশু মনোবিজ্ঞানীরা শিশুদের স্বাভাবিক গতিবিধি যেমন সামাজিক জীবনে পরস্পরের সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুস্থ সম্পর্ক গড়ে তোলা, বড়োদের সম্মান করা, নিজের ভাল মন্দ সঠিকভাবে বুঝতে পারা, পড়াশুনা বা অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগী হওয়া, মনের মধ্যে কোনো দ্বিধা বা ভয় থাকলে তা নিজের অভিভাবক বা শিক্ষককের কাছে খোলাখুলি বলা, ইত্যাদি জিনিসগুলির ওপর বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখেন। কোনো বিশেষ কারণে যদি কোনো শিশুর মধ্যে এই স্বাভাবিক ব্যবহারগুলির কোনোরকম ঘাটতি দেখা যায়, তখন এই শিশু মনোবিজ্ঞানীরা প্রয়োজন মত সেই শিশুটির সাথে নিজের অভিজ্ঞ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সরাসরি কথা বলেন। প্রয়োজনে তিনি তার অভিভাবকদের সাথেও কথা বলে থাকেন ও অবশেষে সিদ্ধান্ত নেন যে আদেও সেই শিশুর কোনো বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন কি না। সাধারণত কয়েকটি সেশনের মাধ্যমেই তাঁরা সেই শিশুটির সমস্যাগুলি শিশুটিকে দিয়েই খুঁজে বের করিয়ে তাকে সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার পথ বেছে নিতে সাহায্য করে থাকেন।
শিশু মনোবিজ্ঞান এতটা গুরুত্বপূর্ণ কেন?
অভিভাবকরা নিজের সন্তানকে তাঁদের মত করে বুঝতে পারেন। তাঁর শিশুর ভালো লাগা, খারাপ লাগা, দক্ষতা, ক্ষমতা, সবকিছুই তাঁরা বুঝতে কোনোরকম ত্রূটি রাখেন না। কিন্তু, অনেক সময় দেখা যায় যে এত কিছু করার পরেও, কিছু কিছু অভিভাবক তাঁদের শিশুদের সঠিক কিছু সমস্যাগুলি বুঝে উঠতে পারেন না এবং ভুল পদ্ধতি দ্বারা তাঁদের শিশুদের চাহিদাগুলি মেটানোর চেষ্টা করেন। অনেকসময় তাঁরা সঠিক বিচারও করতে পারেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগুলি খুব একটা বেশি ক্ষতিকারক না হলেও অনেকসময় কিন্তু এর ফল ক্ষতিকারকও হয়ে যেতে পারে। তাই, একজন দায়িত্ববান অভিভাবক হিসাবে আপনার শিশু মনোবিজ্ঞান বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রত্যেকেই তাঁর শিশুর একটি স্বাভাবিক ও সুস্থ বিকাশ কামনা করেন। কিন্তু যদি আপনি এটা বুঝতে না পারেন যে আপনার শিশুর ঠিক কোন কোন ব্যবহার বা গতিবিধি গুলি স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক তাহলে অনেক সময় আপনার শিশুর বিকাশ সঠিক বা সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে অস্বাভাবিক ও কঠিন হয়ে যেতে পারে। এইজন্যেই প্রয়োজন শিশু মনোবিজ্ঞান।
আজকাল পৃথিবীর প্রায় সমস্ত স্কুলগুলিতে শিশু মনোবিজ্ঞানীদেরকে বিশেষ ভাবে নিযুক্ত করা হয়ে থাকে কারণ পরিবার ছাড়া শিশুদের সব থেকে নিখুঁতভাবে লক্ষ্য করা যায় স্কুলে। শিশু বিজ্ঞানীরা আপনাকে আপনার শিশুর স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক গতিবিধির মধ্যে পার্থক্য বুঝতে সাহায্য করেন। এর দ্বারা আপনি এটাও বুঝতে পারবেন যে ঠিক কোন কোন ব্যবহারের জন্যে কিভাবে আপনার শিশুর সাথে আপনি পরিচালনা করবেন। এর ফলে আপনি শুধুমাত্র আপনার শিশুর সঠিক ব্যবহারিক, সামাজিক ও মানসিক বিকাশেই যে সাহায্য করছেন তা নয়, আপনি তার বেড়ে ওঠার প্রত্যেকটি পদক্ষেপেও নতুন করে অভিজ্ঞতা ও শিক্ষা অর্জন করতে তাকে সাহায্য করছেন।
এছাড়াও, শিশু মনোবিজ্ঞান বোঝার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। অনেক সময় শিশুদের মধ্যে এমন কিছু মানসিক বা বিকাশ জড়িত সমস্যা দেখা যায় যা আপেক্ষিকভাবে অভিভাবকরা বুঝে উঠতে পারেন না। যেমনঅতিরিক্ত চাঞ্চল্য বা ভীতি, পড়াশুনা বা অন্যান্য বিষয়ে অস্বাভাবিক রকমের অমনোযোগিতা, খুব সাধারণ কিছু জিনিস সহজেই মনে রাখতে না পারা, ইত্যাদি। অভিভাবক বা শিক্ষকরা যেহেতু এই সমস্যাগুলি প্রথমে বুঝতে পারেন না, তাই তাঁরা বিভিন্ন কারণে সেই শিশুটির ওপর কঠিন শাস্তি বা বকাবকি করে থাকেন যা আসলে ভীষণভাবেই ক্ষতিকারক। এতে কোনো সুফল তো হয়ই না, পরিবর্তে সমস্যা আরো বেড়ে যায়।
এক্ষেত্রে যদি আপনি একজন শিশু মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নেন, তাহলে তিনি আপনাকে আপনার শিশুর আসল সমস্যার কারণগুলি বুঝতে সাহায্য করবেন। শিশুদের নানা রকমের মানসিক সমস্যার মধ্যে পড়ে এ.ডি.এইচ.ডি., অটিজম, শৈশবের কোনো ভয়ংকর ঘটনার ফলে ট্রমা, ইত্যাদি। এইসব ক্ষেত্রে আপনার শিশুর বিশেষ চিকিৎসা ও ওষুধের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
কিভাবে শিশু মনোবিজ্ঞান বুঝবেন?
আমরা আপনাকে আগেই বলেছি যে শিশু মনোবিজ্ঞান বোঝা একজন অভিভাবকের জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। তাতে আপনার শিশুর অনেকরকমের সমস্যা আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন ও ভবিষ্যতে আপনার শিশুর একটি সুস্থ ও স্বাভাবিক মানসিক বিকাশ ঘটবে। অভিভাবক হল শিশুর জীবনে একটি ছাতার মত যা তাকে সর্বদাই সুরক্ষা ও শক্তি প্রদান করে। তাই, আসুন এখানে জেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি আপনার শিশুকে তার সঠিক বিকাশে সাহায্য করবেন অর্থাৎ শিশু মনোবিজ্ঞান বোঝার উপায়গুলি কি কি?
১. ভালোভাবে লক্ষ্য করুন
আপনার শিশুকে যত লক্ষ্য করবেন, তত বেশি তার মানসিক অবস্থাগুলি আপনি বুঝতে পারবেন। তারা কি করছে, কিভাবে কোনো বিষয়ের ওপর প্রতিক্রিয়া করছে, কখন তার খিদে বা ঘুম পাচ্ছে, কখন সে খেলতে চাইছে, কি ধরণের খেলা সে পছন্দ করছে, কোনো বিষয়ে ভয় পাচ্ছে কি না, সবার সাথে মিশতে পারছে কি না, নতুন জিনিস শিখতে পারছে কি না, ইত্যাদি। নিজের শিশুকে অন্য কোনো শিশুর সাথে তুলনা করবেন না। এতে আপনার শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব ঘটবে ও আপনার অভিভাবকত্বও রীতিমত কঠিন ও পরিশ্রমের হয়ে উঠবে।
২. শিশুর সাথে সময় কাটান
আজকাল অভিভাবকরা ভীষণ ব্যস্ত থাকার ফলে অনেকসময়েই তাঁদের শিশুর সাথে সময় কাটাতে পারেন না। কিন্তু শিশুদের সাথে সময় না কাটালে আপনি তাদের সঠিক সমস্যাগুলি বুঝতে পারবেন না। এক্ষেত্রে আপনার প্রয়োজন নিজের কাজগুলিকে যথাযতভাবে গুরুত্ব সহকারে সাজিয়ে আগের কাজ আগে ও পরের কাজ পরে করা। বাড়িতে থাকাকালীন অন্তত বেশ কিছুটা সময় নিজের শিশুর জন্যে রাখতে ভুলবেন না। সে আজ সারাদিন কি করলো, কি কি ভালো বা মন্দ অভিজ্ঞতা হল, তার পড়াশুনা বা অন্যান্য বিষয় কেমন চলছে, সে আপনাকে কিছু বলতে চায় কি না, ইত্যাদি সবকিছু তার থেকে জানার চেষ্টা করুন।
শিশুরা অভিভাবককে ঠিক মত মন থেকে কাছে না পেলে একাকিত্বে ভোগে। এমনকি, এর ফলে সে দ্রুত কোনো কুসঙ্গেও মিশে যেতে পারে। একটি কথা মাথায় রাখবেন যে শিশুদের সাথে সময় কাটানোর সময় যেন কোনোভাবেই আপনার অফিস বা অন্য কিছু সংক্রান্ত তৃতীয় বিষয় মাঝখানে না আসে, যেমন মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ইত্যাদি। শিশুরা আসলে আপনার থেকে যেটুকু সময় আশা করে সেটা যেন একান্তই তাদের জন্যে হয়।
৩. শিশু কোন পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা লক্ষ্য রাখুন
শিশুদের মানসিক বিকাশের ওপর তার বেড়ে ওঠার পরিবেশের বিশাল এক ভূমিকা রয়েছে। তাই একজন অভিভাবক হিসাবে আপনার বিশেষ দায়িত্ব হল তার যাবতীয় পরিবেশ জড়িত বিষয়ের ওপরে লক্ষ্য রাখা । সে কার সাথে কতক্ষন মেলামেশা করছে, তার বন্ধুদের সাথে সে কি ধরণের খেলা খেলছে, আসে পাশে কোনো এমন ব্যক্তি রয়েছে কিনা যে আপনার শিশুর ওপরে অন্যরকমের দৃষ্টি দেয়, শিশুর বন্ধুদের মধ্যে কি ধরণের ভাষা প্রয়োগ করা হচ্ছে, ইত্যাদি।
৪. শিশুর বুদ্ধি বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখুন
শিশুর কোনোরকম শারীরিক সমস্যা হলে অভিভাবকরা খুব সহজেই তা বুঝে যান। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যখন কোনো মানসিক ঘাটতি ঘটে থাকে, তা সহজে বুঝতে পারেন না। শিশুর বুদ্ধি বিকাশের দিকে লক্ষ্য রাখাও খুব জরুরি। দেখুন যে আপনার শিশু কতটা কোন কোন জিনিস মনে রাখতে পারছে, সে তার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে কি কি শিখছে, তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তৈরী হচ্ছে কি না, ইত্যাদি। আপনি যতই ওর অভিভাবক হন না কেন, একদিন তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবেই আর তার জন্যে তার নিজস্ব বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে এগোতে হবে।
৫. শিশুর কথাগুলি মন দিয়ে শুনুন
শিশুর সাথে কথা বলার পাশাপাশি শিশুর কথাগুলিও মনোযোগ দিয়ে শোনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় তারা কোনো গল্প বা কোনোরকম অভিজ্ঞতা বলতে চাইতে পারে। দেখুন সে আসলে কি বলতে চাইছে, তার গলার স্বর বা মুখের হাবভাব, দেহের ভঙ্গি ইত্যাদি কেমন। শিশুদের বানানো গল্প আসলে তার নিজের ব্যক্তিগত অবস্থাকে ফুটিয়ে তোলে। শিশুকে কোনো বিশেষ প্রশ্ন না করে এমন প্রশ্ন করুন যেখানে সে অনেক বেশি কথায় উত্তর দিতে পারে ও আপনি বেশিক্ষন ধরে তা শুনতে পারেন। যেই প্রশ্নের উত্তর শুধু “হ্যাঁ” বা “না” হয়, সেখান থেকে খুব বেশি কিছু আপনি বুঝতে পারবেন না।
৬. শিশু মনোবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করুন
আজকাল এমন কোনো বিষয় নেই যা আপনি চাইলেও পড়তে পারবেন না। ইন্টারনেটের দৌলতে আপনি শিশু মনোবিজ্ঞান সংক্রান্ত নানা প্রশ্নের উত্তর পেতে পারেন। এছাড়া, বিভিন্ন বই বা কোচিং ক্লাসের মাধ্যমেও শিশু মনোবিজ্ঞানের ওপর নানা তথ্য পাওয়া যেতে পারে। শিশুর মধ্যে যদি কোনোরকম অস্বাভাবিক বা অদ্ভুত ধরণের ব্যবহার বা ভীতি লক্ষ্য করেন তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গে বইয়ের পাতায় বা ইন্টারনেটে খুঁজে দেখার চেষ্টা করুন। তবে প্রথমেই কোনোরকম সিদ্ধান্তে পৌঁছাবেন না। আগে লক্ষণগুলির ওপর বেশি করে জোড় দিয়ে দেখুন। কারণ, এমন অনেক মানসিক সমস্যা রয়েছে যার লক্ষণগুলির এক একটি অন্যগুলির সাথে মিলে যায়। তাই অযথা কোনোরকম সিদ্ধান্তে না পৌঁছে শিশু মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিন ও তাঁকে সবকিছু খুলে বলুন।
৭. সহমর্মিতা
শিশুদের সমস্যা তখনই ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যখন আপনি নিজেকে তার জায়গায় বসিয়ে তার সমস্যাগুলি অনুভব করবেন। এতে আপনার শিশুও বুঝতে পারবে যে আপনি তার জন্যে কতখানি চিন্তিত। ফলে ভবিষ্যতে যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবিলা করার সময় সে আপনার সাথে সমস্ত কিছু ভাগ করে নিতে ভুলবে না।
৮. যা যা করবেন না
- নিজে থেকে আন্দাজ করা বা ভেবে নেওয়া যে আপনার শিশুর কোনো সমস্যা নেই বা আছে।
- অন্য শিশুদের সাথে তুলনা করা।
- তার পরিস্থিতি বা সমস্যা নিয়ে কোনোরকম বিচার করা।
শৈশবের কিছু মানসিক ব্যাধি
শিশুরা তাদের ব্যবহার ও বিকাশের নানা দিক তাদের অভিভাবক, শিক্ষক ও সমাজের নানা মানুষের কাছ থেকে পেয়ে থাকে। বেশির ভাগ শিশুদেরই অমনোযোগী হওয়ার সমস্যা দেখা দেয় কিন্তু কিছু কিছু সমস্যা এমন হয় যা সাধারণ দৃষ্টিতে স্বাভাবিক বলে মনে হয়না। তখন আপনার অবশ্যই শিশু মনোস্তাত্ত্বিকদের সাহায্য নিতে হবে. নিচে কিছু সাধারণ শৈশব মানসিক ব্যাধি সম্পর্কে আলোচনা করা হল।
- এটেনশন ডেফিসিট হাইপার এক্টিভ ডিসঅর্ডার (এ.ডি.এইচ.ডি.)- এটি শিশুদের মধ্যে প্রায়শই দেখা যায়। এই ধরণের মানসিক সমস্যার সাধারণ লক্ষণ হল অতিরিক্ত পরিমানে অমনোযোগী হওয়া, অসম্ভব দুরন্ত ও উদ্ধত হওয়া, প্রচন্ড রেগে যাওয়া, জেদ বা কান্নাকাটি করা, ইত্যাদি।
- ডিপ্রেসন এন্ড বাইপোলার ডিসঅর্ডার- এই ধরণের সমস্যার সাধারণ লক্ষণ হল মুহূর্তে মুহর্তে মন পাল্টে যাওয়া, প্রচন্ড পরিমানে আলস্য, রাগ ও কান্নাকাটি, ইত্যাদি।
- এংসাইটি ডিসঅর্ডার- এই ধরণের শিশুরা ভীষণভাবে চিন্তা ও ভীতির মধ্যে থাকে। এক এক সময় এই ভীতি বা চিন্তার পরিমান এতটাই বেড়ে যায় যে তারা রাতে ঘুমোতে পর্যন্ত পারেনা।
- এসপার্জার্স সিনড্রোম- এই মানসিক সমস্যাটি পুরোপুরি অটিজম না হলেও অটিজমের একটি আংশিক সমস্যা বলে ধরা যেতে পারে। এ সমস্ত শিশুরা খুব একটা সামাজিক হয়না, নিজেদের রোজকার জীবনের গতিবিধিতে বেশি পরিবর্তন পছন্দ করেনা, সোজা ভাবে চোখের দিকে তাকাতে পারেনা, অদ্ভুত রকমের মৌখিক ও শারীরিক ভঙ্গি করে, সহমর্মিতা বোধ থাকেনা ও হাত ও পায়ের সঞ্চালন খুব কম করে।
- লার্নিং ডিসেবিলিটি- এই ধরণের শিশুরা সহজে কোনোকিছু শিখে উঠতে পারেনা কারণ তারা কোনো বিষয়ে মনোযোগ দিতে পারেনা। এমনকি, এদের মনে রাখার ক্ষমতাও একেবারেই কম ও এরা দিক নির্ণয় করতে অক্ষম।
- ডিসরাপটিভ বিহেভিয়ার ডিসঅর্ডার- এই ধরণের শিশুরা অন্য শিশুদেরকে উত্তক্ত করে এক আলাদা রকমের তৃপ্তি অনুভব করে। এমনকি, কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানে গেলে সেখানকার নিয়ম উলঙ্ঘন করে বা জিনিসপত্র ভাংচুর করে খুব মজা পায়। এরা রীতিমত মিথ্যা কথা বলে, এমনকি, চুরিও করে পারে।
- ইটিং ডিসঅর্ডার- এই ধরণের সমস্যা থাকলে সাধারনত শিশুদের এনোরেক্সিয়া বা বুলিমিয়া নামে অসুস্থতা থেকে থাকে। এদের সাধারণত এক ধরণের খুঁতখুঁতে বাটিক বা চিন্তা থাকে যে কোনোকিছু খেলেই তাদের ওজন বেড়ে যাবে বা দেখতে খারাপ লাগবে। এর ফলে তারা কিছু খেতে পারেনা বা অল্প খেলেই তা বমি করে ফেলে।
আপনি যদি মনে করে থাকেন যে সমস্ত শিশুদের ধরণ ও মানসিক স্থিতি একই রকম বা সব শিশুর ক্ষেত্রেই একই রকম অভিভাবকত্বের ধরণ খাটে, তাহলে আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। অভিভাবকত্ব ও শিশু মনোবিজ্ঞানের মত ভূমিকাগুলি বেশ সময় সাপেক্ষ্য ও এক ঘেয়ে মনে হতে পারে; কিন্তু একথা ভুলে যাবেন না যে একটি শিশুর সঠিক বিকাশ ও যত্ন প্রদান করতে গেলে শিশু মনোবিজ্ঞান বুঝতে পারা খুবই জরুরি।
আপনি আপনার শিশুর মন ও মস্তিস্ক কিভাবে অনুভব করে তাকে বুঝতে পারেন? আসুন আমাদেরকে এখানে জানান।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.