স্বাস্থের জন্য দারুচিনির উপকারিতা, ব্যবহার এবং অপকারিতা
দাঁরুচিনি এমন একটি মশলা যা প্রায় সব ভারতীয় দের রান্না ঘরে পাওয়া যাবে ।দাঁরুচিনি শুধু একটি মশলাই নয় এটি একটি ঔষধীও। যাতে আছে antioxidants, যা বেশ কিছু অসুখ থেকে যেমন arthritis, diabetes এমন কি মারণ রোগ ক্যান্সার এর হাত থেকে ও সুরক্ষিত রাখে। আজকের এই লেখায় আমি দারুচিনীর গুনা গুন আপনাদের বলব। এখন দেখুন দাঁরুচিনি আপনার শরীরের জন্য কতটা উপকারী আর কোন্ কোন্ রোগ প্রতিরোধে দাঁরুচিনি ব্যবহার করা হয়।
In This Article
দারুচিনির উপকারিতা
১। ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
বর্তমানে প্রতি দুই থেকে তিন জনের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি একটি চিন্তার বিষয়। খাওয়া দাওয়ার বিষয়ে যথাযথ নজর না দেওয়া, সঠিক যত্নশীল না হওয়া এবং সঠিক ভাবে শ্রম তথা যোগ ব্যায়াম, প্রাণায়াম না করার জন্য এই ওজন বাড়ার সমস্যা দেখা দিতে থাকে। এমত অবস্থায় খাবারে দাঁরুচিনির ব্যবহার করলে ওই বর্ধিত ওজন জনিত সমস্যা বেশ অনেকটাই কমতে পারে। দাঁরুচিনি তে বর্তমান poly phenols একটি antioxidant যা ইন্সুলীন এর সংবেদনশীলতা কে বাড়িয়ে রক্তের glucose এর মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু আমাদের শরীর যখন সঠিক মাত্রায় ইন্সুলীন তৈরী পারে না তখনই রক্তে গ্লুকোস এর মাত্রা বেড়ে যায় এর ফলে স্থূলতা, মধুমেহ (ডায়াবেটিস্) এবং আরও কিছু রোগ এর সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে পলি সিস্টিক ওভারীয়াণ (poly cystic ovarian disease) অসুখ আছে, তাদের ক্ষেত্রে দাঁরুচিনি ইন্সুলীন প্রতিরোধ কে কমিয়ে ওজন বেড়ে যাওয়া কে নিয়ন্ত্রণ করে (1)।এ ছাড়া দাঁরুচিনির অ্যন্টি-ওবেসিটি প্রভাব স্থূলত্ব কে কম করে।(2)
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণ:
- এক কাপ জল
- এক চামচ দাঁরুচিনি পাওডার/ গুড়া
- এক চামচ মধু
- এক চামচ লেবুর রস
বানানোর পদ্ধতি :
- প্রথমে জল কে ফোটাতে হবে। একটি কাপে দাঁরুচিনি গুড়ো বা পাওডার মধু আর লেবুর রস এক সাথে একটা মিশ্রণ তৈরী করতে হবে। এবার এই মিশ্রণে ঐ ফোটানো গরম জল মিশিয়ে একটা মিশ্রণ বানিয়ে নিতে হবে। এই মিশ্রণ পান করতে হবে।
** ভাল ফল পেতে রোজ সকালে এই মিশ্রণ পান করতে হবে।
২। আর্থারাইটিসের ব্যাথা কমায় দারুচিনিঃ
বয়েস বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হাড় গুলি দুর্বল হতে থাকে, আবার কেউ কেউ আর্থারাইটিসে আক্রান্ত হন। এই আর্থারাইটিসে দাঁরুচিনি ঔষধের মত কাজ করে। দাঁরুচিনি তে আয়রণ(লৌহ), ক্যালসিয়াম, ম্যান্গানিজের মত ধাতব লবন গুলি থাকে যে গুলি এই গাঁটের যন্ত্রণায় উপশম পাওয়া যায় (৩)। একটা পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে রিউমাটয়েড আর্থারাইটিসে্ যে যন্ত্রণা ও ফোলা ভাব হয় তাতে এই দারুচিনী অনেক টা উপকার দেয় (৪)।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- দারুচিনির তেল
- চার ফোঁটা নারকেল তেল / সরষের তেল
বানানোর পদ্ধতি :
দারুচিনীর তেল তিন থেকে চার ফোটা নারকেল তেল বা সর্ষের তেলের সাথে মিশিয়ে হালকা গরম করে মালিশ করতে হবে। এই মিলিশের ফলে ব্যাথায়ে অনেক টা আরাম পাওয়া যায়।
৩। দারুচিনি ব্লাড সুগার আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ
অনিয়মিত, অনিয়ন্ত্রণ জীবনযাত্রার জন্য আজকাল অনেকেরই ডায়াবেটিস্ তথা মধুমেয় রোগ এর শিকার হয়ে পড়ছেন। প্রাথমিক পর্যায় এই রোগ এর দিকে নজর না দিলে ভবিষ্যতে এই রোগের জন্য বিপদের আশংকা থেকে যায়। সময় এর সাথে সাথে ডায়াবেটিস্ আরো কিছু কিছু রোগের জন্ম দেয়। ডায়াবেটিস্ তথা মধুমেহ রোগী যদি খাদ্যে দারুচিনী ব্যাবহার করেন তবে এই ডায়াবেটিসের এর হাত থেকে অনেকটাই রক্ষা পাওয়া যায়। দাঁরুচিনি তে উপস্থিত আ্যন্টি আক্সিডেন্ট আক্সিডেটিস্ স্ট্রেস কে কমাতে সাহায্য করে যা নাকি ডায়াবেটিস্ এর একটি প্রধান কারণ (৫)।
এই মশলায় উপস্থিত ফেনলীক যৌগ এবং ফ্লবনাইড যা কিনা আ্যন্টি ইন্ফ্লামেটরি আ্যন্টি ডায়াবেটিক্ এমন কি আ্যন্টি ক্যানসরএবং কার্ডিয় প্রোটেকটিভ গুণ সম্পন্ন (৬)। একটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে দারুচিনী রক্তের শরকরা
মাত্রা কম করে। দাঁরুচিনি তে বর্তমান পলিফেনলস্ শরীরে ইন্সুলিন ক্ষরণের মাত্রা কে বাড়ায় তাই ডায়াবেটিস্ এর আশংকা কমে (৭)।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- ছোট এক টুকরো আদা
- দু চামচ লেবুর রস
- এক টুকরো দারুচিনী
- এক চামচ মধু
- এক কাপ জল
বানানোর পদ্ধতিঃ
মাঝারি আঁচে জল গরম করতে হবে।আদা কে ছোট টুকরো বা ঘসে নিতে হবে। জল ফুটে উঠলে আদা গুলো দিয়ে দিতে হবে, এবার আঁচ কমিয়ে ওই মিশ্রণে দারুচিনী দিয়ে দিতে হবে, পাঁচ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর পর একটা কাপে জল টা ছেকে নিতে হবে। এই জলে লেবুর রস আর মধু দিয়ে খেতে হবে।
** এই জল দিনে যে কোন সময় খাওয়া যায়।
৪। স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি তেঃ
মস্তিষ্কের জন্য ও দাঁরুচিনি খুব উপকারী। দাঁরুচিনির সুগন্ধ মস্তিষ্কের কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি মস্তিষ্কের একটি টনিক। এটি যে শুধু মাত্র মস্তিষ্ক কে দ্রুত কাজ করতে সক্ষম করে তাই নয়, একাকীত্ব, ডিপ্রেশন ও আ্যন্গজাইটিতে ও উপকার দেয়। যারা এই দারুচিনীর তেলের ঘ্রাণ নেয় তাদের স্মরণ শক্তি বৃদ্ধি পায় (৮)। এছাড়া দারুচিনী তে বর্তমান আ্যন্টি আক্সিডেন্ট আ্যলজাইমার আর পারকিনসন্ এর মত রোগের হাত থেকেও রক্ষা করে(৯)।যখন আ্যলজাইমারে স্মৃতি শক্তি কমতে থাকে তখন অসতে আসতে শরীরে কম্পন শুরু হয়।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণ :
- এক কাপ বা আধা কাপ জল
- ছোট এক টুকরো দাঁরুচিনি
- এ চামচ মধু
বানানোর পদ্ধতি :
- জল কে ফোটাতে হবে
- একটি পাত্রে দারুচিনী নিয়ে তাতে ওই গরম জল ঢেলে দিতে হবে
- দশ মিনিট ভিজিয়ে রাখতে হবে যাতে দারুচিনীর সব গুনাবলী ঐ জলে বেরিয়ে আসে।
এর পর ঐ জল ছেকে তাতে মধু মিশিয়ে পান করতে হবে।
৫। সর্দি কাশি তে দারুচিনিঃ
দারুচিনিতে অ্যান্টি – মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি গুন বর্তমান। এই গুণ আপনাকে সর্দি কাশি থেকে সুরক্ষা করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
- দুটো লবঙ্গর টুকরো
- এক গ্লাস গরম জল
বানানোর পদ্ধতি :
- দারুচিনি আর লবঙ্গর টুকরো কে জলে দিয়ে পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোটান আর ছেঁকে চামচ দিয়ে পান করুন
৬। রক্তসংবহনের জন্য দারুচিনির ব্যবহারঃ
দারুচিনি রক্ত সংবহন প্রক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। দারুচিনি তে এই গুণ গুলো ধমনী বা হৃৎপিণ্ড জনিত কোন অসুখ থেকে বাঁচতে সাহায্য করে। উন্নত রক্ত সংবহন শরীরের ব্যাথা বোধের হ্রাস ঘটিয়ে অক্সিজেনের চলাচল বৃদ্ধি করে।
৭। কোলেস্টেরল আর হৃদয়ের জন্য দারুচিনিঃ
দারচিনির ব্যাবহার শরীরের হানিকারক কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এর মাত্রা বজায় রাখে। এটা টাইপ – ২ ডায়বেটিস এর রুগীদের জন্য খুব উপকারি।
ব্যবহারের পদ্ধতিঃ
- দারুচিনি মিশিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারবেন
- শাঁক সব্জি তে এটার ব্যাবহার করলে স্বাদ ও বাড়াবে আর স্বাস্থ্য কে ভালো রাখবে
৮। নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধঃ
দারচিনির ব্যাবহার শুধু মাত্র দাঁত এর ব্যাথার জন্য ভালো নয়, এটার ব্যাবহার মুখের মধ্যে যে কোন সংক্রমণ আর দুর্গন্ধ কে দূরে রাখে।
৯। হজম শক্তি বাড়ানোর জন্য দারুচিনিঃ
দারুচিনির অ্যান্টি – মাইক্রবিয়াল গুণ আপনার শরীর কে যেকোনো সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়ার আর ক্যানডিডা নামক রোগ এর সাথে লড়তে সাহায্য করে।
১০। রক্ত চাপের সময় দারুচিনির উপকারিতাঃ
আজ কাল উচ্চ বা নিম্ন রক্ত চাপের লক্ষণ সবার মধ্যেই দেখা যায়। দারুচিনির প্রয়োগে এই সমস্যা কমানো যেতে পারে। বিশেষ করে টাইপ ২ ডায়বেটিস এর রুগীদের জন্য খুব বেশী উপযোগী।
১১। ইনফারটিলিটী/ বনদ্ধ্যাত্ব তে দারুচিনিঃ
দারুচিনিতে অ্যান্টি – অক্সিডেন্ত আছে যেটা মোটা মানুষের মধ্যে অক্সিডেটীভ স্ট্রেস কে কম করতে সাহায্য করে। এর সাথে ইনফারটিলিটী/ বনদ্ধ্যাত্ব কে কম করতেও সাহায্য করে।
১২। স্ত্রী ধর্ম ও মাসিকের সময় দারুচিনির ব্যাবহারঃ
এই কটা দিন মহিলাদের জন্য খুব অস্বস্তির হয়, যেমন পেটে ব্যাথা, বমি, মাথা ঘোরা ইত্যাদি। এই সময় কিছু মহিলা ওষুধের ব্যাবহার করেন কিন্তু ওষুধের সেবন করা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। এই জন্য দালচিনির ব্যাবহার রক্ত ক্ষরণ, পেটে ব্যাথা বা বমির অবসান ঘটায়। দারুচিনির গুড়ো আপনাকে পলিসিস্তিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম (PCOS) থেকেও বাচায়।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক থেকে দু গ্লাস জল
- এক ছোট চামচ দারুচিনির গুড়ো
- একটু মধু
বানানোর পদ্ধতিঃ
- এক থেকে দু গ্লাস জলে এক চামচ দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে ফোটান
- এরপরে মধু মিশিয়ে সেই মিশ্রন তা পান করুন
১৩। ক্যান্সার প্রতিরোধে দারুচিনির উপকারীতাঃ
দারুচিনি ক্যান্সার এর কোষ গুলকে ছড়ানো থেকে আটকায়। গবেষণা করে কিছু চমৎকার ফলাফল পাওয়া গেছে যে দারুচিনি পেটের মধ্যে এঞ্জাইম সক্রিয় করে যা ইন্দ্রিয় গুলো কে ডিটক্সিফাই করে কোলোণ ক্যান্সার কে ছড়ানো থেকে আটকায়। দালচিনির মধ্যে এরম অনেক অ্যান্টি-ক্যান্সার গুন রয়েছে।
১৪। ডায়রিয়া তে দালচিনির ব্যাবহারঃ
উলটো পাল্টা কিছু খেলে বা নানান আবহাওার জন্য কখনো কখনো পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে। এতে বার বার ওষুধ না খেয়ে যদি ঘরোয়া উপায়ে দারুচিনির ব্যাবহার করেন সেটা শরীরের জন্য উপকারী। দারুচিনি তে যে অ্যান্টি – ব্যাকটেরিয়া আর ঔষধিক যে গুণ আছে সেটা ডায়রিয়া তে উপযোগী প্রমাণ হয়েছে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
- এক চামচ জীরা গুড়ো
- এক চামচ আদা গুড়ো
- এক চামচ মধু
- এক গ্লাস জল
বানানোর পদ্ধতিঃ
সব কটা সামগ্রী এক সাথে এক গ্লাস জলে মিশিয়ে পান করুন। এটা দিনে দু থেকে তিনবার পান করতে পারেন।
১৫। গর্ভাবস্থা তে দালচিনির উপকারিতাঃ
গর্ভাবস্থা তে খাওয়া দাওয়ার ওপর অনেক বেশী ধ্যান দিতে হয়। যদি নিয়মিত ভাবে দালচিনির সেবন করেন সেটা শরীরের পক্ষে খুব ভালো। দালচিনিতে যে অ্যান্টি – অক্সিডেন্ত আছে সেটা যে কোন সংক্রমণ থেকে বাচায়। দালচিনি সেবন করার আগে আপনার ডাক্তার এর সাথে পরামর্শ করে নিন যদি আপনার গর্ভাবস্থা ডায়াবেটিস (যেষটেশানাল ডায়াবেটিস) বা ডায়াবেটিস আছে।
১৬। দীর্ঘ জীবনের জন্য দালচিনিঃ
আপনি জেনে অবাক হবেন যে দারুচিনি নিয়মিত সেবন কিভাবে আপনার দীর্ঘ জীবনের একটা প্রধান কারণ হতে পারে। দারুচিনির নিয়মিত সেবন বৃদ্ধবস্থায় আপনাকে রোগ থেকে দূরে রাখবে। এতে শরীরে অনেক বেশী ফুর্তি আনে আর বুড়ো বয়সে যে হাড়ের ব্যাথা তে আরাম দেয়।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- দু কাপ জল
- এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
- দু থেকে তিন চামচ মধু
বানানোর পদ্ধতিঃ
- দারুচিনি গুড়ো জলে ফোটান, তারপর সেটা কে থান্দা করে মধু মেশান
- আপনি এটা দিনে এক থেকে দু বার পান করতে পারেন।
১৭। দারুচিনির উপকারীতা কোষ্ঠবদ্ধতা আর গ্যাস এঃ
কোষ্ঠবদ্ধতা আর গ্যাসের একটা অন্যতম কারণ হল প্রাই উলটো পাল্টা কিছুর খাওয়া। কেউ কেউ ওষুধের সেবন ছাড়া থাকতেই পারে না। কিন্তু যেটা আমরা জানি না বা মানি না যে এই ওষুধ গুলো কোথাও না কোথাও আমাদের স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকারক। এইসময় দারুচিনির সেবন আমাদের কে অনেক উপকার করতে পারে।
শোবার আগে রোজ গরম দুধের সাথে দালচিনি গুড়ো মিলিয়ে খেতে পারেন। দুধ অপছন্দ থাকলে খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে আপনার পেটের যত রকমের রোগ আছে সেটা থেকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবেন। দারুচিনির অতিরিক্ত সেবন শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
১৮। ব্যাথা বেদনা থেকে মুক্তিঃ
আমরা প্রাই ওষুধের সেবন করে থাকি যে কোন শারীরিক ব্যাথা বা বেদনার জন্য, কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকারক। নিয়মিত দালচিনির সেবন আপনাকে নানান রকম ব্যাথা থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করবে যেমন দাঁতে ব্যাথা বা হাড়ের ব্যাথা বা পেটের ব্যাথা ইত্যাদি।
কি ভাবে ব্যাবহার করবেন?
- দাঁতে ব্যাথা হলে দারুচিনি চিবিয়ে খান অথবা গরম জলে মিশিয়ে কুল্কুচি করুন। এমনকি দারুচিনির তেল তুলো তে লাগিয়ে দাঁতের মাঝখানে রাখলে আরাম পাবেন
- পেটে ব্যাথা হলে দারুচিনি দিয়ে চা বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন
- হাড়ের ব্যাথার জন্য দারুচিনির তেল কে সরষের তেল বা নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে নিয়মিত লাগালে উপকার পাবেন। এটা ছাড়াও দালচিনির গুড়ো উষ্ণ গরম জলের সাথে মিশিয়ে ওটার পেস্ট বানিয়ে যেখানে ব্যাথা সেখানে লাগালে আরাম পাবেন
ত্বকের জন্য দারুচিনির উপকারীতা / Cinnamon benefits in Bengali for skin
দারুচিনির শুধু মাত্র স্বাস্থ্যর জন্যই নয় বরং ত্বকের জন্য ও উপকারী। সবাই চায় যাতে তাদের ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ থাকে, কারণ বায়রের সুন্দরতা তাই চোখে পরে। বিভিন্ন ক্রিম আর ওষুধের ব্যাবহার করে আপনি কিছুক্ষণের জন্যই সুন্দর দেখাতে পারবেন আর উপরন্ত যে সাইড এফফেক্তস আছে সেইগুলো তো আলাদা। তাই জন্য দারুচিনির মত প্রাকৃতিক ওষুধের ব্যাবহার করে আরও সুন্দর হতে পারেন। নিচে দেওয়া হল কিছু দারুচিনির উপকারীতা যেটার ব্যাবহার আপনার ত্বক আরও উজ্জ্বল ও মসৃণ করবে।
১। ব্রণ ও দাগের জন্যঃ
ধুলো, মাটি, দূষণ, ঋতু বদলানো আর উলটো পাল্টা খাওয়া দাওয়া থেকে ত্বকের নানান সমস্যা হতে পারে। যেমন ব্রণ, দাগ, ইত্যাদি। এইগুলোর ত্বকের আদ্রতা কে হারিয়ে দেয়। তখন দারুচিনির ব্যাবহার করে তার অ্যান্টি – মাইক্রবিয়াল আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটোরি গুন দিয়ে আপনার ত্বককে আরও উজ্জ্বল ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক চিমটে দারুচিনি গুড়ো
- এক চামচ মধু
বানানোর পদ্ধতিঃ
- একটু মধু আর দারুচিনি গুড়ো মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন
- এবার শোবার আগে মুখ তা ভালো করে পরিস্কার করে নিয়ে যেখানে যেখানে দাগ বা ব্রণ রয়েছে সেখানে এই পেস্ট টা লাগিয়ে সারা রাত ছেড়ে দিন
- পরের দিন সকালে ভালো করে মুখ তা ধুয়ে নিন
- এই পেস্ট টা একটু সময় নিয়ে কাজ করে আর দাগ বা ব্রণ থেকে মুক্ত করে
২। ঠোট কে আকর্ষণীও করতে দারুচিনির ব্যাবহারঃ
অনেক মহিলারাই চায় যে তাদের ঠোট প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বা জ্যাকলিন ফারনানডিযের মত সুন্দর লাগে। তাহলে দারুচিনির থেকে ভালো আর কোন ঘরোয়া উপায় নেই যেটা আপনার ঠোট কে সুন্দর দেখাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- দারুচিনির ৩ থেকে ৪ তে দানটি
- এক কাপ জলপাই (অলিভ) এর তেল
- একটা ছোট শিশি বা জার
বানানোর পদ্ধতিঃ
- অলিভের তেল আর দারুচিনির দানটি গুলো জার এ মেশান
- এবার এই মিশ্রন টা এক থেকে দু সপ্তাহ এই ভাবেই ছেড়ে দিন
- জখন এটা রঙ বদলাতে শুরু করবে তখন বুঝবেন যে দারুচিনির গুণ তেল এর মধ্যে মিশছে আর এটা ব্যাবহার করার জন্য প্রস্তুত
৩। শুকনো ত্বকের জন্য দারুচিনিঃ
প্রত্যেকটা ঋতুতে ত্বক শুকনো হওয়ার অনেক কারণ। যতই আপনি তখন ক্রিম এর ব্যাবহার করে নিন কিন্তু এতে কিছু লাভ হয় না, রুক্ষ ত্বকই থাকে। এই সময় দারুচিনির ব্যাবহার রুক্ষ ত্বক থেকে আরাম পেতে সাহায্য করবে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- দারুচিনির গুড়ো
- নুন
- জলপাই তেল
- বাদামের তেল
- মধু
বানানোর পদ্ধতিঃ
এই ওপরে দেওয়া সামগ্রী গুলকে মিশিয়ে একটা স্ক্রাব তৈরি করে সপ্তাহে এক থেকে দু বার লাগান
৪। দারুচিনি আপনার ত্বক কে উজ্জ্বল আর পরিস্কার করেঃ
দূষণের জন্য ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে আর সুন্দরতা হারিয়ে যেতে পারে। তাই জন্য দারুচিনির ব্যাবহার আপনার রং রুপকে ফিরিয়ে দিতে সাহায্য করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
- দু চামচ দই
- একটা ছোট কলা
- অর্ধেক লেবুর রস
বানানোর পদ্ধতিঃ
- ওপরের দেওয়া সামগ্রী গুলোকে মিলিয়ে একটা পেস্ট বানান
- তারপর এটা মুখে লাগিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ছেড়ে দিন। শুখিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন
৫। ত্বক কে বানান তরুনঃ
বয়সের ছাপ খুব জলদি মুখের ওপর পরে, চামড়া ঝুলে যায়, রিঙ্কেল হয়ে যায় ইত্যাদি। এইগুলো থেকে বাচতে দারুচিনির ব্যাবহার করা উচিৎ। দারুচিনি তে কোলাজেন আছে যেটা ত্বকের ইলাস্টিসিটি কে ঠিক রাখতে সাহায্য করে। আর এটার জন্য অ্যান্টি – এজিং থেকে অনেক টা উপকার করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক চামচ দারুচিনি গুড়ো
- এক চামচ কাচা মধু
ব্যবহারের নিয়মঃ
- দারুচিনি গুড়ো আর মধু এক সাথে মিশিয়ে মুখে লাগান
- ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে শুকিয়ে গেলে ধুয়ে নিন উষ্ণ গরম জল দিয়ে
৬। ত্বকের সংক্রমণ ও কাটা ছেড়ার ওপর দারুচিনির ব্যাবহারঃ
অ্যান্টি – ব্যাকটেরিয়া আর অ্যান্টি – ফাঙ্গাল গুনের জন্য দারুচিনি ত্বকের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। তার সাথে এটা যেকোনো কাটা ছেড়া কে ভরতে সাহায্য করে।
চুলের জন্য দারুচিনির উপকারীতা / Cinnamon benefits in Bengali for Hair
লম্বা আর ঘন চুলের চাহিদা সব মহিলার ই থাকে। এটা পাওয়ার জন্য সবাই নানান শ্যাম্পু আর ওষুধ এর ব্যাবহার করেন কিন্তু এর জায়গা তে একবার দারুচিনির ব্যাবহার করে দেখুন।
১। চুল লম্বা করার জন্য দারুচিনির ব্যাবহারঃ
দারুচিনি শরীরের রক্ত সঙ্করন ক বাড়ায় আর চুলের গোঁড়া তে অক্সিজেন পৌঁছে চুল ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- এক কাপ জলপাই / অলিভ তেল
- এক চামচ দারুচিনি
- এক চামচ মধু
বানানোর পদ্ধতিঃ
- জল পাই তেল হাল্কা গরম করে একটা ছোট বাটিতে ঢালুন
- এর মধ্যে দারুচিনি আর মধু মেশান
- তারপর এই পেস্ট তা ব্রাশ এর ব্যাবহার করে চুলে আর চুলের গোঁড়া তে প্রয়গ করুন
- এটা ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে তারপর শ্যাম্পু আর কন্ডিশনর ব্যাবহার করে ধুয়ে নিন
২। চুলে রং করার জন্য দারুচিনির ব্যাবহারঃ
চুল এ রং করতে চান কিন্তু ঘরোয়া উপায়ে? তাহলে সব থেকে ভালো হবে দারুচিনির ব্যাবহার। প্রথমে চুল তা ধুয়ে নিন যাতে এটা ফেসে বা ভেঙ্গে না যায়। তারপর কন্ডিশনর এর সাথে দালচিনি গুড়ো মিশিয়ে মাথায় লাগিয়ে সারা রাত শোকানোর জন্য ছেড়ে দিন। আর পরের দিন সকালে ধুয়ে নিন।
৩। দারুচিনি চুলের গোঁড়া কে পরিস্কার রাখেঃ
রোজ দূষণের জন্য চুল নোংরা, রুক্ষ, বেজান আর সৌন্দর্য হারাতে পারে। এই সময় একটা ঘরোয়া উপায়ের ব্যাবহার আপনার চুলের সৌন্দর্য ফেরাতে সাহায্য করবে।
ব্যবহার এর পদ্ধতি:
উপকরণঃ
- আধা চামচ দারুচিনি গুড়ো
- এক চামচ বেকিং সোডা
- দু চামচ জলপাই তেল
বানানোর পদ্ধতিঃ
- একটা বাটিতে এইগুলো সব মিশিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করুন
- এর পর চুলে হাল্কা করে লাগান আর ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন
এটা আপনি সপ্তাহে এক বার লাগাতে পারেন।
দারুচিনির অপকারীতা
দারুচিনির যেমন উপকারী তা আছে তেমন অপকারীতা ও আছে।
- লিভারের সমস্যা হতে পারে
- রক্ত কম করতে পারে
- ত্বকের ক্ষতি করতে পারে
- গর্ভবতী মহিলাদের সময়ের আগে প্রসব হয়ে যেতে পারে
- নিম্ন রক্ত চাপ হতে পারে
দারুচিনির পুষ্টিকর তথ্য
এর মধ্যে কিছু জিনিস আমরা ওপরে দেওয়া টিপস গুলোতে বলেছি আরও কিছু পুষ্টি তথ্য নিচে দেওয়া হল।
ক্যালোরি তথ্য | |||||
---|---|---|---|---|---|
সিলেক্টেড সারভিং এময়াউন্ত (এক টেবিল চামচ) | % ডিভি DV) | ||||
ক্যালোরি | 19.1(80.0 কে জে) | 1% | |||
কার্বোহাইড্রেট | 17.8(74.5 কে জে) | ||||
ফ্যাট | 0.8(3.3 কে জে) | ||||
প্রোটিন | 0.6(2.5 কে জে) | ||||
এলকোহল / মদ | 0.0(0.0 কে) | ||||
কার্বোহাইড্রেট | |||||
সিলেক্টেড সারভিং এময়াউন্ত (এক টেবিল চামচ) | % ডিভি (DV) | ||||
মোট কার্বোহাইড্রেট | 6.2 g | 2% | |||
ডায়েটারই ফাইবার | 4.1g | 16% | |||
স্টার্চ | ~ | ||||
চিনি | 0.2g | ||||
ভিটামিন | |||||
সিলেক্টেড সারভিং এময়াউন্ত (এক টেবিল চামচ) | % ডিভি (DV) | ||||
ভিটামিন – এ | 22.9IU | 0% | |||
ভিটামিন – সি | 0.3mg | 0% | |||
ভিটামিন – ডি | ~ | ~ | |||
ভিটামিন – ই (আলফা টোকোফেরল ) | 0.2mg | 1% | |||
ভিটামিন কে | 2.4mcg | 3% | |||
থাইয়ামিন | 0.0mg | 0% | |||
রাইবফ্লেবিন | 0.0mg | 0% | |||
নিকতেনিক | 0.1mg | 1% | |||
ভিটামিন বি ৬ | 0.0mg | 1% | |||
ফলেট | 0.5mcg | 0% | |||
ভিটামিন বি ১২ | 0.0mcg | 0% | |||
প্যান্তথেনিক এসিড | 0.0mg | 0% | |||
কলিং | 0.9mg | ||||
ভিটামিন | 0.3mg | ||||
মিনারেলস | |||||
সিলেক্টেড সারভিং এময়াউন্ত (এক টেবিল চামচ) | % ডিভি (DV) | ||||
ক্যালসিউম | 77.7mg | 8% | |||
আয়রন | 0.6mg | 4% | |||
মাগনেসিউম | 4.7mg | 1% | |||
ফস্ফরস | 5.0mg | 0% | |||
পটেসিউম | 33.4mg | 1% | |||
সোডিউম | 0.8mg | 0% | |||
জিঙ্ক | 0.1mg | 1% | |||
কোপার | 0.0mg | 1% | |||
ম্যাংগানিজ | 1.4mg | 68% | |||
সেলেনিউম | 0.2 mcg | 8% | |||
ফ্লোরাইড | ~ |
(DV – Daily Value, KJ – Kilojoule, MG – Milligrams, MCG – Microgram, IU – International Unit)
দারুচিনি সুস্বাস্থ্যর জন্য দায়ী, এবার আহারের সাথে এটা নেওয়ার নিয়ম করুন। আশা করছি ওপরে দেওয়া টিপস গুলো আপনার জন্য উপযোগী হবে আর আপনি এইগুলোর ব্যাবহার করে আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে কমেন্টস সেকশন এ শেয়ার করবেন।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.