প্রেগন্যান্সির পর 15 টি ওজন কমানোর উপায় | Weight Lose After Pregnancy In Bengali
In This Article
একটি সমীক্ষায় জানা গেছে, ডেলিভারির পর প্রায় সব মহিলারই তিন কেজি ওজন বেড়ে যায় (1)। এই ওজন বাড়ার সমস্যাটি প্রায় প্রত্যেকেরই হয় যাদের সিজারিয়ান পদ্ধতির সম্মুখীন হতে হয়।
আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকোলজিস্টের মতে, প্রায় 65% মহিলারা গর্ভাবস্থায় ওজন বৃদ্ধি পায় এবং তার জন্য ওবিসিটির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যা ডেলিভারীর পর স্থায়ী হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই মহিলারা প্রসবের পর নানা ধরণের সমস্যার মুখে পড়েন, তাই আমাদের এই প্রতিবেদনে আপনাদের জন্য রইলো এই সম্পর্কিত নানা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
প্রসবের পরে ওজন বাড়ার কারণগুলি কি কি ?
গর্ভাবস্থায় ওজন বাড়া স্বাভাবিক। আপনি হয়তো ভাবতে পারেন আপনি মোটা হয়ে যাচ্ছেন , কিন্তু আসলে আপনি শিশুর যত্নের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। তবে এই ওজন বৃদ্ধি স্বাভাবিক কিনা তা জানা প্রয়োজন । আপনার শরীরের বিপাক ক্রিয়া আপনার গর্ভাবস্থায় আপনার ওজনের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই আপনার ওজন বাড়ার উপর নজর রাখা প্রয়োজন। তবে ডেলিভারির পরও অনেক মহিলার এই বৃদ্ধি পাওয়া ওজন কমতে চায় না বা আরও ওজন বৃদ্ধি পায়। তার মূল কারণ হিসেবে ধরা হয় হরমোনের পরিবর্তনকে।
বাচ্চা হওয়ার পরে অতিরিক্ত ওজন কমানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নিম্নলিখিত কারণগুলির কারণে ডেলিভারির পরে ওজন কমানো উচিত (2), (3)।
- ডেলিভারির পরে ওজন খুব বেড়ে গেলে তা ওবিসিটিতে পরিণত হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের মতো অন্যান্য অসুস্থতার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
- হার্ট সংক্রান্ত সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
- কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় গর্ভকালীন ওজন বৃদ্ধি ডেলিভারির পর হতাশার ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে (4)।
তবে মনে রাখবেন, প্রসবের পরে অতিরিক্ত ওজন কমানো উচিত তবে কখন শুরু করবেন তা আপনার জানা দরকার।
বাচ্চা হওয়ার পরে কখন ওজন কমানো শুরু করা উচিত ?
দ্য ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ অনুযায়ী ডেলিভারি গেলে অন্তত দুমাস পর ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত (5)। প্রাক-গর্ভাবস্থার ওজনে ফিরে আসতে এক বছর বা তারও বেশি সময় নিতে পারে । অতএব, ওজন কমানোর প্রক্রিয়া প্রসবের পরেই শুরু করতে যাবেন না। আর এই প্রক্রিয়া শুরু করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
ডেলিভারির পরে ওজন কমানোর টিপস
1. পুষ্টিযুক্ত খাবার
সঠিক পুষ্টিযুক্ত খাবার খান। আপনার খাদ্য তালিকায় যেন ফল, শাক সবজি, প্রোটিন ও দুগ্ধজাত জিনিস অবশ্যই থাকে। এগুলি আপনার ওজন কমানোর সময় আপনার শরীরে সঠিক পুষ্টির জোগান দেবে (6), (7)।
2. স্বাস্থ্যকর স্নাক্স
ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করলে দিনে চার থেকে পাঁচবার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন, এতে ফল পেতে পারেন (8)। স্নাক্স হিসেবে ফল, নুন ছাড়া বাদাম, প্রোটিন বার বা দই খেতে পারেন।
3. পরিমিত খাবার
যখনই খাবেন তখন যেন খাবারের পরিমান কম থাকে, বেশি খাবার একেবারে খাবেন না। তাই বলা হয় দিনে চার থেকে পাঁচ বার অল্প অল্প করে খেতে। এতে হজমের সমস্যা কম হয়। এর জন্য কোনো ডায়েট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন (91)।
4. লোভ কমান
যখনই আপনি উচ্চ-ক্যালোরিযুক্ত খাবার, যেমন চকোলেট বা আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করবে , তাদের স্বাস্থ্যকর বিকল্পগুলি সন্ধান করুন। যেমন ডার্ক চকোলেট খেতে পারেন। কোনো মিষ্টি ফল যেমন কলা বা রাঙালু বেছে নিতে পারেন।
5. ভালোবেসে খাবার খান
আপনি খাওয়ার সময় খাবারকে ভালোবেসে খান। এই পদ্ধতির জন্য খাওয়ার সময় সমস্ত ইন্দ্রিয়গুলি খাদ্যের দিকে মনোনিবেশ করে এবং এইভাবে খাবারটি ভালভাবে চিবানো হয়। খাবারটি ভালভাবে চিবানো হলে মোট ক্যালোরি গ্রহণ হ্রাস করতে পারে (10)।
6. না খেয়ে থাকবেন না
আপনি যদি ওজন কমানোর প্রক্রিয়া শুরু করে থাকেন, তাহলে কখনোই পেট খালি রাখবেন না, এতে ওজন পেটের সমস্যা হতে পারে ও ওজন বাড়তে পারে (11) ।
7. জল বেশি পান করুন
জল বেশি করে পান করুন তাতে মাতৃদুগ্ধের পরিমান বাড়ে ও শরীরের অতিরিক্ত ক্যালোরি ঝড়তে সাহায্য করে (12) ।
8. সঠিক খাবার
মিষ্টিজাত দ্রব্য, কোল্ড ড্রিঙ্ক ও প্রসেসড ফুড ত্যাগ করুন। এগুলি আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
9. অ্যালকোহল ত্যাগ করুন
গবেষণায় জানা গেছে অ্যালকোহল খেলে ওবিসিটির ঝুঁকি বেড়ে যায় (13) । আর আপনি যদি বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করান , তাহলে এটি না খাওয়াই ভালো কারণ এতে ভালো তো কিছু হয়ই না উল্টে বাচ্চার সমস্যা হতে পারে।
10. বাড়ির তৈরী খাবার খান
যতটা সম্ভব বাড়ির তৈরী খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন কারণ এগুলি স্বাস্থ্যবিধি মেনে তৈরী করা হয়, যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে ব্যাঘাত ঘটাবে না।
11. রেস্তোরার খাবার বুঝে শুনে খান
আমরা সবাই জানি রেস্তোরার খাবার বেশি খেলে ওজন বাড়বেই। তাই বলে কি আপনি খাবেন না , সেটা নয়। তবে তার পরিমান হতে হবে পরিমিত ও ঘন ঘন এই ধরণের খাবার খাবেন না।
12. নিজেকে সক্রিয় রাখুন
নিজেকে সবসময় দৈনন্দিন কাজে সক্রিয় রাখুন, দেখবেন এতে শরীর ও মন উভয়ই ভালো থাকবে।
13. হালকা ব্যায়াম করুন
নিয়মিত হাঁটুন ও হালকাভাবে জগিং করুন তবে শরীরকে বেশি চাপ দেবেন না কারণ বাচ্চা হওয়ার পর এমনিতেই শরীরে অনেক ধরণের পরিবর্তন আসে (14)।
14. বাচ্চাকে ব্রেস্টফিডিং করান
গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, টানা ছয় মাস ধরে বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করালে ক্যালোরি খরচ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় (15) ।
15. পর্যাপ্ত ঘুম
ওজন কমানোর প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ঘুমের খুবই প্রয়োজন, তাই অবশ্যই দিনে সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমোবেন।
প্রসবের পরে ওজন কমানোর জন্য যোগব্যায়াম
1. সূর্য নমস্কার
প্রথমে হাত ও পা জোড় করে নমস্কার করার ভঙ্গিতে দাঁড়ান। তারপর হাতের তালুতে তালুতে খুব জোরে চাপুন যাতে বুকের পেশি শক্ত হয়। তারপর এই চাপ একই রেখে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে হাত তুলে পেছনে বেঁকিয়ে দিন । এরপর সামনে ঝুঁকে হাতদুটি পায়ের সামনে মাটিতে রেখে পদহস্তাসন করুন। এই অবস্থায় হাঁটু ভেঙে বসুন। ওই অবস্থায় ডান পা পেছনে সোজা করে দিন। তারপর হাঁটু থেকে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে বাঁ পাও পেছনে সোজা করে দিন। এ বার ডনের ভঙ্গিতে হাতের জোরে নামুন। ডন থেকে ধীরে ধীরে উঠুন। বাঁ পা আগের অবস্থানে ভাঁজ করে সামনে নিয়ে আসুন। মাথা নামিয়ে দিন । ডান পা ভাঁজ করে সামনের দিকে নিয়ে আসুন। নিতম্ব গোড়ালিতে লাগিয়ে বসে পড়ুন । আবার নিতম্ব তুলে সোজা রেখে পদহস্তাসন করুন। এ বার হাত তুলে অর্ধচন্দ্রাসনের ভঙ্গিতে পেছনে বেঁকিয়ে দিন । সেখান থেকে সোজা হয়ে হাত জোড় করে নমস্কার করার অবস্থানে ফিরে আসুন।
2. ধনুরাসন
মাটিতে উপুড় হয়ে শুয়ে পা অল্প ছড়িয়ে দিন। এবার হাঁটু ভাঁজ করে হাত দিয়ে গোড়ালি টেনে ধরে রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন। মাটি থেকে বুককে ধীরে ধীরে উপরে তুলুন। দেখবেন হাত এবং উরুতে টান অনুভব করবেন। বারো থেকে পনেরো সেকেন্ড এইভাবে থাকুন। তারপর গভীর শ্বাস নিয়ে পা ছাড়ুন। কিছুক্ষন পর একই পদ্ধতির পুনরাবৃত্তি করুন।
3. উষ্ট্রাসন
প্রথমে বজ্রাসনে বসুন। তারপর পুরো শরীরের ভর হাঁটুর ওপর দিয়ে পিছনের দিকে হেলে হাত দুটি দিয়ে দুটি পায়ের গোড়ালি ছুঁয়ে ফেলুন এক এক করে, নাহলে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবেন। এই ভঙ্গিমায় কুড়ি থেকে তিরিশ সেকেন্ড থাকার চেষ্টা করুন। তারপর আবার বজ্রাসনে ফিরে আসুন। তারপর পনেরো সেকেন্ড অপেক্ষা করে আবার এই যোগাসনের পুনরাবৃত্তি করুন।
4. পশ্চিমোত্তানাসন
প্রথমে দুই পা সোজা করে ছড়িয়ে বসুন । তারপর দুই হাত সোজা করে ডান হাতের বৃদ্ধা ও তর্জনী দিয়ে ডান পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল এবং বাম হাতের বৃদ্ধা ও তর্জনী দিয়ে বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুল ধরুন । এবার সামনের দিকে ঝুকুন। সামনের দিকে ঝুঁকে দুই হাঁটুতে মাথা লাগাবেন। এখন দু হাতেরই কনুই ভাঁজ করে দুই পায়ের বাইরের দিকে নামিয়ে পা পুরো সোজা রাখুন। এই ভঙ্গিমায় বুক ও পেটকে পায়ের সাথে লাগিয়ে রাখতে হবে । এইভাবে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড থেকে ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে উঠিয়ে নিন মাথা। একই পদ্ধতি আবার পুনরাবৃত্তি করুন।
5. শবাসন
উপরে উল্লেখিত সব আসন করার পর আপনার শরীরের চাই বিশ্রাম। তাই সবশেষে এই আসন অভ্যেস করা জরুরি। কোনো সমতল জায়গায় চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। হাত পা আলগা করে দিন। চোখ বন্ধ করে ধীরে ধীরে শ্বাস প্রশ্বাস ছাড়তে থাকুন। পুরো শরীরকে রিলাক্স করতে দিন।
তবে মনে রাখবেন, যোগব্যায়াম শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নিয়ে নেবেন।
গর্ভাবস্থার পরে ওজন বা পেট কমানোর ঘরোয়া উপায়
নিয়মিত যোগব্যায়াম করার পাশাপাশি নিজেকে সবসময় সক্রিয় রাখুন। পরিমিত ও সঠিক খাবার খান, মনে রাখবেন শরীরে যেন সঠিক পুষ্টি যায় যা আপনার ওজন কমানোর প্রক্রিয়াকে সহজ করবে ও বাচ্চার জন্যও এটি উপকারী। রোজ রাতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই জল সকালে উঠে পান করতে পারেন, এটি নাকি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থার পরে ওজন কমাতে কত সময় লাগে
ডেলিভারির পর ওজন কমাতে ছয় মাস থেকে এক বছর লাগতে পারে বলে জানা যায় (5) ।
ডেলিভারির পর বাচ্চার যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি নিজের যত্ন নিতে ভুলবেন না কিন্তু।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী :
1. বুকের দুধ খাওয়ালে কি তা ওজন কমাতে সহায়তা করে ?
উঃ হ্যাঁ, টানা ছয় মাস ধরে বাচ্চাকে বুকের দুধ পান করালে তা ওজন কমাতে সাহায্য করে।
2. ডেলিভারির পরে দিনে কত ক্যালরি দরকার?
উঃ 1800 কিলো ক্যালোরি। তবে এ সম্পর্কে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।
References
2. Predictors of Postpartum Weight Change Among Overweight and Obese Women: Results from the Active Mothers Postpartum Study by JOURNAL OF WOMEN’S HEALTH
3. The Medical Risks of Obesity by National Institutes of Health
4. The Relationship between Gestational Weight Gain and Postpartum Depression in Normal and Overweight Pregnant Women by Hindwai
5. Losing weight after pregnancy by medlineplus
6. Position of the Academy of Nutrition and Dietetics: Total Diet Approach to Healthy Eating by Journal of the Academy of Nutrition and Dietetics
7. Tips for Healthy Post-Partum Weight Loss by Journal of the Academy of Nutrition and Dietetics
8. Snacking in nutrition and health by International Journal of Food Sciences and Nutrition
9. Daily Food and Activity Diary by National Heart, Lung and Blood Institute
10. Increasing the number of chews before swallowing reduces meal size in normal-weight, overweight, and obese adults by PubMed.Gov
11. 4 Metabolism Myths and Facts by Academy of Nutrition and Dietetics
12. Maternal food restrictions during breastfeeding by NCBI
13. 3Factors That Influence Body Weight by NCBI
14. The Nutrition Source by Harvard T.H. Chan
15. Maternal weight-loss patterns during prolonged lactation by The American Journal of Clinical Nutrition
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.
Read full bio of Aastha Sirohi