গর্ভাবস্থার সপ্তম মাস । Seventh month Pregnancy
In This Article
জন্মের পর থেকে একটি শিশুর কাজের তালিকাটি থাকে ভীষণই ছোট। আর তার আওতায় থাকে দুধ খাওয়া, ঘুমোনো, কান্নাকাটি করা, খেলাধুলো আর নিজের জামা-কাপড় বা ন্যাপি নোংরা করা। এই সময়ে ভীষণ ধীর গতিতে শিশুর সামান্য শারীরিক বিকাশ হয়ে থাকে। এরপর মাস পেরোনোর সঙ্গে সঙ্গে শিশুর ওজন ও উচ্চতা দুইই বাড়তে থাকে। এই প্রবন্ধে আমরা আপনাদের জানাব যে প্রথম মাসে শিশুর ওজন এবং উচ্চতা ঠিক কত থাকে কিংবা কত হওয়া উচিত? শিশুকন্যা হলে জন্মের পর প্রথম মাসে তাদের ওজন সাধারণত ৩.৫ থেকে ৪.৯ কেজির মধ্যে এবং উচ্চতা থাকে ৫৩.৮ সেমি পর্যন্ত। আর শিশুটি ছেলে হলে তাদের ওজন এই সময় ৩.৭ থেকে ৫.৩ কিলো পর্যন্ত থাকে। আর তাদের উচ্চতা থাকে সাধারণত ৫৪.৮ সেমি পর্যন্ত।(1) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (WHO)- এর তরফেও মান্যতা দেওয়া হয়েছে এই তথ্যটিকে। তবে প্রত্যেক শিশুরই শারীরিক গঠন একজনের থেকে অন্যজনের আলাদা।ফলে বিকাশের গতিও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সকলের ক্ষেত্রেই যে এটি একদম ছকে বাধা হবে এমনটা নয়। তাই কারও কারও ক্ষেত্রে এই ওজন বা উচ্চতা কম-বেশি হতেই পারে। এতে ভয় পাওয়ার বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আর এর মানে এই নয় যে সেই শিশুর শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। তবে এই বিষয়ে আপনাকে আরও ভালোভাবে বলতে পারবেন সেই শিশুর চিকিৎসক।
আরও একটি বিষয় আজ জানিয়ে রাখি। প্রত্যেক বাবা-মায়েরই এই বিষয়টির জানা উচিৎ যে হন্মের সময় শিশুর ওজন যেমন ছিল, তারওপর নির্ভর করেই সেই শিশুর পরবর্তী ওজন বাড়া কমা করে। তাই বা-মায়েদের এমনটা কখনওই ভাবা উচিৎ নয় যে, শিশুর বয়স এত মাস হয়ে গেল তাহলে তার ওজন ওজন এত হওয়া উচিৎ। ঠিক যেমনভাবে শিশুর বিকাশ ঘটবে, ঠিক সেভাবেই বাড়তে থাকবে তার ওজন। এবার আসুন আমরা জেনে নিই ১ মাসের শিশুর মধ্যে ঠিক কী কী পরিবর্তন দেখা দেয়।
মাসের শিশুর বিকাশের দৃষ্টান্ত কী কী হতে পারে?
জন্মের পর থেকেই শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। একদম শুরুর দিকে দেখা যায় যে শিশু চোখ পর্যন্ত খুলতে পারে না। এই অবস্থাকে চলতি ভাষায় বলা হয় শিশুর চোখ না ফোটা। আবার কয়েকদিন পর থেকেই শিশুর মস্তিষ্ক ও শরীরের পাশাপাশি তার সামাজিক বিকাশও ঘটতে থাকে। এই তিন প্রকারের বিকাশের বিষয় নিয়েই আমরা আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন দেখে নিই, শিশুদের জ্ঞানীয় বিকাশের দৃষ্টান্তগুলি কী কী?
খিদে বোধঃ জন্মের একদম পরপর শিশুদের মধ্যে খিদেবোধ খুব একটা থাকে না। সেইজন্য মা যখনই তাকে দুধ খাওয়ায়, সে খেয়ে নেয়। কিন্তু শিশুর বয়স একমাস হওয়া মাত্রই সে বুঝতে পারে কখন তার খিদে পেয়েছে। অর্থাৎ এই সময় থেকে তার মধ্যে খিদে বোধ জাগতে শুরু করে। তাই মায়েদের উচিৎ এই বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া। ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, শিশুরা একটি নির্দিষ্ট সময়ই খাওয়ার জন্য নিশ্চিত করে নিয়েছে। আর ঠিক সেই সময়েই সে কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাই সেই কান্নার অর্থই হল তার খিদে পেয়েছে।
স্বাদ বুঝতে শেখেঃ একমাস বয়সী শিশুর মানে সে ভীষণই ছোট। আর এই বয়সী শিশুরা মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। তবু এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই সে স্বাদ বুঝতে পারে এবং কিছু কিছু স্বাদ আলাদা করার ক্ষমতাও পায়। তাই মা যদি এই সময় নিজের নিয়মের বাইরে একটু আলাদা কিছু খেয়েও ফেলে, সেটাও সেই শিশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে যায়। এমনকি শিশু এই সময় মাতৃদুগ্ধের গন্ধ অবধি আলাদা করে বুঝতে পারে (2)।
বস্তু বা ব্যক্তিকে চিনতে পারেঃ একমাস বয়সী একটি শিশুর মস্তিষ্কের অনেকটাই বিকাশ ঘটে। এর ফলে এই সময় থেকে সে খুব প্রিয় বা কাছের কিছু মানুষ এবং নিজের পছন্দের জিনিসপত্র খুব ভালো করে চিনতে পারে। বিশেষ করে নিজের মাকে তো ভীষণ ভালো ভাবে চিনতে পারে। এছাড়া কোনও একটি জিনিস নিয়ে যদি আপনি অনেকক্ষণ অবধি সেই জিনিসটি তার চোখের সামনে ধরে রাখেন, তাহলেও সে সেই জিনিসটি চিনে ফেলে। তবে অনেক শিশুর মধ্যে নির্দিষ্ট এই বোধটি তৈরী হতে অনেক সময় ৬ থেকে ১০ মাস অবধি সময় লেগে যায়। তাই যদি কোনও শিশু ১ মাস বয়স থেকেই জিনিস চিনে মনে রাখতে কিংবা চিনতেই না পারে, তাহলে নিয়ে চিন্তিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
জিনিসের প্রকৃতি এবং গন্ধের বোধঃ এই সময় থেকেই অধিকাংশ শিশু শক্ত, কঠিন এবং ধারালো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে যায়। এই বিষয়ে এই সময় থেকেই তার মধ্যে একটা আলাদা বোধ তৈরী হতে শুরু করে। এছাড়া ভালো ও খারাপ গন্ধের মধ্যে পার্থক্য করতেও শিখে যায় এক মাস বয়সী শিশুদের অনেকেই।
শারীরিক বিকাশ
এবার আমরা আলোচনা করব শিশুদের শারীরিক বিকাশের মাইল ফলক নিয়ে। চলুন দেখে নিই এই সময়ে শিশুদের মধ্যে কী কী পরিবর্তন আসে।
জোরে হাত ছুড়তে পারেঃ এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই শিশু জোরে জোরে নিজের হাত ছুড়তে পারে। এর থেকেই বোঝা যায় যে শিশুর মাংসপেশির বিকাশ দ্রুত গতিতে এবং সঠিকভাবে হচ্ছে।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনঃ এই সময় থেকে শিশু নিজের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সক্ষম হয়ে ওঠে। কারোর সাহায্য ছাড়াই সে নিজের হাত-পা নাড়াতে পারে (3)।
নিজেকে স্পর্শ করতে পারেঃ এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই শিশু নিজের হাত দিয়ে অন্য হাত, মুখ, চোখ, কান এবং নিজের গা স্পর্শ করতে পারে।
পেছন দিকে ঘাড় বেঁকে যাওয়াঃ শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশের বেশ খানিকটা এই সময়ে বিকশিত হয়। কিন্তু সেই বিকাশ এতটাও নয় যে সে নিজের মাথা বা ঘাড়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। অর্থাৎ এই সময়েও সে নিজের মাথা বা ঘাড় সামলাতে পারে না। এক মাস বয়স চলাকালীন যদি একু তাকে কখনও কোলে নেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় তার মাথা পেছন দিকে হেলে যায়। অনেক সময় এইভাবে তার ঘাড়ে চোটও লাগতে পারে। তাই এই বিষয়টির দিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখা উচিৎ। তবে এনিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। বরং এর থেকে বোঝা যায় যে, শিশুর বিকাশ একদম সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়েই হচ্ছে।
মাথা তোলার চেষ্টাঃ এই বয়সের শিশুকে যদি কখনও উপুড় করে শুইয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে সে নিজের মাথা তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গলার মাংসপেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রে বিকাশ ঘটার কারণেই শিশু নিজের ঘাড় ও মাথা তুলতে চেষ্টা করে।
হাতের মুঠোয় জিনিস ধরতে পারেঃ এই সময়ে যদি কেউ নিজের আঙুল বা কোনও জিনিস শিশুর হাতে রাখেন, তাহলে শিশু নিজের সব শক্তি দিয়ে তা নিজের মুঠোর মধ্যে ধরার চেষ্টা করে। এমনকি শিশুর আশেপাশে কোনও জিনিস পড়ে থাকলে কিংবা হাতের কাছে কিছু পেলেও সে তা নিজের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করে। (4)
জিনিসের ওপর নজর রাখেঃ অনেক সময় হয় খেলাচ্ছলে কেউ শিশুর চোখের সামনে গিয়ে কোনও জিনিস ধরে থাকল। এরকমই কোনও জিনিসের ওপর যদি শিশুর নজর একবার চলে যায় বা সেই জিনিস্টি যদি শিশুকে আকর্ষিত করে, তাহলে ওই বস্তুটি আপনি শিশুর সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর যেখানেই রাখুন না কেন তার নজর বারবার সেখানেই চলে যাবে। এমনকি শিশুর চেয়ে ৮-১২ ইঞ্চি দূরে রাখা জিনিসও সে ভালোভাবে দেখতে পায়।
কম ঘুমের সমস্যাঃ সাধারণতঃ একটি শিশু দিনের বেলা আট থেকে নয় ঘণ্টা এবং রাতে মোটামোটি আট ঘণ্টা অবধি ঘুমোতে পারে। তবে কখনওই সেই টানা একেবারে ঘুমোয় না। প্রত্যেকবারে সে মোটে এক থেকে ঘণ্টা দুয়েক অবধি ঘুমোয়। তাই বলে যেতে পারে যে, প্রথম মাসে শিশু একটি গোতা দিন অর্থাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। কিন্তু এক মাস বয়স হতে হতে তার সেই ঘুমের পরিমাণ আধ ঘণ্টা অবধি কম হয়ে যায়। (5)
গতিবিধি বা চাল-চলনঃ প্রত্যেক শিশুই জন্মের সময় থেকে বিভিন্ন ধরনের চাল-চলন করে কিংবা নিজের গতিবিধি নিজেরাই তৈরি করে নেয়। কিন্তু এক মাস বয়স হতেই সেই গতিবিধি বাড়তে থাকে। (6) আর প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রেই এই গতিবিধি সম্পূর্ণ আলাদা হয়। তাই ডাক্তারেরা শিশুর প্রত্যেকটি চাল-চলন বা হাবভাব ভীষণ গুরুত্ব দিতে পরীক্ষা করেন। আর যদি শিশুর সেই চাল-চলনে কোনও প্রকার খামতি থেকে থাকে, তাহলে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সামাজিক এবং মানসিক বিকাশ
এবার আপনাদের জানাব শিশুর সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের দিকগুলির তথ্য। চলুন শুরু করা যাক।
কান্নাকাটি করে নিজের কথা বোঝাতে চাওয়াঃ এই বিষয়ে সম্পর্কে সকলেই জানেন যে এক মাস বয়সী একটি শিশু কেবলমাত্র কেঁদেই নিজের প্রয়োজন বা সমস্যার কথা বড়দের বোঝাতে পারে। যেমন কান্নাকাটির মাধ্যমে সে কখনও বোঝায় যে তার খিদে পেয়েছে, আবার কখনও সে বোঝায় যে সে কোনও সমস্যায় রয়েছে। আবার কখনও শুধুমাত্রে সকলের দৃষ্টি নিজের দিকে ঘোরানোর জন্যও শিশুরা কান্নাকাটি করে থাকে। এই বয়সী শিশুরা সবসময় চায় যে সকলেই কেবলমাত্র তার দিকে নজর রাখুক। আর কান্না দেখে যখনই শিশুর মা তাকে নিজের কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে সে চুপ করে যায়।
আওয়াজ চিনতে পারেঃ এই বয়সে এসে শিশুরা বাড়ির সদস্যদের আওয়াজ বেশি ভালো করে চিনতে পারে। বিশেষ করে নিজের মায়ের আওয়াজ সে সবচেয়ে ভালো করে বুঝতে পারে। এমনকি কেউ কথা বললে কিংবা কোনও দিক থেকে কোনও আওয়াজ এলেই সে নিজের মাথা সেইদিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তাকাতে এবং নজর মেলাতে পারেঃ আপনি জেনে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে এই বয়সের শিশুরা যেকোনও জিনিসের দিকে ভালো করে অর্থাৎ এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে। যদি বড় বা অপরিচিত কেউ শিশুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে শিশুটি প্রথমে তাঁর মুখের দিকে তাকায় এবং তারপর তার চোখের দিকে তাকায়। (7)
স্পর্শ বুঝতে পারেঃ কোনও কঠোর হাতের কেউ যদি শিশুর শরীরে হাত রাখে কিংবা কেউ যদি নরম হাত দিয়েও শিশুকে ধরে, তাহলে শিশু দু’রকম স্পর্শই আলাদা করে বুঝতে পারে। শুধু তাইই নয়, বরং সেই স্পর্শ অনুযায়ীই সে হেসে কিংবা কেঁদে নিজের প্রতিক্রিয়া দেয়। যদি কেউ আসতে করে শিশুকে কোলে নেয়, কিংবা আলতো করে শিশুর শরীরে স্পর্শ করে, তাকে দোলনায় দোল খাওয়ায় তাহলে শিশু এই প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করে উপভোগ করে।
এবার আমরা নীচের অংশে আলোচনা করব যে, যখন শিশুর বয়স এক মাস হয়ে যায়, তখন তার কোন কোন টীকাকরণ হয়ে যাওয়া উচিৎ।
১ মাস বয়সী বাচ্চাকে কী কী ভ্যাকসিন বা টীকা দিতে হবে?
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রত্যেক শিশুকেই জরুরি কিছু টীকা দেওয়া হয়ে থাকে। ভারতে অর্থাৎ আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকেই শিশুদের সমস্ত টীকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। সরকারের তরফে চালু থাকা রাষ্ট্রীয় টীকাকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমেই মূলত এই টীকাকরণগুলি হয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং অঙ্গনওয়াড়িতে এই টীকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই টীকাকরণের জন্য কিছু মূল্য ধার্য করা থাকে। তাই সেখানে শিশুর টীকাকরণ করাতে গেলে টাকা-পয়সার লেনদেন আবশ্যক। এবার চলুন দেখে নিই কী কী টীকা শিশুকে দেওয়া হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শিশুকে যে যে টীকাগুলি দেওয়া হয়ে থাকে তা নীচে আলোচনা করা হল।
বিসিজি
হেপাটাইটিস বি-১
ওপিবি (জিরো ডোজ)
ডিটি ডব্লিউ পি-১
আইপিবি-১
হেপাটাইটিস বি-২
হিব-১
রোটাভাইরাস-১
পিসিবি-১
এবার প্রতিবেদনের নীচের অংশে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব শিশুর প্রত্যেকদিনের চাহিদা নিয়ে। অর্থাৎ খাবার, ঘুম এসবের কোনটি শিশুর কত পরিমাণে প্রয়োজন সেই তথ্যই আমরা তুলে ধরব আপনাদের সামনে।
১ মাস বয়সী শিশুকে ঠিক কত পরিমাণ দুধ খাওয়ানো উচিৎ?
জন্মের একদম পরপর শিশুর পাচনতন্ত্র খুব বেশি শক্তিশালী থাকে না। বরং এই সময় তা অনেকটাই দুর্বল থাকে। তাই ১ মাস বয়সে একজন শিশু একবারে খুব কম পরিমাণেই দুধ খেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, মায়ের বুকের দুধ এবং বাজারজাত ফর্মুলা দুধের মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য থাকে। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমরা আজ আপনাদের জানাব যে এক মাস বয়সী একটি শিশু কত পরিমাণে মায়ের দুধ কিংবা বাজারজাত ফর্মুলা দুধ খেতে পারে, কিংবা খাওয়ানো উচিৎ।
মাতৃদুগ্ধঃ সদ্যোজাত শিশুদের পেট যে খুব ছোট হয় তা বলাই বাহুল্য। তাই জন্মের একদম পর থেকে পরের এক সপ্তাহ পর্যন্ত সে কেবলমাত্র ৩০-৬০ মিলিলিটার দুধই খেতে পারে। তবে শিশুর বয়স এক মাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি শিশুর পাচনতন্ত্রও আগের থেকে বেশি ভালো করে কাজ করে। এই সময় শিশু প্রত্যেক দু-চার ঘণ্টা অন্তর অন্তর একবারে ৯০-১২০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ খেতে পারে। এভাবে সে গোটা দিনে প্রায় ৯০০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ ভালো ভাবে খেয়ে থাকে। (8)
বাজারজাত ফর্মুলা দুধঃ এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে জানিয়ে রাখি যে একজন সদ্যোজাত শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে ভালো দুধ কিংবা খাবার আর কিছু হতেই পারে না। তবু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বা বাধ্য হয়ে অনেক সময় শিশুকে বাজারজাত ফর্মুলা দুধ দিতেই হয়। তাই খুব সমস্যা না হলে মায়েদের উচিৎ, শিশুর বয়স অন্তত তিন সপ্তাহ না হলে তাকে ফর্মুলা দুধ না দেওয়া। আর বাজারজাত এই ফর্মুলা দুধ দিতে হলে শিশুকে ১১০ মিলিলিটারের বেশি দুধ খাওয়ানো একেবারেই উচিৎ না। এবং খেয়াল রাখবেন, এই পরিমাণ দুধ শিশুকে খাওয়ানোর মাঝে প্রত্যেকবার যেন অন্তত চার ঘণ্টার অন্তর থাকে। (9)
এবার আমরা আলোচনা করব শিশুর ঘুম ও ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।
১ মাস বয়সী শিশুর কতটা ঘুম প্রয়োজন?
জন্মের একদম পরপর ঘুমের জন্য শিশুর কোনও নির্দিষ্ট কিংবা নির্ধারিত সময় থাকে না। সে একটি গোটা দিনের অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। কারণ, এত ছোট শিশুর পক্ষে দিন এবং রাতের পার্থক্য করা একেবারেই সম্ভব হয় না। দিনের বেলা একটি শিশু চার থেকে পাঁচবার ঘুমোয় এবং প্রত্যেকবার মাত্র ১-২ ঘণ্টা পর্যন্তই সে ঘুমোতে পারে। একইভাবে রাতেও সে আট ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমোয় কিন্তু এর মাঝে মাঝে বারবার তার ঘুম ভেঙেও যায়। এক মাসেরও কম বয়সী কোনও শিশুই কখনও টানা অন্তত ৪-৫ ঘণ্টাও ঘুমোতে পারে না। ঠিক এই কারণে শিশুর বাবা-মায়ের পক্ষেও একটানা ঘুমোনো সম্ভব হয় না। আবার শিশুর বয়স একমাস হয়ে গেলে সে তার আগের ঘুমোনোর মোট সময়ের তুলনায় আধ ঘণ্টা কম ঘুমোয়।তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খুব ধীর গতিতে হলেও তার ঘুমোনোর একটি রুটিন তৈরী হয়ে যায়।
এবার আমরা জানাব এক মাস বয়সী শিশুদের চাল-চলন, হাবভাব ও গতি-প্রকৃতি সম্বন্ধে। তা জানতে পড়তে থাকুন আমাদের এই প্রতিবেদনটি।
১ মাস বয়সী শিশুদের খেলাধুলো, চাল-চলন ও গতিপ্রকৃতি
আমরা সকলেই এইটুকু অন্তত জানি যে, এত ছোট একটি শিশু নিজে থেকে উঠে বসতে পারে না, কিংবা নিজের হাঁটুতে ভর দিয়ে চলাফেরা অর্থাৎ হামাগুড়িও দিতে শেখে না। তাই পিঠে ভর অর্থাৎ চিৎ হয়ে শুয়েই সে তার যাবতীয় খেলাধুলো করে, হাত-পা ছোড়ে। প্রতিক্রিয়া দিয়ে হাসি-কান্নার পাশাপাশি সে মুখ দিয়েও বিভিন্ন ধরনের আওয়াজ করে থাকে। আবার কখনও যদি কেউ শিশুকে পেটের ওপর ভর দিয়ে অর্থাত উপুড় করে শুইয়ে দেয়, তাহলে সে নিজের মাথা-ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে এদিক ওদিক দেখার চেষ্টা করে। এমনকি নিজের পায়ে ভর দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। শিশুর শরীরের মাংশপেশির বিকাশের জন্য একমাস বয়সী শিশুকে মাঝে-মাঝেই পেটের ওপর ভর দিয়ে অর্থাৎ উপুড় করে শুইয়ে দেওয়া উচিৎ।
এবার শিশুর স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সেই তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরব।
এক মাস বয়সী বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নিয়ে তার বাবা-মায়ের উদ্বেগ ও চিন্তা
এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই শিশুর মানসিক ও সামাজিক বিকাশের পাশাপাশি শরীরের বিকাশও খুব দ্রুত গতিতে হতে শুরু করে। তবে এই সময় কিছু কিছু শিশুর শরীরে স্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় বেশ কিছু সমস্যাও দেখা দেয়। যেহেতু তাদের মুখে বুলি তখনই ফোটে না, তাই এক মাস বয়সী শিশুরা তাদের সমস্যার কথা বোঝাতে কান্নাকাটি শুরু করে। তবে শিশুর কান্নার ধরন অনুযায়ী তার বাবা-মা তার সমস্যার কথা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পেরে যায়। যে লক্ষণ দেখে বা যে উপায়ে শিশুর বাবা-মা তার সমস্যার কথা আন্দাজ করতে পারে, সেগুলি নিয়ে নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
১. কোষ্ঠকাঠিন্যঃ যখন কোনও শিশু মলত্যাগ করতে ১০-১৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় লাগায়, কিংবা মলত্যাগ করার সময় যদি শিশুর মুখ লাল হয়ে যায় অথবা যদি শিশু তিন দিন পর্যন্ত মলত্যাগ না করে, তাহলে বুঝতে হবে যে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে। (10)
২. কাশিঃ ঠাণ্ডা লেগে গিয়ে সর্দি থেকে অনেক সময় শিশুদের কাশি শুরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে আবার যেমন অনেক ক্ষেত্রে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় তেমনই শ্বাস নিতেও অনেক শিশুর ভীষণ সমস্যা হয়।
৩. ক্র্যাডল ক্যাপঃ অনেক সময় শিশুর মাথায় দেখা যায় চাপ-চাপ, দানা দানা কিছু প্যাচ। এটি হল ক্র্যাডল ক্যাপের লক্ষণ। অনেক সময় মাথা ধুয়ে নিলেই আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু যদি তা নিজে নিজে ঠিক না হয়, তাহলে একটুও সময় নষ্ট না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ।
৪. ডায়ারিয়াঃ শিশু মলত্যাগ করার পর যদি দেখেন সেটি একেবারে জলের মতো পাতলা হচ্ছে, এবং তা বারবার হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুর শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেছে। অর্থাৎ ডি-হাইড্রেশন থেকে শিশুর শরীরের ডায়ারিয়া হয়ে থাকে। তাই শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। সাধারণত দুধ খাওয়ার পরেই শিশুরা সামান্য পরিমাণে সামান্য শক্ত কিংবা সামান্য পাতলা মলত্যাগ করে থাকে। মূলত গতাস্ট্রোকোলিক রিফ্লেক্সের জন্যই এমনটা হয়ে থাকে এবং এটা ভীষণই স্বাভাবিক।
৫. বমিঃ যে কোনও খাবার খাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই যদি শিশু বারবার বমি করে ফেলে, তাহলে এটি কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। এবং এর পাশাপাশি যদি তার শরীরে জ্বর এবং ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।
৬. ব্রণঃ জন্মের পর থেকে প্রথম মাসের মধ্যে অনেক শিশুর মুখেই ছোট ছোট ব্রণ দেখতে পাওয়া যায়। যখন শিশু মায়ের গর্ভে থাকে, তখন প্ল্যাসেন্টায় তেলীয় গ্রন্থি সক্রিয় হলে হরমোনে ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। সেই থেকেই শিশুর মুখে এই ব্রণ দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই অবস্থার একদম শুরু শুরুতেই যদি শিশুর খেয়াল ভালো করে রাখা যায়, তাহলে এই ব্রণর সমস্যা কিছু সময় পর নিজে নিজেই সেরে যায়।
৭. গ্যাসঃ যদি দেখেন অন্যান্য দিনের তুলনায় শিশু বেশি কান্নাকাট করছে, তাহলে বুঝবেন যে শিশুর গ্যাসের সমস্যা হয়েছে। আবার যদি দেখেন গ্যাস বের করার সময়ও শিশু কান্নাকাটি করছে, তাহলে বুঝতে হবে এটি সামান্য নয়, বরং গুরুতর কিছু সমস্যা। তাই যদি আপনি এই সময় শিশুকে পেটে ভর দিয়ে অর্থাৎ উপুড় করে শুইয়ে দেন, তাহলে সে এই অস্বস্তির হাত থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পেতে পারে। কিন্তু তাও যদি শিশুর অস্বস্তি বা কান্নাকাটি না কমে, তাহলে আপনি দ্রুত ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিন।
৮. অ্যালার্জিঃ শিশুরা যেহেতু জন্মের পর থেকেই মাতৃদুগ্ধ পান করে, তাই মায়েদের উচিৎ খুব হালকা খাবার নিয়ম মতো খাওয়া। কারণ মায়েরা যা খাবার খায়, অনেক সময় দেখা যায় যে সেই খাবারে শিশুর অ্যালার্জি আছে। ফলে তা শিশুর শরীরে সমস্যা ও অস্বস্তি ঘটাতে পারে।
৯. কোলিকঃ এই রোগেও শিশুর পেটে গ্যাস হয় এবং সে অত্যন্ত অস্বস্তি বোধ করে। ফলে সে টানা এবং ভীষণ উচ্চস্বরে কাঁদতে থাকে।
শিশুর শোনা, দেখা এবং অন্যান্য বোধ
এবার আমরা আপনাদের জানাব এক মাস বয়সী শিশুদের শ্রবণ, দৃষ্টি এবং তাদের অন্যান্য বোধগুলির বিষয়ে। আপনাদের অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে আপনার শিশু এই বয়সে কী দেখতে পায় কিংবা কী শুনতে পায়। সেই নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করব আজ। চলুন দেখা যাক সেই প্রশ্নগুলির উত্তর-
আমার বাচ্চা কি দেখতে পায়?
এক মাস বয়সী শিশুরা অনেকটাই বিকশিত হয়ে যায়। এই সময়ে তারা তাদের আশেপাশের জিনিস, মানুষ এবং ঘটে চলা সমস্ত কাণ্ড-কারখানাই দেখতে পায়। এছাড়া যদি শিশুর চোখের ওপর কেউ হালকা করে ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে ধরে কিংবা আচমকাই যদি তার চোখে কোনও আলোর রোশনাই এসে পড়ে, তাহলে সংগে সঙ্গে চোখের পলক ফেলতে পারে।
আমার সন্তান কি শুনতে পায়?
বয়সে ছোট হলেও শিশুর কান এক মাস হতে না হতে অনেকটাই বিকশিত হয়ে যায়। যদি দেখেন যে আপনার কোনও কথার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছে কিংবা আপনার কথায় সে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, তাহলে বুঝবেন যে শিশুর কান বিকশিত হয়ে গিয়েছে। আবার কোনও জায়গা থেকে জোরে আওয়াজ এলে, শিশুর নিজের মাথা ঘুরিয়ে সেই দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।
আমার সন্তান কি স্বাদ কিংবা গন্ধ আলাদা করে বুঝতে পারে?
মানা হয়, এক মাস বয়সী শিশুরা স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা করে বুঝতে পারে। মায়ের দুধের স্বাদ একটু আলাদা হলেই তারা সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারে। যদি মায়ের দুধে তারা সামান্য কিছু স্বাদের পার্থক্যও বুঝতে পারে, তাহলে কিছুতেই তারা সেই দুধ আর খেতে চায় না। পাশাপাশি মায়ের গায়ের গন্ধও শিশুরা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।
এবার আমরা আলোচনা করব কী করে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রাখতে হয়।
শিশুর পরিচ্ছন্নতা এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি
হতে পারে, সদ্যোজাত শিশুকে সামলানোর এই অভিজ্ঞতা আপনার জীবনে প্রথমবার এসেছে। কিন্তু এই প্রতিবেদনে বলা সমস্ত টিপস মেনে চললে আপনি খুব সহজেই আপনার শিশুকে বড় করতে পারবেন।
১. ডায়াপার বা ন্যাপি বদলানো – কিছু কিছু সময় পরপরই আপনার উচিৎ শিশুর ডায়াপার চেক করা। যদি দেখেন শিশু প্রস্রাব করে ডায়াপার ভিজিয়ে দিয়েছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি শিশুর ডায়াপার বদলে ফেলুন। আর ডায়াপার বদলানোর সময় ভালো করে শিশুকে পরিষ্কার করে মুছে দিন। নইলে জল বসে কিন্তু শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। শিশুকে এই সময় পরিষ্কার করার জন্য আপনি বেবি ওয়াইপস কিংবা বাজারজাত যে কোনও বেবি লোশন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শিশুকে বেশিক্ষণ ডায়াপার পরিয়ে রাখলে তার শরীরে র্যাশ বেরোচ্ছে। যদি এই র্যাশের সমস্যা আপনার শিশুর শরীরেও দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ভালো কোনও ডায়াপার র্যাশের ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া খুব প্রয়োজন না পড়লে শিশুকে ডায়াপার কম পরানোর চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে দিনে অন্তত দু’বার তাকে ডায়াপার না পরিয়ে এমনিই রাখুন।এতে শিশুর ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বসার সুযোগ পায়।
২. স্নান– শিশুকে স্নান করানোর আগে সব সময় হালকা গরম জল করে নিন। ওই জল দিয়েই শিশুকে স্নান করান। খুব ভালো হয় যদি এক মাস বয়সী শিশুকে আপনি এক দিন বাদে বাদে স্নান করাতে পারেন। তবে শিশুকে স্নান করানোর আগে সবসময় নিজের হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন। স্নান করানোর সময় শিশুর চোখ, কান এবং নাক হালকা হাতে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে শিশুকে স্নান করাবেন এবং চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব শিশুকে বাথটবে স্নান না করানোর।
৩. শিশুকে সব সময় পরিষ্কার রাখুন – প্রত্যেকবার দুধ খাওয়ার সময় বেশ কিছু শিশু কিছুটা বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলে। এবং কিছু সময় পর সেই দুধ সে মুখ দিয়ে বের করে দেয়। যদি আপনার সন্তানও ঠিক এমনটাই করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিষ্কার করিয়ে দিন। এর পাশাপাশি যদি আপনার মনে হয় যে ওর হাত-পায়ের নখ বড় হয়ে গিয়েছে, তাহলে খুব সাবধানতার সঙ্গে ওর হাত-পায়ের নখ কেটে দিন। নখ বড় থাকলে শিশু অনেক সময় নিজেকেই খামচে দেয় আবার নখের ভেতর জমা হয়ে বিভিন্ন নোংরা। তাই নখ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে দিলে এই দুই সমস্যার হাত থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
এবার আমরা জানাব যে শিশুর ছোট ছোট জিনিসগুলিতে কীভাবে নজর করলে বাবা-মায়েরা খুব সহজেই শিশুর বিকাশে তাকে সাহায্য করতে পারে।
কীভাবে বাবা-মা শিশুর বিকাশে তাকে সহায়তা করতে পারে সে সম্পর্কে সাধারণ পরামর্শ
এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের কিছু জরুরি টিপস দেব, যার সাহায্যে নতুন বাবা-মায়েরা খুব সহজেই নিজের শিশুর বিকাশে সাহায্য করতে পারবে।
- প্রত্যেক মুহূর্তে নিজের শিশুর শরীরে আসা পরিবর্তনগুলি খেয়াল করুন। যদি কিছু অস্বাভাবিক লক্ষণ খেয়াল করে থাকেন বা যদি আপনার মনে কিছু ঠিক নেই, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান এবং তার চেকআপ করান।
- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর ওজন এবং উচ্চতা কত বাড়ল-কমল সেই হিসেব একটি খাতায় লিখে রাখুন।
- নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর শিশুর টীকাকরণ করাতে ভুলবেন না। শিশুর সুস্থ ও স্বাভাবিক ভবিষ্যতের জন্য এটি ভীষণ জরুরি।
- একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিছুক্ষণের জন্য হলেও শিশুকে পেটের ওপর ভর দিয়ে অর্থাৎ উপুড় করে শুইয়ে রাখুন। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরাও বলেও যে, শিশুকে রোজ অন্তত পাঁচবার পেটের ওপর ভর দিয়ে শুইয়ে রাখা উচিৎ। আর প্রত্যেকবারই অন্তত দু-তিন মিনিট পর্যন্ত তাকে এভাবেই থাকতে দিন। এরপর যেমন যেমন ভাবে শিশুর বয়স বাড়তে থাকবে, ঠিক সেভাবেই এই পেটের ওপর ভর দিয়ে শিশুকে শুইয়ে রাখার সময়ও বাড়াতে হবে। এর ফলে শিশুর শরীরের বিকাশ আরও দ্রুত গতিতে হয়। আর খুব ভালো হয় যদি এই সময় আপনি ওর সামনে কোনও খেলনা রেখে দেন। এর ফলে শিশু ওই খেলনাটা হাতে নেওয়ার জন্য জোরে জোরে নিজের হাত-পা ছুড়তে থাকবে। তবে এমনটা করার সময় বাবা বা মায়ের মধ্যে কারোর একজনের উচিৎ শিশুর সামনে থাকা।
- খুব ভালো হয় যদি আপনি শিশুর সঙ্গে খেলাধুলোর জন্য কিহু সময় দিতে পারেন। এর ফলে দুটি সুবিধে হবে। এক, শিশু এভাবে বেশ সক্রিয় থাকতে পারবে আর দুই শিশুর সঙ্গে আপনার মনের টান আরও বেশি মজবুত হয়ে উঠবে।
- শিশুকে সব সময় একটি ঘরে বন্ধ করে রাখবেন না। মাঝে মাঝে তাকে রাস্তায় কিংবা পার্কেও ঘুরতে নিয়ে যাবেন। এতে তার শরীরের পাশাপাশি মনেরও বিকাশ ঘটবে।
১ মাস বয়সী শিশুর বৃদ্ধির বিষয়ে বাবা-মায়ের কখন চিন্তিত হওয়া উচিত?
এই অংশে আমরা আপনাদের কিছু লক্ষণের সম্পর্কে জানাব। সেই লক্ষঙুলি দেখেই আপনারা আন্দাজ করতে পারবেন যে শিশুর শরীর ও স্বাস্থ্য ভালো নেই।
যদি শিশু ঠিক ভাবে দুধ খেতে না চায়
যদি নিজের আশেপাশে পড়ে থাকা কোনও জিনিস নিয়ে তার সামনে নাড়াচারা করলেও কিংবা তা শিশুর সামনে নিয়ে আসার পরেও সেদিকে নজর না দিলে
চোখে আলো ফেললে বা পড়লে চোখের পলক না ফেললে
কোনও আওয়াজ শুনেও তার প্রতিক্রিয়া না দিলে
যদি শিশুর শরীর কিংবা মাংসপেশির কোনও অংশ ফুলে যায় এবং সে নিজের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ না নাড়ায়
যদি শিশু সম্পূর্ণ স্থির হয়ে শুয়ে থাকলেও মুখ বা থুতনি কাঁপতে থাকে।
এই মাসের জন্য চেকলিস্ট
১. নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী শিশুকে চেকআপের জন্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান।
২. ডাক্তারের কাছে জিজ্ঞেস করে নিন যে আপনার ভিটামিন-ডি সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার কোনও প্রয়োজন রয়েছে কিনা।
৩. শিশুর জন্মের পর থেকে পরবর্তী ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত তাকে বেশ কয়েক রকমের টীকা দেওয়া হয়। সেই টীকাগুলির নাম লিখে একটি তালিকা তৈরি করুন। সেই তালিকায় টীকাকরণের তারিখ লিখতে কিন্তু একদম ভুলবেন না। এর ফলে আপনারই সুবিধে হবে আপনার সন্তানের টীকাকরণের হিসেব রাখতে। এতে করে কোনও টীকা নেওয়া বাদ পড়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এবং বাদ পড়লেও তাতে সহজে নজর পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেই টীকা তাকে দিয়ে দেওয়া যায়।
৪. শিশু জন্ম দেওয়ার ছয় সপ্তাহ পর আপনি নিজেও নিজের চেকআপ করাতে ভুলবেন না।
৫. শিশুর বয়স এক মাস সম্পূর্ণ হলে অবশ্যই তার একটি ছবি তুলে রাখুন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নঃ
এবার জেনে নেব সেই প্রশ্নগুলির উত্তর যা অধিকাংশ নতুন মায়ের মনে প্রায়শই ঘোরাফেরা করে।
একটি নবজাতক বা ১ মাস বয়সী শিশুর জন্য কি প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক?
না, কোনও নবজাতক কিংবা ১ মাস বয়সী শিশুর জন্য প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক নয়। এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (WHO) বলে যে, প্যাসিফায়ার এত ছোট বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। এর ফলে শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাতৃ দুগ্ধ পান করা বন্ধ করে দেয়। তাই ঠিক যে সময়ে আপনি আপনার সন্তানের মাতৃ দুগ্ধ খাওয়ার অভ্যেস ছাড়াতে চান, তখন থেকে তাকে প্যাসিফায়ার দেওয়া উচিৎ।
আমি আমার কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে কীভাবে শান্ত করব?
অনবরত কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে আপনি গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে পারেন কিংবা তাকে কোলে নিয়ে বা দোলনায় দোল খাওয়াতে পারেন। আবার কিছু কিছু শিশু অন্য ধরনের গান শুনলেও শান্ত হয়ে যায়।
বাচ্চারা কেন কাঁদে?
শিশুদের কান্নাকাটি করার একাধিক কারণ হতে পারে। সেই কারঙুলি হল যদি তাদের খিদে পায়, কিংবা যদি ডায়াপার নোংরা হয়ে যায়, বা পেটে যদি কোলিন বা গ্যাসের কারণে ব্যথা করে, ঘুম পায়, অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকার যখন অস্বস্তিতে ভোগে, শরীর সুস্থ না থাকে, দুধ খাওয়ার পরে ঢেকুর তুলতে না পারে ইত্যাদি।
যেমন একটি ছোট্ট চারাগাছকে মহীরুহে পরিণত করতে ভীষণ ভালো সার এবং জলের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনই আপনার শিশুরও বড় হয়ে ওঠার জন্য প্রইয়োজন বিশেষ দেখভাল। যদি আপনার শিশুর বয়স এক মাস হয়ে থাকে, তাহলে এই প্রতিবেদনে দেওয়া টিপসগুলি আপনাকে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি কেবল ওর মনের পরিস্থিতিই না, বরং ওর মধ্যে আসা পরিবর্তনকেও আপনি ভালোভাবে বুঝতে ও অনুভব করতে পারবেন। আশা করি, এই প্রবন্ধে আলোচিত বিষয়বস্তু আপনার কাজে লাগবে। শিশুর দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য আপনার জানার হলে আমাদের বাকি প্রতিবেদনগুলিতে চোখ বোলাতে পারেন।
References
2.Developmental Milestones: 1 Month by healthy children
3. A Chart of Infant Behaviors by brown edu
4. Developmental Milestones: Fine Motor Skills and Visual Motor Skills by CHOC organisation
5. Bedtime habits for infants and children by Medlineplus
6. Newborn Reflexes by Rochester edu
7. Developmental Milestones: Birth to 12 Months by University of Pittsburgh
8. How Much and How Often to Breastfeed by CDC
9. Feeding Guide for the First Year by Rochester edu
10. Constipation in infants and children by Medline Plus
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.