গর্ভাবস্থার নয় মাস – লক্ষণ, শিশু বিকাশ এবং শারীরিক পরিবর্তন । Nine month pregnancy in Bengali
In This Article
গর্ভাবস্থায় নবম মাসটি হল আপনার থার্ড ট্রাইমেস্টারে প্রসবের আগের শেষ কয়েকটা দিন। শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়ায় এইসময় চলাফেরা করতে কষ্ট হয়। শরীর ভীষণ ভারী লাগে এবং অস্বস্তিকর মনে হয়। তার উপর মনের মধ্যে ভয় কাজ করে, নানা দুশ্চিন্তা হয়। সবকিছু ঠিক হবে তো? বাচ্চার জন্ম ঠিকভাবে হবে তো? ওর কোনও অসুবিধা হবে না তো? ইত্যাদি নানান চিন্তাভাবনা সারাক্ষণ মনের মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকে। তবে ভয় পেলে বা দুশ্চিন্তা করলে কিন্তু চলবে না। আর তো মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরই আপনার কোল আলো করে আসবে ছোট্ট সোনা। নিজের সন্তানকে বুকে টেনে নেওয়া মাত্রই সমস্ত ব্যথা, যন্ত্রণা, কষ্ট এক নিমেষে দূর হয়ে যাবে।
প্রেগন্যান্সির এই পর্যায়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়টা হল ধৈর্য ধরে থাকার এবং যতটা সম্ভব নিজেকে দুশ্চিন্তামুক্ত রাখার। ডেলিভারির সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে আপনাকে অনেকবেশি সচেতন থাকতে হবে এবং আপনার মধ্যে যে পরিবর্তনগুলি অনুভব করছেন তা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি। আমাদের এই প্রতিবেদনে গর্ভাবস্থার নবম মাসে একজন গর্ভবতীর শারীরিক পরিবর্তন, প্রসবের লক্ষণ এবং কী কী সতর্কতা মেনে চলা দরকার ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হল।
গর্ভাবস্থার নবম মাসে কী কী লক্ষণ দেখা দেয়?
গর্ভাবস্থার আগের কয়েকমাসে যে যে লক্ষণ দেখা দেয়, এই মাসেও সেগুলি সেগুলি অনুভব করতে পারবেন (1), (২)
- ওজন বৃদ্ধি : বিএমআই (BMI) অনুসারে ওজন বৃদ্ধি পায় (৩)
গরগর্ভাবস্থার সময় | বিএমআই | বিএমআই ২৫-৩০ | বিএমআই > ৩০ |
---|---|---|---|
৯ মাস | ৯-১১ কেজি | ৬-৮ কেজি | ৫-৬কেজি |
- ঘন ঘন প্রস্রাব : জরায়ু ব্লাডার বা মুত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি করে, ফলত ঘন ঘন প্রস্রাব হয়।
- যোনি স্রাব বেড়ে যায়, গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এই লক্ষণ থেকে বোঝা যায় প্রসবের সময় এগিয়ে আসছে।
- গর্ভাবস্থায় লেবিয়া বা যোনির ওষ্ঠসদৃশ অংশের পরিবর্তনগুলি সংঘটিত হয়ে থাকে। যোনির প্রাচীরগুলি লিউকোরিয়া নামক একটি দুধেল সাদা স্রাব উৎপান করার জন্য উদ্দীপ্ত হবে, যা আপনার স্ত্রী অংশগুলিকে যেকোনও সংক্রমণ থেকে মুক্ত রাখবে।
- ক্রমবর্ধমান জরায়ু পিঠের নীচের দিকে চাপ সৃষ্টি করে, যা থেকে কোমরে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়।
- জরায়ুর চাপে ইনফেরিয়র ভেনা কাভা (inferior vena cava) সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। রক্তনালীর উপর চাপ পড়ে, অনেক সময় এর থেকে শিরা ফুলে যায়।
- ভ্রণের চাহিদা পূরণ করতে শরীর অতিরিক্ত পরিশ্রম করে যার থেকে ক্লান্ত বোধ হয়।
- শরীরে অতিরিক্ত জল ধারণের কারণে অনেকসময় গোড়ালি ও পা ফুলে যায়।
- অতিরিক্ত ওজন, ভিটামিনের ঘাটতি, খুব বেশি পরিশ্রম বা একেবারেই কাজকর্ম না করা ইত্যাদি কারণে পায়ে ক্রাম্প হতে পারে (৪)।
- শরীরে যন্ত্রণা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে, যা অনিদ্রার কারণ হতে পারে।
- শিশুর বাড়তি ওজন থেকে চাপ সৃষ্টি হয় তার থেকে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।
- বাচ্চা যত নিচের দিকে আসে ডায়াফ্রামের উপর থেকে চাপ কমতে থাকে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা কমে।
- শরীর যেহেতু প্রসবের প্রস্তুতির চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে, ব্র্যাকটন-হিক্স সংকোচনের লক্ষণীয় হয়ে ওঠে।
এই পরিবর্তনগুলি শরীর ও মনে কী কী প্রভাব ফেলে, আরও জানতে পড়তে থাকুন।
ন’মাসে গর্ভবতী মহিলার শারীরিক পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভ্রুণের চূড়ান্ত বৃদ্ধির পর্যায়ের কারণে এইসময়টি গর্ভবতী মহিলার কাছে শারীরিক অবং মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ব্যথা, উদ্বেগ এবং কিছু জায়গায় ফোলাভাব তো আছেই, তাছাড়াও নানা শারীরিক পরিবর্তন দেখা দিতে পারে :
- পেট আরও প্রসারিত হয়। সোজা হয়ে দাঁড়ালে পা পর্যন্ত দেখা যায় না, পেট এতটাই বেড়ে যায়। নাভি বাইরের দিকে বেড়িয়ে আসে।
- স্তন থেকে কোলোস্ট্রাম নিসৃত হতে পারে, যা শিশুর প্রথম খাবার।
- স্তনবৃন্ত আরও গাঢ় রঙের হয়ে ওঠে।
- ক্রমবর্ধমান জরায়ু ত্বকের টিস্যুগুলোকে ছিঁড়ে ফেলে, যা স্ট্রেচ মার্কস তৈরি করে।
- হরমোনের পরিবর্তনের কারণে চুল সুন্দর হয়ে ওঠে এবং গোছও বেড়ে যায়।
- লিনিয়া নিগ্রা বা প্রেগন্যান্সি লাইন এইসময় আরও গাঢ় রঙের হয়ে ওঠে।
মানসিক পরিবর্তন
- শারীরিক পরিবর্তন ছাড়াও যে যে মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়, সেগুলি হল –
- মুড সুয়িং, মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ
- অমনোযোগী হয়ে ওঠা এবং ভুলে যাওয়া
- সন্তানের আগমনের প্রস্তুতি নিতে নানা চিন্তাভাবনা ঘোরাফেরা করে।
- এই পর্যায়ে শিশুর বিকাশ পুরোপুরি হয়ে এসেছে, যদিও প্রসবের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন বাড়তে থাকে এবং পরিবর্তিত হতে থাকে।
ন’মাসের গর্ভাবস্থায় শিশুর বিকাশ
গর্ভাবস্থার নবম মাস হল ৩৩ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত (৫)। এই সময়ের মধ্যে শিশুর আকার একটি আনারসের মতো বড় হয় (৬)।
শিশুর ওজন (৭) : ১.৯১৮ – ২.৬২২ কেজি
শিশুর দৈর্ঘ্য : ১৭.২ – ১৮.৭ ইঞ্চি (৪৩.৭ – ৪৭.৪ সেন্টিমিটার)
এই মাসে শিশুর বিকাশ কীভাবে হয় তা নিচের চার্টে তুলে ধরা হল (৮), (৯), (১০),(১১), (১২) :
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ | ডেভেলপমেন্ট |
---|---|
ত্বক | মসৃণ এবং গোলাপী। |
ফুসফুস | প্রায় সম্পূর্ণ গঠন হয়ে যায়। |
চোখ | খুলতে এবং বন্ধ করতে শুরু করে। শিশু চোখের পাতা ফেলতেও শিখে যায়। |
লেনুগো | পুরোপুরি চলে যায়। |
যৌনাঙ্গ | |
মাথা | চুল দিয়ে ঢেকে যায়। |
নোখ | নখদর্পণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। |
পেশী | সুঠাম এবং শিশু মাথা ঘোরাতে এবং মাথা তুলতে পারে। |
কান | কানের লতি নরম। |
প্রসবের আগে এটি আপনার সন্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এইসময় শিশুর সঠিক অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ।
নবম মাসে গর্ভস্থ শিশুর অবস্থান এবং নড়াচড়া
অবস্থান : গর্ভাবস্থার নবম মাসে শিশু বিভিন্ন অবস্থানে থাকতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাচ্চা গর্ভাবস্থার ৩৩-৩৬ সপ্তাহের মধ্যে অ্যান্টেরিয়র অবস্থানে চলে যায়, যা মাথা নিচু অবস্থান হিসেবেও পরিচিত। এই ভঙ্গিতে শিশুর মুখ মায়ের পিছনের দিকে ঘুরে থাকে এবং তার মাথা নিচের দিকে থাকে। আবার যখন কোনও শিশুর মুখ গর্ভবতী মহিলার পেটের দিকে ঘুরে থাকে এবং সে মাথা নিচু অবস্থানে থাকে, তখন সেই অবস্থানকে পোস্টেরিয়র অবস্থান বলা হয়। কখনও আবার শিশু মাথা উঁচু অবস্থানে থাকে এবং তার পা নিচের দিকে থাকে, একে ব্রিচ পজিশন বলা হয়। এই অবস্থানের কারণে শিশুর মাথা শেষে বের হয়ে আসে, যা প্রসবের সময় জটিলতা সৃষ্টি করে। তবে শিশু ব্রিচ পজিশনে থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী, প্রসবের আগে বাচ্চাকে সঠিক অবস্থানে আনা সম্ভব হয়ে থাকে (১৩)।
বাচ্চার নড়াচড়া : শিশু পুরোপুরি বেড়ে ওঠার সাথে সাথে জরায়ুর ভিতর জায়গা কমে যায়। তাই এইসময় বাচ্চা খুব বেশি নড়াচড়া করতে পারে না। কেবলমাত্র মাঝেমাঝে হাত ও পা নড়াচড়া করে। এইসময় যেহেতু বাচ্চা মাথা নিচু অবস্থানে চলে যায়, পাঁজরের নীচের দিকে বাচ্চা লাথি অনুভব করা যায়।
গর্ভাবস্থায় নবম মাসের ডায়েট
ন’মাস গর্ভবতী মহিলার ডায়েটে অবশ্যই এই খাবারগুলি থাকা উচিত (১৪):
প্রচুর পরিমানে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার যেমন, সবুজ শাকসবজি, দুধ, পাউরুটি ইত্যাদি ডায়েটে রাখুন। শিশুর হাড় ও দাঁত মজবুত করতে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। একজন গর্ভবতীর ডায়েটে প্রতিদিন ১০০০mg ক্যালসিয়াম থাকা দরকার।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকেরা দিনে ৬০০mcg ফলিক অ্যাসিড খাওয়ার পরামর্শ দেন। এটি শিশুর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের জন্মগত ত্রুটি রোধ করতে প্রয়োজনীয়। সবুজ শাকসবজি যেমন, পালং শাক, ব্রকলি, লেটুস ইত্যাদি খান। পাশাপাশি ডাল, বাদাম, সাইট্রাস জাতীয় ফল এবং মটরশুটি খাদ্যতালিকায় রাখুন।
আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান, এটি লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। সবুজ শাক-সবজি, শস্য, ড্রাই ফ্রুট, মটরশুটি ইত্যাদি এর অন্যতম উৎস।
দৈনিক ৭০০mcg ভিটামিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এটি হাড় শক্ত করে এবং দৃষ্টিশক্তির সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলে। কমলা লেবু, হলুদ শাকসবজি (যেমন মিষ্টি আলু, গাজর), সবুজ শাকসবজি, দুধ এর অন্যতম উৎস।
ভিটামিন ডি দৃষ্টিশক্তিকে সুস্বাস্থ্যকর এবং দাঁত ও হাড় শক্তিশালী করে। সালমন এবং দুধ ভিটামিন ডি-এর অন্যতম উৎস।
ডাল, সম্পূর্ণ শস্য, বাদাম, ছোলা, কটেজ চিজ়, ডিম ও দুধ প্রোটিনের অন্যতম উৎস। প্রোটিন সন্তানের পেশী এবং মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য উপকারী।
ভিটামিন সি দাঁত, মাড়ি এবং হাড় শক্ত করতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাইট্রাস ফল, স্ট্রবেরি, টম্যাটো এবং ব্রকলি ইত্যাদি ভিটামিন সি-এর অন্যতম উৎস।
এবার জেনে নিন গর্ভাবস্থায় নবম মাসে কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলবেন।
কী কী খাবেন না
আপনাকে যে খাবারগুলি এড়িয়ে চলতে হবে :
অত্যধিক ক্যাফাইন এবং ক্যাফাইন যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন (১৫)।
কাঁচা বা আধসেদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন কারণ এর থেকে লিস্টেরোসিস হতে পারে, এটি ব্যাকটেরিয়া ঘটিত রোগ (১৬)।
সোর্ড ফিস, কিং ম্যাকারেল, টাইল ফিস এবং সার্ক -এর মতো মাছগুলো এড়িয়ে চলুন। কারণ এতে প্রচুর পরিমানে মার্কারি রয়েছে যা মা ও শিশুর জন্য ক্ষতিকারক।
আনপাস্তুরাইজড দুধ এবং চিজ় ডায়েট থেকে বাদ দিন।
বেশি ভাজাভুজি এবং মশলাযুক্ত খাবার থেকে দূরে থাকুন কারণ এর থেকে গ্যাস অম্বলের সমস্যা হতে পারে।
যাদের সিলিয়াক ডিজিজ রয়েছে তারা গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে চলুন (১৭)। তার পরিবর্তে প্রচুর শাকসবজি, ফল খান।
এইসময় আপনার ডাক্তারবাবু আপনাকে কোন কোন পরীক্ষা এবং স্ক্যান করতে দিতে পারেন, সেইবিষয়ে এবার জেনে নেওয়া যাক।
গর্ভাবস্থায় নবম মাসে স্ক্যান/আল্ট্রাসাউন্ড
ন’মাস গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকেরা সাধারণত যে সমস্ত পরীক্ষা এবং স্ক্যান করানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন :
১. ব্লাড প্রেসার পরীক্ষা করে দেখুন
২. ওজন চেক করুন
৩. মৌলিক উচ্চতার পরিমাপ
৪. ভ্রুণের হৃদস্পন্দন এবং অবস্থান যাচাই করতে পরীক্ষানিরীক্ষা
৫. জরায়ুর অবস্থা এবং প্রসারণ লক্ষ্য করা (১৮)
৬. এইসময় চিকিৎসকেরা গ্রুপ বি স্ট্রেপ্টোকোকাস পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন। এই পরীক্ষাটি যোনি এবং মলদ্বার থেকে ব্যাকটেরিয়ার নমুনা নিয়ে করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়াগুলি প্রসবের সময় শিশুর মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে এং ফুসফুস, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্কে সংক্রমিত হতে পারে, অনেকক্ষেত্রে এটি মারাত্মকও হতে পারে। যদি পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হয়, তবে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি শিশুকে ই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে (১৯)।
যেহেতু প্রসবের দিন প্রায় কাছাকাছি এসে গেছে, আপনাকে অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। যে কোনও লক্ষণকে অবহেলা না করে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে হবে, সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক কিছু দেখলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
গর্ভাবস্থায় নবম মাসে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে
নিম্নলিখিত যে কোনও উপসর্গ দেখা দিলে, দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন (২০):
- গোপনাঙ্গে রক্তপাত
- জল ভাঙা শুরু হলে
- ঝাপসা দৃষ্টি
- পেটে বা তলপেটে অসহ্য ব্যথা
- তলপেটে ক্যাম্প
- জ্বর ও সর্দি
- পরিমানে কম এবং বেদনাদায়ক প্রস্রাব
- নাক দিয়ে রক্তপাত এবং যদি তা কম না হয়
- মাথা ঘোরা
- মাথা যন্ত্রণা
- অনবরত পায়ে ক্র্যাম্প ধরা
- এক সপ্তাহে হঠাৎ প্রায় ১ কেজি ওজন বেড়ে যাওয়া
এইসময় নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসবের সম্ভাবনাকে একেবারে উপেক্ষা করা যায় না। তাই নিম্নলিখিত উপসর্গগুলি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যান (২১)।
- ঘণ্টায় ৫ বার বা তার বেশি বার সংকোচন
- পিরিয়ডের সময়ের মতো ব্যথা
- গোপনাঙ্গ থেকে তরল পদার্থ বের হওয়া
- গোপনাঙ্গ থেকে রক্তপাত
- যোনি স্রাব বৃদ্ধি
- ডায়রিয়ার সাথে অথবা ডায়রিয়া ছাড়াই পেটে ব্যথা
- পেলভিসে চাপ পড়ে
- কোমরের নিচে ব্যথা
- উপরে বর্ণিত লক্ষণগুলি দেখা দিলে আপনি কী করবেন :
- আপনার বা দিকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকুন অথবা হাঁটুন। প্রচুর পরিমাণে জল খান।
- গোপনাঙ্গ দিয়ে রক্তপাত বা জল ভাঙতে শুরু করতে স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করুন।
- প্রস্রাব চেপে থাকবেন না। ঘন ঘন প্রস্রাব করুন যাতে মূত্রাশয় খালি থাকে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন গর্ভাবস্থায় আপনাকে সক্রিয় থাকে এবং সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
গর্ভাবস্থায় নবম মাসে কী কী সাবধানতা অবলম্বণ করতে হবে
- দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত থাকুন।
- বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে উঠে দাঁড়াবেন না তাতে আপনার ব্লাডপ্রেসার কমে যেতে পারে, মাথা ঘোরাতে পারে (২২)।
- বাচ্চা কতবার লাথি মারছে খেয়াল রাখুন। যদি দেখেন অনেকটা সময় ধরে বাচ্চা লাথি মারছে না তাহলে মিষ্টি কিছু খান দেখবেন বাচ্চা নড়তে শুরু করেছে (২৩)।
- মানসিক দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন।
- ধূমপান এবং মদ্যপান এড়িয়ে চলুন।
- হাইড্রেটেড থাকার জন্য প্রচুর পরিমানে পানীয় খান।
- কোমরে পিঠে ব্যথা এবং পায়ে ক্র্যাম্প থেকে মুক্তি পেতে গরম জল দিয়ে স্নান করুন।
- পিঠের উপর ভর দিয়ে শোবেন না।
- মৌখিক স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখুন।
- অল্প অল্প করে বারে বারে খাবার খান।
- ভারী জিনিস তুলবেন না।
- আপনার এনার্জি বাড়াতে একটু হাঁটাচলা করুন। তাতে শরীর সুস্থ থাকবে।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনও রকম ওষুধ খাবেন না।
- এইসময়ের জন্য আরামদায়ক জামাকাপড় এবং জুতো বেছে নিন। নরম সুতির জামাকাপড় পড়ুন।
এতো গেলে মম-টু-বি দের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু তথ্য। প্রেগন্যান্সির সময় কেবলমাত্র মায়েরই সব দায়িত্ব তা কিন্তু নয়, হবু বাবাকেও অনেক বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। জেনে নিন কোন কোন বিষয় নজরে রাখবেন।
হবু বাবাদের জন্য কিছু টিপস
১. পারিবারিক কাজে যতটা সম্ভব আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করুন।
২. ডাক্তারের কাছে রুটিন চেক-আপের জন্য অবশ্যই স্ত্রীর সঙ্গে যান।
৩. মাঝে মাঝে দুজনে একসঙ্গে কাছেপিঠে কোথাও থেকে ঘুরে আসুন। একসঙ্গে সময় কাটান এবং বাচ্চার ভবিষৎ নিয়ে আলোচনা করুন।
৪. শরীরচর্চার সময় স্ত্রীকে সঙ্গ দিন।
৫. হাসপাতালে যাওয়ার আগে সমস্ত কাগজপত্র দেখে নিনি ঠিকঠাক আছে কিনা এবং তা হাতের কাছে রাখুন।
৬. একজন ভালো পেডিয়াট্রিশিয়ানের খোঁজ আগে থেকে নিয়ে রাখুন।
আর মাত্র কয়েকটা দিন, তারপরই আপনার ছোট্ট সোনা আপনার কোল আলো করে আসবে। ততক্ষণ নিজেকে যতটা সম্ভব শান্ত এবং দুশ্চিন্তামুক্ত রাখুন। পর্যাপ্ত পরিমানে বিশ্রাম নিন। বই পড়ুন, পরিবারের সকলের সঙ্গে সময় কাটান। সবমিলিয়ে নিজের হাসিখুশি রাখুন। তাহলেই আপনার গর্ভের সন্তানও সুস্থ সবল হবে। মা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি নারীর জীবন বদলে যায়। আপনার আগামী দিনগুলোর জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী
গর্ভাবস্থায় নবম মাসে কি আমার আরও বেশি বিশ্রাম নেওয়া উচিত?
উ: হ্যাঁ। এটি গর্ভাবস্থায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। যতটা বেশি সম্ভব নিশ্চিন্তে বিশ্রাম নেওয়ার সময়। ভারী বা চাপের কাজ থেকে বিরত থাকাই ভালো।
নর্মাল ডেলিভারির কী কী সম্ভাবনা রয়েছে?
উ: প্রথমবার যারা মা হচ্ছেন তাদের ৪১ থেকে ৪২ সপ্তাহের মধ্যে নর্মাল ডেলিভারির সম্ভাবনা থাকে। তবে যদি কোনও সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে তার আগেই সিজারিয়ান ডেলিভারির করা হয়।
গর্ভাবস্থায় ন’মাসে ট্রাভেল করা কি নিরাপদ?
উ: যদি কোনও শারীরিক সমস্যা না থাকে তাহলে আপনি অল্প সময়ের জন্য ট্রাভেল করতে পারেন। তবে নিজের এবং বাচ্চার নিরাপত্তার জন্য বেশি জার্নি এবং জার্কি এড়িয়ে চলা ভালো।
আমি কি গর্ভাবস্থার নবম মাসে উপোস করতে পারি?
উ: গর্ভাবস্থায় উপোস করার তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পরীক্ষায় প্রমাণিত নয়। তবে সাধারণভাবে চিকিৎসকেরা এইসময় উপোস করতে মানা করে থাকেন।
References
2. Stages of pregnancy, Office on Women’s Health (2018)
3. Fact Sheet Gestational weight gain, NSW
4. Leg cramps during pregnancy, Healthdirect
5. Pregnancy – week by week, Betterhealth
6. Week by Week Fetus Size Demonstrated by Fruits, EPAOA
7. Fetal Development, UNSW Embryology (2018)
8. Fetal development – month 9, Sutter Health (2008)
9. Stages Of Pregnancy, Cleveland Clinic (2019)
10. Embryonic Fetal Development, S.C. Department of Health and Environmental Control
11. Baby Development Week by Week, National Women’s Health (2010)
12. Fetal Growth And Development, South Dakota Department of Health
13. Breech birth, NIH
14. Nutrition During Pregnancy, ACOG
15. Pregnancy Precautions: FAQs, The Nemours Foundation (1995-2019)
16. Listeria Infection (Listeriosis), Organization of Teratology Information Specialists
17. How Celiac Disease Affects Pregnancy, Celiac Disease Foundation (1998-2018)
18. Pregnancy Month by Month, Hunterdon Healthcare (2018)
19. Pregnancy: Third Trimester (28 weeks to delivery), AACC
20. When to call us, Kaiser Foundation Health Plan, Inc (2018)
21. Premature Labor, Sutter Health (2008)
22. Low Blood Pressure – When Blood Pressure Is Too Low, American Heart Association, Inc (2019)
23. Fetal Movement Counting, Stanford Children’s Health (2019)
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.