গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়া কি নিরাপদ? । Potato In Pregnancy In Bengali
In This Article
গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের অনেক কিছু খেতে ইচ্ছা করে। কিন্তু অনেকে সবকিছুর প্রয়োজনীয়তা না জেনে খেতে চান না, কেননা নিজের এবং গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে পিছিয়ে আসেন। আমাদের শাক-সবজির তালিকায় আলু এমন একটি খাবার যেটা অপছন্দ করে না এমন মানুষ কম আছে। আলুভাজা, আলুর তরকারি, আলুর দম, আলু সেদ্ধ দিয়ে ভাত, যে কোনও তরকারিতে আলু দেওয়া সবকিছুই যেন আলু দিয়ে হয়। কিন্তু গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আলু খাওয়ার আগে অনেক মায়েরাই চিন্তায় পড়ে যান, এটি খাওয়া ঠিক হবে কি? কারণ আমরা অনেকেই জানি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে আলু খাওয়া একেবারেই বন্ধ। সে ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার প্রবণতা থাকলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ভয় থাকে। তাহলে আসুন আজকের নিবন্ধ থেকে জেনে নিন আলু গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভালো না খারাপ? এর পাশাপাশি গর্ভাবস্থায় আলু খাবার কি কি সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আসুন এ বিষয়ে সবিস্তারে আলোচনা করা যাক।
গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়া কি নিরাপদ?
গর্ভকালীন অবস্থায় যেকোনো জিনিস পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করা আবশ্যক। এক্ষেত্রে আলু ও তার ব্যতিক্রম নয়। সুতরাং গর্ভাবস্থায় আলু মাঝারি পরিমাণে ব্যবহার করাই যুক্তিসঙ্গত। কেননা গর্ভের শক্তির প্রাথমিক উৎস হল গ্লুকোজ, যা আলুর থেকে ভালো ভাবে পাওয়া যায়। সুইস অ্যাসোসিয়েশন ফর নিউট্রিশন এর মতে, গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন তিন থেকে চারটি আলু খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা যায়। ভাত, রুটি, অন্যান্য দানাশস্যের পাশাপাশি তিন থেকে চারটি আলু খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে।
গর্ভাবস্থায় সব খাবারের ভারসাম্য বজায় রেখে খাদ্য তালিকা তৈরি করলে তা আপনাকে এবং আপনার শিশুকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। যার ফলস্বরূপ এমন কিছু সুষম খাদ্য আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে যেগুলো থেকে যথাযথ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যেতে পারে। তবে অবশ্যই তার পরিমাণকে মাথায় রেখে খেতে হবে।
গর্ভাবস্থায় আপনার কতটা আলু খাওয়া উচিত?
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, একজন গর্ভবতী নারী গর্ভাবস্থায় দিনে তিন থেকে চারটি গোটা আলু খেতে পারেন। এক্ষেত্রে সিদ্ধ, ভাজা কিংবা তরকারিতে দিয়ে অন্যান্য সবজির সাথে এটি খেতে পারেন। কেননা এর বেশ কিছু উপকারিতাও রয়েছে। যার ফলে শরীরে আলুর প্রয়োজনীয়তা থাকে।
গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার উপযুক্ত সময় কখন?
গর্ভকালীন অবস্থায় যেকোনো ভারী ধরনের জিনিসই সকালের দিকে খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা অতিরিক্ত ভারী জিনিস সন্ধ্যার পর পেটে যদি থেকে যায় সেক্ষেত্রে রাতে বদহজম কিংবা অ্যাসিডিটির সমস্যা হতে পারে। যার ফলস্বরূপ পেটে ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা কিংবা শরীরে অস্বস্তিভাব দেখা দিতে পারে। যার ফলে রাতের ঘুমও যথাযথ হবে না। সে ক্ষেত্রে গর্ভকালীন অবস্থায় আলু যদি খেতে হয় সকালের দিকে খাবেন। কেননা এটি একটি শর্করা জাতীয় খাদ্য হওয়ায় আপনার শরীরে শর্করার চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি গ্লুকোজের চাহিদাও পূরণ করবে। তাই এটিকে আপনার খাদ্য তালিকায় রাখা আবশ্যক।
আলুর পুষ্টিগুণ
আলুর মধ্যে গর্ভকালীন অবস্থায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের অনেক উপাদান উপস্থিত রয়েছে। যার ফলস্বরূপ গর্ভাবস্থায় আমাদের আলু খাওয়া প্রয়োজন। আসুন জেনে নিন ১ কাপ কিংবা ২০০ গ্রাম রান্না করা আলুর পুষ্টিমূল্য।
এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
জেনে নিন কি কি উপাদান রয়েছে যা আপনাকে গর্ভাবস্থায় সহায়তা করবে।
ভিটামিন এ – 1.9 মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি – 22.2 মিলিগ্রাম
ম্যাঙ্গানিজ – 0.2 মিলিগ্রাম
কপার – 0.15 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি ফাইভ – 0.6 মিলিগ্রাম
পাইরিডক্সিন – 0.1 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি 7 – 5.71 মিলিগ্রাম
ডায়েটরী ফাইবার – 4 গ্রাম
নিয়াসিন – 0.7 মিলিগ্রাম
থায়ামিন – 0.06 মিলিগ্রাম
রাইবোফ্লাভিন – 0.04 মিলিগ্রাম
উপরিউক্ত উপাদানগুলি ছাড়াও আলুর মধ্যে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরে বিশুদ্ধ ফ্যাট পরিবেশন করে যার ফলস্বরূপ শরীর সুস্থ থাকে।
গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার কি কি উপকারিতা রয়েছে?
আলু দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার আমাদের সকলেরই প্রিয়। এক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় আলুর চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়, সে আলুর চিপস হোক কিংবা বেকড আলু হোক কিংবা ঝাল ঝাল করে আলু কাবলি, এই সবকিছুই আমাদের সকলের প্রিয়। গর্ভকালীন অবস্থায় মায়েদের যদি এই খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে তাহলে চিন্তার কারন নেই, কেননা এর কিছু কিছু উপকারিতাও রয়েছে। আসুন জেনে নিন। আলু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি সবজি, এটি সেবন করার ফলে বেশকিছু উপকারিতা আমরা লক্ষ্য করি তা হল –
১) ফোলেট নিউরাল টিউবের ত্রুটি গুলি প্রতিরোধ করে – আলুর মধ্যে থাকা উচ্চ পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড গর্ভস্থ ভ্রূণের স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশে সহায়তা করে, যার ফলে গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ড সংক্রান্ত সমস্যাগুলো ঝুঁকি কম থাকে।গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে ফোলেট সমৃদ্ধ খাবার গর্ভপাতের সম্ভাবনাকে দূর করে এবং গর্ভবতী মাকে সুস্থ রাখে। (1)
২) গ্যাস এবং বদহজম কম করে : গর্ভাবস্থায় গ্যাস এবং বদ হজমের সমস্যা কোনও নতুন বিষয় নয়। এই সমস্যায় অনেকেই পুরো গর্ভকালীন সময়ে জেরবার হয়ে ওঠে। তবে হজমজনিত সমস্যাগুলির ক্ষেত্রে আলু অন্যতম সহায়ক উপাদান। আলু যদি সঠিকভাবে রান্না করা হয় সে ক্ষেত্রে এটি গ্যাস এবং বদ হজমের সমস্যা কম করতে সহায়তা করে। এছাড়াও আলু সব খাবারের সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে।
৩) স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধি – আমাদের সকলেরই জানা রয়েছে যে আলু খেলে ওজন বৃদ্ধি হয়। যে কারণে আমরা যদি ডায়েট শুরু করি সবার আগে খাদ্য তালিকা থেকে আলু বাদ দেই। কিন্তু আমরা সকলেই হয়তো জানি না আলুর মধ্যে থাকা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট শরীরের বহু কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে, যে কারণে গর্ভাবস্থায় প্রত্যেকদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ আলু খাদ্য তালিকায় রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মায়ের ওজন যদি স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয় সেক্ষেত্রে তার শরীরে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পরিবেশন করে থাকে আলু এবং শরীরের ওজন বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ করে তোলে। কেননা গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকলে সে ক্ষেত্রে তার প্রভাব গর্ভস্থ ভ্রূণের ওপর পড়ে। সেজন্য আলু খাওয়া গর্ভাবস্থায় স্বাস্থ্যকর ওজন বৃদ্ধিতে কাজে লাগে। (2)
৪) কোলেস্টেরল কম করতে সহায়তা করে -আলুর মধ্যে রয়েছে দ্রবণীয় ফাইবার এবং ভিটামিন সি, যা শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কে কম করতে সহায়তা করে। প্রত্যেকদিন আলু খেলে গর্ভকালীন অবস্থায় কোলেস্টেরল বৃদ্ধির সমস্যা হ্রাস পায়। (3)
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে – আলু সিদ্ধ ভিটামিন সি এর অন্যতম উৎস। শরীরের যেকোনো ক্ষতগুলি কে নির্মূল করে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও আলুর মধ্যে যথোপযুক্ত পরিমাণে আয়রন রয়েছে যা সিদ্ধ আলু খাওয়ার ফলে শরীরে সঠিকভাবে পৌঁছতে পারে।
৬) কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কম করে – গর্ভাবস্থায় অনেক গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ করে হৃদরোগের সমস্যা দেখা দিয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ কিংবা হার্টের সমস্যার মতন নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রে দৈনিক আলু গ্রহণের ফলে এই সমস্যা কম হতে পারে। মূলত আলুর ত্বকে থাকা পটাশিয়াম স্তর হৃদরোগের সম্ভাবনা, স্ট্রোক, উচ্চরক্তচাপের মতন সমস্যাগুলির সমাধান করতে পারে। একটি আলু সিদ্ধ খেলে তা থেকে ৯২৬ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যে কারণে এটি আপনার হৃদযন্ত্রের সুরক্ষা প্রেরণ করে। তাই প্রত্যেক দিন খাদ্যতালিকায় সেদ্ধ আলু রাখা আবশ্যক। (4)
৭) চোখের নিচে ফোলা ভাব কমাতে – গর্ভাবস্থায় অনেক সময় চোখের নিচের অংশ ব্যাগের মতো ফুলে যায়। এক্ষেত্রে চোখের নিচে ফোলা ভাব দূর করতে খাদ্যতালিকায় আলু রাখার পাশাপাশি আলুকে এর প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। একটি কাঁচা আলু গোল গোল করে কেটে নিয়ে চোখের ওপর দশ পনের মিনিট লাগিয়ে রাখুন, কিছুক্ষণ পরে দেখবেন এটি আপনার চোখের পেশী গুলিকে শীতলতা প্রদান করেছে এবং চোখের ফোলা ভাব দূর হয়ে গেছে। (5)
৮) ভ্রূনের বিকাশে সহায়তা করে – আলু ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম এর মতন খনিজ গুলির অন্যতম উৎকৃষ্ট উৎস। যা ভ্রূণের বৃদ্ধি এবং বিকাশে সহায়তা করে। (6)
৯) কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে – গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে শরীরে হঠাৎ হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এবং খাদ্য ব্যবস্থার পরিবর্তনের কারণে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয়, যে কারণে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতন সমস্যার সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে আলুর মধ্যে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কে কম করতে সহায়তা করে। কেননা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে অন্যদিকে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাই প্রত্যেক দিন ২৫ গ্রাম ফাইবার অন্তত খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। যার ফলে দৈনিক সেদ্ধ আলু খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কম হতে পারে।
১০) শক্তি প্রেরণ করে – আলুর মধ্যে থাকা ক্রোমিয়াম শরীরের ইনসুলিন কে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। যার ফলে শরীরে যে সমস্ত শর্করা জাতীয় খাবার প্রত্যেকদিন যায় সেগুলিকে প্রয়োজনীয় শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সহায়তা করে। রক্তের শর্করা কে শরীরে শক্তি রূপে পরিণত করতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় আলুর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে কি?
প্রত্যেকটা জিনিসেরই ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া থাকে। এক্ষেত্রে আলুও এর বিকল্প নয়। যে কোন জিনিসেরই অতিরিক্ত ব্যবহার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যার ফলস্বরূপ এর খারাপ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে গর্ভকালীন অবস্থায় অতিরিক্ত আলু গ্রহণ করলে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জেনে নিন কি কি সমস্যা হতে পারে।
১) গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা দেখা দিতে পারে – আলুর মধ্যে অনেক সময় সবুজ আলু কিংবা কাঁচা আলু দেখা যায় যেগুলি গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। কেননা সবুজ আলু গুলোর মধ্যে গ্লাইকোয়ালকালয়েডস, আলফা-সোলানাইন এবং আলফা-চকোনিন থাকে। সবুজ আলুর মধ্যে থাকা এই যৌগ গুলি যদি দীর্ঘদিন ধরে গর্ভবতী মহিলাদের শরীরে যেতে থাকে এক্ষেত্রে এর ফল মারাত্মক হতে পারে। কেননা এগুলো অত্যধিক গ্রহণের ফলে বমি, ডায়েরিয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে। যা গর্ভস্থ ভ্রূণের বিকাশ কে প্রভাবিত করতে পারে এবং গ্যাস্ট্রিকের মতন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
২) জন্মগত অসঙ্গতির ঝুঁকি – যদি অতিরিক্ত পরিমানে সবুজ আলু খাওয়া হয়, এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট জন্মগত ত্রুটি দেখা দিতে পারে। কেননা এগুলি গ্রহণের ফলে বিভিন্ন শারীরিক উপসর্গ এবং সমস্যা লক্ষ্য করা যেতে পারে। (7)
৩) গর্ভকালীন ডায়াবেটিস সমস্যা – গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আলু সেবনের ফলে ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিস এর সম্ভাবনা বেশি থাকে। গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুর মধ্যে তার প্রভাব ফেলে। শিশু জন্মানোর পর নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের অবস্থা, নিম্ন রক্তচাপ, এমনকি প্রসবের পরে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই গর্ভকালীন অবস্থায় নির্দিষ্ট পরিমাণে আলু গ্রহণ করতে হবে। (8)
ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি আলুর কি কি উপকারিতা রয়েছে। তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলি সম্পর্কে আমরা জেনে নিয়েছি। এক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া গুলো এড়িয়ে চলতে গেলে দৈনিক যথাযথ পরিমাণ আলু গ্রহণ করতে হবে এবং সেগুলি কে সঠিক ভাবে রান্না করে তারপরে গ্রহণ করবেন, অন্যথায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার সময় কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে?
গর্ভাবস্থায় যেকোনো ধরনের খাবার খাওয়ার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে এবং পুষ্টিবিদের সাথে পরামর্শ করে নেবেন। কেননা আপনার শরীরের চাহিদা অনুযায়ী কোনও খাবারের পরিমাণ বেশি, কোনও খাবারের পরিমাণ কম থাকতে পারে। এক্ষেত্রে আলু গ্রহণের ক্ষেত্রে ও যতটা সম্ভব পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী গ্রহণ করবেন।
১) সাধারণত দিনে তিন থেকে চারটি আলু গর্ভাবস্থায় খাওয়া যেতে পারে।
২) এক্ষেত্রে সেদ্ধ আলু খেলে এর যথাযথ পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরে গ্রহণ করা যেতে পারে।
৩) তবে এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে, আলু খাওয়ার প্রবণতা যাতে খুব বেশি না হয়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা থাকে। গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস দেখা দিলে গর্ভস্থ ভ্রূণের ওপর তার প্রভাব পড়ে। (9)
৪) আলু খাওয়ার সময় দেখে নেবেন তা যেন সবুজ আলু না হয় কেননা সবুজ বা কাঁচা আলু গর্ভবতী মহিলাদের পক্ষে খারাপ। কেননা এগুলো সহজে হজম হতে চায় না।
৫) দৈনিক খাদ্য তালিকায় আলু খাওয়ার পরে যদি কোন রকম অসুবিধা হয় সেক্ষেত্রে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করবেন।
৬) অতিরিক্ত আলু সেবনের ফলে ডায়েরিয়ার সমস্যা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দেখেশুনে এগুলি গ্রহণ করবেন।
গর্ভাবস্থার খাদ্যতালিকায় আলু অন্তর্ভুক্ত করার উপায়
গর্ভাবস্থায় আলু দিয়ে যেকোনো ধরনের রান্না আপনি আপনার স্বাদ অনুসারে করতে পারেন। এক্ষেত্রে যদি সিদ্ধ আলু খেতে পারেন খুবই ভালো তাছাড়া ভেজে কিংবা তরকারিতেও খেতে পারেন। বিভিন্ন শাক, সবজি, মাছ, মাংসের সাথে আলু মিশিয়ে খেতে পারেন। আলুর সুপ তৈরি করে খেতে পারেন। আলু সিদ্ধ মাখা করে খেতে পারেন। ডিম শাকসবজি কিংবা মসলা দিয়ে আলুর স্যালাড তৈরি করে খেতে পারেন। তবে আসুন আলুর দিয়ে তৈরি কয়েকটি রেসিপি জেনে নিন যেগুলি আপনি সচ্ছন্দে খেতে পারবেন।
১) আলু এবং পেঁয়াজের সুপ :
কি কি উপাদান প্রয়োজন? এক কাপ -আলু সরু সরু করে কাটা
এক-চতুর্থাংশ কাপ -পেঁয়াজ পাতলা করে কাটা
এক চামচ – মাখন
লঙ্কার গুঁড়ো ও লবণ – পরিমাণমতো
2 টেবিল চামচ -গাজর কুচানো।
কিভাবে তৈরি করবেন?
১) প্রেসার কুকারে মাখন দিয়ে তার মধ্যে পেঁয়াজ গুলো দিয়ে হালকা করে ভেজে নিন।
২) এরপর এতে আলু যোগ করে ১ থেকে ২ মিনিট হালকা ভেজে নিন।
৩) প্রায় দেড় কাপ জল যোগ করে আলু পেঁয়াজ ভালো করে সিদ্ধ করুন।
৪) প্রেসার কুকার বন্ধ করে দিন।
৫) দুটো সিটি পড়া অবধি অপেক্ষা করুন।
৬) সেদ্ধ হয়ে গেলে মিশ্রণটি পাত্রে ঢেলে তার ওপরে গোল মরিচ, লবণ এবং গাজর কুচি দিয়ে পরিবেশন করুন।
২) আলুর স্যালাড :
মাঝারি আকারের সেদ্ধ আলু – ৮ টি
আপেল সিডার ভিনিগার – ২ চামচ
চিনি – দুই চামচ
মেয়োনিজ – দেড় কাপ
লবণ – এক চামচ
হলুদ – হাফ চামচ
গোলমরিচ – হাফ চামচ
রসুন গুড়ো – এক চামচ
পেঁয়াজ – ১ কাপ
সেলারি পাতা – ২ টুকরো
ডিম সিদ্ধ – পাঁচটি।
কিভাবে তৈরি করবেন ?
১) আলুর খোসা ছাড়িয়ে নুন জলে সিদ্ধ করে নিন।
২) আলু সিদ্ধ হয়ে গেলে সেটি ঠান্ডা করে পাশে রাখুন।
৩) একটি বাটিতে আপেল সিডার ভিনিগার, চিনি, মেয়োনিজ, নুন, গোলমরিচ এবং রসুন গুঁড়ো মিশিয়ে নিন।
৪) এবার পাশে তুলে রাখা আলুর মধ্যে ওপরের মিশ্রণটি দিন।
৫) এরমধ্যে পেঁয়াজ এবং সেলারি যোগ করুন।
৬) ডিম গুলো কেটে এর মধ্যে যোগ করুন।
৭) এবার এটি ভালো করে মিশিয়ে পরিবেশন করুন।
আশাকরি গর্ভবতী মহিলাদের আলু দিয়ে তৈরি এই দুটো রেসিপি ভালো লাগবে। এছাড়াও যেভাবে আলু খেতে ভালো লাগে সেভাবেই খাবেন। তবে অবশ্যই এটি গ্রহণ করার আগে কোন ভালো পুষ্টিবিদের থেকে যথাযথ পরামর্শ নিয়ে নেবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য :
১) আপনি কি গর্ভাবস্থায় আলুর চিপস খেতে পারেন?
উঃ আলুর চিপস সাধারণত জাঙ্কফুড হিসেবে বিবেচিত হয়। যদি গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা না থাকে সে ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে অল্প পরিমাণে খেতে পারেন। (10)
২) আলু খাওয়ার প্রবণতা কিভাবে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস (জিডি) চালিত করতে পারে?
উঃ আলু শর্করা জাতীয় খাদ্যের উৎকৃষ্ট উৎস। এক্ষেত্রে আলুতে ভালো ফ্যাট থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত পরিমাণে আলু গ্রহণ করা হলে সে ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবেটিসের সম্ভাবনা দেখা যেতে পারে। তাই পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই যথাযথ।
৩) গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার ইচ্ছা কি শিশুর লিঙ্গ সম্পর্কে কিছু বলে?
উঃ গর্ভাবস্থায় আলু খাওয়ার ইচ্ছা দেখে অনেকে মনে করেন গর্ভস্থ ভ্রূণটি পুত্র সন্তান। তবে এটা সম্পূর্ণই লোকো কাহিনী। কেননা এর কোন বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
References
2. Food intake and gestational weight gain in Swedish women
3. Potatoes Are Good For Your Heart
4. Potassium
5. Treatments for Your Puffy Eyes
6. Calculating Your Baby’s Due Date
7. Potatoes and spina bifida.
8. Too many potatoes could increase risk of gestational diabetes
9. Pre-pregnancy potato consumption and risk of gestational diabetes mellitus: prospective cohort study
10. Gestational Diabetes and Nutrition
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.