গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ | Back Pain Pregnancy – Causes, Management And Prevention
In This Article
আপনি কি জানেন যে 50-80% মহিলারা গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার সম্মুখীন হন (1) । এই ব্যথাটি শুরু হয় মূলত দ্বিতীয় ও তৃতীয় ট্রাইমেস্টারে যখন থেকে কোনো গর্ভবতী মহিলার পেট ফুলতে শুরু করে।
গর্ভধারণের পর গর্ভাবস্থার থাকাকালীন সকালের অসুস্থতা বোধ করা নিয়মিত ঘটনা তার পাশাপাশি আরেকটি সাধারণ সমস্যা হল পিঠে ব্যথা যা অনেক গর্ভবতী মহিলারই হয়ে থাকে । গর্ভাবস্থায় দুই–তৃতীয়াংশেরও বেশি গর্ভবতী মহিলারা গুরুতর পিঠব্যথায় ভোগেন। কিন্তু এ সম্পর্কে ধারণা সবার খুবই কম, তাই আমাদের এই প্রতিবেদনে গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার কারণ, চিকিৎসা ও প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হওয়া কি স্বাভাবিক?
গর্ভবতী মহিলাদের সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হল পিঠে ব্যথা। কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে, এটি গর্ভাবস্থার প্রারম্ভে শুরু হয় এবং তাদের ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থার নয় মাস ধরে চলতে থাকে। কিছু মহিলারা গর্ভাবস্থায় উপরের পিঠের ব্যথা অনুভব করেন, আবার কিছু মহিলারা নীচের পিঠের ব্যথা অনুভব করে থাকেন। তাই এই ব্যথাকে গর্ভাবস্থার সাধারণ লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
কিন্তু এটি কতগুলি কারণের জন্য হয়ে থাকে, তাই এটি প্রতিরোধ করাও সম্ভব। আসুন জেনেনি সেই কারণগুলি।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হওয়ার কারণ
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা বেশ কিছু কারণের জন্য হতে পারে।
1. হরমোনের জন্য
গর্ভাবস্থায় রিল্যাক্সিন ও প্রোজেস্টেরন হরমোন আপনার শরীরের পেলভিক অঞ্চলের লিগামেন্টগুলিকে শিথিল করে এবং যার ফলে জয়েন্টগুলি আলগা হয়ে যায়। এই জন্য মেরুদণ্ডকে অবলম্বন প্রদানকারী লিগামেন্টগুলিও শিথিল হয়ে যায় ধীরে ধীরে। তাই মেরুদণ্ড গর্ভাবস্থায় হরমোনের বৃদ্ধিতে শরীরের ওজন নিতে পারে না ও পিঠে ব্যাথা হয়ে থাকে (2)।
2. খুব কম কাজ বা খুব বেশি কাজ করলে
গর্ভাবস্থায় সারাদিন শুয়ে বসে থাকলে বা কোনোরকম ব্যায়াম না করলে পিঠে ব্যথার সম্ভাবনা থেকে যায়। আবার বেশি দৈহিক পরিশ্রম করলেও এটি হতে পারে। তাই এই সময় অল্প ব্যায়াম বা কাজকর্ম করলে এর থেকে দূরে থাকা যায় (3)।
3. মাধ্যাকর্ষণ কেন্দ্রের পরিবর্তন
গর্ভাবস্থার দিন যত বাড়তে থাকে তত আপনার গর্ভের বাচ্চাটিও বড় হতে থাকে এবং শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। ফলে পিঠের পেশির ওপর চাপ পড়ে ও হাঁটা চলার ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয় এবং পিঠে ব্যথা শুরু হয় (2) ।
4. পেশী বিচ্ছেদ
রেকটাল অ্যাবডোমিনিস পেশী আলাদা হয়ে যাওয়ার ফলেও পিঠে ব্যথা শুরু হয়। রেকটাস অ্যাবডোমিনিস পেশীগুলি শরীরের সামনের দিকে পেট অঞ্চলের ভিতরে অবস্থিত। আপনার গর্ভাবস্থার দিন বাড়তে থাকলে জরায়ু বৃদ্ধি পায় এবং প্রসারিত হয়ে পেশীগুলি বিভক্ত হয়ে পিঠে ব্যথা শুরু হয় (4)।
5. মানসিক চাপ
যে কোনো ধরনের মানসিক আঘাত বা চাপ আপনার গর্ভাবস্থার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলতে পারে। মানসিক চাপ বাড়লে, পিঠে ব্যথাও বাড়ে । মানসিক চাপ পিঠ অঞ্চলে পেশীর টান সৃষ্টি করে এবং পেশীর শক্ত হয়ে গিয়ে ব্যথার বৃদ্ধি করে ।
তবে যাই কারণ হোক না কেন, আপনি কিছু ঔষধ খেলে ও নিয়ম মানলে এর প্রতিরোধ করতে পারবেন।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথার চিকিৎসা
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হলে তা নিরাময় করার কিছু উপায় নিচে উল্লেখ করা হল।
1. ঠান্ডা ও গরম সেক দেওয়া
ঠান্ডা ও গরম সেক দেওয়া উভয়ই ভালো এক্ষেত্রে। তবে খুব বেশি ঠান্ডা বা গরম সেক দেবেন না।
2. ঔষুধ খাওয়া
তীব্র পিঠে ব্যথা হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ঔষধ খান (3)।
3. সাপোর্ট বেল্ট ব্যবহার
পেলভিক বেল্ট ব্যবহার করে এই ব্যথার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় (3)। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন এক্ষেত্রে।
4. ব্যায়ামের মাধ্যমে
হাঁটা, স্কোয়াটিং, হালকা ব্যায়াম ও অন্যান্য সাধারণ সাংসারিক কাজকর্মের মতো শারীরিক কাজ আপনাকে সক্রিয় রাখবে। পিঠের ব্যথার সময় আপনি অনেকটাই আড়ষ্ট হয়ে থাকবেন , কিন্তু সঠিক পরিমাণে শারীরিক পরিশ্রম করলে তা আপনার পিঠের ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে (5)।
5. থেরাপির মাধ্যমে
আকুপাংচার, নার্ভ স্টিমুলেশন, ওয়াটার থেরাপি, ম্যাসাজ, যোগা ইত্যাদি গর্ভাবস্থায় পিঠের ব্যথা দূর করতে পারে (6) । এগুলিকে পেন রিলিফ থিওরি বলে মানা হয়।
গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা কমানোর জন্য ব্যায়াম
ব্যায়াম আপনাকে পিঠে ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে পারে বলে জানা গেছে (5)। কিন্তু এটি শুরু করার পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন। নিচে কিছু উপযোগী ব্যায়ামের কথা উল্লেখ করা হল।
- হাঁটা–চলা করা
হাঁটা-চলা দুটিই আপনাকে পিঠে ব্যথা থেকে অনেকটা মুক্তি দিতে পারে । এতে পেশীর নমনীয়তা বাড়ে ফলে পিঠকে অবলম্বন প্রদান করে । গর্ভাবস্থার সময় হাঁটা-চলা করা একটি সহজ উপায় ও এটিকে যদি আপনি আপনার প্রতিদিনের রুটিনের অংশ করে নিলে এর ফল পেতে বাধ্য (5) ।
- সাঁতার
গর্ভবতী মহিলাদের জন্য একটি খুব ভাল ব্যায়াম বলে জানা গেছে । এটি আপনার পেট এবং নিচের পিঠের পেশীগুলিকে শক্তিশালী করে তোলে। আর জলের প্লবতা আপনার লিগামেন্ট এবং জয়েন্টগুলিতে চাপ কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় সাঁতার করলে পিঠের ব্যথার তীব্রতা অনেকটা কমায়। কিন্তু এটি শুরু করার আগে অবশ্যই আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।
- হালকা ব্যায়াম
হালকা যোগব্যায়াম করলে এই ব্যথা দূর হতে পারে আপনার শরীর থেকে (6)। হাত-পা প্রসারিত করা যেমন আর্ম ও লেগ রেসেস, পেলভিক টিল্টস, কেগেলস ইত্যাদি আপনাকে এই ব্যথার থেকে আরাম দেবে। তবে এইসব শুরু করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ অবশ্যই নেবেন।
আপনার কখন ডাক্তার দেখানো উচিত ?
গর্ভাবস্থায় যখন এই ব্যথার তীব্রতা বাড়তে থাকবে এবং বেশ কিছুদিন ধরে স্থায়ী হবে, তখন অবশ্যই আপনাকে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে, এক্ষেত্রে কোনো বিলম্ব না করাই ভালো।
নিচে উল্লেখ করা হল কিছু সম্ভাব্য অবস্থা যখন আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
- যখন আপনার পিঠে ব্যথার সঙ্গে সঙ্গে জ্বরও আছে।
- আপনার পাঁজরেও যখন ব্যথা হবে।
- পায়ে ভর দিতে অসুবিধা হলে।
- যদি আপনার পায়ের পাতায়, পায়ে ও নিতম্বে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা হলে।
যদিও গর্ভাবস্থায় পিঠে ব্যথা হওয়া অনেকেই সাধারণ বলে মনে করেন। কিন্তু তাই বলে এটি উপেক্ষা করা উচিত নয়। পিঠে ব্যথা হলে সেটি তীব্র হওয়ার আগে নিরাময় করার নিয়মগুলি পড়ে নিন এবং ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করার পর সেগুলি মানুন । গর্ভাবস্থার এই সুন্দর সময়টিতে আনন্দে থাকুন ও সুস্থ থাকুন।
References
2. Pregnancy-related low back pain by NCBI
3. Pregnancy and low back pain by NCBI
4. Sacroiliac Subluxation: A Common, Treatable Cause of Low-Back Pain in Pregnancy by PubMed.gov
5. The Effect of Exercise on the Intensity of Low Back Pain in Pregnant Women by PubMed.gov
6. Pain Management in Pregnancy by Hindawi Journal
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.