গর্ভধারণের পরীক্ষা: কেন, কিভাবে এবং কখন করতে হবে? | Pregnancy Test: Where, When, How and Why

Written by Aastha Sirohi linkedin_iconfacebook_iconinsta_icon Experience: 3 years
Last Updated on

গর্ভধারণ যে কোন নারীর জন্যেই নিঃসন্দেহে খুবই আনন্দদায়ক ব্যাপার । নিজের দেহের ভেতরে একটি নতুন প্রাণের আগমণ হয়েছে জানলে কার না ভালো লাগে। কিন্তু অনেক সময় কোনো কোনো মহিলা গর্ভধারণের বেশ কয়েক মাস পরেও বুঝে উঠতে পারেন না যে তিনি গর্ভবতী কিনা। আর আমরা সবাই জানি যে গর্ভধারণের প্রথম তিন মাস অত্যন্ত সতর্কতার সাথে থাকা প্রয়োজন মা ও বাচ্চার উভয়ের জন্যই । তাই গর্ভধারণের পরীক্ষা আমাদের সঠিক সময়ে করা উচিত। এই প্রতিবেদনে আমরা আপনাকে জানাবো গর্ভধারণের পরীক্ষা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

গর্ভধারণের পরীক্ষা কখন করবেন ?

গর্ভধারণের পরীক্ষা করার সবচেয়ে সঠিক সময় হল মাসিক ঋতুস্রাবের পরের এক থেকে দুই সপ্তাহ। সঙ্গমের পরে, যখন শুক্রাণু ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়, তখন নিষিক্ত ডিমটি জরায়ুতে চলে যায় । এর পরে, মহিলার দেহে এইচসিজি(HCG) হরমোন (1) গঠন শুরু হয়। এই হরমোনটি নিষেকের প্রায় 7 থেকে 14 দিন পরে একজন মহিলার প্রস্রাবে পাওয়া যায়। পিরিয়ড মিস করার দিনসংখ্যা মাথায় রাখবেন এবং আপনার ঋতুস্রাবের হওয়ার যে সময় তার যদি এক সপ্তাহের মধ্যে ঋতুস্রাব (Period) না শুরু হয় তবে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করা অবশ্যই উচিত।

কীভাবে গর্ভধারণের পরীক্ষা করবেন ?

মূলত দুভাবে গর্ভধারণের পরীক্ষা করা সম্ভব।

  • বাজারে পাওয়া যাওয়া প্রেগন্যান্সি কিটের দ্বারা (2)
  • ডাক্তাদের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষার সাহায্যে।

বাড়িতে গর্ভধারণের পরীক্ষা কিভাবে করবেন ?

প্রথমে প্রেগন্যান্সি কিটটিতে দেওয়া নির্দেশাবলী গর্ভধারণ পরীক্ষার আগে অবশ্যই ভালোভাবে পড়ে নেবেন । মনে রাখবেন যে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের গর্ভধারণের পরীক্ষা কিটের নির্দেশাবলীও ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ, একটি পরীক্ষায় আপনাকে পরীক্ষার স্ট্রিপে প্রস্রাব করতে হয়, একটিতে আপনাকে পরীক্ষার কিটটিতে ড্রপার দ্বারা প্রদত্ত জায়গায় কয়েক ফোঁটা প্রস্রাবের নমুনা ফেলতে হয়। তারপর কিটে গোলাপী বা নীল স্ট্রাইপ আসে। কোনটি এলে পজিটিভ হবে আর কোনটি এলে নেগেটিভ হবে তা অবশ্যই নির্দেশাবলীতে পরে নেবেন। একইভাবে, কিছু ডিজিটাল পরীক্ষার কিটগুলির ক্ষেত্রে পসিটিভ অথবা নেগেটিভ লেখা চলে আসে। অতএব, যে কোনও ব্র্যান্ডের গর্ভধারণের পরীক্ষা কিট ব্যবহার করার আগে অবশ্যই প্রদত্ত নির্দেশাবলীটি পড়ুন।

বাড়িতে কখন প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা উচিত?

সন্ধ্যার চেয়ে ভোরবেলা প্রেগন্যান্সি টেস্ট করার জন্য সবচেয়ে ভাল। কারণ এইচসিজি (HCG) হরমোন এর পরিমাণ শরীরে খুব বেশি থাকে, এই হরমোনের পরিমাণই প্রেগন্যান্সির ইতিবাচক বা নেতিবাচক নির্দেশ করে (3)

বাড়িতে কীটের সাহায্যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে যে বিষয়গুলি মেনে চলা উচিত

  • বাড়িতে প্রথমবার প্রেগন্যান্সি টেস্ট করলে যদি নেগেটিভ আসে তাহলে আবার 72 ঘন্টা অর্থাৎ 3দিন পর পুনরায় টেস্ট করুন এবং সেটিতেও যদি নেগেটিভ আসে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • সঠিক ফলাফল পেতে সকালবেলা নমুনা সংগ্রহ করুন।
  • নমুনা সংগ্রহ করার আগে কিছু খাবেন না।
  • পরীক্ষার সময় ব্যবহৃত সমস্ত জিনিস খুব পরিষ্কার রাখুন।
  • প্রেগনেন্সি কিট ব্যবহার করার আগে, এর মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ (ব্যবহারের শেষ তারিখ) পরীক্ষা করুন। চিকিৎসকদের মতে, কিটের প্যাকেটটি খোলার 10 ঘন্টাের মধ্যে ব্যবহার করা উচিত।

বাড়িতে প্রেগনেন্সি টেস্টের ফলাফল কতটা সঠিক?

আপনি যদি প্রেগন্যান্সি কিটের সাথে প্রদত্ত নির্দেশগুলি মনোযোগ সহকারে পড়েন এবং অনুসরণ করেন তবে পরীক্ষার ফলাফলগুলি নির্ভুল হতে পারে (4)। কিছু প্রেগন্যান্সি কিটগুলি সহজেই ব্যবহারযোগ্য হয়, তা দেখে কেনার চেষ্টা করুন। তবে কিট যা-ই হোক না কেন, সঠিক ফলাফল পেতে আপনাকে অবশ্যই উপরে উল্লেখিত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যদি আপনার মাসিক ঋতুস্রাব যদি নিয়মিত না হয় তবে গর্ভধারণের পরীক্ষা ঘন ঘন ব্যবধানে করা উচিত। আপনি যদি খুব শীঘ্রই গর্ভনিরোধক বড়ি ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন এবং আপনার পরীক্ষার ফলাফলগুলি নেতিবাচক হয় তবে 72 ঘন্টা বা 3 দিন পরে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করুন (5)

জানুন বাড়িতে ঘরোয়া উপায়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করার উপায়

গর্ভধারণের পরীক্ষা করার জন্য মূলত রক্ত ​​বা মূত্র পরীক্ষিত হয়। জরায়ুতে ভ্রূণের প্রতিস্থাপনের পরে এইচসিজি(HCG) হরমোন তৈরি হতে শুরু করে। বাড়ির তৈরি পরীক্ষাগুলি যদিও এইচসিজি হরমোনের মাত্রা নির্ধারিত করে না। কিন্তু বাড়িতে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষার ধরণ রয়েছে, যেগুলি নিচে উল্লেখ করা হল।

  • সাবান দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

সাবান দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হলে সকালে প্রথমে একটি ডিসপোজেবল গ্লাস বা একটি পাত্রতে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করুন। ঐ নমুনায় অল্প পরিমাণে সাবান মিশ্রিত করে কিছু সময়ের জন্য অপেক্ষা করুন। যদি কিছুক্ষণ পরে বুদবুদ প্রস্রাবের নমুনায় তৈরি হয় তবে এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।

  • চিনি দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

চিনি দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হলে প্রথম সকালে একটি ডিসপোজেবল গ্লাস বা একটি পাত্রতে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করুন। এবার প্রস্রাবের নমুনায় দু’চামচ চিনি ঢেলে এটি দ্রবীভূত করুন। যদি প্রস্রাবে চিনি সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত না হয় এবং প্রস্রাবে উপস্থিত ‘এইচসিজি হরমোন’ চিনির সাথে মিলে একজোট তৈরী করে তাহলেএটি আপনার গর্ভাবস্থার লক্ষণ। তবে, যদি চিনিটি প্রস্রাবে সম্পূর্ণরূপে দ্রবীভূত হয়ে যায় তবে আপনি গর্ভবতী নন।

  • টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

টুথপেস্ট দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করার জন্য প্রথম সকালে একটি ডিসপোজেবল গ্লাস বা একটি পাত্রতে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করুন। এবার প্রস্রাবের নমুনায় কিছুটা সাদা টুথপেস্ট যোগ করুন। মিশ্রণটি প্রায় 1 ঘন্টা পরে ব্রাশ দিয়ে নেড়ে নিন। যদি মিশ্রণটি ফেনা এবং নীল হয়ে যায় তবে মনে করবেন এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।

  • ভিনিগারের সাহায্যে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

ভিনেগার সাহায্যে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হলে প্রথমে সকালে একটি ডিসপোজেবল গ্লাসে বা পাত্রতে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করে সেই নমুনায় কিছুটা ভিনেগার মেশান। যদি এই মিশ্রণটি রঙ পরিবর্তন হয় তবে এটি আপনার গর্ভাবস্থার লক্ষণ।

  • বেকিং সোডার সাহায্যে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

এক্ষেত্রে সকালে উঠে একটি ডিসপোজেবল গ্লাস বা একটি পাত্রতে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করুন। এবার এই নমুনায় প্রায় দুই চামচ বেকিং সোডা যোগ করুন এবং মিশিয়ে নিন। যদি বেকিং সোডা প্রস্রাবের সাথে বুদবুদ গঠনে প্রতিক্রিয়া দেখায় তবে এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।

  • ব্লিচিং পাউডার দিয়ে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

ব্লিচিং পাউডার দিয়ে গর্ভাবস্থা পরীক্ষা করার জন্য সকালে কোনও ডিসপোজেবল গ্লাস বা একটি পাত্রে অল্প পরিমাণে প্রস্রাব গ্রহণ করে তাতে অল্প পরিমাণে ব্লিচিং পাউডার যুক্ত করুন এবং মিশিয়ে নিন। যদি বুদবুদের সৃষ্টি হয় তবে এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।

  • ডেটলের সাহায্যে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা

ডেটলের সাহায্যে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হলে সকালে প্রায় 20 মিলি প্রস্রাব ডিসপোজেবল গ্লাস বা কোনও পাত্রের মধ্যে সংগ্রহ করে নমুনায় সমান পরিমাণ ডেটল যোগ করুন এবং মিশিয়ে নিন। যদি মিশ্রণের রঙটি দুধ সাদা হয়, তবে আপনি গর্ভবতী নন। তবে, যদি এই মিশ্রণটির রং আলাদা হয়ে যায় এবং ডেটল মিশ্রণটির উপরে তেলের মতো ভেসে ওঠে তবে এটি আপনার গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ।

  • পেঁয়াজের সাহায্যে প্রেগন্যান্সি টেস্ট

পেঁয়াজের সাথে প্রেগন্যান্সি পরীক্ষা করতে হলে কাটা পেঁয়াজ মহিলার যোনিতে সারা রাত রেখে দিন। তারপর যদি পেঁয়াজের গন্ধ আর না থাকে তবে সেই মহিলাকে গর্ভবতী হিসাবে বিবেচনা করা উচিত।

ক্লিনিকে গর্ভধারণের পরীক্ষা

উপরে উল্লেখিত উপায়গুলি ছাড়া ক্লিনিকে গিয়েও আপনি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করতে পারেন (6)

  • প্রস্রাবের নমুনা দ্বারা

ক্লিনিকে ডাক্তাররা প্রস্রাবের নমুনা পরীক্ষা করে গর্ভধারণের সম্পর্কে সঠিক তথ্য দিতে পারেন। এই ধরণের পরীক্ষায় সকালের প্রথম প্রস্রাবের নমুনা গ্রহণ করে এইচসিজি হরমোনের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়।

  • রক্ত পরীক্ষার দ্বারা

কখনও কখনও প্রেগন্যান্সির প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্রূণের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এই ধরণের রক্ত ​​পরীক্ষাটি ডিম্বাণু নিষিক্ত হওয়ার 6 দিনের মধ্যে অবিলম্বে আপনার প্রেগন্যান্সির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারে। এই পরীক্ষাটি এক্টোপিক ও মোলার প্রেগন্যান্সি শনাক্ত করতে পারে।

  • আলট্রাসোনোগ্রাফি দ্বারা

এই পদ্ধতিতে , উচ্চ-ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গগুলি জরায়ুতে শিশুর কাছে প্রেরণ করা হয়, যা কম্পিউটার স্ক্রিনে ছবিতে হিসেবে আসে। এই ধরণের পরীক্ষায় অ্যামনিয়োটিক তরল (যে তরলটিতে শিশুটি বাস করে) শব্দ তরঙ্গগুলির সাথে প্রতিক্রিয়া করে না। অতএব, এই তরলটি ছবিতে কালো প্রদর্শিত হয় । অন্যদিকে, হাড়ের মতো শক্ত টিস্যু সাদা রঙ এবং নরম টিস্যুতে হিসেবে দেখা যায়। এই তিনটি বিভিন্ন ধরণের (ধূসর, কালো এবং সাদা) বর্ণের তুলনা করে ডাক্তাররা গর্ভের শিশুর সঠিক অবস্থানটি নির্ণয় করেন।

আশা করি, আমাদের এই প্রতিবেদনে আপনাদের আমরা প্রেগন্যান্সি টেস্ট সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানাতে পেরেছি। অবশ্যই এ সম্পর্কে কোনোরকম সমস্যা হলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।

References

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Aastha Sirohi
Aastha SirohiBeauty & Lifestyle Writer
Aastha Sirohi is a beauty and lifestyle content writer with over three years of experience in writing for different genres. She has a master’s degree in English Literature from The English And Foreign Languages University and a bachelor’s degree in education from the University of Mysore.

Read full bio of Aastha Sirohi
Latest Articles