জ্বর কমানোর উপায় : জ্বরের কারণ, লক্ষণ ও ঘরোয়া উপায়: Fever Home Remedies in Bengali
জ্বর জ্বর আর জ্বর। হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের সাথে সাথে ডাক্তারখানা, ওষুধের দোকান সব জায়গাতেই জ্বরের রোগীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। কারোর তাপমাত্রা বেশি, কারও তাপমাত্রা কম। এমনকি হাসপাতালগুলিতেও অধিকাংশ জ্বর, সর্দি, কাশি নিয়েই রোগীদের ভুগতে দেখা যাচ্ছে। এটিকে মূলতঃ ভাইরাল ফিভার বা ভাইরাল জ্বর হিসেবে মনে করা হচ্ছে কারণ ভাইরাস জনিত কারণেই এটি হচ্ছে। আমাদের এটা মাথায় রাখতে হবে, শরীরে তাপমাত্রা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে অথবা ১০০ হলে জ্বরকে রোগ হিসেবে বর্ণনা করা হয়। তবে জ্বরকে যেকোনো রোগের সূচনা বলে মনে করা হয়। তাই শুরুতেই তার প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা উচিত। মানব শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট। এই তাপমাত্রা যখন ১০০ ডিগ্রী পার হয় তখন তাকে জ্বর বলা হয়। এমনকি ১০৩ ডিগ্রি তাপমাত্রা পার করলে সে ক্ষেত্রে জ্বরকে খুব সতর্কভাবে দেখতে লাগে এবং সাথে সাথে ডাক্তার বা হাসপাতালের শরণাপন্ন হতে হয়। কেননা এটি স্বাভাবিক নয়। তবে সামান্য জ্বরেই যে ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে এমন কোনো ব্যাপার নেই। কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করেও এই ভাইরাস জ্বরকে আয়ত্তে আনা যায়। মূলতঃ ভাইরাসের কারণে জ্বর হলে সে ক্ষেত্রে ওষুধ না খেলেও চলে। কেননা এর মেয়াদ পাঁচ থেকে সাত দিন। ৫-৭ দিন পর এটি এমনিই কমে যাবে। তবে জ্বরে যদি কাবু হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়গুলির মাধ্যমে যদি তা কাজ না করে সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে পারেন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনোই ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাবেন না। এটি আপনার শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে জ্বর কমানোর উপায় হিসেবে কিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে।
In This Article
জ্বরের কারণ : Causes of Fever in Bengali
জ্বর যেহেতু কোনো না কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যার উপসর্গ তাই জ্বরের নানারকম কারণ হতে পারে। আসুন জেনে নেওয়া যাক জ্বরের কারণগুলি কি কি:
১) আবহাওয়ার পরিবর্তন
ভাইরাস জ্বর বর্তমানে একটি প্রচলিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাইকেই নাজেহাল করে ছাড়ে। হঠাৎ করে আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে জ্বর দেখা যেতে পারে। এই সময় জ্বর সাধারণত কাঁপুনি ও শীত শীত অনুভূতির মাধ্যমে আসে। এই সময় শরীরের তাপমাত্রা সাধারণের তুলনায় অনেকটাই বৃদ্ধি পায়। নির্দিষ্ট সময়ের পর ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যায়। এই সময়টিতে শরীর তার বাড়তি তাপমাত্রা হারায়।
২) মশার কামড়
মশার কামড় থেকে নানারকমের মারাত্মক অসুখ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, ইত্যাদি হতে পারে। এই ধরণের অসুখগুলির প্রথম লক্ষণ হল জ্বর। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি কাঁপুনি, গা-হাত-পা ব্যাথা, বমিভাব ও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে দেখেন ও ৪ দিনের ওপরে এই তাপমাত্রা নামতে না দেখা যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ রক্ত পরীক্ষা করে দেখুন।
৩) সর্দি, কাশি বা ঠান্ডা লাগা
বর্ষাকালে কোনোভাবে বৃষ্টি ভিজলে বা শীতকালের কনকনে শীতের জন্যে অথবা অত্যন্ত গরমের ঘাম থেকে সর্দি, কাশি বা গলা ব্যাথা দেখা দেয়। এর থেকে শুরু হয় জ্বর।
৪) পেটের সমস্যা
পেটের কোনোরকম সমস্যা যেমন বদহজম, পেটখারাত, গ্যাস বা অম্বল যখন অতিরিক্ত পরিমানে বেড়ে যায়, তখন স্বাভাবিক ভাবেই তা শরীরে অস্বস্তির সৃষ্টি করে। এর থেকে জ্বরের সূত্রপাত হয়। এই ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে তাপমাত্রা না কমলে এন্টি বায়োটিক খাওয়া প্রয়োজন।
হঠাৎ শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে জ্বর হতে দেখা যায়।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার ফলে
অনেক সময় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার একটা মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় জ্বর অর্থাৎ যদি কোন ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয় তখন শরীর তাপমাত্রা বাড়িয়ে রক্তে অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান তৈরি করে সেটিকে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।
৬) অন্যান্য কারণ
- দীর্ঘদিন ধরে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে থাকলেও জ্বর আসতে পারে।
- যেকোনো ধরনের অপারেশনের পর কিংবা হার্ট অ্যাটাকের মতন সমস্যার পরেও জ্বর দেখা যায়।
- হঠাৎ গভীর কোনও মানসিক আঘাত পেলে কিংবা ভয় পেলে তার থেকেও কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসতে পারে।
- হঠাৎ শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা বেড়ে গেলে জ্বরের উৎস হয়।
জ্বরের লক্ষণ : Symptoms of Fever in Bengali
জ্বর আসার আগে থেকেই শরীরটা জানান দিতে থাকে। কেননা তার আগে থেকেই খুসখুসে কাশি এবং শরীরে একটা ম্যাজমেজে ভাব দেখা যায়। এক নজরে জেনে নিন জ্বরের লক্ষণ গুলো :
১) তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি লক্ষ্য করা যায়।
২) হঠাৎ কাঁপুনি এবং শীত শীত ভাব অনুভূত হয়।
৩) সারা শরীরের মাংসপেশিতে ব্যথা এবং হাটু হাত কনুই এর মতন জয়েন্ট অংশ গুলিতে ব্যথা লক্ষ্য করা যায়।
৪) মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়।
৫) হঠাৎ করে অত্যধিক ঘাম হতে দেখা যায়।
৬) হৃদযন্ত্রের পারদ বৃদ্ধি পায়।
৭) শরীর গরম হয়ে ওঠে।
৮) চোখ মুখ লাল হয়ে যায়।
৯) চোখে জ্বালা ভাব লক্ষ্য করা যায়।
১০) শরীর দুর্বল হয়ে ওঠে।
১১) খাদ্যে অনীহা লক্ষ্য করা যায়।
১২) বাচ্চাদের মধ্যে একটা আনছান ভাব লক্ষ্য করা যায়।
১৩) এ ছাড়াও শিশুদের মধ্যে গলা ব্যথা, কাশি, কানে ব্যথা, বমি এবং ডায়রিয়ার মতন সমস্যা লক্ষ্য করা যায়।
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় : Home Remedies for Fever in Bengali
জ্বর হলেই অনেকের স্বভাব থাকে হুটহাট নিজের সিদ্ধান্ত মত ওষুধ খেয়ে ফেলেন বা হঠাৎ করে ওষুধের দোকানে গিয়ে যে কোন এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেন, যেটা একদমই উচিত নয়। কেননা একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রা পর্যন্ত জ্বর শরীর প্রতিরোধ করতে পারে যা কিনা নিজে থেকেই কমে যায়। তাছাড়া যদি একান্তই বাইরে বেরোতে হয় কিংবা কাজের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হয় সে ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট খেতে পারেন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। তাছাড়া তাপমাত্রা যদি স্বল্প বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে এই ঘরোয়া উপায়গুলি অবলম্বন করতে পারেন যা খুব সহজভাবেই আপনার জ্বর কমাতে সাহায্য করবে। এক নজরে জেনে নিন জ্বর কমানোর ঘরোয়া কিছু উপাদান :
১) মাথায় জলপট্টি দেওয়া
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- পরিষ্কার রুমাল – একটি
- বাটি – একটি
- জল – পরিমাণ মতো
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- জ্বরের তাপমাত্রা যদি বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ্ধতি হলো জলপট্টি দেওয়া।
- একটি পরিষ্কার রুমাল কে ভাঁজ করে নিয়ে এক বাটি জলে সেটি ভিজিয়ে নিন।
- এবার রুমালটিকে কপালে দিয়ে দুই মিনিট চেপে রাখুন।
- তারপর দুমিনিট বাদে আবার জলে ডুবিয়ে রুমালের উল্টো দিকটা ভিজিয়ে নিন।
- এভাবে কয়েকবার করতে থাকলেই দেখা যাবে মাথা দিয়ে যে তাপটা বের হচ্ছিল সেটা রুমাল শুষে নেবে এবং আস্তে আস্তে শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকবে।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর হলে শরীর তার অধিকাংশ তাপমাত্রা মাথা দিয়ে বের করে দিতে চায়। তাই তাপমাত্রা যদি খুব বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে মাথা ধুয়ে দেওয়া উচিত। তবে সেটা যদি সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে মাথায় জলপট্টি দিতে থাকলে তাপমাত্রা নেমে আসতে সহায়তা করে। জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
২) জ্বরের প্রতিকারে তুলসীর ব্যবহার
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- তুলসী পাতা – ৮ থেকে ১০ টি
- গরম জল – অর্ধেক বাটি
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- আট-দশটি তুলসী পাতাকে ভালো করে জলে ধুয়ে নিন।
- এবার অর্ধেক বাটি জল নিয়ে তার মধ্যে তুলসী পাতা গুলো দিয়ে দিন এবং ভালো করে ফুটাতে থাকুন।
- জলটা ফুঁটিয়ে এক কাপ করে নিন।
- রোজ সকালে এক কাপ করে এটি খান।
- তুলসী পাতা জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথার মতন বহু রোগের উপশম কারী উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান হল তুলসী পাতা। তুলসী পাতার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান গুলি ব্রংকাইটিস, ম্যালেরিয়া, জ্বর, সর্দি, গলা ব্যথার মতন বহু রোগের উপশমে সহায়তা করে। এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি শরীরকে তাপমাত্রা কমাতে এবং শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
৩) জ্বর কমাতে মধুর ব্যবহার
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- মধু – ১ চামচ
- পাতিলেবু – অর্ধেক
- গরম জল – এক কাপ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- গরম জলের মধ্যে মধু এবং লেবু মিশিয়ে একটি ভাল মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
- এবার এই মিশ্রণটি দিনে দুইবার খান।
- মধুর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদানগুলি শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করবে যার ফলে ভাইরাস জনিত জ্বর কমতে সহায়তা করবে।
এর ফলে কি হবে?
ভাইরাস জনিত জ্বরের ক্ষেত্রে মধু এবং লেবুর রস একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি ব্যাকটেরিয়া উপশমকারী উপাদান হিসেবে পরিচিত। তাই জ্বরের প্রভাব যদি বৃদ্ধি পায় সে ক্ষেত্রে মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দুবার করে খেতে পারেন। এটি শরীরকে ভেতর থেকে গরম করবে এবং তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে। জ্বর কমানোর উপাদান গুলির মধ্যে মধু অন্যতম।
৪) আদা দিয়েই করুন জ্বরের ঘরোয়া সমাধান
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- আদা বাটা – আধ চা-চামচ
- মধু – ১ চা চামচ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক কাপ গরম জলে আধ চা চামচ আদা বাটা ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- এবার এর মধ্যে মধু মিশিয়ে নিন।
- এই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চার বার পান করুন।
- এছাড়াও আধ চা-চামচ আদার রসের সাথে ১ চা চামচ লেবুর রস এবং ১ চা চামচ মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
- এই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চার বার খেলে শরীরের তাপমাত্রা কমতে থাকবে, জ্বর নিচের দিকে নামতে থাকবে।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম আদার ব্যবহার। আদা এক ধরনের প্রাকৃতিক অ্যান্টি ভাইরাস। যা দেহের তাপকে কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি এটি দেহের ইমিউন সিস্টেমকে যেকোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। যার ফলে আদার সাহায্যে দ্রুত শরীরের তাপমাত্রাকে কমানো যায় এবং অতিরিক্ত জ্বর ঘরোয়া উপায়েই কম করা যায়।
৫) তিল তেল দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমান
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- তিল তেল – কয়েক ফোঁটা
- গরম জল – এক কাপ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক কাপ উষ্ণ গরম জলে কয়েক ফোঁটা তিল তেল মিশিয়ে নিন।
- এবার এই মিশ্রণটি দিনে দু থেকে তিনবার পান করুন।
- এটি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে।
এর ফলে কি হবে?
তিল তেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে এটি অন্যতম। এছাড়াও এটি বুকে কফ, সর্দি কাশি, গলা ব্যথার মত সমস্যাগুলির সমাধান করে।
৬) জ্বরের প্রতিকার করুন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার – দু চা-চামচ
- মধু – ১ চা চামচ
- জল – এক গ্লাস
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক গ্লাস জলে দু চা-চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং ১ টেবিল চামচ মধু ভালো করে মিশিয়ে নিন।
- মিশ্রণটি দিনে একবার পান করুন।
- এতে জ্বর কমবে।
- এছাড়াও জ্বরের সময় স্নানের জলের মধ্যে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার মিশিয়ে সেই জল সারা শরীরে ঢালুন।
- দেখবেন কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিটের মধ্যে শরীরের তাপমাত্রা কমে যাবে।
- এছাড়াও এক টুকরো পরিষ্কার কাপড় তিন ভাঁজ করে নিন।
- তার মধ্যে একভাগে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে বাকি দুই ভাগে জল দিয়ে ভিজিয়ে কপালে এবং পেটে জল পট্টি দিলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বর কমতে সাহায্য করে।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। ঘরোয়া উপাদান হলেও জ্বরের প্রাকৃতিক ঔষধ হিসেবে খুব কার্যকরী। এর মধ্যে থাকা অ্যাসিড ত্বকের ভিতর থেকে তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এর মধ্যে উপস্থিত উপাদান গুলি শরীরে জ্বর কমাতে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।
৭) রসুন দিয়ে কমান ভাইরাল জ্বর
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- রসুন – এক কোয়া
- গরম জল – এক কাপ
- অলিভ অয়েল – ২ টেবিল চামচ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক কাপ গরম জলে এক কোয়া রসুন কুচি কুচি করে কেটে ১০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন।
- এরপর রসুনের কুচি গুলোকে ছেঁকে তুলে নিয়ে রসুন ভেজানো জল টি চায়ের মত করে খেয়ে নিন।
- দিনে দুবার এই জলটি খান।
- এছাড়াও দু’কোয়া রসুন ছেচে নিয়ে তার সাথে অলিভ অয়েল মিশিয়ে মিশ্রণটি দুই পায়ের তালুতে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
- এবার পাতলা কোনও কাপড় দিয়ে সারারাত পা দুটো পেঁচিয়ে রাখুন।
- পরদিন সকালে উঠে দেখবেন জ্বর সম্পূর্ণ সেরে গেছে।
- তবে এটি গর্ভবতী কিংবা বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
এর ফলে কি হবে?
ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর কমানোর উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো রসুন। রসুন এমনিতে শরীর গরম করে তোলে, কিন্তু জ্বর হলে সেই রসুনই জ্বর কমানোর উপাদান হিসেবে কাজ করে। রসুনের মধ্যে থাকা উপাদানগুলি শরীরকে ভেতর থেকে আরও উত্তপ্ত করে তোলে, যার ফলে শরীরে ঘামের সৃষ্টি হয় এবং ঘাম এর মধ্য দিয়ে জ্বর কমে যায়। এছাড়াও এটি শরীর থেকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া গুলিকে দূর করতে সাহায্য করে। রসুনের মধ্যে থাকা অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি দেহের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এর সাথে যুদ্ধ করে শরীরকে সুস্থ করে তোলে।
৮) পুদিনা পাতা দিয়ে ঘরে বসে জ্বর সারান
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- পুদিনা পাতা বাটা – ১ টেবিল চামচ
- মধু – ১ টেবিল চামচ
- গরম জল – এক কাপ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক কাপ গরম জলের সাথে এক টেবিল চামচ পুদিনাপাতা বাটা ভাল করে মিশিয়ে নিয়ে ১০ মিনিট মিশ্রণটি রেখে দিন।
- এরপর এই মিশ্রণটির মধ্যে ১ টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে দিন।
- এই মিশ্রণটি দিনে তিন থেকে চার বার পান করুন। এক দিনের মধ্যে জ্বর কমে যাবে।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর কমানোর উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো পুদিনা পাতা। পুদিনা পাতার মধ্যে জ্বরের প্রাকৃতিক চিকিৎসা করার ক্ষমতা রয়েছে। এটি শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে পুদিনা পাতার এই মিশ্রণটি খেলে শরীরের ভেতর থেকে তাপমাত্রা কমতে থাকে এবং জ্বর ছেড়ে গিয়ে শরীর সুস্থ হয়ে ওঠে।
৯) হলুদ দিয়েই করুন জ্বরের ঘরোয়া সমাধান
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- হলুদ – এক টুকরো
- পুদিনা পাতা – ৫-৬ টি
- দারচিনি – এক টুকরো
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- প্রথমে হলুদটি ভালো করে বেটে নিন।
- উষ্ণ গরম জলে হলুদ পুদিনা পাতা এবং দারচিনি দিয়ে জলটি ১৫ মিনিট ফুঁটিয়ে নিন।
- এবার ছাঁকনি দিয়ে মিশ্রণটি ছেঁকে নিন।
- চা এর মতন হয়ে গেলে দিনে দুবার মিশ্রণটি পান করুন।
এর ফলে কি হবে?
হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি শরীর থেকে ভাইরাস জনিত জ্বর কমাতে সাহায্য করে। জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান হল হলুদ। এছাড়াও পাতা ও দারুচিনি শরীরকে ভেতর থেকে শীতলতা দান করে শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
১০) ভাইরাল জ্বর কমাতে গ্রিন টির ব্যবহার
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- গ্রিন টি ব্যাগ – একটি
- উষ্ণ গরম জল – এক কাপ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক কাপ জল ভালো করে গরম করে নিন।
- এবার এর মধ্যে গ্রিন টি ব্যাগটি ভিজিয়ে রাখুন ১০ মিনিটের জন্য।
- এরপর চা টি খেয়ে নিন।
- এছাড়াও এই গ্রিনটি তে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
- এতেও শরীরে ভেতর থেকে তাপটা বের হতে সাহায্য করবে। এছাড়াও জ্বর কমাতে সহায়তা করবে।
এর ফলে কি হবে?
জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান গ্রীন টি। গ্রীন টির মধ্যে আছে শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদানসমূহ। যেগুলি শরীরকে ভিতর থেকে রোগ প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন কোষ গুলিতে শক্তি সঞ্চয় করে। যেকোনো ধরনের ভাইরাল ফিভার কিংবা ব্যাকটেরিয়া জনিত কারণে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে সে ক্ষেত্রে গ্রিন টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তাই হঠাৎ করে যদি শরীর দুর্বল কিংবা জ্বর জ্বর ভাব মনে হয় প্রথমেই এক কাপ গ্রিন টি খেয়ে নিন। এতে জ্বর বেড়ে যাওয়ার আগে শরীর তার প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারবে।
১১) যষ্টিমধু দিয়ে করুন জ্বরের ঘরোয়া সমাধান
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- যষ্টিমধু – এক টুকরো
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- এক টুকরো যষ্টিমধু নিয়ে সেটা ভালো করে গা থেকে ছাল গুলো ছাড়িয়ে নিন।
- এবার সেই টুকরোটি মুখে নিয়ে ভালো করে চিবিয়ে খান।
- এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে এবং জ্বর খুব দ্রুত কমাবে।
এর ফলে কি হবে?
যষ্টিমধুর মধ্যে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল এবং একটি অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান সমূহ। এটি শরীরের যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ কে কমাতে সহায়তা করে। মূলত কোন রকম অস্ত্রোপচারের পরে বা কোন রোগ ভোগের পরে যদি জ্বর আসে সে ক্ষেত্রে জ্বর কমানোর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ হলো যষ্টিমধু। এর মধ্যে থাকা পেপাইডাইড নামক উপাদান ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে শরীরে প্রোটিন তৈরি করতে সহায়তা করে। যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে শরীরকে প্রতিরক্ষা প্রদান করে। এছাড়াও এটি যে কোন ধরনের শারীরিক ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে সহায়তা করে। জ্বর কমানোর উপাদান গুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
১২) জ্বর কমাতে দারচিনির ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- দারচিনির গুঁড়ো – ১ চামচ
- মধু – ১ টেবিল চামচ
কিভাবে ব্যবহার করতে হবে?
- দারচিনির গুঁড়োর সাথে মধু মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
- এবার এই মিশ্রণটি দিনে দুই থেকে তিনবার খান।
- এটি জ্বর এর পাশাপাশি ঠান্ডা লেগে গলা ব্যথা এবং সর্দি কাশি কমাতে সহায়তা করবে।
এর ফলে কি হবে?
দারচিনির মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ভাইরাল উপাদান সমূহ রয়েছে।জ্বর কমানোর উপাদান গুলির মধ্যে দারচিনি অন্যতম। এর মধ্যে থাকা উপাদান শরীরে ভাইরাস জনিত সংক্রমণ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি গলা ব্যথা, ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি কাশি, কফের সমস্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপাদান গুলির মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো দারচিনি। এটি ব্যবহারে খুব শীঘ্রই শরীর সুস্থ হয়ে উঠবে।
জ্বর সারানোর আরো কিছু উপায় : Other Tips For Fever in Bengali
বর্তমান সময়ে ভাইরাস জ্বর শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলকেই নাজেহাল করে চলেছে। অধিকাংশ ভাইরাস জ্বরই নিজে থেকেই সেরে যায়। এর মেয়াদ পাঁচ থেকে সাত দিন। এক্ষেত্রে বিশেষ ওষুধের প্রয়োজন পড়ে না। তবে কয়েকটি ঘরোয়া উপাদানের সাহায্যে আমরা এই অল্প জ্বর নিয়ন্ত্রন করতে পারি। ইতিমধ্যেই ঘরোয়া উপাদান গুলি সম্পর্কে আমরা আলোচনা করে নিয়েছি। তবে অবস্থা যদি খুব খারাপ হয় সে ক্ষেত্রে তো ওষুধ খেতেই হবে এবং প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কিছু বিষয় রয়েছে যে গুলো মেনে চললে ঘরোয়া উপাদান ব্যবহার করার পাশাপাশি শরীরকে খুব দ্রুত সুস্থ করে তোলা যাবে। আসুন জেনে নিন ঘরোয়া পদ্ধতিতে জ্বর সারানোর আরো কিছু উপায় :
১) শরীর আর্দ্র রাখুন
জ্বর হলে অর্থাৎ শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে শরীর থেকে জল কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। তাই শরীরকে আর্দ্র রাখার চেষ্টা করুন। যদি কোন প্রকার শক্ত খাবার খেতে অসুবিধা হয় সে ক্ষেত্রে দিনের অধিকাংশ সময় তরল জাতীয় খাবার খান এবং এর সাথে সাথে জল খাওয়ার পরিমাণটা বাড়িয়ে নিন। কেননা শরীর যদি শুষ্ক হয়ে পড়ে সে ক্ষেত্রে শরীরের সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তাপমাত্রাও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকবে। তাই শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে জ্বর হওয়া অবস্থায় অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে জল খাবেন এবং তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কেননা শরীর যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না পায় সে ক্ষেত্রে ভাইরাল ইনফেকশনের বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা থাকে। কেননা শরীর তখন ব্যাকটেরিয়ার সাথে লড়াই করতে পারে না, ফলে শরীর আরো দুর্বল হয়ে ওঠে।
২) নিজে সুরক্ষিত থাকুন
ভাইরাস জ্বর হলে প্রথমেই দেখা যায় রোগী প্রচন্ড দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যার ফলে অন্যান্য রোগের সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই এই সময় যতটা সম্ভব ঘরে থাকার চেষ্টা করুন। এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে আরো গভীরভাবে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিজের সুরক্ষা নিজে বজায় রাখুন এবং নিজেকে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা করুন। জ্বর কমানোর উপায় গুলির মধ্যে এটি অন্যতম।
৩) বিশ্রাম নিন
ভাইরাস জনিত জ্বর হলে বৃদ্ধ থেকে শিশু সকলেরই বিশ্রাম নেওয়া আবশ্যক। কেননা শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম না পেলে এই সময় আরো দুর্বল হয়ে উঠবে। ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলে শরীর এমনিতেই ক্লান্ত হয়ে ওঠে, যার ফলে যদি যথাযথ বিশ্রাম না নেওয়া হয় শরীর সে ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কার্যক্রমে পুনরায় ফিরে আসতে সময় নেবে। তাছাড়াও আপনার থেকে জ্বর অপর জনের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যেতে পারে। তাই যথাসম্ভব নিজের ঘরে বিছানায় বিশ্রাম নেওয়ার চেষ্টা করুন। এতে শরীরও খুব শীঘ্রই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলে জ্বর কমাতে সহায়তা করবে।
৪) স্বাস্থ্যকর খাবার খান
জ্বর হলে বা কোনরকম সংক্রমণ জনিত রোগ হলে এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাইরের খাবার, প্যাকেটজাত পানীয় থেকে দূরে থাকাই এই সময় ভালো। কেননা ঘরের পুষ্টিকর খাদ্য আপনার শরীরকে ভেতর থেকে পুষ্টি প্রদান করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সৃষ্টি করবে। এছাড়াও এই সময় খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার রাখার চেষ্টা করুন। এই ভিটামিনগুলো শরীরকে পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে এবং এর পাশাপাশি রোগ নিরাময়ে সাহায্য করবে।
৫) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলুন
জ্বরের সময় এমন খাবার খান যাতে ভিতর থেকে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন জাতীয় খাদ্য রাখার চেষ্টা করুন। যদি সরাসরি খাবার খেতে না পারেন সেক্ষেত্রে তরল জাতীয় খাদ্য খেয়ে শরীর কে শক্তি সঞ্চয় করুন। যাতে শরীর ভেতর থেকে দুর্বল না হয়ে পড়ে।
৬) ভেষজ চা খান
জ্বরের সময় পানীয় হিসেবে ভেষজ চা খেতে পারেন। এটি আপনি ঘরে নিজের ইচ্ছামত উপকরন দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন, নিজের পছন্দ অনুযায়ী। তবে এক্ষেত্রে মাথায় রাখবেন যদি আপনি প্রসূতি হন কিংবা শিশুদের যদি জ্বর হয় সে ক্ষেত্রে ভেষজ চা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন। কেননা সব সময় ভেষজ চা সকলের ক্ষেত্রে সমান কার্যকরী নাও হতে পারে।
৭) স্নান করুন
জ্বর হয়েছে বলে স্নান করবো না এই ধারণাটা আমাদের অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। কিন্তু এটা সর্বোপরি ভুল ধারণা। কেননা শরীরের তাপমাত্রা যখন বৃদ্ধি পায়, সে ক্ষেত্রে আমরা যদি পনেরো-কুড়ি মিনিট ধরে উষ্ণ গরম জলে স্নান করি সে ক্ষেত্রে তাপমাত্রা কমতে সহায়তা করে। যদি অবস্থা খুব খারাপ থাকে যে রোগী বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে যেতে পারবেনা, সে ক্ষেত্রে পরিষ্কার কাপড় ভিজিয়ে গা পন্জ করে দেওয়া যেতে পারে। এর ফলে শরীর তার ওপর থেকে তাপমাত্রা কমতে সহায়তা করে এবং জ্বরের মাত্রা হ্রাস পায়। যে কারণে জ্বরের সময় অবশ্যই স্নান করবেন। স্নান না করে থাকলে পরে শরীরে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ আরো বৃদ্ধি পাবে।
৮) তরল ও গরম খাবার খান
জ্বর হলে অনেকেই খেতে চান না কিংবা খাওয়া বন্ধ করে দেন কিন্তু এই ধারণাটা আমাদের সকলেরই ভুল। কেননা এই সময় শরীরের আরও অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। তাই যদি শক্ত জাতীয় খাবার খেতে ইচ্ছা না করে সে ক্ষেত্রে তরল জাতীয় খাবার খেতে পারেন। যেকোনো ধরনের সুপ তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। তবে খাবারটি যেন অবশ্যই গরম হয়, সেইদিকে মাথায় রাখবেন। কেননা গরম স্যুপ খেলে আমাদের গলা যেরকম আরাম পাবে। সর্দি কাশির সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে যেমন আরাম পাওয়া যাবে, তা ছাড়া শরীর ভেতর থেকে তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করবে।
৯) শুয়ে থাকবেন না
জ্বর হয়েছে বলে সারাদিন চাদর গায়ে চাপা দিয়ে শুয়ে রইলাম এই টি কখনোই করবেন না। কেননা যত শুয়ে থাকবেন তাপমাত্রা তত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাই ঘরে অল্প পরিসরের মধ্যে হাঁটাচলা করার চেষ্টা করুন। তা না হলে বেশি শুয়ে থাকলে মাথা ভার হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে নিজেকে আরও দুর্বল বলে মনে হবে। তাই যদি সম্ভব হয় উঠে অল্পবিস্তর হাঁটাচলা করুন এবং আবার এসে খাটে বসে পড়ুন।
১০) রোদে বেরোবেন না
শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ জলের পরিমাণ যদি একটু বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে রোদে না বেরোনো ভালো। কেননা শরীর এমনিতেই গরম। তার মধ্যে যদি বাইরের উত্তাপ শরীরে লাগে সেটি শরীরের ক্ষতি করে এবং ব্যাকটেরিয়া গুলিকে উদ্দীপিত করে তোলে। তাই যথাসম্ভব জ্বর হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করুন।
১১) ফ্রিজের খাবার খাবেন না
জ্বর থাকাকালিন শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি সর্দি কাশি, বুকে কফ, গলা ব্যথা, নাক বন্ধের সমস্যা লেগেই থাকে। তাই এই সময় ফ্রিজ থেকে বের করে সরাসরি কোন খাবার খাবেন না। চেষ্টা করবেন ফ্রিজে থেকে বের করে গরম করা খাবার না খেতে। কেননা ফ্রিজে যখন আমরা খাবারটি রাখি তখন তার মধ্যে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সৃষ্টি হয়, যেটি জ্বর অবস্থায় খেলে শরীরের ক্ষতি করে। কেননা শরীর এই সময় দুর্বল থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। তাই এক্ষেত্রে অন্য ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের সম্ভাবনা থেকেই যায়। তাই জ্বর হলে পরে কিংবা জ্বর কমে যাওয়ার ৪-৫ দিনের মধ্যে ফ্রিজের খাবার না খাওয়াই ভালো।
১২) ধূমপান বন্ধ
জ্বর হলে পরে এই সময় ধূমপান না করাই ভালো। এর পাশাপাশি মদ্যপানও না করাই উচিত। কেননা ধূমপান এবং মদ্যপান শরীরকে আরো উত্তেজিত করে তোলে। জ্বর থাকাকালীন অবস্থায় এগুলি তাই একেবারেই ঠিক নয়। তাই জ্বর হলে ধূমপান এবং মদ্যপানকে কঠোরভাবে বন্ধ করা উচিত।
হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তনের ফলে এখন ঘরে ঘরে ভাইরাল ফিভারের সমস্যা দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে গা হালকা গরম ভাব, চোখে জ্বালা করে জ্বরটা আসছে। তাই এটির অবহেলা না করে শুরু থেকেই যদি উপরিউক্ত ঘরোয়া বিষয় গুলি মেনে চলতে পারেন তাহলে সহজেই জ্বরের প্রতিকার করা সম্ভব হবে। এর পাশাপাশি ঘরোয়া উপাদান গুলির পাশাপাশি যদি আমরা এই ছোটখাটো বিষয় গুলি মাথায় রাখি সে ক্ষেত্রে আমাদের শরীর হয়তো খারাপ হবে না কিংবা শরীরের সংক্রমণ থেকেও আমরা দূরে থাকতে পারব। তাই আর অপেক্ষা কিসের যদি নিজেকে কোনরকম অসুস্থ বলে মনে হয় কিংবা জ্বর আসার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে হয় সেক্ষেত্রে আজ থেকেই তার প্রতিকারের ব্যবস্থা করুন এবং ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার চেষ্টা করুন। দেখবেন তাহলে খুব বেশি বাড়াবাড়ি হবে না এবং অল্পতেই এর থেকে আপনি নিস্তার পাবেন। এবং নিজেকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। তাই নিজের খেয়াল রাখার পাশাপাশি নিজের ঘরের আপন লোকজনদেরও খেয়াল রাখুন। নিজে সুস্থ থাকুন, সকলকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করুন।
আমাদের পোস্ট আশা করি আপনার জন্যে খুব উপকারী হবে। আপনার কি জানা আছে আরো কোনো জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়? জানান আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.