খুশকি দূর করার ২০টি ঘরোয়া উপায় – Dandruff Solution at Home in Bengali
খুশকির সমস্যা যেন চিরন্তন। একটা সুন্দর কালো রঙের পোশাক পড়ে পার্টিতে যাবেন কিন্তু চিন্তা একটাই, মাথার চুলটা ছেড়ে রাখলে কালো জামার ওপর রাতের আকাশের সাদা তারার মতন যদি খুশকি গুলি সবার চোখে পড়ে? আসলে এটি প্রত্যেকের জীবনের একটি দৈনন্দিন সমস্যা। সমস্যাটি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না হলেও কিংবা এটিকে আমরা খুব বেশি গুরুত্ব না দিলেও মাঝে মধ্যে কিন্তু এই মাথার খুশকি একটি বিশাল সমস্যা এবং চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মূলতঃ বর্ষাকালে এবং শীতকালে মাথায় খুশকির প্রবণতা বাড়ে। তবে এখন সারা বছরই আবহাওয়ার ক্রমশ পরিবর্তন এবং অত্যধিক গরমের জন্য সব সময়েই খুশকির সমস্যা লক্ষ্য করা যায়। খুশকি অনেক প্রকারের হয়, কোনোটা চুলে আটকে থাকে, কোনোটা আবার শুষ্ক ধরনের হয় যেটা সহজেই কাঁধে কিংবা জামার কলারে লক্ষ্য করা যায়। সারা বিশ্বে মোট জনসংখ্যার ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ এই খুশকির সমস্যায় ভুগছে। প্রত্যেকেই একটি সুন্দর পরিষ্কার ঝকঝকে চুল চায়। কিন্তু চুলে খুশকির সমস্যা দেখা দিলে তা সেই সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। এক ধরনের সাদা পাউডারের মতন বস্তু চুলের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু এই গুরুতর খুশকির সমস্যার সমাধান কিন্তু আপনার হাতের কাছেই রয়েছে। আপনার ঘরে থাকা কয়েকটি জিনিস দিয়েই আপনি সহজেই এই খুশকির সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। আসুন জেনে নিন কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি সমস্যা দূর করবেন অর্থাৎ খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়। তবে তার আগে আমাদের জানতে হবে খুশকি কি কারনে হয়?
In This Article
খুশকি হওয়ার কারণ – What Causes Dandruff in Bengali
মাথার ত্বকে এক ধরনের ছত্রাক বাসা বাঁধে যার ফলে মাথার চুলে খুশকি দেখা যায়। এটি মাথার ত্বককে শুষ্ক করে সেখান থেকে চামড়া তুলতে থাকে। মূলতঃ মাথার ত্বকে অত্যধিক শুষ্কতার কারণে কিংবা মাথার ত্বকে যদি অত্যধিক তেল উৎপাদন হয় তাহলেই মাথায় খুশকি দেখা যায়। যারা দৈনন্দিন সঠিকভাবে চুল আঁচড়ায় না, চুলে ঠিকমতো শ্যাম্পু করেন না তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। কেননা মাথার চুল যদি দীর্ঘদিন অপরিষ্কার থাকে সে ক্ষেত্রে চুলের গোড়ায় এই ধরনের ছত্রাক তৈরি হয়, যা খুশকির সৃষ্টি করে। আমরা জানি একটি সুন্দর আকর্ষণীয় ত্বক পেতে গেলে তাকে যথাযথ ক্লিনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং এবং স্ক্রাবিংয়ের মধ্য দিয়ে দৈনন্দিন পরিচর্যা করতে লাগে। তেমনই মাথার ত্বকেরও ক্লিনজিং, টোনিং ময়েশ্চারাইজিং এবং স্ক্রাবিং প্রয়োজন হয় আর তাই চুলের গোড়া যদি সুস্থ থাকে তাহলে চুলও সুস্থ এবং সুন্দর থাকবে। চুলের গোড়াকে সুস্থ রাখার জন্য দৈনন্দিন চুল আঁচড়ানো ও চুলে শ্যাম্পু করার পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট ডায়েট চার্ট ফলো করতে হবে যা শরীরে তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান গুলোকে গ্রহণ করতে সহায়তা করে। এছাড়াও বিভিন্ন ত্বকের রোগ কিংবা একজিমা জাতীয় রোগের চিকিৎসা এবং অত্যধিক চিন্তা এগুলি কমাতে হবে। কেননা অত্যধিক চিন্তার ফলে তা মাথার ত্বকের ওপর প্রভাব ফেলে, যার ফলে খুশকির সমস্যা দেখা যায় এবং চুলের গোড়া হালকা হতে থাকে।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় – Home Remedies for Dandruff in Bengali
এবার এক নজরে দেখে নিন খুশকির ঘরোয়া সমাধান বা উপায়গুলি কি কি। এর পাশাপাশি জেনে নিন আপনার মাথায় কি ধরনের খুশকি রয়েছে? কেননা চুল অত্যধিক শুষ্ক হলে যেমন খুশকির সমস্যা দেখা যায়, তেমনই চুল অত্যধিক তৈলাক্ত হয়ে গেলেও খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।( ১) আসুন এক নজরে জেনে নিন খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায়।
১) খুশকি দূর করতে নিমের ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- নিম পাতা – ১০-১২ টি
- অলিভ অয়েল – ৪ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– মিক্সারে জল না দিয়ে ভালো করে নিম পাতা গুলো গুঁড়ো করে নিন।
– এবার একটি বাটির মধ্যে ওই নিম পাতার গুঁড়ো এবং অলিভ অয়েল দিয়ে ভাল করে মিশিয়ে নিন।
– মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে দিন।
– ১ ঘন্টা মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিন এবং অবশ্যই এর পর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।
– অপর একটি পদ্ধতি হলো, নিম পাতা ৩০ মিনিট ধরে জলে ফুটিয়ে নিন।
– এরপর নিম পাতাটি দিয়ে একটি পেস্ট তৈরি করুন।
– মাথার ত্বকে মিশ্রণটি ৩০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– সপ্তাহে প্রতিদিন স্নানের আগে এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে পারেন।
– এছাড়া আগের দিন রাতেও নিম পাতা ও তেলের মিশ্রণটি বানিয়ে মাথায় লাগিয়ে রাখতে পারেন।
– পরদিন সকালে উঠে শ্যাম্পু করে নিন।
– সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন এটি ব্যবহার করলে ১৫ দিনে খুশকি কমতে শুরু করবে বলে লক্ষ্য করতে পারবেন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম নিমপাতা। নিমপাতায় উপস্থিত উচ্চমাত্রার ফ্যাটি অ্যাসিড মাথার ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে এবং মাথার ত্বক ভালো থাকলেই তা চুলের বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়াও মাথার ত্বক আর্দ্র থাকলে সেখানে খুশকি জন্মাতে পারে না। অতিরিক্ত তৈলাক্ততার কারণে যাদের মাথায় খুশকি হয় তাদের ক্ষেত্রেও উপযুক্ত হল নিমপাতা। কেননা মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদন বন্ধ করে চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে নিম পাতা। তেলের সাথে নিম পাতার রস মাথায় মাসাজ করলে মাথার রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং চুলের বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া মাথার ত্বকে নিম পাতা পেস্ট করে লাগালে খুশকির পাশাপাশি মাথার শুষ্ক ত্বক কিংবা যেকোন রকম ত্বকের রোগের সমস্যা দূর হয়। (২)
সতর্কতা :
নিম পাতার মিশ্রণটি মাথায় লাগানোর পর মাথায় সামান্য চুলকানি ভাব হতে পারে। তবে এতে চিন্তার কিছু নেই এর মধ্যে অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা মাথার ত্বককে সুস্থ এবং স্বাভাবিক করে তুলবে। এবং যেকোন ধরনের ত্বকের জন্যই নিমপাতা উপযোগী।
২) লেবু দিয়ে খুশকি দূরীকরণ
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- পাতিলেবু – অর্ধেক
- টক দই – এক বাটি (ঘরে পাতা হলে বেশি ভালো)
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– টক দই এবং লেবুর রস ভাল করে মিশিয়ে নিন।
– এবার এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এবং সারা চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– এই মিশ্রণটি মাথায় লাগানোর পর হালকা হাতে আঙ্গুল দিয়ে মাথার ত্বকে একটু মালিশ করে নিন।
– দশ মিনিট এই মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– ১০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে চুলটা ধুয়ে নিন।
– সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন স্নান করার আগে এই প্যাকটি মাথার চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
লেবুর মধ্যে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন সি চুলকে একেবারে গোড়া থেকে খুশকি মুক্ত করবে। এছাড়াও এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চুলের পতন রোধ করবে। এর পাশাপাশি মাথার ত্বকে কোন রকম সমস্যা দেখা দিলে লেবুর রস সেটি দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। তবে একটা কথা মাথায় রাখতে হবে লেবুর রস সরাসরি মাথার ত্বকে ব্যবহার না করে প্যাক এর মত তৈরি করে চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এটি চুলকে উজ্জ্বল করে তুলতে সাহায্য করে। এছাড়াও লেবুর মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম চুলকে খুশকি মুক্ত করার পাশাপাশি চুলের অকালপক্কতা দূর করবে। এটি অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যযুক্ত হওয়ায় মাথার ত্বকে হওয়া যেকোন ধরনের ব্রণ ও ফুসকুড়ি কমাতে সহায়তা করে। খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম উপাদান এটি। (৩)
সতর্কতা:
এই প্যাকটি ব্যবহার করার পর অবশ্যই চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নেবেন। অন্যথায় চুল থেকে দই এর একটি দুগ্ধ গন্ধ আসতে পারে। তাই প্যাকটি লাগানোর পর চুল ভালো করে ধুয়ে নেওয়াই ভালো।
৩) মেথি দিয়ে ঘরে বসেই খুশকি দূর করুন
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- মেথি – ১ টেবিল চামচ
- গরম জল – ২ কাপ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– আগের দিন রাতে মেথি ভিজিয়ে রাখুন।
– পরদিন সকালে উঠে মিক্সিতে মেথি গুলো বেটে নিন।
– এরপর গরম জলের সাথে রাতে ভেজানো মেথির পেস্টটি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– এবার মিশ্রণটি সারা মাথায় লাগিয়ে নিন।
– এবার ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
– এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে চুল ধুয়ে নিন।
– এটি লাগানোর পর শ্যাম্পু করার প্রয়োজন নেই। রোজ স্নান করার আগে এটি চুলে ব্যবহার করতে পারেন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
মেথির ব্যবহারের ফলে চুল খুব তাড়াতাড়ি বেড়েও যেমন ওঠে, তেমনি মেথিতে উপস্থিত প্রোটিন স্ক্যাল্পে রক্ত চলাচলকে ত্বরান্বিত করে। খুশকি দূর করার উপায় গুলির মধ্যে মেথি অন্যতম। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, আয়রন এবং পটাশিয়াম চুলের খুশকি দূরীকরণ এর পাশাপাশি চুলের অকালপক্কতা রোধ করে চুলকে মসৃণ এবং ঘন তৈরি করে। (৪)
সতর্কতা :
মেথির এই প্রক্রিয়াটি ব্যবহার করার পর মাথায় শ্যাম্পু দেবেন না। কেননা এটি চুলে লাগানোর ফলে চুলে কোন রকম তৈলাক্ততা দেখা যাবে না। যদি এটা ব্যবহার করার পর সঙ্গে সঙ্গে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তাহলে মেথির যে গুনাগুন গুলি স্ক্যাল্পে গেল সেটি সহজেই নষ্ট হয়ে যাবে।
৪) ভিনিগার দিয়ে খুশকি দূর করুন
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- ভিনিগার – আধ কাপ
- নারকেল তেল – এক চামচ
- জল – দু কাপ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– আধ কাপ ভিনেগার দুই কাপ জলে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
– এবার মিশ্রণটি ভালো করে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে নিন।
– ১০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
– এছাড়া দু চামচ ভিনেগার এক চামচ নারকেল তেল এবং চার চামচ জল মিশিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
– এরপর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– সপ্তাহে দুদিন এই প্রক্রিয়াটি করুন, খুশকির সমস্যা দূরীভূত হবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
ভিনেগার এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি মাথার শুষ্ক ত্বকের নিরাময় করে। স্ক্যাল্প থেকে চুলকানি বা জ্বালা ভাব কমাতে সহায়তা করে। খুশকির ঘরোয়া সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিনিগার।
সতর্কতা :
মাথায় ভিনিগার লাগানোর সময় খেয়াল রাখবেন তা যেন কখনোই চোখের সংস্পর্শে না আসে। কেননা এর মধ্যে থাকা আম্লিক ভাব চোখের জ্বালার সৃষ্টি করবে কিংবা চোখের দৃষ্টি নষ্ট করে দিতে পারে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
৫) খুশকি দূরীকরণে টক দই এর ব্যবহার
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- টক দই – এক কাপ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– এক কাপ টক দই নিয়ে সেটা ভালো করে ফেটিয়ে নেবেন।
– এবার টক দইটি মাথার স্কাল্পে এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে নেবেন।
– এরপর ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখবেন।
– এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে যে কোন হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথাটা ধুয়ে নেবেন।
– সপ্তাহে তিন দিন স্নান করার আগে এটি করতে পারেন। এটি চুলকে উজ্জল এবং খুশকি বিহীন করে তুলবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকির ঘরোয়া সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টকদই। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস কমাতে সাহায্য করে। যেহেতু এটি প্রোবটিক্স এর একটি ভালো উৎস তাই এটি খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়াও শরীরের মধ্য থেকে যে কোন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে এবং ত্বককে মসৃণ করতে সহায়তা করে।
সতর্কতা :
মাথায় টক দই ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই মনে রাখবেন দইটি যেন একদম সতেজ হয়। কেননা বেশি পুরনো হলে সে ক্ষেত্রে এর ভালো ফলাফলের থেকে খারাপ প্রভাবটাই অত্যধিক লক্ষ্য করা যাবে। দই পুরনো হয়ে গেলে তার মধ্যে ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতাটা আর থাকে না, বরং তার মধ্যেই ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়।
৬) অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে খুশকি দূর করুন
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- অ্যাপেল সিডার ভিনিগার – হাফ কাপ
- জল – হাফ কাপ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– হাফ কাপ অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এবং হাফ কাপ জল ভালো করে মিশিয়ে নেবেন।
– এরপর আপনার পরিষ্কার চুলে এই মিশ্রণটি মাথার ত্বক থেকে পুরো চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– এরপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে মাথাটা ভালো করে ম্যাসাজ করে নিন।
– ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
– এই মিশ্রণটির ব্যবহার করার পর মাথায় শ্যাম্পু না করলেও চলবে।
– সকালে স্নান করার সময় প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব দ্রুত মাথার খুশকি সমস্যা নিরাময় হবে
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকির ঘরোয়া সমাধান করুন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার দিয়ে। অ্যাপেল সিডার ভিনিগার এর মধ্যে থাকা আম্লিক উপাদানগুলি মাথার খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এছাড়া এটি মাথার স্ক্যাল্পের পিএইচ এর ভারসাম্য রক্ষা করে। যার ফলে মাথার ত্বকে শুষ্কতা বৃদ্ধি পায় না এবং মাথার ত্বক শুষ্ক হয় না ও খুশকি নিরাময় হয়। (৫)
সতর্কতা :
এটি ব্যবহারের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে চোখের সংস্পর্শে না আসে। কারণ এটি চোখে লাগলে চোখে জ্বালা ভাব সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের সাথে জল সম পরিমাণ মতো নেবেন। নাহলে ভিনিগারের পরিমাণ বেশি হলে তা স্ক্যাল্পে জ্বালার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের সময় ও মিশ্রণটি তৈরীর সময় পরিমানের বিষয়টি খেয়াল রাখবেন।
৭) ডিম দিয়ে খুশকি দূরীকরণ
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- ডিম – একটি কিংবা দুটি
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– একটি বাটিতে ডিম গুলি ফাটিয়ে নিয়ে ভালো করে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– এবার মিশ্রণটি চুলের ডগা থেকে গোড়া অবধি ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– এরপর শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে রাখুন।
– মিশ্রণটি মাথায় এক ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন।
– চুলটা ভালো করে ধুয়ে নেবেন যাতে ডিমের গন্ধ না থাকে।
– সকালে স্নান করার আগে সপ্তাহে দুদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকির ঘরোয়া সমাধানে ডিম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। ডিমের মধ্যে থাকা উপাদান গুলি মাথার খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও মাথার ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সহায়তা করে। ডিমের মধ্যে থাকা বায়োটিন চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়া এটি চুলকে উজ্জ্বলও করে তোলে। (৬)
সতর্কতা :
এই প্যাকটি লাগানোর পর অবশ্যই শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে মাথাটা ঢেকে নেবেন। কেননা ডিমের তরল অংশ গড়িয়ে গিয়ে জামা কাপড় নষ্ট করতে পারে।
৮) ঘরে বসে অ্যালোভেরা দিয়ে খুশকি দূর করুন
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- অ্যালোভেরা জেল – পরিমাণমতো
- অলিভ অয়েল – ২ চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– বাজার থেকে কিনে বা অ্যালোভেরা গাছের অংশ কেটে সেখান থেকে ভালো করে অ্যালোভেরার জেল বের করে নিন।
– এবার অ্যালোভেরা জেলের সাথে অলিভ অয়েল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
– এবার মিশ্রণটি সরাসরি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– ১৫ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর হালকা শ্যাম্পু ব্যবহার করে মাথা ধুয়ে নিন।
– সকালে স্নান করার আগে প্রতিদিন এটি ব্যবহার করতে পারেন।
– এটি ব্যবহারের ফলে খুব দ্রুত খুশকি নিরাময় হবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলি মাথার ত্বকে ফাঙ্গাস ইনফেকশন দূর করে খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা উপাদান মাথার ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে তা আর্দ্র করে তুলতে সহায়তা করে। এছাড়াও অ্যালোভেরার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি এক্সফলিয়েশনে সহায়তা করে মাথা থেকে খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে। (৭)
সতর্কতা :
অনেক সময় সরাসরি অ্যালোভেরা গাছের জেল লাগালে ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে অ্যালোভেরা জেল মাথায় লাগানোর আগে হাতের কনুইতে একবার লাগিয়ে দেখে নেবেন যে ত্বকে কোনরকম সমস্যা হচ্ছে কি-না। অন্যথায় প্যাকেটজাত যেকোনো অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন।
৯) নারকেল তেল দিয়ে খুশকি দূর করুন
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- নারকেল তেল – চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী নারকেল তেল নিয়ে হালকা গরম করে নিন।
– এবার নারকেল তেলটি ভালো করে সারা মাথায় লাগিয়ে নিন।
– মাথার স্ক্যাল্প থেকে চুলের গোড়া পর্যন্ত ভালো করে লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর হালকা হাতে মাথায় মাসাজ করে দিন।
– ৩০ মিনিট এটি মাথায় রেখে দিন।
– এরপর জল দিয়ে ভালো করে চুলটা ধুয়ে নেবেন।
– সম্ভব হলে সেদিন শ্যাম্পু না করে পরের দিন শ্যাম্পু করার চেষ্টা করবেন। এতে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলটাও মোলায়েম হবে।
– সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করলে মাথার খুশকি দূর হয়ে যাবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
নারকেল তেল ত্বকের গভীরে পৌঁছে ত্বককে পুষ্টি প্রদান করে। মূলতঃ মাথার ত্বকে শুষ্কতার কারনেই খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। আর নারকেল তেল ত্বকের গভীরে গিয়ে এপিডার্মিস স্তরে গিয়ে স্কাল্পে পুষ্টি প্রদান করে। এটি মাথার শুষ্কতা দূর করে এবং খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে। (৮)
সতর্কতা :
নারকেল তেল গরম করার সময় খেয়াল রাখবেন তা যেন অত্যধিক গরম কিংবা ফুটন্ত না হয়ে যায়। তেল ফুটে গেলে তার মধ্যে থাকা পুষ্টিকর উপাদানগুলি নষ্ট হয়ে যাবে। তাই কড়াইতে জল দিয়ে তার ওপর বাটিতে নারকেল তেল দিয়ে ভাপের পদ্ধতিতে তেল উষ্ণ গরম করে নিন।
১০) কমলালেবুর খোসা দিয়ে খুশকি দূরীকরণ
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- কমলালেবুর খোসা – কয়েক টুকরো
- লেবুর রস – পাঁচ-ছয় চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– কমলালেবুর খোসা গুলো ভালো করে গুঁড়ো করে নিন।
– এবার কমলা লেবুর খোসা গুলোর মধ্যে লেবুর রস মিশিয়ে একটি মসৃণ মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
– এবার মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– মিশ্রণটি ৩০ মিনিট মাথার ত্বকে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন।
– এরপর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– প্রতিদিন স্নানের আগে এটি করতে পারেন।
– সপ্তাহে অন্তত তিনবার করলে দু সপ্তাহে খুশকির সমস্যার সমাধান বুঝতে পারবেন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
কমলা লেবুর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং অ্যাসিড জাতীয় উপাদান মাথার ত্বকে তেল নিঃসরণ কমিয়ে খুশকির সমস্যা দূর করে এবং এর মধ্যে থাকা উপাদান গুলি চুলে উজ্জ্বলতা প্রদান করে।
সতর্কতা :
এই প্যাকটি মাথায় লাগানোর আগে অবশ্যই দেখে নেবেন লেবুর রস থেকে কোন রকম অ্যালার্জি আপনার ত্বকে হয় কিনা। লেবুর রস ব্যবহারের ফলে কোন রকম অ্যালার্জি হলে এখানে লেবুর রসের বদলে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
১১) খুশকি দূরীকরণে আপেলের ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- আপেলের রস – ২ টেবিল চামচ
- জল – ২ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– আপেলের রস এবং জল ভালো করে মিশিয়ে নিন।
– এবার এই মিশ্রণটি মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগিয়ে রাখুন।
– ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
– এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– অবশ্যই শ্যাম্পু করার পর মাথায় কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন।
– সকালে স্নান করার আগে সপ্তাহে তিন দিন এটি ব্যবহার করুন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
আপেলের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান গুলি খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সহায়তা করে এবং মাথার ত্বকে আর্দ্রতা প্রদান করে শুষ্কতা দূর করে। খুশকির সমস্যা কম করে এবং চুলকে স্বাস্থ্যকর করে তোলে। (৯)
সতর্কতা :
আপেলের রসে খুব বেশি জল দেবেন না। এর ফলে আপেলের রসের ঘনত্ব কমলে তা কার্যকরী অবস্থায় থাকবে না।
১২) খুশকি দূরীকরণে তুলসীর ব্যবহার
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- তুলসী পাতা – দশ বারোটা
- আমলা পাউডার – ২ চা চামচ
- জল – ১ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– তুলসী পাতা, আমলা পাউডার জল দিয়ে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে নিন।
– এবার এটি মাথার স্ক্যাল্পে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।
– ৩০ মিনিট এটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর পরিষ্কার জল দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– প্রতিদিন স্নান করার আগে এই মিশ্রণটি মাথায় লাগালে খুশকির সমস্যা কমবে।
– এটি লাগানোর পর চুলে শ্যাম্পু করার কোনো রকম প্রয়োজন নেই।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
তুলসী পাতা খুশকি নিরাময় করতে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যগুলি মাথার ত্বকের শুষ্কতা সরিয়ে মাথার ত্বককে আর্দ্র করে তোলে এবং মৃত কোষ সরিয়ে মাথা থেকে খুশকি কমাতে সাহায্য করে।
১৩) খুশকি নিরাময় রসুনের ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- রসুনের কোয়া – তিন-চারটি
- মধু – ১ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– রসুন গুলো মিক্সিতে ভালো করে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করে নিন।
– এবার মধুর সাথে রসুনের পেস্টটি ভাল করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– এবার এই মিশ্রণটি মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন।
– ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন।
– এরপর হালকা কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– প্রতিদিন স্নান করার আগে এই প্যাকটি মাথায় লাগালে দুই সপ্তাহেই খুশকির সমস্যার সমাধান হবে এবং মাথার ত্বকে ফাংগাল ইনফেকশন দূর হয়ে যাবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
এটি ব্যবহারের ফলে মাথার জীবাণু গুলির ধ্বংস হবে এবং দ্রুত খুশকির সমস্যার সমাধান হবে। রসুন অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য যুক্ত হওয়ায় এটি মাথার ছত্রাক গুলি কে ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
সতর্কতা :
এই প্যাকটি ব্যবহার করার পরে অবশ্যই শ্যাম্পু করবেন। কেননা রসুনের গন্ধ মাথায় থেকে গেলে পরে ঘাম হলে এক অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
১৪) বেকিং সোডা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- বেকিং সোডা – ১ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– পরিমিত বেকিং সোডা নিয়ে ভেজা চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– মাথার স্ক্যাল্পে আঙ্গুল দিয়ে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করুন। এর ফলে স্ক্যাল্প থেকে মৃত কোষ উঠে যাবে।
– এরপর দু মিনিট ম্যাসাজ করার পরে মাথায় কিছুক্ষন রেখে দিন।
– তারপর জল দিয়ে ভালো করে চুলটা ধুয়ে নিন।
– এছাড়া শ্যাম্পুর সাথে মিশিয়েও আপনি মাথার চুলে বেকিং সোডার ব্যবহার করতে পারেন।
– স্নান করার আগে এটি করলে খুশকি দ্রুত নিরাময় হবে।
– তবে মনে রাখবেন সপ্তাহে ২ বারের বেশি এটি ব্যবহার করবেন না।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকির ঘরোয়া সমাধানে বেকিং সোডা একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। বেকিং সোডা একটি স্ক্রাবারের মত কাজ করে যা মাথার ত্বক থেকে মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে মাথার ত্বককে আর্দ্র করে তোলে। এছাড়াও মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তৈল নিঃসরণ কমাতে সাহায্য করে। এটি ব্যবহারের ফলে দুই সপ্তাহেই খুশকির সমস্যা দূর হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও এর মধ্যে অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান থাকায় এটি মাথায় কোন রকম ছত্রাক জন্মাতে দেয় না। (১০)
সতর্কতা :
এটি মাথায় খুব বেশি সময় লাগিয়ে রাখবেন না। এতে উপকারের বদলে ক্ষতি হতে পারে।
১৫) খুশকির ঘরোয়া সমাধানে আদার ব্যবহার :
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- আদা – একটি ছোট
- তিল তেল – চার পাঁচ ফোঁটা
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– মিক্সিতে আদাটা ভালো করে বেটে নিন।
– এরপর আদার মিশ্রনের সাথে তিল তেলটা ভাল করে মিশিয়ে নিন।
– এবার মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– ৩০ মিনিট মিশ্রণটি মাথায় লাগিয়ে রাখুন।
– একটি হার্বাল শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– স্নান করার আগে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন এটি ব্যবহার করতে পারে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
আদা একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ উপাদান, যা চুলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এছাড়াও আদার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি যে কোন ধরনের ইনফেকশন কিংবা জীবাণুকে দ্রুত নাশ করতে সহায়তা করে। (১১)
সতর্কতা :
যদি ঠাণ্ডা লাগার সম্ভাবনা থাকে তাহলে তিল তেলের বদলে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
১৬) খুশকি নিরাময়ে আমলকির ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- কাঁচা আমলকি – একটি
- নারকেল তেল – কয়েক ফোঁটা
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– কাঁচা আমলকিটাকে কেটে নিয়ে ভালো করে বেটে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিন।
– এবার মিশ্রণটির সাথে নারকেল তেল মিশিয়ে একটি প্যাক তৈরি করুন।
– এবার এই প্যাকটি মাথার ত্বকে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– ৩০ মিনিট রেখে দিন।
– এরপর যেকোনো হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুলটা ধুয়ে ফেলুন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
আমলকি চুল পরিচর্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রাচীন যুগ থেকেই এর ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটানোর পাশাপাশি মাথার ত্বকের সুরক্ষা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি মাথার ত্বকে উপযুক্ত পুষ্টি প্রদান করে। এছাড়াও আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টি ফাঙ্গাল উপাদান গুলি মাথার ত্বক থেকে যেকোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে এবং স্ক্যাল্পকে আর্দ্রতা প্রদান করতে সহায়তা করে। আমলকিকে চুলের ঔষধ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়।
১৭) খুশকি নিরাময়ে হেনার গুরুত্ব
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- হেনা – ১ চা চামচ
- আমলা পাউডার – ১ চা চামচ
- চা পাতা – ১ চা চামচ
- লেবুর রস – ১ টেবিল চামচ
- নারকেল তেল – ১ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– আগের দিন রাতে উষ্ণ গরম জলে চা পাতা ফুটিয়ে তারমধ্যে হেনা এবং আমলা পাউডারটা ভিজিয়ে রাখুন।
– পরদিন সকালে মিশ্রণটি ভালো করে মিশিয়ে নিন।
– এবার মিশ্রণটিতে লেবুর রস এবং নারকেল তেল যোগ করুন।
– ভালো করে একটি ঘন মিশ্রণ তৈরি করে মাথার স্ক্যাল্পে এবং পুরো চুলে লাগিয়ে রাখুন। ৩০ মিনিট রেখে দিন।
– এরপর হালকা শ্যাম্পু দিয়ে মাথাটা ধুয়ে নিন।
– সম্ভব হলে ওই দিন শ্যাম্পু না করে পরের দিন করলে তা আরো ভালো হবে।
– সপ্তাহে একদিন এটি চুলে ব্যবহার করতে পারেন। এতে খুব দ্রুত খুশকি নিরাময় হবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকি নিরাময়ে হেনা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটির মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদানগুলি মাথার ত্বককে পুষ্টি প্রদান করে এবং মাথার ত্বক থেকে ব্যাকটেরিয়া দূরীকরণে সহায়তা করে। এছাড়া হেনার মধ্যে থাকা উপাদানগুলি চুলকে মজবুত করে এবং চুলের ত্বককে বাইরের দূষণ থেকে রক্ষা করে। (১২) মাথার ত্বকের তৈল নিঃসরণ কমায় এবং চুলে কন্ডিশনার হিসেবে সাহায্য করে।
সতর্কতা :
চুল যদি খুব বেশি শুষ্ক হয় সে ক্ষেত্রে হেনা ব্যবহারের ক্ষেত্রে উপরিউক্ত মিশ্রণটি মাথায় লাগানোর আগে মাথায় ভালো করে তেল দিয়ে নেবেন। এতে চুল অতিরিক্ত শুষ্ক হবে না।
১৮) খুশকির ঘরোয়া সমাধানে টি ট্রি অয়েল
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- টি ট্রি অয়েল – কয়েক ফোঁটা
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– একটি কাপের মধ্যে অল্প পরিমাণ শ্যাম্পু নিন।
– এবার এই শ্যাম্পুর মধ্যে কয়েক ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন এবং ভালোভাবে মিশ্রনটি প্রস্তুত করুন।
– এবার এই মিশ্রণটি ভালো করে মাথার স্ক্যাল্পে লাগিয়ে নিন।
– ৫ মিনিট মাথায় আঙ্গুল দিয়ে মেসেজ করে এটি লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
– প্রতিদিন সকালে স্নানের আগে এই ঘরোয়া উপায়টি ব্যবহার করতে পারেন।
– এক সপ্তাহেই এটি আপনার খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
খুশকি দূর করার উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম টি ট্রি অয়েল। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান গুলি মাথার ত্বকে ছত্রাক সৃষ্টি করতে দেয় না। যার ফলে মাথার ত্বক ব্যাকটেরিয়া মুক্ত হয় এবং এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান গুলি মাথার ত্বকের মৃত কোষ সরিয়ে নতুন কোষ উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এর ফলে নতুন চুল গজায় এবং খুশকি নিরাময় হয়। এটি চুলকে আরো উজ্জ্বল করে তোলে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে সাধারণ শ্যাম্পুর তুলনায় যারা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন তাদের চুলে খুশকির পরিমাণ অনেক কম কিংবা অনেকের নেই। সুতরাং ঘরে বসে সহজেই খুশকি নিরাময় করতে চাইলে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। (১৩)
১৯) মুলতানি মাটি
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- মুলতানি মাটি – ১ কাপ
- লেবুর রস – ২-৩ টেবিল চামচ
- জল – প্রয়োজন মতো
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– প্রথমে মুলতানি মাটিতে প্রয়োজন মতো জল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করুন।
– এবার এই মিশ্রণটিতে লেবুর রস যোগ করুন।
– এই মিশ্রণটি ভালো করে মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন।
– কুড়ি মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
– এরপর হালকা যে কোন শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে নিন।
– সপ্তাহে অন্তত তিন দিন স্নানের আগে এই প্যাকটি ব্যবহার করে দেখুন।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
মুলতানি মাটি যে কোন তেল শোষণ করে নিতে সক্ষম হয়। যার ফলে মাথার ত্বকে উৎপন্ন তেলকে সহজেই এটি সরিয়ে ফেলতে পারে এবং যেকোন ধুলো-ময়লা এটি শোষণ করে নেয়। এছাড়া এটি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি ঘটায় এবং মাথার ত্বক থেকে মৃত কোষ সরিয়ে ফেলতে এবং খুশকি নিরাময়ে সহায়তা করে। এটি মাথার ত্বককে এবং চুলকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। (১৪)
সতর্কতা :
এই প্যাকটি ব্যবহার করার পরে মাথা অবশ্যই ভালো করে ধুয়ে নেবেন। অন্যথায় মাথার মধ্যে মুলতানি মাটি লেগে থাকলে চুল জট পড়ে ছিড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে।
২০) খুশকি নিরাময়ে ক্যাস্টর অয়েল এর ভূমিকা
কি কি উপাদান প্রয়োজন?
- ক্যাস্টর অয়েল – ৩ থেকে ৪ টেবিল চামচ
কীভাবে ব্যবহার করবেন?
– ক্যাস্টর অয়েল নিয়ে হালকা গরম করে নিন।
– এবার এই উষ্ণ গরম তেল টি মাথার ত্বকে এবং চুলে ভালো করে লাগিয়ে নিন।
– এরপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে কয়েক মিনিট ধরে মাথার ত্বকে ভালো করে মাসাজ করুন যাতে তেলটা সহজেই মাথার মধ্যে বসে যেতে পারে।
– এরপর সারারাত এটি মাথায় লাগিয়ে রেখে দিন।
– সকালে উঠে ভালো করে শ্যাম্পু করে নিন।
– সপ্তাহে সম্ভব হলে রোজ রাতে এটি ব্যবহার করুন। তাহলে এক সপ্তাহেই মাথা থেকে সমস্ত রকম খুশকি দূর হয়ে যাবে এবং চুলের দ্রুত বৃদ্ধি ঘটবে।
এটি ব্যবহারের ফলে কি হবে?
ক্যাস্টর অয়েলের মধ্যে উপস্থিত অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন উপাদানগুলি মাথার ত্বকের যে কোনো ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পকে রক্ষা করে।এটি খুশকি কিংবা মাথার ত্বকের যে কোন ফাংগাল ইনফেকশন থেকে স্ক্যাল্পকে রক্ষা করে এবং চুলকে পুষ্টি প্রদান করে এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল লম্বা চুল করে তুলতে সহায়তা করে। খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলির মধ্যে অন্যতম এটি। (১৫)
সতর্কতা :
আপনার মাথার ত্বক যদি সংবেদনশীল হয় সে ক্ষেত্রে সরাসরি ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার না করে এর সাথে সমপরিমাণ নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
খুশকির ফলে আমাদের কি কি ক্ষতি হতে পারে?
খুশকি আমাদের মাথার ত্বকের ওপর সাদা পাউডারের মতন ছত্রাকের গুঁড়োর মতো দেখতে হয়। তবে কখনো কখনো এটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। খুশকি সম্পূর্ণ নিরাময় করা না গেলেও এটি কিছু ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে আয়ত্তে রাখা যায়, ইতিমধ্যেই আমরা খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলি সম্পর্কে আলোচনা করে ফেলেছি। তবে আমাদের খুশকির বিষয়টিকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা অতিরিক্ত খুশকির জন্য আমাদের বেশকিছু ক্ষতির সম্মুখীন হতে হতে পারে। এক নজরে দেখে নিন খুশকির জন্য আমাদের কোন সমস্যা গুলি হতে পারে :
১) মাথায় অতিরিক্ত খুশকি হলে তার প্রথম প্রভাব পড়ে মুখের ত্বকে। যার ফলে মুখের ত্বকে বিশেষত কপাল, গাল, নাক এর মতন উঁচু অংশগুলিতে খুশকি পড়ে বলে সেখানে রেস বা ব্রণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ মুখের ত্বকেও সমস্যা শুরু হয়ে যায়।
২) অতিরিক্ত খুশকি হওয়ার ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে ওঠে এবং ক্রমাগত এক জ্বালা ভাব এবং চুলকানি ভাব সৃষ্টি হয়।
৩) চুলে ঠিকমতো শ্যাম্পু করলেও অত্যধিক খুশকির সমস্যা হলে সে ক্ষেত্রে চুলের ওপর সাদা সাদা গুঁড়ো গুঁড়ো খুশকি দেখা যায় যা অনেক সময় লোক সমাজে অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৪) যাদের মাথার ত্বকে অতিরিক্ত তৈলাক্ততার কারণে খুশকি হয় তাদের ক্ষেত্রে শ্যাম্পু করার একদিনের মধ্যে মাথার ত্বক আবার তৈলাক্ত হয়ে ওঠে। যার ফলে খুশকির সমস্যা সহজে কমতে চায়না।
৫) মাথায় খুশকির সমস্যা অতিরিক্ত আকার ধারন করলে তা অনেক সময় মাথায় গোল চাকতির মতন দাদ কিংবা ঘা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত খুশকির প্রভাবে সেরকম কোন পরিস্থিতির শিকার হলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
৬) অতিরিক্ত খুশকির সমস্যা দেখা দিলে চুলের গোড়া হালকা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে পারে।
৭) খুশকির পরিমাণ অত্যধিক বেড়ে গেলে সেগুলি মাথার ত্বক থেকে জামা কাপড়ের উপরে পড়ে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
খুশকি থেকে বাঁচার উপায় : Prevention Tips for Dandruff in Bengali
খুশকি নিরাময় এর ক্ষেত্রে ঘরোয়া পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করার পাশাপাশি আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ে আমাদের মাথায় রাখতে হবে যাতে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে খুশকি দূর করলেও সেগুলো যাতে আবার ফিরে না আসে। এবার এক নজরে দেখে নিন কোন কোন বিষয় গুলি কে নজরে রাখবেন :
১) সঠিক শ্যাম্পু নির্ধারণ
খুশকি দূর করার উপায় গুলি মেনে চলার পাশাপাশি একটি পরিষ্কার খুশকি বিহীন চুল চাইলে অবশ্যই আপনার চুলের উপযোগী একটি শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। বাজারে প্রচুর ধরনের অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু আছে, যেগুলি খুশকি দূরীকরণে সহায়তা করে অর্থাৎ মাথা থেকে মৃত কোষ দূর করে নতুন কোষ জন্মাতে সহায়তা করে। সেক্ষেত্রে কোনও সমস্যা গুরুতর হলে সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহারের পরিবর্তে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে হবে। তবে যে কোনো রকমের মাইল্ড শ্যাম্পু চুলে ব্যবহার করবেন যা আপনার চুলের জন্যে উপযোগী।
২) চুল আঁচড়ানো
দৈনিক ভালোভাবে দিনে ২ থেকে ৩ বার পুরো চুল আঁচড়াতে হবে। যাতে মাথার ত্বকে চিরুনি ভালো করে বসে। সঠিকভাবে চুল আঁচড়ানোর ফলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং এর পাশাপাশি স্ক্যাল্পে থাকা যে কোন ধরনের নোংরা দূর হবে। এছাড়াও কোন রকমের ছত্রাক বাসা বাঁধতে পারবে না। যার ফলে চুল সুস্থ থাকবে।
৩) পর্যাপ্ত বিশ্রাম
একটি সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পেতে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম এবং বিশ্রাম নিতে হবে। যে কোন ধরনের মানসিক চাপ কিংবা মেন্টাল স্ট্রেস এড়িয়ে চলতে হবে। যাতে তা আপনার মাথার ত্বকে প্রভাব ফেলতে না পারে। কেননা অতিরিক্ত চিন্তা বা পরিশ্রমের জন্য অনেক সময় মাথায় প্রচুর পরিমাণে তেল নিঃসরণ হয়, যার ফলে খুশকির সমস্যা দেখা দেয়।
৪) চুলের সুরক্ষা
বাইরে বেরোনোর আগে সকালবেলায়ে মাথায় অবশ্যই যেকোনো একটা স্কার্ফ বা হালকা কোন কাপড় জড়িয়ে বেরোবেন যাতে রাস্তার ধুলাবালি সরাসরি আপনার চুলে প্রবেশ করতে না পারে। কেননা অত্যধিক দূষণ এবং ধুলোবালির প্রভাবে অনেক সময় মাথার ত্বক নোংরা হয়ে সেখানে ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। যার ফলে খুশকি জন্ম নেয়। এক্ষেত্রে আপনি যদি বাইরে বেরোনোর সময় স্কার্ফ ব্যবহার করেন এর ফলে চুল পরিষ্কার থাকবে এবং খুশকি হবার সম্ভাবনা কমবে।
৫) সাঁতার কাটার সময় সর্তকতা
মানসিক শান্তির উদ্দেশ্যে কিংবা শরীরকে শীতল করে তোলার জন্য আমরা অনেকেই সাঁতার কেটে থাকি। সে ক্ষেত্রে আমরা সাঁতার কাটার সময় নিজের চুলের কথা ভুলে যাই। কিন্তু সাঁতার কাটতে নামার আগে অবশ্যই মাথায় শাওয়ার ক্যাপ ব্যবহার করবেন। কেননা সুইমিংপুলের জলে থাকা ক্লোরিনে চুলের ক্ষতি হতে পারে যার ফলে সেখান থেকে। আপনার মাথার ত্বকে ছত্রাক ও জীবাণু জন্ম নিতে পারে। যার থেকে খুশকি উৎপন্ন হতে পারে। তাই এবার থেকে সাঁতার কাটার আগে অবশ্যই শাওয়ার ক্যাপ পড়ে নেবেন।
৬) সূর্য রশ্মির প্রভাব
অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবেও চুলের ক্ষতি হতে পারে। বিশেষতঃ ইউভিএ এবং ইউভিবি রশ্মির ফলে চুল তার আর্দ্রতা হারায় এবং শুষ্ক হয়ে ওঠে যার ফলে মাথার ত্বকে খুশকি জন্ম নেয়। যে কারণে বাইরে বেরোলে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করবেন। যাতে সূর্য রশ্মি সরাসরি আপনার চুলে আসতে না পারে।
৭) কেমিক্যাল বর্জন
আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বাজারজাত শ্যাম্পু, কন্ডিশনার, কালার, সিরামের মত বহু জিনিস ব্যবহার করি। তবে সেগুলি ব্যবহারের সময় আমরা উৎসগুলির উপাদান তালিকা খুব কম সময়ই লক্ষ্য করি। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেখে নেবেন আপনি যে বাজারজাত পণ্যটি ব্যবহার করছেন সেটি প্যারাবিন সালফেট এবং সিলিকন বিহীন কিনা। কেননা, এগুলি চুলের ক্ষতি করে এবং মাথার ত্বকে ছত্রাক সৃষ্টি করে। যার ফলে খুশকি বাসা বাঁধতে সহায়তা করে। সুতরাং এবার থেকে আপনার প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট গুলি কেনার আগে অবশ্যই উপাদানের তালিকাটা একবার চোখ বুলিয়ে নেবেন।
খুশকি দূর করার অন্যান্য উপায় :
ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুশকি দূর করার পাশাপাশি উপরিউক্ত উপায়গুলি তো অবশ্যই মনে রাখবেন। তার পাশাপাশি অবশ্যই মাথায় রাখবেন যেগুলি সেগুলি এক নজরে দেখে নিন :
১) তেল মাসাজ
সপ্তাহে অন্তত তিন দিন মাথায় ভালো করে নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, ক্যাস্টর তেল মাসাজ করবেন যা আপনার চুলের গোড়ায় পুষ্টি প্রদান করবে এবং মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে আর্দ্র করে তুলবে। কেননা মাথার ত্বক শুষ্ক হলেই সেখানে মৃত কোষের সৃষ্টি হয়। এর ফলে খুশকির সমস্যা দেখা যায়।
২) গরম ভাপ নেওয়া
সপ্তাহে অন্তত একদিন মাথায় তেল দেওয়ার পর গরম টাওয়াল চুলে পেচিয়ে মাথার মধ্যে ভাপ নেবেন। এর ফলে মাথার ত্বকের বন্ধ কোষগুলি খুলে যাবে ও মাথার ত্বক পরিষ্কার এবং জীবাণু মুক্ত হবে।
৩) সঠিক জীবনযাত্রা
একটি সুন্দর সুস্থ চুল চাইলে ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করার পাশাপাশি আমাদের নিজের জীবনযাত্রার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কেননা কোনরকম উশৃংখল জীবনযাত্রা পালন করে স্বাস্থ্যকে সুন্দর রাখা যায় না। সে নিজের শরীরের স্বাস্থ্যই হোক কিংবা চুলের স্বাস্থ্য। দৈনিক পরিমিত আহার, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য, ব্যায়াম এবং বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় গুলি আমাদের ব্যবহার করতে হবে যা আমাদের চুলকে আরো সুন্দর পরিষ্কার এবং মজবুত করে তুলতে সহায়তা করবে।
৪) অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার এর ব্যবহার
যদি মাথায় অল্প পরিমাণ খুশকির সমস্যাও দেখেন সেখানে শুরু থেকেই সাধারণ শ্যাম্পু ব্যবহার করার পরিবর্তে অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এটি আপনার মাথার ত্বককে যে কোন রকম ব্যাকটেরিয়া এবং খুশকির সমস্যা থেকে দূরে রাখবে।
৫) চুলের ড্রায়ারের ব্যবহার বন্ধ করুন
চটজলদি চুল শুকানোর জন্য আমাদের মধ্যে অনেকেই চুলে ড্রায়ার ব্যবহার করে থাকি কিংবা চুল কাটার পর সেটিকে সেট করার জন্য এটির ব্যবহার করার থাকে। তবে চুলে ড্রায়ার ব্যবহার করার ফলে মাথার ত্বকে সরাসরি তা প্রয়োগের ফলে মাথার শিকড় আলগা হয়ে যায় যার ফলে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। সেই কারণে মাথায় ড্রায়ার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
৬) ধূমপান বন্ধ
দৈনন্দিন জীবনযাত্রার পাশাপাশি আমাদের চুলকে সুন্দর এবং স্বাস্থ্যসম্মত রাখার জন্য ধূমপান বা মদ্যপান থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এগুলির অধিক ব্যবহারের ফলে এগুলি আমাদের মাথার ত্বকে প্রভাব ফেলতে পারে যার ফলে খুশকি কিংবা চুল পড়ার মতন সমস্যাগুলি দেখা দেয়।
৭) শারীরিক সমস্যা
অনেক সময় দেখা যায় শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কিংবা অস্বাস্থ্যকর জীবন যাত্রার কারণেও অনেকের চুলের সমস্যা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো সমাধান করুন এবং নিজের চুলকে সুন্দর এবং সুস্থ রাখতে সহায়তা করুন।
এবার ঘরে বসেই খুশকির সমস্যা সমাধানের সমস্ত রকম টিপস আপনার হাতের কাছেই রয়েছে। এবার চটজলদি এগুলির মধ্যে থেকে নিজের প্রয়োজনীয় উপায়টি ব্যবহার করুন এবং আপনার চুলকে সুন্দর পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তুলুন। বিভিন্ন উপায়গুলি অবলম্বন করার পাশাপাশি আমাদের কি কি করতে হবে সেই বিষয়টিও মাথায় রেখে চলুন। কেননা একটি সুন্দর চুলের অধিকারী হতে পারে সে, যে একটি সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী হয়। সে ক্ষেত্রে নিজের স্বাস্থ্যকে সুন্দর করে তুলন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন এবং সকলকে সুন্দর থাকতে উৎসাহিত করে তুলুন।
খুশকি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলি কেমন লাগলো? এর কোন কোন উপগুলি আপনার অন্য উপযুক্ত? আপনারও কি জানা আছে আরো কিছু খুশকির ঘরোয়া সমাধান? জানান আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.