মসুর ডালের উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Lentils Benefits and Side Effects in Bengali
বাঙালির রান্নাঘরের অন্যতম সুপরিচিত একটি খাদ্য উপাদান হলো মসুর ডাল। চাল-ডাল মিলিত খিচুড়ি সকলেরই প্রিয়। এছাড়াও মসুর ডাল দিয়ে তৈরি বড়া, মসুর ডাল দিয়ে ভাত, ডাল পুরি, আম দিয়ে মসুর ডাল, পেঁয়াজ ভাজা দিয়ে মসুর ডাল সকলেরই খুব প্রিয় খাদ্য। বলা যায় খাদ্য রসিক বাঙালির আহারের শুরু হয় মসুর ডালের সংস্পর্শে। তবে মসুর ডাল আমাদের খাদ্য তালিকায় একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলেও এর গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই হয়তো অবগত নই। আসুন আজ জেনে নিই মসুর ডালের বিষয়ে কিছু জিনিস। (১)
মসুর ডাল মূলত কলাই জাতীয় শস্য মসুরের অন্তর্গত একটি শুকনো ফল। এটি প্রোটিন এর অন্যতম উৎস হিসেবে সুপরিচিত। যে কারণে যারা নিরামিষাশী তাদের শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে মাছ-মাংসের জায়গা করে নেয় মসুর ডাল। বাঙ্গালীদের পাশাপাশি পৃথিবী জুড়ে নানা জাতির মানুষদের খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। এটি রবিশস্যের অন্তর্গত হওয়ায় সারা বছরই এর যোগান থাকে। তবে আমাদের দেশে বহু ধরনের ডাল উৎপাদন হলেও মসুর ডালের চাহিদা সর্বোচ্চ। কারণ ডালের চচ্চড়ি, ডালের স্যুপ কিংবা পুঁই ডাল এর স্বাদ মসুর ডাল ছাড়া অন্য কিছুর মধ্যে পাওয়া যায় না। মসুর ডাল হলো প্রোটিনের আধার। এটির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, খাদ্যশক্তি, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ক্যারোটিন, ভিটামিন বি ও শর্করা জাতীয় উপাদান রয়েছে। এছাড়া এই ডাল সহজপাচ্য হওয়ায় এটি সকলেই গ্রহণ করতে পারে। মসুর ডাল গ্রহণের ফলে আমাদের শরীর থেকে বহু রোগ কমতে সহায়তা করে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, কাঁচা মসুর ডাল পুষ্টিকর। মলরোধক অন্ত্রের সমস্যা কিংবা পেটের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সহায়তা করে। এছাড়াও যাদের সর্দি কাশি কিংবা ম্যালেরিয়া জাতীয় রোগ দেখা যায় তাদের মসুর ডালের জল খেলে শরীরে শক্তি সঞ্চয় হয়। মসুর ডাল পুষ্টিকর এবং বলকারক। মসুর ডাল সিদ্ধ করে খেলে কিংবা কাঁচা অবস্থায় খেলে দুটিতেই এর প্রচুর ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। আমাদের শরীরে প্রতিদিনের প্রোটিন চাহিদার অনেকটাই মসুরডাল পূরণ করতে পারে। সস্তা হওয়ায় এটি সব শ্রেণীর মানুষেরা কিনতে পারে। তবে আমাদের দেশে মসুর ডালের চাহিদা প্রচুর হওয়ায় কখনো কখনো এটি বাইরের দেশগুলো থেকেও আমদানি করতে হয়।
In This Article
মসুর ডালের উপকারিতা – Benefits of Lentils in Bengali
নিরামিষ খাবার গুলির মধ্যে প্রোটিন এর অন্যতম উৎস হল মসুর ডাল। এটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন। মসুর ডাল প্রোটিনের উৎস হওয়ার পাশাপাশি এর মধ্যে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন প্রোটিন, ফাইবার, আয়রন, থায়ামিন, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ, স্যাচুরেটেড ফ্যাট, সোডিয়াম এবং কোলেস্টেরল এর মতন উপাদানগুলি বর্তমান। এটি আমাদের শরীরে বহু রোগ কমাতে সহায়তা করে। দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় মসুর ডাল রাখলে এটি নানা উপায়ে আপনাকে শরীরকে স্বাস্থ্যবান রাখতে সহায়তা করবে। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে মসুর ডাল একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার হবায় এটি হৃদরোগের সমস্যা অনেকটাই কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি হৃদযন্ত্রকে সচল করে শরীরের সর্বত্র রক্ত এবং অক্সিজেন সরবরাহ করতে সাহায্য করে। মসুর ডালের মধ্যে থাকা উচ্চমাত্রায় ফাইবার রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর পাশাপাশি শরীরকে আরো রোগ মুক্ত করে তোলে। আসুন জেনে নিন মসুর ডাল আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় কি কি উপকার করে?? (২)
১) ওজন নিয়ন্ত্রণে মসুর ডালের ভূমিকা : Weight loss
মসুর ডালের উপকারিতা গুলি সম্পর্কে বলতে গেলে প্রথমেই বলা যায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। শরীর থেকে বাড়তি ওজন কমাতে চাইলে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ভাতের পরিমাণ তুলনামূলক কমিয়ে সেই জায়গায় মসুর ডাল কিংবা মসুর ডালের স্যুপ খেতে পারেন। এটি খিদে কমানোর পাশাপাশি দীর্ঘক্ষন পেটকে ভর্তি রাখে। এছাড়াও এটি শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল এর জোগান দেয়। মসুর ডালের মধ্যে উচ্চমাত্রায় ফাইবার থাকায় এটি ওজন কমানোর পাশাপাশি পেশীকে শক্তিশালী করে তোলে এবং শরীরের থেকে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমাতে সহায়তা করে। কেননা মসুর ডাল শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে। এছাড়াও মসুর ডাল আয়রনের অন্যতম একটি উৎস হওয়ায় এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে সক্রিয় করে খাবারকে হজমে সহায়তা করে, যার ফলে ওজন হ্রাস পায়। (৩)
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল গ্রহণ করুন। মসুর ডালের তৈরি কোন তরকারি বা ভাত দিয়ে মসুর ডাল সরাসরি খেতে পারেন। এটি শরীরের বিপাক ক্রিয়াকে উন্নত করে ওজন কমাতে সহায়তা করবে। তাছাড়া দৈনিক সকালবেলা খাবারের সাথে একবাটি করে যদি মসুর ডাল সিদ্ধ খাওয়া যায় এটি দীর্ঘক্ষন খিদে কম রাখতে সাহায্য করবে।
২) হৃদযন্ত্র সচল রাখতে এবং কোলেস্টেরল কমাতে মসুর ডালের ভূমিকা : Heart and Cholesterol
মসুর ডালের গুনাগুন গুলির মধ্যে অন্যতম হলো এটি হৃদযন্ত্র সচল রাখে এবং শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সহায়তা করে। মসুর ডালের মধ্যে থাকা প্রোটিন এবং ফাইবার জাতীয় উপাদান গুলি যথাযথ অক্সিজেন প্রেরণ করে শরীরকে সুস্থ এবং সবল রাখতে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মসুর ডালের মধ্যে থাকা ফাইবার জাতীয় উপাদান শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রাকে বাড়াতে সহায়তা করে। এই ফাইবার কেবলমাত্র হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে না, বরং যাদের মধ্যে হৃদরোগের সম্ভাবনা দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রেও এটি কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক কে প্রতিরোধ করতে মসুর ডালের ভূমিকা অপরিহার্য। এটি শরীরের রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের রক্ত চলাচলকে ত্বরান্বিত করে। (৪)
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
হৃদরোগের সমস্যায় কিংবা খারাপ কোলেস্টেরলের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন কিছু পরিমাণ মসুর ডাল খাদ্যতালিকায় রাখুন। যদি সিদ্ধ খাওয়া সম্ভব না হয় সে ক্ষেত্রে তেল দিয়ে ডালটাকে ভেজে নিয়েও খেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে যথাযথ পুষ্টি পাবেন। তবে যেহেতু কোলেস্টেরল এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা সে ক্ষেত্রে ডালের জল কিংবা ডাল সিদ্ধ করে খাওয়া বাঞ্ছনীয়।
৩) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মসুর ডালের উপকারিতা : Blood Sugar
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে মসুর ডালের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনস্বীকার্য। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে মসুর ডাল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। যে কারনে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে মসুর ডাল অত্যন্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান। এটি হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি রক্তপ্রবাহে শর্করার পরিমাণ কমিয়ে রাখতে এবং বাড়তি শর্করার উৎপাদনকে প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় আলু এবং ভাতের পরিমাণ কমিয়ে সেখানে মসুর ডাল গ্রহণের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া মসুর ডাল আরও সহায়তা করে ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, মসুর ডালের মধ্যে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে রক্তকে পরিশ্রুত করে। এছাড়া এটি শরীরকে তার প্রয়োজনীয় শক্তি প্রদান করে থাকে। (৫)
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল রাখুন। মসুর ডালের স্যুপ কিংবা মসুর ডাল রুটি দিয়ে খাওয়া ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আহার। (৬)
৪) হজমে সহায়তা করে মসুর ডাল : Digestion
মসুর ডাল উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ উপাদান হওয়ায় এটি শরীরে খাদ্যকে সহজে হজম করতে পারে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে অন্ত্রের যে কোনো রকমের সমস্যার সমাধান করতে পারে। মসুর ডাল পাচনতন্ত্র কে পরিষ্কার করে পেট পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। দৈনিক মসুর ডাল গ্রহণের ফলে পেটের রোগের সমস্যার সমাধান হয় কিংবা যাদের চোরা অম্বল, পেট ফাঁপার সমস্যা থাকে তাদের এই সমস্ত সমস্যাগুলো দূর হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে দেখা যায় অতিরিক্ত শক্ত মলের সম্ভাবনা কিংবা তরল মল এর সম্ভাবনা। তাদের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম ঔষধ। কেননা এটি হজম কে যথাযথ করতে সহায়তা করে। মসুর ডালের মধ্যে লৌহ থাকায় যারা আমাশয়ে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে মসুর ডালের জল অত্যন্ত কার্যকরী। এছাড়া এটি প্রোটিনের উৎস হওয়ায় পেটের সমস্যার সমাধানে এটি সহায়তা করে। পেটের ভেতর হজমজনিত যে সমস্ত সমস্যা রয়েছে সেগুলি নিরাময়ে মসুর ডালের ভূমিকা অপরিহার্য। বলা যায়, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের জন্য মসুর ডাল একটি আদর্শ খাবার। (৭)
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
দৈনিক খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল সিদ্ধ রাখলে সেটি শরীরে হজমের মানকে উন্নত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে দূরে রাখবে।
৫) শরীরের অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে মসুর ডালের ভূমিকা : Boost Immunity
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উন্নত করে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধিতে মসুরডালের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এর মধ্যে থাকা প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলি শরীরের সর্বত্র তার পুষ্টিগুণ ছড়িয়ে শরীরকে স্বাস্থ্যকর ও ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। মসুর ডাল সেলেনিয়ামের একটি উৎকৃষ্ট উৎস। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর অন্যতম উপাদান হিসেবে পরিচিত। এই উপাদানটি শরীরের বিভিন্ন কোষকে পুষ্টি জুগিয়ে শক্তিশালী করে তোলে। যা রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা লাভ করে। মসুরের মধ্যে থাকা ডায়েটারি ফাইবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা আয়রন, দস্তা, ম্যাঙ্গানিজ এবং ফোলেট জাতীয় পুষ্টি উপাদান গুলি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। যেগুলি শরীরকে ভিতর থেকে পুষ্টি প্রদান করবে। খুব বেশী ভাজা অবস্থায় মসুর ডাল গ্রহণ করবেন না, এতে তার পুষ্টিগুণ কম হয়ে যেতে পারে। সরাসরি সিদ্ধ বানিয়ে এটি গ্রহণ করতে পারেন।
৬) ক্যান্সার প্রতিরোধে মসুর ডালের ভূমিকা : Cancer
ক্যান্সারের মতো জটিল দুরারোগ্য রোগ প্রতিরোধে মসুর ডালের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মসুর ডালের পলিফেনোল গুলি ক্যান্সারের সুরক্ষা এবং ক্যান্সারের চিকিৎসায় সহায়তা করে। এটি ক্যান্সারের সম্ভাব্য উৎসগুলিতে আঘাত করে স্তন, কোলন প্রভৃতি জায়গায় শক্তি প্রেরণ করে। যাতে ক্যান্সারের বীজ বপন হতে না পারে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে উৎকৃষ্ট ভূমিকা পালন করে। প্রোটিনের সর্বোচ্চ উৎস হওয়ায় এটি রোগীকে ভেতর থেকে শক্তি প্রদান করে। (৮)
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল গ্রহণ করা উচিত। রোগের মান অনুযায়ী এক্ষেত্রে মসুর ডালের পরিমাণ স্থির করা হবে।
৭) দাঁত এবং হাড়ের সুরক্ষায় মসুর ডালের ভূমিকা : Teeth and Bones
প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সর্বোচ্চ উৎস হওয়ায় মসুর ডাল শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। মসুর ডালের মধ্যে থাকা ক্যালসিয়াম জাতীয় উপাদানগুলি শরীরের হাড় এবং দাঁতকে শক্তি প্রদান করে। যাতে হাড়ের ক্ষয় রোধ হয় এবং দাঁত যথাযথ শক্তি সঞ্চয় করে থাকে। মসুর ডালের মধ্যে থাকা বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলো এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে থাকা খনিজ পদার্থগুলো শরীরের হাড়ের অংশকে শক্তিশালী করে তোলে।
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
শিশুদের ক্ষেত্রে যাদের শরীর গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে তাদের মসুর ডালের জল খাওয়ালে শরীরের হাড় শক্তিশালী হওয়ার পাশাপাশি দাঁতেও যথাযথ পুষ্টি গ্রহণ করে শক্তিশালী হয়। তাই শৈশবকাল থেকেই শিশুদের মসুর ডাল এর স্যুপ বা মসুর ডালের জল খাওয়ানোর অভ্যাস করানো উচিত।
৮) মানসিক বিকাশে মসুর ডালের গুরুত্ব : Brain health
মসুর ডালের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান গুলি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। মসুর ডাল বিভিন্ন উৎকৃষ্ট পুষ্টি উপাদানের একটি অংশ। মসুর ডাল ফোলেটে পূর্ণ হওয়ায় এটি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। কেননা ফোলেট অন্যান্য কয়েকটি পুষ্টিকর উপাদান যেমন আয়রন এবং ওমেগা থ্রি এস এর মত উপাদানগুলি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি মস্তিষ্কের শক্তিকে বাড়ায়। তবে বয়সভেদে এটি নির্দিষ্ট পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। কেননা সবার জন্য সমান পরিমাণ কার্যকর নয়, কেননা ফোলেট নির্দিষ্ট পরিমান গ্রহনের ফলে অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রাও হ্রাস করে। যার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সে ক্ষেত্রে বয়সভেদে নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল গ্রহণ করা উচিত। যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য কে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। (৯)
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
দৈনিক ভাতের সাথে এক কাপ ডাল গ্রহণ করুন। এটি শরীরের সব রকম প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।
৯) পেশী গঠনে মসুর ডালের ভূমিকা : Building muscles
মসুর ডাল প্রোটিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হওয়ায় এটি শরীরের পেশী গঠনে সহায়তা করে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি শরীরে কার্বোহাইড্রেটকে ধীরে ধীরে হজম করে এবং শরীরকে হালকা করতে সহায়তা করে। যদি আপনি পেশি তৈরি করতে চান সেক্ষেত্রে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল অবশ্যই রাখা উচিৎ। কেননা এটি শরীর গঠনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।যারা ব্যায়াম করে পেশি গঠন করতে চান তাদের খাদ্যতালিকায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা শরীরে অধিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করলে সেটি শরীরকে ভেতর থেকে সমৃদ্ধ রাখে। যার ফলে সহজে খিদে পায় না এবং ভেতর থেকে মেদ কমাতে সহায়তা করে। শরীরকে ভেতর থেকে শক্তিশালী করে তুলতে সহায়তা করে।
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
যারা ব্যায়াম করেন কিংবা শরীর গঠনের জন্য আলাদা রকম ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাদের খাদ্যতালিকায় মসুর ডালের স্যুপ রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা প্রোটিন জাতীয় খাদ্য শরীরের ওজন কমাতে সহায়তা করে এবং পেশীগুলিকে মজবুত করতে সহায়তা করে।
১০) গর্ভাবস্থায় মসুর ডালের উপকারিতা : Good for Pregnancy
অন্যান্য সাধারন মানুষদের তুলনায় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা খানিকটা বেশি হয়। তবে সেই প্রয়োজনীয়তা সহজেই মুসুর ডাল এর সাহায্যে পূরন করা যায়। দৈনিক খাদ্যতালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল গর্ভবতী মায়েদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। এছাড়াও গর্ভাবস্থার অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা কোষ্ঠকাঠিন্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে মসুর ডাল পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখে। গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে মসুর ডালের পাশাপাশি অন্যান্য পুষ্টি উপাদান গুলি নবজাতকের বৃদ্ধিকে এবং তার শরীর গঠনে সহায়তা করে। এছাড়াও পরবর্তীসময় শিশুকে বিভিন্ন রোগ থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করে। মসুর ডালের মধ্যে থাকা ফোলেট গর্ভস্থ সন্তানের যথাযথ পুষ্টিচাহিদা পূরণ করে। এই পুষ্টির ঘাটতি হলে গর্ভস্থ শিশুর শরীরে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে মসুর ডাল সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এরমধ্যে প্রোটিন এবং ফোলেট ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান যেগুলি মা ও শিশুর শরীরকে সুস্থ এবং স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে সহায়তা করে। (১০)
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়েদের ক্ষেত্রে পুষ্টি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল দৈনিক খাদ্যতালিকায় রাখা উচিত। এতে মা এবং শিশু দুজনেই সুস্থ এবং সবল থাকবে।
১১) মসুর ডালের সহায়তায় শরীরের পিএইচ স্তরের ভারসাম্য বজায় রাখুন : Balance Body’s pH level
মসুর ডাল প্রোটিনের অন্যতম ক্ষারীয় উৎস। এটি আপনার শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে এবং স্বাস্থ্যের গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মসুর ডাল উচ্চ ফাইবার যুক্ত হওয়ায় এটি গ্যাস অম্বল অ্যাসিডিটির সমস্যা কমায়। যার ফলে আপনি যদি অতিরিক্ত পরিমাণে প্রক্রিয়াজাত খাবার কিংবা শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল গ্রহণ করলে সেটি সহজেই হজম হয়ে যাবে। মসুর ডাল অম্লত্বের বিরুদ্ধে লড়াই করে তা প্রতিরোধ করে এবং অন্ত্রে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব বিস্তার করে। যে কারণে পেট পরিষ্কার রাখতে গেলে কিংবা অন্ত্রের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে গেলে দৈনিক নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে।
কিভাবে গ্রহণ করবেন?
শরীরকে সুস্থ রাখতে শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স সঠিক রাখতে দৈনিক খাদ্যতালিকায় ডাল সিদ্ধ রাখুন। ডাল সিদ্ধ করে অল্প তেল দিয়ে সেটা ভাত দিয়ে খেতে পারেন। এটি শরীরকে অনেক রোগের হাত থেকে মুক্তি দেবে।
১২) ত্বকের যত্নে মসুর ডালের ভূমিকা : Skin health
আমরা জানি ত্বক সুস্থ এবং উজ্জ্বল রাখতে গেলে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। সে ক্ষেত্রে মসুর ডাল হলো প্রোটিন সমৃদ্ধ একটি খাদ্য উপাদান। এর মধ্যে প্রোটিন, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ খনিজ পদার্থ রয়েছে, যেগুলি শরীরের ত্বক এবং চুলের নতুন কোষ তৈরীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অ্যামিনো অ্যাসিড এতে ভূমিকা নেয় এবং স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বক প্রদান করে থাকে। তাই একটি উজ্জ্বল ত্বক পেতে গেলে কেবল ওপর থেকে পরিচর্যায় যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রে আমাদের অভ্যন্তরীণ খাদ্য তালিকাকেও যথাযথ পুষ্টি উপাদানসমৃদ্ধ হতে হবে। তাই খাদ্যতালিকায় অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের উৎস হিসেবে মসুর ডাল রাখুন। এছাড়াও অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। এটি শরীরকে সুস্থ সবল রাখার পাশাপাশি আপনার ত্বক উজ্জ্বল করতে সহায়তা করবে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
খাদ্যতালিকায় মসুর ডাল রাখার পাশাপাশি মসুর ডাল ভিজিয়ে নিয়ে প্যাক বানিয়ে আপনি সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ত্বক উজ্জ্বল এবং স্বাস্থ্যকর হয়ে উঠবে।
১৩) চুলের যত্নে মসুর ডালের ভূমিকা : Hair health
মসুর ডালের উপকারিতা সম্পর্কে ইতিমধ্যেই আমরা অনেকগুলো বিষয় জেনে নিয়েছি। তবে মসুর ডালের গুনাগুন আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে বাহ্যিক অংশেও যে বহাল তা হয়তো আমাদের জানা ছিলো না। ইতিমধ্যেই আমরা জেনেছি ত্বকের যত্নে কিভাবে মসুর ডালের ব্যবহার করা যেতে পারে। এবার জানবো চুলের যত্নেও সমান ভাবে মসুর ডালের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মসুর ডাল প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি চুলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা ফোলেট লোহিত রক্ত কণিকার বৃদ্ধি করে মাথার ত্বক বা শরীরের ত্বকে অক্সিজেন পরিবহন করে। যার ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় এবং চুল শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কেননা আমাদের চুল মজবুত করার জন্য কিংবা লম্বা করতে চাইলে অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাদ্য উপাদান যেমন গ্রহণ করতে হবে, তেমনি প্রোটিন জাতীয় উপাদান চুলে ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে মসুর ডালের ব্যবহার অন্যতম।
কিভাবে ব্যবহার করবেন?
মসুর ডালের জল দিয়ে মাথায় মাসাজ করতে পারেন কিংবা মসুর ডাল কে সরাসরি খাদ্যতালিকায় রেখে শরীরকে ভেতর থেকে পরিপুষ্ট করে তুলতে পারেন। যা আপনাকে আভ্যন্তরীণ দিক থেকে সুন্দর করে তুলবে।
মসুর ডালের পুষ্টিগত মান : Lentils Nutritional Value in Bengali
ইতিমধ্যেই আমরা মসুর ডালের গুনাগুন সম্পর্কে অবগত হয়েছি। এবার জেনে নিন এই মসুর ডাল আপনার শরীরে কি কি পুষ্টি উপাদান সম্পাদন করছে। এক কাপ রান্না করা মসুর ডালের (১৯৮ গ্রাম) পুষ্টি মূল্য নিম্নোক্ত তালিকায় দেওয়া হল।
ক্যালোরি তথ্য | ||
---|---|---|
এক বাটি পরিমান | % | |
ক্যালোরি | ২৩০ (৯৬৩ কেযে) | ১১% |
কার্বোহাইড্রেট | ১৬১(৬৭৪ কেযে) | |
ফ্যাট | ৬.৩(২৬.৪) | |
প্রোটিন | ৬২.০ (২৬০ কেযে) | |
এলকোহল | ০.০ কে যে | |
ফ্যাট এবং ফ্যাটি এসিড | ||
এক বাটি | % | |
সম্পূর্ণ ফ্যাট | ১% | |
স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ০.১ গ্রাম | ১% |
মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ০.১ গ্রাম | |
পলি স্যাচুরেটেড ফ্যাট | ০.৩ গ্রাম | |
ট্রান্স ফ্যাটি এসিড | ~ | |
ট্রান্স মোনো এনলিক ফ্যাটি এসিড | ~ | |
ট্রান্স পলিনোলিক ফ্যাটি এসিড | ~ | |
ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড | ৭৩.৩ মিলিগ্রাম | |
সম্পূর্ণ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড | ২৭ মিলিগ্রাম | |
প্রোটিন ও এমিনো এসিড | ||
এক বাটি | % | |
প্রোটিন | ১৭.৯ গ্রাম | ৩৬% |
ভিটামিন | ||
এক বাটি | % | |
ভিটামিন এ | ১৫.৮ IU | ০% |
ভিটামিন সি | ৩.০ মিলিগ্রাম | ৫% |
ভিটামিন ডি | ~ | ~ |
ভিটামিন ই | ০.২ মিলিগ্রাম | ১% |
ভিটামিন কে | ৩.৪ এমসিজি | ৪% |
থায়ামিন | ০.৩ মিলিগ্রাম | ২২% |
রিবোফ্ল্যাবিন | ০.১ মিলিগ্রাম | ৯% |
নিয়াসিন | ২.১ মিলিগ্রাম | ১০% |
ভিটামিন সি | ০.৪ মিলিগ্রাম | ১৮% |
ফোলেট | ৩৫৮ এমসিজি | ৯০% |
ভিটামিন বি ১২ | ০.০ এমসিজি | ০% |
প্যান্টোথেনিক এসিড | ১.৩ মিলিগ্রাম | ১৩% |
কলিন | ৬৪.৭ গ্রাম | |
বেটালাইন | ~ | |
মিনারেল | ||
এক বাটি | % | |
ক্যালসিয়াম | ৩৭.৬ মিলিগ্রাম | ৪% |
আয়রন | ৫.৬ মিলিগ্রাম | ৩৭% |
ম্যাজেশিয়াম | ৭১.৩ | ১৮% |
ফসফরাস | ৩৫৬ মিলিগ্রাম | ৩৬% |
পটাসিয়াম | ৭৩১ মিলিগ্রাম | ৩১% |
সোডিয়াম | ৪.০ মিলিগ্রাম | ০% |
জিঙ্ক | ২.৫ মিলিগ্রাম | ১৭% |
কোপার | ০.৫ গ্রাম | ২৫% |
ম্যাঙ্গানিজ | ১.০ মিলিগ্রাম | ৪৯% |
সেলেনিয়াম | ৫.৫ এমসিজি | ৮% |
ফ্লুরাইড | ~ |
মসুর ডাল রান্নার উপায় : How To Cook Lentils in Bengali
মসুর ডাল আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর কিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে ইতিমধ্যেই আমরা তা জেনে নিয়েছি। এবার জেনে নিন কিভাবে মসুর ডাল রান্না করলে তা সঠিকভাবে আপনার শরীরের প্রয়োজনে লাগবে। মসুর ডাল বিভিন্ন রকমের হয় লাল, কমলা, হলুদ বিভিন্ন বর্ণের। তবে কমলা এবং হলুদ রঙের ডাল গুলি রান্না করতে কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট সময় নেয় এবং লাল মসুর ডাল রান্না করতে ১৫ মিনিটেরও কম সময় লাগে। আবার বাদামী রঙের মসুর ডাল রান্না করতে কুড়ি থেকে ত্রিশ মিনিট সময় লাগে। এবং সবুজ মসুর ডাল রান্নার জন্য ৪৫ মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
জেনে নিন কিভাবে রান্না করবেন?
একটি বড় পাত্রে মসুর ডালের দ্বিগুণ পরিমাণে জল নিয়ে গ্যাসের ওপর বসিয়ে দিন। জল একটু গরম হয়ে এলে তাতে এক কাপ মসুর ডাল দিয়ে দিন। এরপর আঁচ কমিয়ে রাখুন। দেখবেন বুদবুদ দেখতে পারবেন। এরপর আঁচ একটু বাড়িয়ে দিয়ে মসুর ডাল সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এক্ষেত্রে ডালের ওপর নির্ভর করে কুড়ি থেকে পয়তাল্লিশ মিনিট সময় লাগতে পারে। এরপর যদি ডাল সেদ্ধ খেতে চান তাহলে তার মধ্যে লবণ দিয়ে দু মিনিট রেখে নামিয়ে নিন আর যদি তেল দিতে চান সে ক্ষেত্রে কড়াইতে সরষের তেল এবং শুকনো লঙ্কা ফোঁড়ন দিয়ে সিদ্ধ ডাল দিয়ে দিন এবং তারপর দু মিনিট অল্প আঁচে ফুটিয়ে নামিয়ে ফেলুন।
কিভাবে খাবেন?
মসুর ডাল ভাত দিয়ে খেতে পারেন কিংবা চাল ডাল মিলিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও মসুর ডাল দিয়ে তৈরি ডাল পুরি, ডালের বড়া, ডালের স্যুপ তৈরি করে খেতে পারেন।
কখন এবং কত পরিমাণে খাবেন :
দৈনিক খাদ্যতালিকায় নির্দিষ্ট পরিমাণ মসুর ডাল রাখা উচিত এবং লিঙ্গ ভেদে এই পরিমাণ ভিন্ন রকমের হতে পারে। প্রতিদিন সকালে মসুর ডালের জল কিংবা ডাল সিদ্ধ রুটি দিয়েও খেতে পারেন। এটি শরীর স্বাস্থ্যকে ভেতর থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
মসুর ডালের অপকারিতা : Side Effects of Lentils in Bengali
মসুর ডাল আমাদের প্রতিদিনের প্রোটিনের চাহিদা অনেকটাই পূরণ করে থাকে। এর দাম সস্তা হওয়ায় নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে সকল শ্রেণীর মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য এই ডাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় আমিষের প্রায় ২০ থেকে ২৫ ভাগ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম মসুর ডাল। যে কারণে আমাদের দেশে মুসুরডালের চাহিদা প্রচুর। তবে সে দিক থেকে দেখতে গেলে আমাদের দেশে মাত্র ৫ থেকে ৭ শতাংশ কৃষি জমিতে মসুর ডাল চাষ হয়ে থাকে। যার ফলে চাহিদা সঠিকভাবে মেটানো সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে আমদানির সাহায্য নিতে হয়। প্রতিবছর দুই হাজার কোটি টাকার মসুর ডাল ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও নেপাল থেকে আমদানি করা হয়। তবে ডালের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদার সুযোগ নিয়ে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ডালে ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য, রং এবং ওজন বৃদ্ধির জন্য জল মিশিয়ে ভেজাল ডাল বিক্রি করছে। যার ফলে কাপড়ের ক্ষতিকর রং এর মধ্যে মিশিয়ে আলাদা আলাদা নামকরণ করা হচ্ছে। যার ফলে প্রতি কেজিতে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা বাড়তি বিক্রির আশায় ছোট এবং সামান্য বড় ডালগুলিকে আলাদা করে বিক্রি করা হচ্ছে। যার ফলস্বরূপ প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ২৫ কেজি ডাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে যেগুলো পশু খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এমন ডাল গুলিও রং মিশিয়ে মানুষের খাবার হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। যা মানবদেহের পক্ষে একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই মসুর ডাল অধিক গ্রহণ করার আগে অবশ্যই ভেবে দেখবেন। তাছাড়াও মসুর ডালে প্রচুর পরিমান খনিজ পদার্থ উপস্থিত থাকায় এবং প্রোটিনের সর্বোচ্চ উৎস হওয়ায় তা সবার শরীরে সমানভাবে নাও প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। তাই কোনও কিছুই অতিরিক্ত গ্রহণ করা সঠিক নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার আগে অবশ্যই সেটা ভালো মতন দেখে নেবেন এবং নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী গ্রহণ করবেন। আসুন দেখে নেওয়া যাক কোন কোন ক্ষেত্রে মসুর ডাল ক্ষতিকারক হতে পারে:
১. মসুর ডাল রান্না করার আগে খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন কারণ এতে অনেক সময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পোকা জন্মাতে পারে যা পেটের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকারক।এছাড়া কাঁচা বা অর্ধেক সেদ্ধ করা মসুর ডাল খেলে হজমের সমস্যা দেখা দেয়। ভালো করে সেদ্ধ করার ফলে এটি ভালো করে হজম করা যায় ও ছোটোখাটো পোকা মাকড় থাকলে বা কোনো কৃত্রিক রং থাকলে সেগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলি নষ্ট হয়ে যায়।
২. অতিরিক্ত পরিমানে মসুর ডাল খেলে কিডনির ওপর অত্যাধিক চাপ সৃষ্টি হয় যার ফলে কিডনি স্টোনের সম্ভাবনা থাকে। এর কারণ হল মসুর ডালে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ফাইবার ও প্রোটিন যা শরীরে অত্যাধিক প্রবেশ করলে ক্ষতি হতে পারে।
৩. মসুর ডাল যদিও গ্লুটেন মুক্ত, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তাররা এটি ব্যারন করে থাকেন। যেমন যাদের শরীর একেবারেই গ্লুটেন নিতে পারেনা, বা যাদের উচ্চ পরিমানে ইউরিক এসিডের সমস্যা রয়েছে তাদের মসুর ডাল না খাওয়াই ভাল।
তবে যাই হোক না কেন, সাবধানতা বজায় রেখে মসুর ডাল খাওয়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মসুর ডাল ফাইবার ও প্রোটিনের সর্বোচ্চ উৎস। তাই এটি অবশ্যই আপনার দৈনন্দিন খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত করুন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী চুল, ত্বক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহার করুন।
আমাদের এই পোস্ট নিয়ে কোনোরকম বক্তব্য থাকলে অবশ্যই কমেন্ট করুন।এছাড়াও অন্যান্য খাদ্য উপাদানের গুরুত্ব বিষয়ে আপডেট পেতে অবশ্যই এই পেজে চোখ রাখুন।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.