মেনিনজাইটিসঃ রোগ সারানোর চেয়ে সাবধানতা অবলম্বন করা অনেক বেশি জরুরি
অভিভাবকত্ব হল জীবনের একটি বেশ কঠিন ভুমিকা। এই সময় আপনার জীবনের সমস্ত ইচ্ছে ও পছন্দের বিশয়গুলি পাল্টাতে শুরু করে এবং আপনি আগের মত উদাসিন ও আরাম প্রিয় থাকতে পারেন না।আমিও হলাম এরকমই একজন চিন্তাগ্রস্থ অভিভাবক যে নিজের সন্তানের প্রতিটি বিশয় নিয়ে খুব সুরক্ষামুলক দায়িত্ব নিতে চেষ্টা করি, এমনকি সেটি যদি সাধারন জ্বর জ্বালাও হয়ে থাকে, তাও। তাই, আমি আমার সন্তানকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যে প্রতিটি টিকাকরণ যথাসময়ে প্রদান করে থাকি; যতই এগুলি খরচ সাপেক্ষ হোক না কেন। কারন, খরচের চিন্তা করতে গিয়ে আমি আমার সন্তানের ক্ষতি হোক সেটা কখনই চাই না।
আমার কথা শুনে আপনার ঠিক যেমন আমাকে দৃঢ় ও কঠোর শোনাচ্ছে ঠিক সেভাবেই আমিও চাই যে আপনিও যাতে আমার মত করেই নিজের সন্তানের মঙ্গলের জন্যে টিকাকরণ সম্পর্কিত কোন বিষয় হালকা ভাবে না নিয়ে থাকেন। সন্তানকে কোন রোগের হাত থেকে নিরাময় ব্যাবস্থা প্রদান করাই হল আপনার সন্তানকে দেওয়া সেরা উপহার। আজ আমি আপনাদের মেনিনজাইটিস টিকাকরণ সম্পর্কে জানাতে চাই যা প্রথম আবিষ্কার করেন সানফি পাস্তিওর। দীর্ঘ ৪০ বছর গবেষণা ও অভিজ্ঞতার পর এই টিকাকরণটি প্রথম আবিষ্কার হয়।
মেনিনজাইটিস হল খুব বিরল ও অনিশ্চিত একটি রোগ, কিন্তু এই রোগ হলে শরীরে মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে ও এর সংক্রমণ খুব দ্রুত শিশুদের মধ্যে হাঁচি, সর্দি ও কাশির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে ৫ বছরের নীচে বয়সী বাচ্চাদের মধ্যে ও যেসব শিশুরা সদ্য সদ্য তারুন্যে পা দেয় তাদের মধ্যে এটি বেশি করে দেখা দেয়। এই রোগের ফলে মস্তিস্ক ও রক্ত দুটিই মারাত্মক ভাবে প্রভাবিত হয়; এমনকি বাড়াবাড়ি হলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুও ঘটতে পারে। অনেক সময় সুস্থ হয়ে যাওয়ার পরেও সারা জীবন ধরে নানারকমের জটিলতা ও সমস্যা দেখা দিতে থাকে।
মেনিনজাইটিসের সদ্য লক্ষণগুলি হল জ্বর, ক্লান্তি, ক্ষুধাভাব, জ্যান হারানো, মাথার নরম অংশগুলি ফুলে যাওয়া, ঠাণ্ডা লাগা, ইত্যাদি। এর ফলে শিশু অনবরত কাঁদতে থাকে। খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনি হয়তো এটিকে সাধারন জ্বরের লক্ষণ হিসেবে গুলিয়ে ফেলবেন। এর ফলে অনেক বড় ভুল হয়ে যেতে পারে। তাই, আপনার উচিত আগে থেকেই শিশুকে মেনিনজাইটিস টিকাকরণ প্রদান করা যাতে এই রোগ হওয়ার আগেই আপনি তাকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।
বিগত ২০১৬ ও ২০১৭ সালের কিছু তথ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে প্রায় ৩২৫১ টি মানুষ মেনিনজাইটিসে আক্রান্ত হয়েছে এবং তাদের মধ্যে ২০১৬ সালে ২০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ও ২০১৭ সালে ১৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, এই তথ্যগুলি থেকে এটিও দেখা গিয়েছে যে মেয়েদের তুলনায় ছেলেরা এই রোগে বেশী পরিমাণে আক্রান্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গে মেনিনজাইটিসের প্রকোপ সর্বাধিক ভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। এর পরেই আসে অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, উড়িষ্যা ও কর্ণাটক।
সদ্যজাত শিশুকে মেনিনজাইটিসের হাত থেকে রক্ষা করার কিছু উপায়ঃ
- শিশুকে তাদের কাছ থেকে দূরে রাখুন যাদের কোনোরকম সংক্রমণ বা সর্দি কাশি হয়েছে। কারণ, এগুলির মাধ্যমে মেনিনজাইটিস সব থেকে বেশি ছড়িয়ে পড়ে।
- অতিরিক্ত ভিড় ও মশার হাত থেকে দূরে রাখুন শিশুকে।
- শিশুর জন্যে আলাদা করে হাত পরিষ্কার করে খাবার তৈরী করুন ও পরিষ্কার বোতলে জল ভরুন। এমনকি, হাত পরিষ্কার না করে শিশুকে ধরবেন না।
- ৩৫ থেকে ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতী মহিলাদের গ্রূপ বি স্ট্রেপ টেস্ট করা উচিত ও সেটি পসিটিভ হলে এন্টি বায়োটিক দেওয়া প্রয়োজন।
শিশুদেরকে সঠিক নিরাময় ব্যবস্থা প্রদান করতে আগে থেকেই মেনিনগোকক্কাল কঞ্জুগেট টিকারণ অর্থাৎ এমসিভি ৪ দেওয়া উচিত। এই টিকাকরণটি ১১ বছরের ওপর বয়সী শিশুদের দেওয়া প্রয়োজন। ৯ থেকে ১৫ মাসের শিশুকে ও ৪ থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুকে এমএমআর টিকাকরণ দেওয়া জরুরি।
সানোফি পাস্তিওরের আবিষ্কার করা টিকাকরণটি ৫০০০ টাকা যা শুনতে অনেকটাই খরচসাপেক্ষ মনে হয়, কিন্তু নিজের সন্তানের মঙ্গলের থেকে কি এটি খুব বেশি?
মনে রাখবেন: এই তথ্যগুলি হল মেনিনজাইটিস সম্পর্কে প্রাথমিক শিক্ষা। এছাড়া আপনি ডাক্তারের সাথে এই বিষয়ে আরো আলোচনা করে নানারকমের তথ্য জানতে পারবেন। একজন দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে আপনার অবশ্যই এই রোগ সম্পর্কে যথাযত জ্ঞান থাকা অবশ্যক এবং বাকিদেরও যাতে আপনি এই সম্পর্কে সবকিছু জানাতে পারেন সেইভাবে ব্যবস্থা নিন।
Author: Sahana
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.