গর্ভাবস্থায় দুধ পান করা কতটা উপযুক্ত ? জানুন
একটি সুষম ডায়েটে দুধ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, আর আপনি যদি গর্ভবতী হন তাহলে অবশ্যই আপনার নিয়মিত দুধ পান করা উচিত। একজন গর্ভবতী মহিলার যার দুধের প্রতি কোনোরকম বিতৃষ্ণা নেই, তিনি দিনে দুই থেকে তিনবার দুধ খেতেই পারেন (1)। তবে কি ধরণের দুধ খাচ্ছেন বা পরিমাণে কতটা খাচ্ছেন সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। দুধ এটি গর্ভবতী মায়ের পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা পূরণের পাশাপাশি ভ্রূণের বিকাশেও সহায়তা করে। দুধে উপস্থিত প্রোটিনে নয়টি অত্যাবশ্যক অ্যামিইনো অ্যাসিড রয়েছে যা মানুষের বৃদ্ধি ও বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ (2)।
আমরা এই প্রবন্ধের মাধ্যমে আপনাকে দুধের পুষ্টিগত মান এবং আপনাকে আপনার জন্য সঠিক ধরণের দুধ পছন্দ করতে সহায়তা করবো।
তাহলে শুরু করা যাক।
গর্ভাবস্থায় দুধ পান করা কি উচিত ?
হ্যাঁ, দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন উপস্থিত যা প্রেগন্যান্ট মহিলার স্বাস্থ্যের জন্য এবং ভ্রূণের বৃদ্ধির জন্য খুবই ভালো।
একজন গর্ভবতী মহিলা দিনে কত পরিমাণ দুধ পান করা উচিত?
একজন গর্ভবতী মহিলার দিনের প্রায় তিন গ্লাস দুধ পান করতে পারেন। সাধারণত স্বল্প ফ্যাটযুক্ত বা ফ্যাট ছাড়া দুধ খাওয়া উচিত। তবে মাঝে মাঝে ফ্যাট যুক্ত দুধ পান করতে পারেন কারণ এই দুধের স্বাদ বেশি ভালো হয়। তবে এই ধরণের দুধ অল্প পরিমাণে খাবেন। মনে রাখবেন, হবু মা ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে আপনার জন্য কোন ধরণের দুধ উপযুক্ত।
গর্ভাবস্থায় দুধ পান করার উপকারিতা
১. হাড় গঠন করতে
একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভজাত সন্তানের হাড় গঠনের জন্য প্রায় ৫০ থেকে ৩৩০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে থাকে (3)। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য একজন ১৯ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী একজন গর্ভবতী মহিলাকে দিনে ১০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর ১৯ বছরের কম বয়সী গর্ভবতী মহিলাদের দিনে ১৩০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এক গ্লাস ( ২৫০ মিলিলিটার ) ফ্যাট বিহীন দুধে ৩০৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম (4) পাওয়া যায়। তাই গর্ভাবস্থায় আপনার প্রতিদিনের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মেটানোর জন্য তিন থেকে চার গ্লাস দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
২. বাচ্চার বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন
গর্ভাবস্থায়, সঠিক পরিমাণে প্রোটিন গ্রহণ করলে গর্ভজাত শিশুর বৃদ্ধি এবং তার কোষগুলিকে দ্রুত বিভাজিত হতে সহায়তা করে (5)। জানা যায়, এই প্রোটিন গর্ভজাত শিশুর জরায়ুর বিকাশে, রক্ত চলাচল উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে (6) । হবু মায়ের শরীরে প্রোটিন যদি সঠিক পরিমাণে না থাকে তাহলে জন্মের পর বাচ্চার ওজন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। গর্ভবতী মহিলাদের প্রোটিনের দৈনিক প্রয়োজন হল ১.১ গ্রাম / কেজি শরীরের ওজন (7)। এক গ্লাস দুধে ৮ থেকে ৯ গ্রাম প্রোটিন থাকে । অতএব, তিন গ্লাস কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খেলে তবেই আপনি দিনে আপনার শরীরে প্রোটিনের চাহিদার এক-তৃতীয়াংশের বেশি পূরণ করতে পারবেন (8)।
৩. ভিটামিন ডি সদ্যজাত শিশুকে রিকেট রোগ থেকে বাঁচায়
গর্ভাবস্থায় সঠিক পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে নবজাতকের রিকেট হওয়ার ও জন্মের সময় বাচ্চার ওজন কম হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায় । একজন গর্ভবতী মহিলার দিনে ভিটামিন ডি এর প্রয়োজন ৪০০ IU এবং এক গ্লাস দুধে মোটামুটি ১১৪ থেকে ১২৪ IU ভিটামিন ডি থাকে (9)। অতএব, দিনে তিন গ্লাস দুধ খেলে তবেই আপনি দেহের ৫৯% ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে পারবেন।
৪. আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে
আপনি যদি ডিহাইড্রেটড বা স্ট্রেস অনুভব করেন বা গলা শুকিয়ে আসছে মনে হচ্ছে তবে এক গ্লাস দুধ খেলে উপকার পেতে পারেন। এটি আপনার শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে (10) ।
পাস্তুরাইজড দুধ না কাঁচা দুধ – কোনটি গর্ভবতী মহিলাদের পান করা উচিত ?
কাঁচা দুধ পান করা বা কাঁচা দুধ থেকে প্রস্তুত যে কোনও কিছু খাওয়া গর্ভাবস্থায় একেবারেই নিরাপদ নয়। কাঁচা দুধ (পাস্তুরাইজড নয় এমন দুধ) পান করলে লিস্টেরিওসিস (listeriosis) এর মতো বেশ কয়েকটি রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় (11)। পাস্তুরাইজেশন প্রক্রিয়া চলাকালীন দুধে উপস্থিত নানা ধরণের জীবাণু উচ্চ তাপমাত্রায় মারা যায়, তাই অবশ্যই শুধু গর্ভবতী মহিলা নয় আমাদের প্রত্যেকেরই পাস্তুরাইজড দুধ পান করা উচিত।
গর্ভবতী মহিলার জন্য কোন ধরণের গরুর দুধ পান করা ভালো ?
- কম ফ্যাটযুক্ত বা ডাবল টোনড বা স্কিমড মিল্ক
গর্ভাবস্থায় আপনাকে ফিট থাকার জন্য কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খাওয়াই শ্রেয় এবং ডাক্তারও এটি পান করারই নির্দেশ দেবেন। এটিতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে যা শিশুর বৃদ্ধি এবং হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।
এক গ্লাস (২৫০ মিলি) কম ফ্যাটযুক্ত দুধে ৩০৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে যা মায়ের পাশাপাশি ভ্রূণের পক্ষে প্রয়োজনীয়। একটি গবেষণা থেকে জানা যায় যে, গর্ভাবস্থায় দুই থেকে তিন গ্লাস কম ফ্যাটযুক্ত দুধ খাওয়া আবশ্যক।
- ফুল ক্রিম মিল্ক
ফুল ক্রিম যুক্ত দুধে অতিরিক্ত ফ্যাট এবং পুষ্টি থাকে। এক গ্লাস এই ধরণের দুধে ১৫০ ক্যালোরি থাকে যেখানে স্কিমড দুধে কেবলমাত্র ৮৩ ক্যালোরি থাকে (12)। তাছাড়া প্রতি ১০০ গ্রামে ফুল ক্রিম দুধের মোট স্যাচুরেটেড ফ্যাট হল ১.৬ গ্রাম আর সেখানে স্কিমড দুধের মাত্র ০.০৫৬ গ্রাম।
আপনার ডাক্তার যদি আপনাকে এই দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেয় তবেই ফুল ক্রিমযুক্ত দুধ আপনি পান করতে পারেন । গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত মেদ জমা একদম ভালো নয় । গর্ভাবস্থায় উচ্চ পরিমাণে ফ্যাটযুক্ত দুধ ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ডাক্তারের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করে নেবেন।
এছাড়া বাজারে ছাগলের দুধ, আমন্ড দুধ ও ওট মিল্ক ইত্যাদি পাওয়া যায়। যদি প্রেগন্যান্ট অবস্থায় আপনার এই ধরণের দুধ খেতে ইচ্ছে করে, তবে ডাক্তারের সঙ্গে একবার কথা বলে নিন।
দুধ পান করার নিরাপদ উপায়
- গরম দুধ পান করার সময় অল্প অল্প করে চুমুক দেবেন।
- দুপুরে লাঞ্চ করার পর বা রাতে ডিনার করার পর সঙ্গে সঙ্গে দুধ পান করবেন না।
- ধরুন বাড়িতে স্কিমড মিল্ক নেই তবে ফ্যাটযুক্ত দুধ ২:১ অনুপাতে জল মিশিয়ে নিয়ে তবে পান করতে পারেন, তবে তা কখনোই স্কিমড মিল্কে পরিণত হবে না। কিন্তু ফুল ক্রিম মিল্কের থেকে ভালো এটি ।
তাহলে জানলেন তো গর্ভাবস্থায় আপনার ও আপনার সন্তানের জন্য দুধ কতটা উপকারী । তবে সঠিক পরিমাণে দুধ পান করা গুরুত্বপূর্ণ। আর যদি সঠিক পরিমাণে আপনি পান না করেন তাহলে এর ফল পাওয়া মুশকিল।
নিজের যত্ন নিন ও সুস্থ থাকুন।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.