মধুর উপকারিতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Honey Benefits, Uses and Side Effects in Bengali

Written by
Last Updated on

মধু খেতে ভালোবাসে না, এমন মানুষ বিরল। মধু এতই মিষ্টি ও সুগন্ধময় যে সকলেই এর প্রেমে পড়ে যায়। এমনকি, কোনোরকম সুন্দর জিনিস বা কোনো মানুষের সুন্দর কথাবার্তা বা অন্য কোনো খাদ্যের মিষ্টতা বোঝাতেও আমরা ‘মধুর মতো মিষ্টি’ কথাটি ব্যবহার করে থাকি, তাই নয় কি? হিন্দু ধর্মে যে কোনো পুজো আচারেও মধু আবশ্যক। এই মিষ্টতা ও সুগন্ধ ছাড়াও মধুর উপকারিতাও কিন্তু কম নয়।

মৌমাছির চাক থেকে মধু উৎপন্ন হয়। মধু শরীরের জন্যে খুবই উপকারী। তবুও দিনে ২৫ গ্রামের বেশি মধু খাওয়া উচিৎ না; কারণ এতে রয়েছে ৫৩% ফ্রুকটোজ যা ২৫ গ্রামের বেশি শরীরে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক। বলা হয় যে শুধু মধু খাওয়ার চেয়ে একটু দারুচিনির সাথে মিশিয়ে মধু খাওয়া বেশি উপকারী। এটি  ইনফেকশন, ক্যান্সার, ফুলে যাওয়া, হার্টের সমস্যা, ইত্যাদির বিরুধ্যে লড়াই করে। এমনকি, লেবুর রস এবং রসুনের সাথেও মধুর মিশ্রণ দারুন উপকারিতা প্রদান করে।

মধু কয় প্রকারের হয় – Types of Honey in Bengali

মধু নানা প্রকারের হয়ে থাকে, তবে সব থেকে জনপ্রিয় প্রকারের মধু হল:

  • মানুকা- মানুকা মধু প্রথম নিউ জিল্যান্ড থেকে উৎপন্ন হয় যা লেপ্টোস্পের্মম স্কোপারিয়াম গাছে মৌমাছির দ্বারা পরাগিত করা হয়। এটি এন্টিব্যাক্টিরিয়াল, এন্টিভারাল, এন্টিইনফ্লেমেটরি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানে ভরপুর।
  • বাকহুইট– বাকহুইট ফুল গাছে মৌমাছির দ্বারা পরাগিত করা মধুকে বলা হয় বাকহুইট মধু। এটি কালচে বা বেগুনি ধরণের রঙের হয়ে থাকে ও এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।
  • ওয়াল্ড ফ্লাওয়ার– এটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত মধু যা বিভিন্ন বুনো ফুলের মধ্যে মৌমাছির দ্বারা পরাগিত করা হয়। সাধারণত এর রং ও গন্ধ বিভিন্ন ঋতু অনুযায়ী পাল্টাতে থাকে।
  • আলফালফা– এটি সাধারণত ছোট ছোট ফুল গাছে মৌমাছির দ্বারা পরাগিত হয়ে থাকে ও এর গন্ধ অনেকটা হালকা ফুলের সুগন্ধের মত। তবে, অন্যান্য মধুর মত এটি অতটা মিষ্টি নয়। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল ও এমিনো এসিড।
  • ব্লুবেরি– এই মধু ইংল্যান্ড ও মিকিগানে খুব বিখ্যাত ও নীল জামের ঝোপ থেকে সংগ্রহ করা হয়।
  • অরেঞ্জ ব্লসম– এটি ফ্লোরিডা ও ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে খুব বিখ্যাত ও কমলা লেবু গাছের থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর গন্ধ বেশ মিষ্টি ও রং হালকা হয়ে থাকে।
  • ক্লোভার- ক্লোভার মধুর রং ও গন্ধ অন্য মধুর চেয়ে হালকা হয় ও এটি ক্লোভার গাছে মৌমাছির দ্বারা পরাগিত করা হয়।

মধুর উপকারিতা – Benefits of Honey in Bengali

মধুর উপকারিতা নানারকম। মধুতে রয়েছে নানা প্রাকৃতিক ও আয়ুর্বেদিক ভেষজ গুণ যা কোলেস্টরল থেকে শুরু করে হার্টের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা ও চুলের সমস্যার বিরুদ্ধে ভীষণভাবে কার্যকরী। নিচে বিস্তারিতভাবে মধুর নানারকমের উপকারিতার বর্ণনা করা হল:

স্বাস্থ্যের জন্য মধুর উপকারিতা – Health Benefits of Honey in Bengali

স্বাস্থ্যের জন্যে মধুর উপকারিতা নানারকম ভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মধুর নানা ঔষধিক গুণ রয়েছে। দেখে নেওয়া যাক স্বাস্থ্যের জন্যে মধুর উপকারিতাগুলি কি কি:

১. ওজন কমাতে মধু: Weight loss

ওজন কমানোর ক্ষেত্রে মধু দারুণ কার্যকরী। আজকাল প্রত্যেককে বলা হচ্ছে যে চিনি খাওয়া বন্ধ করে তার বদলে মধু খাওয়ার অভ্যেস করতে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস গরম জলে এক চামচ মধু মিশিয়ে পান করার অভ্যেস করুন। এতে ওজন বৃদ্ধি আটকানো সহজ হয়। যদিও আপনি  ভাবতে পারেন যে মধুতেও তো চিনি থাকে, কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে মধুতে থাকা চিনি সাধারণ সাদা চিনির তুলনায় একেবারে অন্যরকম ভাবে কাজ করে যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় (১)

২. সর্দি কাশি কমাতে মধু: Cough and Cold

সর্দি কাশি কমাতে মধুর জুড়ি মেলা ভার। বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে সারারাত যে কাশি হয়, মধু খেলে অনেকটা আরাম পাওয়া যায় (২)। তবে, অনেক সময় ১৪ বছরের নিচের বাচ্ছাদের মধু খাওয়া সঠিক নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে মধু খাওয়া উচিত (৩)। প্রতিদিন নিয়ম করে এক গ্লাস গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ডিহাইড্রেশন, ঠাণ্ডা লাগা ও নানা রকমের রোগ সেরে যায় (৪), (৫)

৩. ডায়াবেটিস কমাতে মধু: Diabetes/ Blood Sugar

মধুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল ৪৫ থেকে ৬৪-র মধ্যে যা একেবারেই মাঝারি। মধু খেলে রক্তে প্রয়োজনীয় ইন্সুলিন সঠিকভাবে উৎপন্ন হয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের জন্যে মধু রক্তের লিপিড ও কোলেস্টরল কম করতে সাহায্য করে (৬)। কিছু কিছু এন্টি ডায়াবেটিক ওষুধের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে ডায়াবেটিসের প্রতিক্রিয়া কমতে শুরু করে (৭)। তবে অনেকের ক্ষেত্রে আবার ডায়াবেটিসে মধু খাওয়া নিষেধ করা হয়, তাই এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ করে নেওয়াই ভাল (৮)

৪. কাটা, ছেড়া জ্বালা কমাতে মধু: Wounds, Cuts, Burns

মধুতে থাকা রেডিক্যাল উপাদান কাটা ছেড়া বা দাগ ছোপের বিরূদ্ধে দারুণ কাজ করে (৯)। এমনকি ছোট খাটো জ্বালা বা পোড়ার ক্ষেত্রেও মধু লাগালে উপকারিতা  পাওয়া যায়। যেকোনো ব্যাথা বা জ্বালা কমাতে মধুর মত উপাদান খুব কমই আছে (১০), (১১)। আলসার বা অন্য কোনো সংক্রামক ব্যাথার ক্ষেত্রেও মধু খুব উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে (১২)

৫. উচ্চ রক্তচাপ কমাতে মধু: High Blood Pressure

High Blood Pressure
Image: Shutterstock

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে মধু খুব উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এতে আছে এন্টি অক্সিডেন্ট উপাদান যা রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে আনে ও শরীরে নির্দিষ্ট ক্যালোরি সঠিক রাখে (১৩)

৬. কোলেস্টরল কমাতে মধু: Cholesterol

একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে নিয়মিত ৩০ দিন ধরে ৭০ গ্রাম মধু খেলে কোলেস্টরলের সমস্যা প্রায় ৩%- ৮% করে কমতে থাকে এবং ভালো কোলেস্টরল বাড়তে শুরু করে (১৪)। তাই কোলেস্টরোলে ভুগলে চিনির বদলে মধু খাওয়ার অভ্যেস শুরু করা উচিত (১৫), (১৬)। মধুতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট হল এই কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করার আসল কারণ।

৭. শরীরে শক্তি প্রদান করতে মধু: Boost Energy

মধুতে রয়েছে নির্দিষ্ট পরিমাণ এনজাইম, প্রোটিন, মিনারেল ও এমিনো এসিড যা শরীরে সতেজতা ও শক্তি বজায় রাখতে সাহায্য করে। যেকোনো মিষ্টান্নর তুলনায় মধু খাওয়া অনেক বেশি উপকারী। এমনকি, শরীর চর্চা বা ব্যায়াম করার পর গ্লুকোসের বদলে অনায়াসে মধু খেতে পারেন (১৭)

৮. হাড়ের জন্যে মধু: Stronger Bones

হাড় শক্ত রাখতে বিশেষ করে মহিলাদের ৩৫ বছর বয়সের পর যে হাড়ের ভঙ্গুরতা বা ক্যালসিয়ামের অভাব দেখা যায়, সেক্ষেত্রে মধু দারুণ উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে উষ্ণ গরম জলে মধু মিশিয়ে পান করলে হাড় দিনে দিনে মজবুত হতে শুরু করে ও আর্থ্রাইটিস বা যেকোনো বাতের সমস্যা কমতে দেখা যায়।

৯. রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়িয়ে তোলে: Boosts Immunity

মধু, বিশেষ করে মানুকা মধুতে রয়েছে মিথাইলগ্লাইঅক্সাইল যা এন্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদানে ভরপুর। এর ফলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায় ও যেসব কোষগুলি এই ক্ষমতাকে জাগিয়ে তোলে সেখানে সাইটোকাইনিন  উৎপন্ন করতে সাহায্য করে।

১০. হার্টের সমস্যায় মধু: Heart Disease

মধুতে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট হার্টকে বিভিন্ন রকম ভাবে সুরক্ষা প্রদান করে যার ফলে অক্সিডেশন হওয়া বন্ধ করা যায়। এর ফলে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এমনকি, প্রতিদিন মধু খাওয়ার ফলে হার্ট এটাকের আশঙ্কা অনেকটা কমিয়ে আনা যায় (১৮)। মধুতে থাকা পলিফেনল হার্টের যেকোনো সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে বেশ কার্যকরী (১৯)

১১. নখের জন্যে মধু: Stronger Nails

বিভিন্ন  বৈজ্ঞানিক পরিক্ষায় প্রমাণিত হয়েছে যে মধুর সাহায্যে নখের নানা সমস্যা যেমন নখ কুনি, নখের ইনফেকশন, ইত্যাদি সহজে সারিয়ে তোলে যায় (২০)

১২. এস্থেমার জন্যে মধু: Asthma

আগেই বলা হয়েছে যে মধু সর্দি কাশি বা ঠাণ্ডা লাগলে দারুণ কাজ দেয়। ঠিক সেভাবে শ্বাস কষ্ট বা বুকে কফ জমে যে গলা ব্যাথা বা নাক বন্ধ হয় সেক্ষেত্রেও মধু ব্রঙ্কাইটিস বা এস্থেমার ওষুধের মত কাজ করে (২১)

১৩. দাঁত ও মুখের জন্যে মধু: Oral Health

Oral Health
Image: Shutterstock

দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্যে মধু বিশেষভাবে উপকারী, যেমন দাঁতে ব্যাথা হওয়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, মুখের দুর্গন্ধ, ইত্যাদি। এসব সমস্যায় মধু ওষুধের মত কাজ করে। মধু ও লবঙ্গ মিশিয়ে দাঁতে ব্যবহার  করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। অনেক টুথপেস্টে পর্যতো মধু ব্যবহার করা হয়।

১৪. ক্যান্সারের জন্যে মধু: Cancer

মধুতে থাকা ফেনোলিক উপাদান ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে। মধুর সাহায্যে যেসব কোষ ক্যান্সারের সৃষ্টি করে সেগুলিকে আটকে রাখা যায় কারণ মধু হল এন্টিইনফ্লেমাটরি। ক্যান্সারের রোগ প্রতিরোধ করতেও মধু খুব উপকারী (২২)। এছাড়া মধুতে রয়েছে এন্টি প্রলিফারেটিভ উপাদান যা ক্যান্সার বিরোধী কোষগুলিকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচায়। তবে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষদের জন্যে কাঁচা মধু না খেয়ে এক্ষেত্রে একটু গরম করে মধু খাওয়া উচিত (২৩)

ত্বকের জন্য মধুর উপকারিতা – Skin Benefits of Honey in Bengali

 ত্বকে প্রতিদিন মধু লাগালে নানারকমের উপকারিতা পাওয়া যায়। মধু দিয়ে নানারকমের প্যাক তৈরী করা যায় যা ত্বকের কালো দাগ, ছোপ বা বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। আসুন বিস্তারিতভাবে ত্বকের জন্যে মধুর উপকারিতা দেখে নেওয়া যাক:

১৫. ব্রণর জন্যে মধু: Acne/ Acne Scars

মধু ত্বকের ধুলো, ময়লা বা যেকোনো বিষাক্ত পদার্থগুলোকে শুষে নিয়ে ত্বক পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। মধু ত্বকের জন্যে এন্টিসেপ্টিকের কাজ করে ও ত্বককে নতুন করে পরিচর্যা করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন এক চামচ করে মধু ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এতে ব্রণর সমস্যা কমে যায়। তবে যদি আপনার মধুতে এলার্জি থাকে, তাহলে এটি লাগানোর প্রয়োজন নেই।

১৬. ত্বকের ফর্সাভাব ফিরিয়ে আনে: Skin Whitening

ত্বক পরিষ্কার করে তার ফর্সাভাব ফুটিয়ে তুলতে মধু অসাধারণ কাজ করে। সব থেকে ভালো ফল পাওয়ার জন্যে এক চামচ মধু, এক বাটি দই, এক চামচ ব্যাসন ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এক মাসের মধ্যে সুফল দেখতে পাবেন।

১৭. বলিরেখা দূর করে: Wrinkles

মধু হল একটি প্রাকৃতিক হিউমেকটেন্ট অর্থাৎ এমন একটি পদার্থ যা ত্বকের ওপরের অংশগুলিকে সর্বদা আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে।  এর ফলে ত্বকের শুস্কতা দূর হয় ও শুষ্কতার ফলে যেই চুলকুনি ও বলিরেখা হয় সেগুলি দূর করে। মধুতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। ভাল ফল পাওয়ার জন্যে এক চামচ মধু এক টুকরো পেঁপের রস, দুধ বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে রোজ মেখে ৩০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয় ও বলিরেখা দূর হয়।

১৮. ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে মধু: Dry Skin

Dry Skin
Image: Shutterstock

১ চামচ মধু এবং ২ চামচ দই মিশিয়ে ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট ধরে রেখে মুখ ধুয়ে নিন। এতে ত্বকের শুষ্কভাব ও আঁশ-ওঠা ভাব অনায়াসে সেরে যায়। মধুতে রয়েছে এন্টিব্যাটিরিয়াল ও এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা ত্বকের মধ্যে থেকে গভীরভাবে কাজ করে ও ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে।

১৯. ঠোঁট ফাটা দূর করতে মধু: Chapped Lips

ঠোঁটে শুধুমাত্র মধু লাগালেই ঠোঁট ফেটে যাওয়া বন্ধ করা যায়। রাতে ঘুমোনোর আগে ঠোঁটে মধু লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন। সকালে উঠে সেটি ধুয়ে নিন। এতে ঠোঁটের কোমলভাব ধীরে ধীরে ফুটে ওঠে। এমনকি ঠোঁট না ফাটলেও আপনি এটি লাগাতে পারেন, তাতে ঠোঁটের গোলাপিভাবেও ফুটে ওঠে।

২০. ত্বক পরিষ্কার করে: Skin Cleansing

মধু ত্বকের ময়লা ও ধুলো পরিষ্কার করে তার প্রাকৃতিক তৈলাক্তভাব ফুটিয়ে ওঠে। হাফ চামচ মধু আঙুলে নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে ১৫ মিনিট পর উষ্ণ গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি দারুণ প্রাকৃতিক টোনার ও ক্লিন্সারের কাজ করে।

 চুলের জন্য মধুর উপকারিতা – Hair Benefits of Honey in Bengali

মধুতে থাকা নানারকমের পুষ্টিকর উপাদান স্বাস্থ্য ও ত্বকের পাশাপাশি চুল ও মাথার স্ক্যাল্পের নানারকমের সমস্যা দূর করতেও দারুণ কার্যকরী ভূমিকা নিয়ে থাকে। আসুন বিস্তারিতভাবে  দেখে নেওয়া যাক:

২১. চুল বাড়াতে মধু: Hair Growth

চুল বাড়ানোর জন্যে মধু দারুণ কাজ দেয়। ভাল ফল পেতে হলে এক চামচ মধুর সাথে এক চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে একটু গরম করে স্ক্যাল্পে ভাল করে মালিশ করুন। প্রয়োজনে আপনি এতে ডিমের সাদা অংশও দিতে পারেন। এরপর ১৫ মিনিট রেখে একটি হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে ২ বার করে করলে খুব কম দিনের মধ্যেই চুলের লম্বাভাবে অনুভব করতে পারবেন।

২২. ড্যানড্রাফ দূর করতে মধু: Dandruff

Dandruff
Image: Shutterstock

ড্যানড্রাফ দূর করতে মধু ওষুধের মত কাজ করে। সপ্তাহে ৩ দিন করে ১ চামচ মধু নিয়ে একটুখানি জলের সাথে মিশিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে মালিশ করে ৩ ঘন্টা মত রেখে দিন। তারপর হালকা একটি শ্যাম্পু ব্যবহার করে জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। দু মাস এটি করার ফলে ফলাফল অবশ্যই বুঝতে পারবেন।

২৩. স্ক্যাল্প পরিষ্কার করে: Cleanses Scalp

মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পের ধুলো ময়লা পরিষ্কার করতেও মধুর জুড়ি নেই। ১ চামচ মধুর সাথে ২ চামচ জল মিশিয়ে সেটি ভালো করে স্ক্যাল্পে রোজ মালিশ করে উষ্ণ গরম জল বা শেম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। তবে, শুধু লাগালেই হবেনা, পাশাপাশি আপনাকে মধু খাওয়ারও অভ্যেস করতে হবে।

মধুর ব্যবহার – How to Use Honey in Bengali

মধুর এতখানি উপকারিতা পেতে হলে প্রতিদিন মধু ব্যবহার করুন। বাজারে বা সুপার মার্কেটে সহজেই আপনি মধু কিনতে পারবেন। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন যে মধুর শিশি কিন্তু কখনোই ফ্রিজে রাখা উচিত না। এতে মধুর গুনাগুন নষ্ট হতে শুরু করে। শুকনো, ঠাণ্ডা জায়গায় সূর্যের আলো থেকে দূরে এটি সংরক্ষণ করুন।

মধু আপনি এক চামচ করে শুধুও খেতে পারেন অথবা নিচের উপায়গুলি অনুসরণ করেও খেতে পারেন:

  • ফল অথবা সবজির স্যালাড মধু মিশিয়ে খেতে খুব ভালো লাগে।
  • চা অথবা কফিতে চিনি ব্যবহার না করে মধু ব্যবহার করে পান করতে পারেন।
  • দুধ পান করার আগে তার মধ্যে মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। বিশেষ করে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এটি পান করলে দারুণ স্বাস্থ্যকর উপকারিতা পাওয়া যায়।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এক গ্লাস উষ্ণ গরম জলে এক চামচ মধু ও লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে পারেন।
  • মধু, তুলসী পাতা ও আম একসাথে পেস্ট করে জলে গুলে শরবত করে পান করতে পারেন।
  • আরেকটি স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে আদার রস, লেবুর রস ও মধু জলে মিশিয়ে পান করলে দারুণ শারীরিক উপকারিতা পাবেন।

মধুর অপকারিতা – Side Effects of Honey in Bengali

Side Effects of Honey in Bengali
Image: Shutterstock

মধু যদিও শরীরের জন্যে দারুণ উপকারী ও প্রয়োজনীয়, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অর্থাৎ অপকারিতাও রয়েছে।

১. এলার্জি

যেসব মানুষের শরীর সেলেরি বা মৌমাছির দ্বারা পরাগিত করা খাদ্যের প্রতি এলার্জির ধাঁচ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মধু খেলেও এলার্জি হতে পারে। তাই তাদের মধু খাওয়া ঠিক না। এই অবস্থায় মধু খেলে গলায় ব্যাথা, ঠোঁট ফুলে যাওয়া, শ্বাস কষ্ট, গলার স্বর পাল্টে যাওয়া, ইত্যাদি হতে পারে।

২. গর্ভাবস্থা ও স্তন্যপানের জন্যে ঠিক না

যদিও এই বিষয়ে খুব একটা প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে গর্ভাবস্থায় বা যারা স্তন্যপান করান তাদের ক্ষেত্রে মধুর অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়। মধু তাদের জন্যে ক্ষতিকর হতে পারে।

৩. অন্যান্য অপকারিতা

মধু খাওয়ার ফলে অনেকের হার্ট বিটের সমস্যা, চোখে আবছাভাব, সারাদিন ঘুম-ঘুম ভাব, ডায়রিয়া, ক্লান্তিভাব, জ্বর, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। এছাড়া মহিলাদের ক্ষেত্রে মধু অনেক সময় অতিরিক্ত রক্তপাতের কারণ হতে পারে।

তবে যাই হোক না কেন, আমরা সকলেই মধু খেতে খুবই ভালোবাসি। এছাড়া, খুব কম ক্ষেত্রেই এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বরং, মধুর উপকারিতা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই আজ থেকে নিজের প্রতিদিনের জীবনে মধু যোগ করুন ও এর উপকারিতা ভোগ করুন।

আমাদের এই পোস্ট ভাল লেগে থাকলে অবশ্যই জানান আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে।

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown
Latest Articles