শিশুদের জন্যে ১৫টি শিক্ষামূলক ও নৈতিক ছোট গল্প
In This Article
গল্পের দ্বারা শিশুদেরকে জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করা যায়। খুব বেশি পরিশ্রম না করেই তাদেরকে অনেক রকমের শিক্ষামূলক তথ্য ও নৈতিকতা সম্পর্কে বোঝানো যায়। তাই ছোটদেরকে গল্প বলার সময়ে এমন কিছু ছোট ছোট গল্প বেছে নিন যা শুধুমাত্র আনন্দের নয়, তার সাথে শিক্ষামুলুক ও নৈতিকও।
এই প্রবন্ধে মম জাঙ্কশন আপনার জন্যে শিশুদের জন্যে ১৫টি শিক্ষামুলুক ও নৈতিক ছোটগল্প বাছাই করে নিয়ে এসেছে যা আপনি আপনার শিশুর সাথে চর্চা করতে পারেন।
১. সোনার ডিম পাড়া হাঁস
এক সময় একটি গ্রামের চাষির কাছে একটি অসাধারণ হাঁস ছিল যে প্রত্যেকদিন তাকে একটি করে সোনার ডিম পেড়ে উপহার দিত। এই সোনার ডিম বেঁচে সেই চাষি ও চাষির স্ত্রী রোজ তাদের জীবনের যাবতীয় খরচ ও আয় চালাত। বেশ কিছুদিন খুশি থাকার পর চাষির মনে একটি ভাবনা এল, ‘আমি রোজ একটি করে সোনার ডিম কেন পাব? তার চেয়ে যদি একবারে সবকটি সোনার ডিম পেয়ে যেতাম, কতই না টাকা রোজকার করে ফেলতাম!’
চাষির এই বুদ্ধিতে তার স্ত্রীও রাজি হয়ে যায় ও একদিন তারা দুজনে মিলে সেই সোনার ডিম পাড়া হাঁসকে হত্যা করে তার পেট কেটে দেখে যে সেখানে রক্ত ও মাংস ছাড়া কিছুই নেই। তখন তারা নিজেদের ভুল ও নির্বুদ্ধিতা বুঝতে পেরে সর্বস্ব হারানোর দুঃখে মেতে ওঠে।
নৈতিক শিক্ষা: যেকোনো কাজ করার আগে বার বার তার ফল ভেবে তবেই করা উচিত।
২. কচ্ছপ এবং পাখি
একবার একটি কচ্ছপ একটি গাছের ছায়ার তলায় বসে বিশ্রাম করছিল ও সেই গাছের ওপরেই একটি পাখি বাসা বেঁধেছিল। তখন কচ্ছপটি পাখিকে বললো, “এ তুমি কেমন বাসা বেঁধেছ? না আছে এর ছাদ, না কোনো সৌন্দর্য্য! তোমার নিজে হাতে বানানো এই বাসার থেকে আমার এই ঘর যা আমার পিঠের ওপরে আছে তা অনেক বেশি সুন্দর।”
তখন উত্তরে পাখিটি বললো, “হ্যাঁ, সত্যিই আমার বানানো বাসাটি দেখতে খুবই কদাকার, কিন্তু যেহেতু এটি আমি বানিয়েছি, তাই এই বাসাকে আমি খুব ভালবাসি।” কচ্ছপটি আবার বললো, “তোমার বাসা এতটাই বাজে দেখতে যে তুমি নিশ্চই আমার খোলসটি দেখে খুব হিংসা করো।” এবার উত্তরে পাখি বললো, “আমার বাসায় এতটাই জায়গা আছে যে এখানে আমি ছাড়া আমার পরিবার ও বন্ধুরাও থাকতে পারবে। তোমার খোলস হয়তো খুবই সুন্দর, কিন্তু সেখানে তুমি একেবারে একা। তোমার সাথে আর কেউ থাকতে পারবেনা।”
নৈতিক শিক্ষা: একটি একাকিত্বের প্রাসাদের থেকে জনসমূহযুক্ত কুড়ে ঘর অনেক ভাল।
৩. বাঘ এবং গরু
একটি জঙ্গলের কাছে চারটি গরু একসাথে থাকত। তাদের মধ্যে খুব বন্ধুত্ব ছিল ও তারা সব কাজ একসাথেই করতো ।যেমন মাঠে ঘাস খেতে যাওয়া, পুকুরে জল জল খেতে যাওয়া, ইত্যাদি। এই কারণে কোনো বাঘ বা সিংহ তাদের প্রতিঘাত করতে পারত না।
কিন্তু একদিন হঠাৎই তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় ও তারা রেগে গিয়ে যে যার মত ঘাস খেতে চলে যায়। এমন একটি সুযোগ পেয়ে একটি বাঘ বুঝতে পারে যে এটিই হল সেরা সুযোগ তাদের হত্যা করার ও এক করে খুঁজে খুঁজে সে সবকটি গরুকে মেরে ফেলে।
নৈতিক শিক্ষা: একতাই শক্তি।
৪. নিজের প্রশংসা করা ভ্রমণকারী
একজন ভ্রমণকারী ছিল যে নানা জায়গা থেকে ঘুরে এসে প্রত্যেককে নিজের ব্যাপারে খুব বড় বড় জ্ঞান দিত; সে কোথায় কোথায় ঘুরেছে, কতজনের সাথে দেখা করেছে, কি কি অসাধারণ কাজ একা একা করে ফিরেছে, ইত্যাদি। সে নিজের কোথায় সবসময় বুঝিয়ে দিত যে তার মত করে কেউ অসাধ্যকে সাধন করতে পারবেনা। সে নাকি বিশাল একটি পাহাড় থেকে ঝাঁপ দিয়ে লাফিয়ে নেমেছিল যা আর কেউ করতে পারেনা। তার এই কৃতিত্বের সাক্ষী হিসেবে সে এমন কিছু মানুষদের সাথেও পরিচয় করাতে পারে যারা পরোক্ষভাবে প্রমান করবে যে তার কথা ঠিক।
এতগুলি কথা শোনার পর একজন বুদ্ধিমান ছেলে বলে উঠলো, ”সেকি তোমার এত কৃতিত্বের ঘটনার জন্যে আবার সাক্ষী লাগে নাকি? তার আর প্রয়োজন নেই. বরং তুমি এটাকেই পাহাড় মনে করো এবং এখন থেকেই লাফিয়ে দেখাও।”
এবার মিথ্যাবাদী ভ্রমণকারী আর বুজে উঠতে পারলোনা যে সে কি বলবে এবং চুলছাপ সেখান থেকে সরে পড়লো।
নৈতিক শিক্ষা: প্রকৃত জ্ঞানী মানুষকে তাঁর নিজের প্রশংসা করতে লাগেনা।
৫. একটি শেয়াল ও রাখাল বালকের দল
এসোপের নানারকম ছোট ছোট শিক্ষামূলক ও নৈতিক গল্পের মধ্যে এটি অন্যতম একটি গল্প।
একবার একটি শেয়ালকে অনেকে মাইল তাড়া করে যেহেতু সে একটি গোয়াল থেকে কয়েকটি ভেড়াকে মেরে খেতে গিয়েছিল। সেদিন সে কোনোভাবে পালিয়ে যায় ও পরে আবার একদিন সুযোগ করে খাবার খুঁজতে সেখানে আসে। হঠাৎ সে লুকিয়ে দেখে যে ওই বাড়ির চাষি ও তার পরিবার ভেড়ার মাংস রান্না করে আহার করছে।
তখন সে মনে মনে ভাবে, “বাহ! আজ যদি আমি কোনো ভেড়াকে হত্যা করে খেতে যাই, আমাকে তারা ধরে হত্যা করতে চাইবে। কিন্তু আজ যখন চাষি নিজেই সেই ভেড়ার হত্যা করে তার মাংস খাচ্ছে তাতে কোনো দোষ নেই।”
নৈতিক শিক্ষা: আমরা সর্বদা অন্যদের ওপরে বিচার করি, কিন্তু নিজে কি করছি তা দেখিনা।
৬. একটি কাঁকড়া ও তার মা
একদিন এক সমুদ্র পারে বসে একটি শিশু কাঁকড়া তার মায়ের সাথে বসে সময় কাটাচ্ছিল। শিশু কাঁকড়াটি হঠাৎ কোনোরকমে চলার চেষ্টা করে, কিন্তু সে বারবার সমুদ্রের পারের দিকে চলে যাচ্ছিলো। তখন তার মা তাকে একটু বকুনি দিয়ে ইশারা করে সামনের দিকে চলার কথা বলে। শিশু কাঁকড়াটি তার মাকে বলে,’ আমি তো সামনের দিকেই চলতে চাই মা, কিন্তু কিভাবে চলবো তা বুঝতে পারছিনা।’
তখন তার মা তাকে সামনে চলার জন্যে দেখতে গিয়ে যেই চলতে করে সে নিজেও অনুভব করে যে কিছুতেই সে সামনে চলতে পারছেনা, এবং তার সন্তানের মত সেও সমুদ্রের ধারেই চলে যাচ্ছে। নিজের ভুল বুঝতে পেরে সে বোকার মত সেখানেই বসে থাকে।
নৈতিক শিক্ষা: কখনো কাউকে এমন কিছু করতে জোর করোনা যা তুমি নিজেও করতে পারোনা।
৭. কুঁয়া ও কুকুরের গল্প
একটি বিশাল বড় জমিতে একটি কুকুর তার বাচ্চাদের নিয়ে থাকতো। সেই জমির এক পাশে ছিল একটি কুঁয়। কুকুর তার বাচ্চাদের নিয়ে সেই জমিতে রোজ খেলাধুলো করতো, কিন্তু কিছুতেই সেই কুঁয়ার ধারে পাশে যেতনা। একদিন সেই বাচ্চাদের মধ্যে একটি কুকুর ভাবলো সেই কুঁয়ার কাছে একদিন গেলে কিই বা হবে? এই ভেবে সে সেখানে গেল ও কুঁয়ার দেওয়াল বেয়ে উঠে দাঁড়ালো।
ওঠা মাত্রই সে কুঁয়ার জলে নিজের প্রতিচ্ছবি দেখল ও ভাবলো অন্য কোনো কুকুর সেই কুঁয়া থেকে তাকে দেখছে। সে যাই করছে, কুঁয়ার কুকুরটিও একদম তাই নকল করছে। এই দেখে কুকুর ছানাটি এত রেগে গেল যে সে ভাবলো কুয়ার কুকুরটিকে গিয়ে মারা প্রয়োজন। অমনি সে কুঁয়ার মধ্যে দিল ঝাঁপ আর সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলো যে কুয়াতে আদেও কোনো কুকুর ছিলোনা। সে খুব জোরে জোরে চিৎকার করেই গেল, করেই গেল, কিন্তু কেউ তার চিৎকার শুনতে পেলনা। অবশেষে একটি চাষি তাকে দেখতে পেয়ে কুঁয়া থেকে তুলে নেয়।
নৈতিক শিক্ষা: বড়োদের কথা সর্বদা মান্য করা উচিত। প্রশ্ন করো, কিন্তু যাচাই করোনা।
৮. একটি লোক ও বেড়াল
একদিন একটি লোক রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় একটি বেড়ালের কান্নার আওয়াজ শুনে দাঁড়িয়ে পড়ে। সে দেখে যে বেড়ালটি একটি জালে আটকে আছে. লোকটি তাকে সাহায্য করার জন্যে তার দিকে এগিয়ে যেতে সে ভয়ে লোকটিকে আঁচড়ে দেয়। লোকটি যন্ত্রনায় চিৎকার করে ওঠে কিন্তু তাও সে পিছিয়ে পড়ে না। তাতে বেড়ালটি তাকে আরো বেশি করে আঁচড়াতে থাকে।
এরকমই আরেকজন পথিক এই ঘটনাটি দেখে লোকটিকে বলে বেড়ালটিকে তার মত করে ছেড়ে দিতে। কিন্তু তাতেও লোকটি তাকে না ছেড়ে বাঁচানোর চেষ্টায় লেগে থাকে। অবশেষে সে বেড়ালটিকে বাঁচাতে পারে ও অন্য পথিকটিকে বলে, ‘বেড়াল একটি পশু, স্বাভাবিকভাবেই সে না বুঝে আমাকে আঁচড়ে দিয়েছে, কিন্তু আমি একজন মানুষ। আমার কর্তব্য তাকে বুঝে সহানুভূতিশীল হওয়া।’
নৈতিক শিক্ষা: তুমি যেভাবে অন্যদের থেকে সম্মান ও ভালোবাসা চাও, ঠিক সেভাবেই অন্যদেরও তা প্রদান করো। নিজের নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বকে ভুলে যেওনা।
৯. বদভ্যাস
এক বিশাল ধনী ব্যবসায়ী তার পুত্রের কিছু বদভ্যাস নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিলেন। তাই একদিন একজন গুণী ও আধ্যাতিক বয়স্ক মানুষকে ডেকে তার পুত্রকে বোঝানোর কথা বলেন।সেই বয়স্ক মানুষটি ধনী ব্যাসায়ীর পুত্রকে নিয়ে একদিন জঙ্গলের হাটতে হাটতে একটি ছোট চারা গাছ দেখিয়ে তাকে সেটি টেনে তুলতে বলেন। ছেলেটি খুব সহজেই তা তুলে ফেলে।
তারপর একটি আরেকটু বড় গাছ টেনে তুলতে বলেন। ছেলেটি সেটাও তুলে ফেলে। এভাবে অনেকগুলো গাছ তুলে ফেলার পরে তিনি তাকে একটি বড় গাছ উপড়ে ফেলতে বলে। ছেলেটির সেটি করতে বেশ পরিশ্রম হয় ও অবশেষে হাল ছেড়ে দেয়। তখন বয়স্ক মানুষটি তার দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বলেন, “বদভ্যেসের ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়। যত বেশি বাড়বে, ততবেশি তা ছাড়তে কষ্ট হয়, ও অবশেষে তুমি হেরে যাবে।
নৈতিক শিক্ষা: বদভ্যাসকে যত প্রশ্রয় দেবে, তা তত বেশি বাড়বে। তাই শুরুতেই তার থেকে নিজেকে মুক্ত করা ভালো।
১০. রাখাল বালক ও শেয়াল
একটি গ্রামে এক রাখাল বালক রোজ গরু চড়াতে জঙ্গলের দিকে যেত। একদিন তার মাথায় একটি ফন্দি আসে গ্রামের অন্যসব চাষিদের বোকা বানানোর। সে জোরে জোরে চিৎকার করে শুরু করে, “বাঁচাও! বাঁচাও! আমাকে শেয়াল তাড়া করেছে!” চিৎকার শুনে গ্রামের সব লোক তাকে বাঁচাতে গিয়ে দেখে যে সে শুধুমাত্র তাদের বোকা বানাচ্ছিল। সকলে খুব রেগে গিয়ে তাকে বকাবকি করে চলে যায়।
পরের দিন আবার সে একই ঘটনা পুনরায় করে বসে। গ্রামের লোকেরা আবার তাকে বাঁচাতে গিয়ে দেখে রাখাল বালক একই রকম ভাবে তাদের বোকা বানিয়েছে। তারা এতটাই রেগে যায় যে আর কোনোদিন তাকে বিশ্বাস না করার কথা বলে সেখান থেকে চলে যায়।
পরের দিন সত্যিই হঠাৎ করে একটি শেয়াল তাকে তাড়া করে। রাখাল জোরে জোরে চিৎকার করে, “বাঁচাও! বাঁচাও! আমাকে শেয়াল তাড়া করেছে!” গ্রামের লোকেরা তার ডাক শুনে মনে করে যে সে আজও তাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। এই ভেবে তারা কেউ আর তার ডাকে ছুটে যায়না, ও অবশেষে রাখাল সেই শেয়ালের খপ্পরে পরে.
নৈতিক শিক্ষা: একজন মিথ্যাবাদী মানুষকে কেউ বিশ্বাস করেনা। মিথ্যা কথা বললে তা সম্পর্কে বিশ্বাসের ঘাটতি বয়ে আনে।
১১. একজন কৃপণ লোক ও সোনার কাহিনী
এক ছিল কৃপণ যার একটি বিশাল বড় বাগান ছিল ও সেই বাগানে সে অনেক অনেক সোনা কয়েকটি হাড়িতে ভোরে মাটিতে পুঁতে রেখেছিল। প্রতিদিন রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে সে ওই হাঁড়িগুলি দেখতে যেতে একেবারেই ভুলত না।
একদিন একটি চোর লোকটির প্রতিদিনের এই অভ্যেস লক্ষ্য করে সময় খুঁজে সবকটি সোনার হাড়ি থেকে শোন্ সোনা চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়। পরের দিন সকালে এরকম কান্ড দেখে লোকটি তারস্বরে চিন্তকর করে কাঁদতে শুরু করে।
এই শুনে তার প্রতিবেশী ছুটে এসে সমস্ত কিছু জানতে পেরে তাকে জিজ্ঞেস করে, ‘আপনি আপনার সমস্ত সম্পত্তি ঘরে না রেখে বাইরে কেন রাখতেন? তাহলে তো আপনার সেগুলি কেনাকাটা করার সময়ও আপনার খরোচ করতে কাজে লাগত।’’
“খরচ!” চিৎকার করে ওঠে লোকটি। “আমি কোনোদিনও আমার সোনা খোঁচা করিনি, করতামও না।”
একথা শুনে তার প্রতিবেশী বলে ওঠে, “তাহলে আজ থেকে এই পাথরগুলি জমাতে থাকুন। এগুলি আপনার সোনার মতোই অকেজোভাবে জমতে থাকবে। কোনো তফাৎ নেই.”
নৈতিক শিক্ষা: যেকোনো রকমের সঞ্চয় তখনই কাজের হয় যখন সেগুলি কাজে আসে।
১২. একটি উঁঠ ও তার শিশু
একদিন একটি উঁঠ তার শিশুর সাথে গল্প করছিল। শিশুটি মাকে জিজ্ঞাসা করে, ”‘মা, আমাদের পিঠে পুঁজ কেন থাকে?” উত্তরে মা বলে, “আমাদের পিঠের পুঁজ আমাদের শরীরের জন্যে জল সঞ্চয় করে রাখে যাতে আমরা মরুভূমিতে বেঁচে থাকতে পারি।”
শিশুটি আবার প্রশ্ন করে, “আমাদের পা এত লম্বা ওর বাঁকা কেন?” উত্তরে মা বলে, “এই পায়ের সাহায্যে আমরা মরুভূমিতে খুব সহজে হাঁটাচলা করতে পারি।” এরপর শিশুটি জিজ্ঞাসা করে, “আমাদের চোখের পাতাগুলি এত বড় কেন?” উত্তরে মা বলে, “এই চোখের পাতা আমাদের ধুলো ও বালি থেকে সাহায্য করে।”
শিশুটি অনেক্ষন ধরে ভেবে বললো,”তার মানে আমাদের পুঁজ জল ধরে রাখে, আমাদের পা আমাদের মরুভূমিতে হাটতে সাহায্য করে, আর আমাদের চোখের পাতা আমাদের বালি থেকে সাহায্য করে, তাহলে আমরা এই চিড়িয়াখানায় কি করছি?”
উত্তরে হতবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে মা।
নৈতিক শিক্ষা: তোমার শক্তি, কর্মক্ষমতা ও জ্ঞান সবই নিষ্প্রয়োজন হয়ে যায় যদি তুই সঠিক জায়গায় না থাকো।
১৩. দেওয়ালের ওপারে
একবার একটি সুন্দরী যুবতী তার ঠাকুমার কাছ থেকে একটি সুন্দর বাগান উত্তরাধিকার সূত্রে পায়। এক বইতে সে একটি সুন্দর গাছের ছবি দেখে সেটি কিনে বাগানে লাগানোর সিদ্ধান্ত নেয়। যথাযতভাবে সে সেটি কিনে বাগানের একটি পাথরের দেওয়ালের পেছনে সেটি লাগিয়ে দেয়। গাছটিকে সে খুব যত্ন নিতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে সেই গাছে পাতা গজাতে শুরু করে।
কত মাস পেরিয়ে গেল, কিন্তু সেই গাছে আর ফুল হয়না। একদিন বিরক্ত হয়ে সে গাছটি কেটে ফেলার কথা ভাবে। ঠিক যখনই সে কাটতে যায়, তখনই উপহাসের দেওয়াল থেকে একটি গলার স্বর বলে ওঠে, “এই সুন্দর ফুলগুলি দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ।” সে ওপারে গিয়ে দেখে তার গাছের সবকটি ফুল দেওয়ালের ওপারে গজিয়েছে। তখন সে বুঝতে পারে সে তার যত্ন সত্যিই সফল হয়েছে।
নৈতিক শিক্ষা: শুধুমাত্র নিজের চোখে কিছু দেখতে না পেলেই মনে করা ঠিক নয় যে তুমি কোনো ফল পাওনি।
১৪. ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা
একটি জোয়ান ছেলে ছিল যে কিছুতেই তার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারতোনা। যখনই সে রেগে যেত, সে যা মুখে আসতো তাই বলে ফেলত। একদিন তার বাবা তাকে একটি হাতুড়ি আর পেরেক দিয়ে বলে, যখনই রাগ হবে তখন বাগানে গিয়ে এই হাতুড়ি আর পেরেক দিয়ে বেড়া পুঁতে আসতে।
কিছুদিনের মধ্যেই সে দেখে যে তার পেরেকের অর্ধেকটা অংশই শেষ হয়ে গেছে এবং সময়েড সাথে সাথে তার রাগও সে অনেকটাই নয়ন্ত্রন করতে পারছে। একদিন এমন হল যে তার আর রাগই হলোনা। তখন তার বাবা বলেন, রোজ একটি করে পেরেক সরিয়ে রাখতে যাতে সে তার রাগের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।
অবশেষে সে যখন শেষ পেরেকটি সরাচ্ছে তখন তার বাবা বলে, “তুমি খুব ভাল কাজ করেছো। কিন্তু তুমি কি দেওয়ালের এই ফুটোগুলো দেখছো? এই ফুটোগুলো কোনোদিনও ঠিক হবেনা যতই তুমি সারাই করো. এভাবেই রাগের মাথায় তুমি যাই কথা বলো তা কোনোদিনও কারুর মন থেকে মুছে যায়না।”
নৈতিক শিক্ষা: রাগ হলো একটি চাকুর মতো সাংঘাতিক একটি অস্ত্র। সেই অস্ত্র মানুষের শরীরে গেথে দিলে যতই সে ভালো হয়ে যাক, ক্ষতের দাগ কোনোদিনও মুছে যায়না।
১৫. একটি ভেজা গাছ
একটি নয় বছরের বালক তার ক্লাসের চেয়ারে বসেছিল। হঠাৎ সে তার পায়ের কাছে কিছু ভেজা জিনিস অনুভব করলো ও ভয় পেল যে বোধ হয় সে কোনোভাবে প্যান্টে প্রস্রাব করে ফেলেছে ও তাকে দেখে সকলে হেসে ফেলবে। সে খুব ভয় পেল।
তখনই সে তার শিক্ষককে দেখতে পায় হেটে আসতে ও সঙ্গে সঙ্গে সে তাঁর পাশে আড়াল করে হাটতে শুরু করে। হাঁটার সময় সে তার হাতে একটি ছোট মাছের বাটি ধরেছিলো। সে ভাবে, তার শিক্ষক হয়তো তার প্যান্ট দেখে ফেলেছে। তাই সঙ্গে সঙ্গে সে তার বাটিটি হাত থেকে ফেলে দেয় যাতে সবাই ভাবে সে তার শিক্ষকের ধাক্কা লেগে সেটি পড়ে যায়।
ক্লাসের বাকি সকলে সেটি দেখে তাই ভাবে যে তার শিক্ষকের ধাক্কা লেগেই তার প্যান্টে জল পরে গেছে।
পরে তার শিক্ষক তাকে বলে, “তুমি এটি ইচ্ছা করে করেছো তাই না? কিন্তু এখন তো আমার প্যান্টটি ভিজে গেল, আমার কি হবে?”
নৈতিক শিক্ষা: সকলের ভাল ও খারাপ দিন আসে। যে তোমাকে খারাপ সময় সাহায্য করে,সেই প্রকৃত বন্ধু।
গল্পের নৈতিক শিক্ষা আসলে আর কিছুই না, শুধুমাত্র এমন কিছু শিক্ষা বা জ্ঞান যা একটি গল্প থেকে বাচ্চারা জানতে পারে। প্রত্যেকটি গল্পেরই একটি করে নৈতিক শিক্ষা থাকে। তাই, শিশুকে সর্বদাই তাদের নিজের ওর পরিবার বা বন্ধুদের জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে নতুন নতুন জিনিস শিখতে দেওয়া খুবই জরুরি। এর ফলে ভবিষ্যতে তারাও নিজেদের জীবনের সেই ঘটনাগুলি ও তার থেকে অর্জন করা নৈতিক শিখাগুলি বিশ্বের সমস্ত মানুষের সাথে ভাগ করে নিতে পারবে।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.