৫ মাস বয়সী শিশুর ক্রিয়াকলাপ, বিকাশ এবং পরিচর্যা পদ্ধতি | Five Month Baby Development In Bengali
কোনও সদ্যোজাত শিশু বাড়িতে আসার পরের মুহূর্ত থেকেই যেন একেবারে সেই বাড়ির পরিবেশ বদলে যায়। এতদিনের শান্ত পরিবেশে হঠাৎ করে শুরু হয়ে যায় নিত্যদিনের হাসি-কান্নার গুঞ্জন। মন ভালো করে দেওয়া সেই পরিবেশেই ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে শিশুটি। তবে জন্ম হওয়ার পর এই পরিবেশে এসে মানিয়ে নিতে তার বেশ কিছুদিন সময় লাগে। কখনও কখনও আবার মাসখানেকেরও বেশি সময় লাগে তার। আর ওই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে গেলে ধীরে ধীরে একটু করে বিকশিত হতে থাকে তার সত্ত্বা। কখনও মানসিক বিকাশ, কখনও শারীরিক আবার কখনও সামাজিক বিকাশ। শারীরিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গেই সে শিখে যায় হাত-পা ছোড়া। এরপরই সে মায়ের পাশাপাশি চিনতে শেখে বাড়ির অন্যান্য সদস্যদেরও। তাদের সকলের একেকজনকে দেখে সে একেকরকম প্রতিক্রিয়া দেয়। এই সময় সকলেই চায় ওই শিশুর সঙ্গে খেলতে কিংবা কথা বলতে। আর সকলেই যে এই বিষয়টি খুব পছন্দ করে তা বলাই বাহুল্য। মমজংশনের এই প্রতিবেদনে আজ আমরা শিশুর প্রথম মাসের খুঁটিনাটির বিষয়ে আলোচনা করব। পাশাপাশি আপনাদের জানাব এই সময় তাদের শারীরিক বিকাশ ঠিক কোন প্রকারের হয়। শুধু তাই নয়, আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব শিশুদের সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য।
পাঁচ মাসের শিশুর বিকাশের দৃষ্টান্ত কী কী হতে পারে?
জন্মের পর থেকেই শিশুর শরীরে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। একদম শুরুর দিকে দেখা যায় যে শিশু চোখ পর্যন্ত খুলতে পারে না। এই অবস্থাকে চলতি ভাষায় বলা হয় শিশুর চোখ না ফোটা। আবার কয়েকদিন পর থেকেই শিশুর মস্তিষ্ক ও শরীরের পাশাপাশি তার সামাজিক বিকাশও ঘটতে থাকে। এই তিন প্রকারের বিকাশের বিষয় নিয়েই আমরা আপনাদের সঙ্গে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
তাহলে চলুন দেখে নিই, শিশুদের জ্ঞানীয় বিকাশের দৃষ্টান্তগুলি কী কী?
খিদে বোধঃ জন্মের একদম পরপর শিশুদের মধ্যে খিদেবোধ খুব একটা থাকে না। সেইজন্য মা যখনই তাকে দুধ খাওয়ায়, সে খেয়ে নেয়। কিন্তু শিশুর বয়স একমাস হওয়া মাত্রই সে বুঝতে পারে কখন তার খিদে পেয়েছে। অর্থাৎ এই সময় থেকে তার মধ্যে খিদে বোধ জাগতে শুরু করে। তাই মায়েদের উচিৎ এই বিষয়ে বিশেষ নজর দেওয়া। ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, শিশুরা একটি নির্দিষ্ট সময়ই খাওয়ার জন্য নিশ্চিত করে নিয়েছে। আর ঠিক সেই সময়েই সে কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাই সেই কান্নার অর্থই হল তার খিদে পেয়েছে।
স্বাদ বুঝতে শেখেঃ একমাস বয়সী শিশুর মানে সে ভীষণই ছোট। আর এই বয়সী শিশুরা মায়ের দুধ ছাড়া আর কিছুই খায় না। তবু এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই সে স্বাদ বুঝতে পারে এবং কিছু কিছু স্বাদ আলাদা করার ক্ষমতাও পায়। তাই মা যদি এই সময় নিজের নিয়মের বাইরে একটু আলাদা কিছু খেয়েও ফেলে, সেটাও সেই শিশু সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পেরে যায়। এমনকি শিশু এই সময় মাতৃদুগ্ধের গন্ধ অবধি আলাদা করে বুঝতে পারে (1)।
বস্তু বা ব্যক্তিকে চিনতে পারেঃ একমাস বয়সী একটি শিশুর মস্তিষ্কের অনেকটাই বিকাশ ঘটে। এর ফলে এই সময় থেকে সে খুব প্রিয় বা কাছের কিছু মানুষ এবং নিজের পছন্দের জিনিসপত্র খুব ভালো করে চিনতে পারে। বিশেষ করে নিজের মাকে তো ভীষণ ভালো ভাবে চিনতে পারে। এছাড়া কোনও একটি জিনিস নিয়ে যদি আপনি অনেকক্ষণ অবধি সেই জিনিসটি তার চোখের সামনে ধরে রাখেন, তাহলেও সে সেই জিনিসটি চিনে ফেলে। তবে অনেক শিশুর মধ্যে নির্দিষ্ট এই বোধটি তৈরী হতে অনেক সময় ৬ থেকে ১০ মাস অবধি সময় লেগে যায়। তাই যদি কোনও শিশু ১ মাস বয়স থেকেই জিনিস চিনে মনে রাখতে কিংবা চিনতেই না পারে, তাহলে নিয়ে চিন্তিত বা বিচলিত হওয়ার কিছু নেই।
জিনিসের প্রকৃতি এবং গন্ধের বোধঃ এই সময় থেকেই অধিকাংশ শিশু শক্ত, কঠিন এবং ধারালো জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করতে শিখে যায়। এই বিষয়ে এই সময় থেকেই তার মধ্যে একটা আলাদা বোধ তৈরী হতে শুরু করে। এছাড়া ভালো ও খারাপ গন্ধের মধ্যে পার্থক্য করতেও শিখে যায় এক মাস বয়সী শিশুদের অনেকেই।
শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ–প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনঃ এই সময় থেকে শিশু নিজের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঞ্চালনে সক্ষম হয়ে ওঠে। কারোর সাহায্য ছাড়াই সে নিজের হাত-পা নাড়াতে পারে (2)।
নিজেকে স্পর্শ করতে পারেঃ এক মাস বয়স হওয়ার পর থেকেই শিশু নিজের হাত দিয়ে অন্য হাত, মুখ, চোখ, কান এবং নিজের গা স্পর্শ করতে পারে।
পেছন দিকে ঘাড় বেঁকে যাওয়াঃ শিশুর শরীরের বিভিন্ন অংশের বেশ খানিকটা এই সময়ে বিকশিত হয়। কিন্তু সেই বিকাশ এতটাও নয় যে সে নিজের মাথা বা ঘাড়ের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে। অর্থাৎ এই সময়েও সে নিজের মাথা বা ঘাড় সামলাতে পারে না। এক মাস বয়স চলাকালীন যদি একু তাকে কখনও কোলে নেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে এক ঝটকায় তার মাথা পেছন দিকে হেলে যায়। অনেক সময় এইভাবে তার ঘাড়ে চোটও লাগতে পারে। তাই এই বিষয়টির দিকে খুব ভালোভাবে খেয়াল রাখা উচিৎ। তবে এনিয়ে চিন্তা করার কোনও কারণ নেই। বরং এর থেকে বোঝা যায় যে, শিশুর বিকাশ একদম সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়েই হচ্ছে।
মাথা তোলার চেষ্টাঃ এই বয়সের শিশুকে যদি কখনও উপুড় করে শুইয়ে দেওয়া হয়, তাহলে দেখা যাবে সে নিজের মাথা তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। গলার মাংসপেশি এবং স্নায়ুতন্ত্রে বিকাশ ঘটার কারণেই শিশু নিজের ঘাড় ও মাথা তুলতে চেষ্টা করে।
হাতের মুঠোয় জিনিস ধরতে পারেঃ এই সময়ে যদি কেউ নিজের আঙুল বা কোনও জিনিস শিশুর হাতে রাখেন, তাহলে শিশু নিজের সব শক্তি দিয়ে তা নিজের মুঠোর মধ্যে ধরার চেষ্টা করে। এমনকি শিশুর আশেপাশে কোনও জিনিস পড়ে থাকলে কিংবা হাতের কাছে কিছু পেলেও সে তা নিজের মুঠোয় ধরার চেষ্টা করে। (3)
জিনিসের ওপর নজর রাখেঃ অনেক সময় হয় খেলাচ্ছলে কেউ শিশুর চোখের সামনে গিয়ে কোনও জিনিস ধরে থাকল। এরকমই কোনও জিনিসের ওপর যদি শিশুর নজর একবার চলে যায় বা সেই জিনিস্টি যদি শিশুকে আকর্ষিত করে, তাহলে ওই বস্তুটি আপনি শিশুর সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়ার পর যেখানেই রাখুন না কেন তার নজর বারবার সেখানেই চলে যাবে। এমনকি শিশুর চেয়ে ৮-১২ ইঞ্চি দূরে রাখা জিনিসও সে ভালোভাবে দেখতে পায়।
কম ঘুমের সমস্যাঃ সাধারণতঃ একটি শিশু দিনের বেলা আট থেকে নয় ঘণ্টা এবং রাতে মোটামোটি আট ঘণ্টা অবধি ঘুমোতে পারে। তবে কখনওই সেই টানা একেবারে ঘুমোয় না। প্রত্যেকবারে সে মোটে এক থেকে ঘণ্টা দুয়েক অবধি ঘুমোয়। তাই বলে যেতে পারে যে, প্রথম মাসে শিশু একটি গোতা দিন অর্থাত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ ঘণ্টাই ঘুমিয়ে কাটায়। কিন্তু এক মাস বয়স হতে হতে তার সেই ঘুমের পরিমাণ আধ ঘণ্টা অবধি কম হয়ে যায়।(৫)
গতিবিধি বা চাল–চলনঃ প্রত্যেক শিশুই জন্মের সময় থেকে বিভিন্ন ধরনের চাল-চলন করে কিংবা নিজের গতিবিধি নিজেরাই তৈরি করে নেয়। কিন্তু এক মাস বয়স হতেই সেই গতিবিধি বাড়তে থাকে। (4) আর প্রত্যেক শিশুর ক্ষেত্রেই এই গতিবিধি সম্পূর্ণ আলাদা হয়। তাই ডাক্তারেরা শিশুর প্রত্যেকটি চাল-চলন বা হাবভাব ভীষণ গুরুত্ব দিতে পরীক্ষা করেন। আর যদি শিশুর সেই চাল-চলনে কোনও প্রকার খামতি থেকে থাকে, তাহলে তা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এবার আপনাদের জানাব শিশুর সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের দিকগুলির তথ্য। চলুন শুরু করা যাক।
কান্নাকাটি করে নিজের কথা বোঝাতে চাওয়াঃ এই বিষয়ে সম্পর্কে সকলেই জানেন যে এক মাস বয়সী একটি শিশু কেবলমাত্র কেঁদেই নিজের প্রয়োজন বা সমস্যার কথা বড়দের বোঝাতে পারে। যেমন কান্নাকাটির মাধ্যমে সে কখনও বোঝায় যে তার খিদে পেয়েছে, আবার কখনও সে বোঝায় যে সে কোনও সমস্যায় রয়েছে। আবার কখনও শুধুমাত্রে সকলের দৃষ্টি নিজের দিকে ঘোরানোর জন্যও শিশুরা কান্নাকাটি করে থাকে। এই বয়সী শিশুরা সবসময় চায় যে সকলেই কেবলমাত্র তার দিকে নজর রাখুক। আর কান্না দেখে যখনই শিশুর মা তাকে নিজের কোলে নিয়ে দুধ খাওয়ানো শুরু করে, সঙ্গে সঙ্গে সে চুপ করে যায়।
আওয়াজ চিনতে পারেঃ এই বয়সে এসে শিশুরা বাড়ির সদস্যদের আওয়াজ বেশি ভালো করে চিনতে পারে। বিশেষ করে নিজের মায়ের আওয়াজ সে সবচেয়ে ভালো করে বুঝতে পারে। এমনকি কেউ কথা বললে কিংবা কোনও দিক থেকে কোনও আওয়াজ এলেই সে নিজের মাথা সেইদিকে ঘুরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তাকাতে এবং নজর মেলাতে পারেঃ আপনি জেনে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে এই বয়সের শিশুরা যেকোনও জিনিসের দিকে ভালো করে অর্থাৎ এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকতে পারে। যদি বড় বা অপরিচিত কেউ শিশুর সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে শিশুটি প্রথমে তাঁর মুখের দিকে তাকায় এবং তারপর তার চোখের দিকে তাকায়।
স্পর্শ বুঝতে পারেঃ কোনও কঠোর হাতের কেউ যদি শিশুর শরীরে হাত রাখে কিংবা কেউ যদি নরম হাত দিয়েও শিশুকে ধরে, তাহলে শিশু দু’রকম স্পর্শই আলাদা করে বুঝতে পারে। শুধু তাইই নয়, বরং সেই স্পর্শ অনুযায়ীই সে হেসে কিংবা কেঁদে নিজের প্রতিক্রিয়া দেয়। যদি কেউ আসতে করে শিশুকে কোলে নেয়, কিংবা আলতো করে শিশুর শরীরে স্পর্শ করে, তাকে দোলনায় দোল খাওয়ায় তাহলে শিশু এই প্রত্যেকটি জিনিস খুব ভালো করে উপভোগ করে।
এবার আমরা নীচের অংশে আলোচনা করব যে, যখন শিশুর বয়স এক মাস হয়ে যায়, তখন তার কোন কোন টীকাকরণ হয়ে যাওয়া উচিৎ।
পাঁচ মাস বয়সী বাচ্চাকে কী কী ভ্যাকসিন বা টীকা দিতে হবে?
একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত প্রত্যেক শিশুকেই জরুরি কিছু টীকা দেওয়া হয়ে থাকে। ভারতে অর্থাৎ আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকেই শিশুদের সমস্ত টীকা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। সরকারের তরফে চালু থাকা রাষ্ট্রীয় টীকাকরণ কার্যক্রমের মাধ্যমেই মূলত এই টীকাকরণগুলি হয়ে থাকে। সরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং অঙ্গনওয়াড়িতে এই টীকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়ে থাকে। তবে নার্সিংহোম কিংবা বেসরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এই টীকাকরণের জন্য কিছু মূল্য ধার্য করা থাকে। তাই সেখানে শিশুর টীকাকরণ করাতে গেলে টাকা-পয়সার লেনদেন আবশ্যক। এবার চলুন দেখে নিই কী কী টীকা শিশুকে দেওয়া হয়ে থাকে। জন্মের পর থেকে শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত শিশুকে যে যে টীকাগুলি দেওয়া হয়ে থাকে তা নীচে আলোচনা করা হল।
বিসিজি
হেপাটাইটিস বি-১
ওপিবি (জিরো ডোজ)
ডিটি ডব্লিউ পি-১
আইপিবি-১
পাঁচ মাস বয়সী শিশুকে ঠিক কত পরিমাণ দুধ খাওয়ানো উচিৎ?
জন্মের একদম পরপর শিশুর পাচনতন্ত্র খুব বেশি শক্তিশালী থাকে না। বরং এই সময় তা অনেকটাই দুর্বল থাকে। তাই ১ মাস বয়সে একজন শিশু একবারে খুব কম পরিমাণেই দুধ খেতে পারে। তবে মনে রাখবেন, মায়ের বুকের দুধ এবং বাজারজাত ফর্মুলা দুধের মধ্যে কিন্তু অনেক পার্থক্য থাকে। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমরা আজ আপনাদের জানাব যে এক মাস বয়সী একটি শিশু কত পরিমাণে মায়ের দুধ কিংবা বাজারজাত ফর্মুলা দুধ খেতে পারে, কিংবা খাওয়ানো উচিৎ।
মাতৃদুগ্ধঃ সদ্যোজাত শিশুদের পেট যে খুব ছোট হয় তা বলাই বাহুল্য। তাই জন্মের একদম পর থেকে পরের এক সপ্তাহ পর্যন্ত সে কেবলমাত্র ৩০-৬০ মিলিলিটার দুধই খেতে পারে। তবে শিশুর বয়স এক মাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি শিশুর পাচনতন্ত্রও আগের থেকে বেশি ভালো করে কাজ করে। এই সময় শিশু প্রত্যেক দু-চার ঘণ্টা অন্তর অন্তর একবারে ৯০-১২০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ খেতে পারে। এভাবে সে গোটা দিনে প্রায় ৯০০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ ভালো ভাবে খেয়ে থাকে। (5)
বাজারজাত ফর্মুলা দুধঃ এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে জানিয়ে রাখি যে একজন সদ্যোজাত শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে ভালো দুধ কিংবা খাবার আর কিছু হতেই পারে না। তবু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বা বাধ্য হয়ে অনেক সময় শিশুকে বাজারজাত ফর্মুলা দুধ দিতেই হয়। তাই খুব সমস্যা না হলে মায়েদের উচিৎ, শিশুর বয়স অন্তত তিন সপ্তাহ না হলে তাকে ফর্মুলা দুধ না দেওয়া। আর বাজারজাত এই ফর্মুলা দুধ দিতে হলে শিশুকে ১১০ মিলিলিটারের বেশি দুধ খাওয়ানো একেবারেই উচিৎ না। এবং খেয়াল রাখবেন, এই পরিমাণ দুধ শিশুকে খাওয়ানোর মাঝে প্রত্যেকবার যেন অন্তত চার ঘণ্টার অন্তর থাকে।
আমার সন্তান কি স্বাদ কিংবা গন্ধ আলাদা করে বুঝতে পারে?
মানা হয়, এক মাস বয়সী শিশুরা স্বাদ এবং গন্ধ আলাদা করে বুঝতে পারে। মায়ের দুধের স্বাদ একটু আলাদা হলেই তারা সেটা খুব ভালো করে বুঝতে পারে। যদি মায়ের দুধে তারা সামান্য কিছু স্বাদের পার্থক্যও বুঝতে পারে, তাহলে কিছুতেই তারা সেই দুধ আর খেতে চায় না। পাশাপাশি মায়ের গায়ের গন্ধও শিশুরা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।
এবার আমরা আলোচনা করব কী করে শিশুকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রাখতে হয়।
১. ডায়াপার বা ন্যাপি বদলানো – কিছু কিছু সময় পরপরই আপনার উচিৎ শিশুর ডায়াপার চেক করা। যদি দেখেন শিশু প্রস্রাব করে ডায়াপার ভিজিয়ে দিয়েছে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে আপনি শিশুর ডায়াপার বদলে ফেলুন। আর ডায়াপার বদলানোর সময় ভালো করে শিশুকে পরিষ্কার করে মুছে দিন। নইলে জল বসে কিন্তু শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়। শিশুকে এই সময় পরিষ্কার করার জন্য আপনি বেবি ওয়াইপস কিংবা বাজারজাত যে কোনও বেবি লোশন ব্যবহার করতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে শিশুকে বেশিক্ষণ ডায়াপার পরিয়ে রাখলে তার শরীরে র্যাশ বেরোচ্ছে। যদি এই র্যাশের সমস্যা আপনার শিশুর শরীরেও দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ভালো কোনও ডায়াপার র্যাশের ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া খুব প্রয়োজন না পড়লে শিশুকে ডায়াপার কম পরানোর চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে দিনে অন্তত দু’বার তাকে ডায়াপার না পরিয়ে এমনিই রাখুন।এতে শিশুর ত্বকে প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার বসার সুযোগ পায়।
২. স্নান– শিশুকে স্নান করানোর আগে সব সময় হালকা গরম জল করে নিন। ওই জল দিয়েই শিশুকে স্নান করান। খুব ভালো হয় যদি এক মাস বয়সী শিশুকে আপনি এক দিন বাদে বাদে স্নান করাতে পারেন। তবে শিশুকে স্নান করানোর আগে সবসময় নিজের হাত খুব ভালো করে ধুয়ে নেবেন। স্নান করানোর সময় শিশুর চোখ, কান এবং নাক হালকা হাতে খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। দরজা বন্ধ করে ঘরের মধ্যে শিশুকে স্নান করাবেন এবং চেষ্টা করবেন যতটা সম্ভব শিশুকে বাথটবে স্নান না করানোর।
৩. শিশুকে সব সময় পরিষ্কার রাখুন – প্রত্যেকবার দুধ খাওয়ার সময় বেশ কিছু শিশু কিছুটা বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলে। এবং কিছু সময় পর সেই দুধ সে মুখ দিয়ে বের করে দেয়। যদি আপনার সন্তানও ঠিক এমনটাই করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে পরিষ্কার করিয়ে দিন। এর পাশাপাশি যদি আপনার মনে হয় যে ওর হাত-পায়ের নখ বড় হয়ে গিয়েছে, তাহলে খুব সাবধানতার সঙ্গে ওর হাত-পায়ের নখ কেটে দিন। নখ বড় থাকলে শিশু অনেক সময় নিজেকেই খামচে দেয় আবার নখের ভেতর জমা হয়ে বিভিন্ন নোংরা। তাই নখ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কেটে দিলে এই দুই সমস্যার হাত থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নঃ
এবার জেনে নেব সেই প্রশ্নগুলির উত্তর যা অধিকাংশ নতুন মায়ের মনে প্রায়শই ঘোরাফেরা করে।
একটি নবজাতক বা ১ মাস বয়সী শিশুর জন্য কি প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক?
না, কোনও নবজাতক কিংবা ১ মাস বয়সী শিশুর জন্য প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক নয়। এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (WHO) বলে যে, প্যাসিফায়ার এত ছোট বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। এর ফলে শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাতৃ দুগ্ধ পান করা বন্ধ করে দেয়। তাই ঠিক যে সময়ে আপনি আপনার সন্তানের মাতৃ দুগ্ধ খাওয়ার অভ্যেস ছাড়াতে চান, তখন থেকে তাকে প্যাসিফায়ার দেওয়া উচিৎ।
আমি আমার কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে কীভাবে শান্ত করব?
অনবরত কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে আপনি গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে পারেন কিংবা তাকে কোলে নিয়ে বা দোলনায় দোল খাওয়াতে পারেন। আবার কিছু কিছু শিশু অন্য ধরনের গান শুনলেও শান্ত হয়ে যায়।
বাচ্চারা কেন কাঁদে?
শিশুদের কান্নাকাটি করার একাধিক কারণ হতে পারে। সেই কারঙুলি হল যদি তাদের খিদে পায়, কিংবা যদি ডায়াপার নোংরা হয়ে যায়, বা পেটে যদি কোলিন বা গ্যাসের কারণে ব্যথা করে, ঘুম পায়, অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকার যখন অস্বস্তিতে ভোগে, শরীর সুস্থ না থাকে, দুধ খাওয়ার পরে ঢেকুর তুলতে না পারে ইত্যাদি।
যেমন একটি ছোট্ট চারাগাছকে মহীরুহে পরিণত করতে ভীষণ ভালো সার এবং জলের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনই আপনার শিশুরও বড় হয়ে ওঠার জন্য প্রইয়োজন বিশেষ দেখভাল। যদি আপনার শিশুর বয়স এক মাস হয়ে থাকে, তাহলে এই প্রতিবেদনে দেওয়া টিপসগুলি আপনাকে বিশেষভাবে সাহায্য করবে। এর মাধ্যমে আপনি কেবল ওর মনের পরিস্থিতিই না, বরং ওর মধ্যে আসা পরিবর্তনকেও আপনি ভালোভাবে বুঝতে ও অনুভব করতে পারবেন। আশা করি, এই প্রবন্ধে আলোচিত বিষয়বস্তু আপনার কাজে লাগবে। শিশুর দেখভালের জন্য প্রয়োজনীয় আরও কিছু তথ্য আপনার জানার হলে আমাদের বাকি প্রতিবেদনগুলিতে চোখ বোলাতে পারেন।
References
2. Developmental Milestonesby healthy children
3. A Chart of Infant Behaviors by brown edu
4. Developmental Milestones: Fine Motor Skills and Visual Motor Skills by CHOC organisation
5. Newborn Reflexes by Rochester edu
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.