পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি – White Hair Treatment at Home in Bengali
আধুনিক জীবনের নানা সমস্যার মধ্যে একটি অত্যন্ত সাধারণ সমস্যা হল পাকা চুলের সমস্যা। মানুষ যখন তার প্রথম পাকা চুল দেখে, সেই মুহূর্তটি তার কাছে হয়ে ওঠে বেশ দুঃখজনক ও বিরক্তিকর। বৃদ্ধ বয়সে পাকা চুল হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু আপনার বয়স যদি ২০ থেকে ৪০ এর মধ্যে হয় এবং পাকা চুল দেখা যেতে শুরু করে, তাহলে তা বেশ চিন্তার একটি বিষয়। চুলের পিগমেন্ট নির্ণয় করে চুলের আসল রং এবং এটি যখন সঠিকভাবে পুষ্টি পায় না অথবা অন্য কোনো শারীরিক উপসর্গের হাতে পড়ে, তখনই তার রং সাদা হতে শুরু করে। পাকা চুল কালো করার উপায় বের করতে গিয়ে আপনি হয়তো কি না কি করে থাকেন। তাই, আজকের এই নিবন্ধে পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি সম্পর্কে আপনাকে জানানো হবে।
In This Article
চুল পাকার কারণ – What Causes White Hair in Bengali
পাকা চুল কালো করার উপায় সম্পর্কে জানার আগে আপনার এটা জানা আগে প্রয়োজন যে ঠিক কি কি কারণে পাকা চুল হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক চুল পাকার কারণ:
১. জেনেটিক্স বা প্রজনন
আপনার পরিবারের পূর্বপুরুষদের ইতিহাস থেকে যদি জানতে পারেন যে খুব কম বয়স থেকেই তাঁদের পাকা চুল দেখা দিতে শুরু করেছিল, তাহলে আপনার ক্ষেত্রেও সেটি বিরূপ হওয়া খুব মুশকিল। সাধারণত, জেনেটিক্সের ফলে, প্রায় ২০ বছরের পর থেকেই পাকা চুল দেখা দিতে শুরু করে। (১)
২. মেলানিনের অভাব
মেলানিনের অভাবের ফলেও পাকা চুলের সমস্যা দেখা দেয়। সঠিক পুষ্টি ও প্রোটিন না পেলে মেলানিন নষ্ট হতে শুরু করে, যা পাকা চুল বাড়িয়ে তোলে।
৩. হরমোন
চুলের পিগমেন্টেশন বা রঙের জন্যে হরমোনের বিশেষ প্রভাব থাকে। শরীরে যদি হরমোনের মাত্রা অসমান হয়ে যায়, তখন পাকা চুল দেখা দেয়। (২)
৪. শারীরিক সমস্যা
শরীরের বিশেষ কিছু সমস্যা যেমন ভিটামিন বি ১২ এর অভাব বা থাইরয়েড জাতীয় কিছু থাকলেও পাকাচুলের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে। (৩)
৫. মানসিক চাপ
প্রতিদিনের জীবনের নানারকমের অনিয়ম, ব্যস্ততা বা বদভ্যেস (মদ্যপান, ধূমপান, অনিদ্রা, খাওয়ার অনিয়ম, ইত্যাদি) – এর ফলে মানুষিক চাপ দিনে দিনে বেড়ে যায়। এর থেকেও পাকা চুলের সমস্যা দেখা দেয়।
৬. রাসায়নিক পদার্থ
চুলে বিভিন্ন রকমের রাসায়নিক পদার্থ সমৃদ্ধ শ্যাম্পু, সাবান, হেয়ার কালার, ইত্যাদি ব্যবহার করতে করতে এলার্জি জাতীয় সংক্রমণ হতে পারে। এর ফলে পাকা চুল দেখা দেয়।
৭. অন্যান্য বাহ্যিক কারণ
বিভিন্ন শারীরিক কারণ ছাড়াও এমন কিছু বাহ্যিক কারণও রয়েছে যার ফলে পাকা চুল গড়ে ওঠে যেমন ধুলো, ময়লা, দূষণ, আবহাওয়া ইত্যাদি। (৪)
এছাড়া, একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত হয়েছিল যে নতুন চুল গজানোর সময় তার ফলিকল থেকে অল্প পরিমানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নিঃসরণ হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ বছর ধরে চলতে চলতে চুলের আসল কালো রং ব্লিচ হওয়ার ফলে ধীরে ধীরে তা পাকা চুলে পরিণত হয়। (৫)
পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া উপায় – Home Remedies for White Hair in Bengali
পাকা চুল কালো করার উপায় জানতে চান সকলেই ও তার জন্যে নানারকম পদ্ধতি অবলম্বন করে থাকেন। তবে বাজারে কেনা হেয়ার ডাইয়ের বদলে যদি পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করেন, তাহলে তার ফল হবে চিরস্থায়ী। পাকা চুল হওয়ার কারণ যদি একান্তই জেনেটিক্স হয়ে থাকে, তাহলে হয়তো খুব একটা ফল পাবেন না। কিন্তু এর বাইরে যদি অন্য কোনো কারণ হয়, তাহলে অবশ্যই নিচের লেখা পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি গুলি চেষ্টা করতে পারেন।
১. আমলকি
কি কি প্রয়োজন?
- শুকনো আমলকি- ৩-৪ টি
- নারকেল তেল- ১ কাপ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- একটি পাত্রে নারকেল তেল ও আমলকি গুলি নিয়ে ১০ মিনিট ধরে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- এরপর তেল ঠাণ্ডা হলে একটি বোতলে ঢেলে রেখে দিন।
- সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ দিন এই তেলটি ২ চামচ করে নিয়ে মাথার স্ক্যাল্পে ভালো করে মালিশ করুন।
- ১৫ মিনিট মালিশ করার পর সারারাত ওই ভাবে রেখে ঘুমিয়ে পড়ুন।
- পরের দিন সকালে ভালো করে শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে ?
আমলকি নষ্ট হয়ে যাওয়া চুল গোড়া থেকে সরিয়ে তার স্বাভাবিক কালো রং ও ঝলমলে ভাব ফুটিয়ে তোলে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি যা এন্টি অক্সিডেন্ট ও এন্টি এজিং-এর কাজ করে। তেল বানানো ছাড়া, আপনি শুকনো আমলকি সারারাত জলে ভিজিয়ে সেই জল দিয়ে চুল ধুতে পারেন। এছাড়া শুকনো আমলকির গুঁড়ো, লেবুর রস ও আমন্ড তেল দিয়ে প্যাক বানিয়ে তা চুলের স্ক্যাল্পে লাগিয়ে শেম্পু করলে বিশেষ উপকার পাবেন।
২. কারি পাতা
কি কি প্রয়োজন?
- কারি পাতা- ১ মুঠো
- নারকেল তেল- ৩ চামচ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- নারকেল তেলের মধ্যে কারি পাতাগুলি ফেলে ভালো করে ফুটিয়ে নিন।
- তেলটি ঠাণ্ডা করে সেটি ভালো করে ছেঁকে একটি পাত্রে বা শিশিতে ঢেলে রাখুন।
- এরপর ২ চামচ তেল হাতে নিয়ে ১৫ মিনিট ধরে স্ক্যাল্পে ও চুলে মালিশ করুন।
- সারারাত এভাবে রেখে দিন ও পরের দিন সকালে সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ভালো করে জলে ধুয়ে নিন।
- সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন এটি ব্যবহার করুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
কারি পাতা চুলের মেলানিনকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। এছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন বি যা চুলের বাড়তি যোগায় ও পিগমেন্টেশন ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
৩. হেনা
কি কি প্রয়োজন?
- হেনা পাউডার- ৫ চামচ
- কফি পাউডার- ১ চামচ
- জল- ১ কাপ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- এক কাপ জলে কফি পাউডারটি ঢেলে ভালো করে গুলে নিন।
- এরপর এটি ধীরে ধীরে হেনা পাউডারের সাথে মেশান ও দেখে নিন যেন এতে কোনো রকম দলা না থাকে।
- এই মিশ্রণটি স্ক্যাপ ও চুলে ভালো করে লাগিয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা পর্যন্ত রেখে দিন।
- এরপর উষ্ণ গরম জল ও হালকা সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- ৩ সপ্তাহে একবার এটি ব্যবহার করুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
হেনা সরাসরি পাকা চুল কালো করে না, বরং পাকা চুলের অংশগুলিকে বিশেষ ধরণের লালচে বা বাদামি রং দিয়ে ঢেকে দেয়। বাজারে নানা রকমের হেনা পাউডার পাওয়া যায়, তবে দেখে নেবেন যেন সেটি কেমিক্যালমুক্ত হয়।
৪. নারকেল তেল ও লেবুর রস
কি কি প্রয়োজন?
- লেবুর রস- ২ চামচ
- নারকেল তেল- ২ চামচ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- একটি পাত্রে নারকেল তেল নিয়ে তাতে লেবুর রসটি ঢেলে হালকা গরম করে নিন।
- এরপর, স্ক্যাল্পে এটি ভালো করে মালিশ করুন ও ৩০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন।
- একটি হালকা সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে কন্ডিশনার লাগিয়ে আবার ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২ দিন ব্যবহার করলে এর বিশেষ ফল পাওয়া যাবে।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
লেবুতে রয়েছে ভিটামিন বি ও সি, মিনারেল ও ফসফরাস বা চুলের পিগমেন্ট ও ফলিকলের জন্যে খুব প্রয়োজন।
৫. পেঁয়াজের রস
কি কি প্রয়োজন?
- পেঁয়াজ- ১টি মাঝারি আকারের
- অলিভ অয়েল- ১ চামচ
- পাতলা কাপড় বা ন্যাপকিন
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- পেঁয়াজটি ভালো করে টুকরো টুকরো করে কেটে ১ চামচ অলিভ অয়েলের সাথে মাখিয়ে রেখে দিন।
- এরপর পাতলা কাপড়ের মধ্যে মিশ্রণটি রেখে ভালো করে চিপে রসটি বের করে নিন।
- এটি চুলে লাগিয়ে আধ ঘন্টা রসটি ওই ভাবেই রেখে দিন।
- এরপর সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধেয়ে নিন।
- সপ্তাহে ২ দিন এটি ব্যবহার করুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
চুল পড়ার সমস্যা ও পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে পেঁয়াজের বিশেষ অবদান আছে। শুধু একটিই সমস্যা হলো এর ঝাঁঝালো গন্ধ সহজে দূর হয়না। তাই ভালো করে শ্যাম্পু করা প্রয়োজন।
৬. তিল তেল
কি কি প্রয়োজন?
- তিল তেল- ২ চামচ
- নারকেল তেল- ২ চামচ
- তোয়ালে
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- নারকেল তেল ও তিল তেল একসাথে মিশিয়ে হালকা আঁচে গরম করে নিন।
- এরপর এটি ভালো করে স্ক্যাল্পে ও চুলে ১৫ মিনিট ধরে মালিশ করুন।
- সারারাত এভাবে রাখার পর পরের দিন একটি তোয়ালে হালকা গরম জলে ভিজিয়ে চুল ঢেকে রাখুন।
- তারপর আধ ঘন্টা পর সালফেট মুক্ত হালকা শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
নারকেল তেল ও তিল তেল উভয়তেই রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাটি এসিড ও মেলানিন তৈরী করার ক্ষমতা। এর ফলে পাকা চুল নিমেষে কালো হয়ে আসে।
৭. ক্যাস্টর অয়েল ও সর্ষের তেল
কি কি প্রয়োজন?
- ক্যাস্টর অয়েল- ১ চামচ
- সর্ষের তেল- ২ চামচ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- দুরকম তেল একসাথে মিশিয়ে ২ মিনিট ভালো করে গরম করে নিন।
- এরপর ভালো করে এটি স্ক্যাল্পে ও চুলে ১৫ মিনিট ধরে মালিশ করুন।
- প্রায় আধ ঘন্টা মালিশ করার পর একটি হালকা সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২-৩ দিন এটি ব্যবহার করুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
সর্ষের তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রয়োজনীয় মিনারেল যা চুলের কালো রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে চুলের ফলিকল উন্নত হয়।
৮. মেথি
কি কি প্রয়োজন?
- মেথি- ২ চামচ
- জল- ১/৪ কাপ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- এক পাত্র জলের মধ্যে সারারাত মেথি ভিজিয়ে রাখুন।
- পরের দিন সেটি ভালো করে বেটে একটি পেস্ট তৈরী করুন।
- এরপর এটি ভালো করে স্ক্যাল্পে মাখিয়ে ৪৫ মিনিট ধরে রেখে দিন।
- একটি হালকা সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ১ থেকে ২ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
মেথিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, আয়রন, পটাসিয়াম ও লাইসিন। এগুলি শুধুমাত্র পাকা চুল কালো করতেই সাহায্য করে তাই নয়, তার সাথে স্ক্যাল্পের শুষ্কতাও সারিয়ে তোলে।
৯. ঝিঙে
কি কি প্রয়োজন?
- কেটে শুকিয়ে রাখা ঝিঙে- টুকরো করে কাটা ১/২ কাপ
- নারকেল তেল- ১ কাপ
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- ঝিঙের টুকরোগুলি নারকেল তেলের মধ্যে ডুবিয়ে একটি মুখ বন্ধ করা পাত্রে ৩ থেকে ৪ দিন রেখে দিন।
- ৪ দিন পর ২ চামচ তেল হালকা গরম করে মাথায় ভালো করে ১৫ মিনিট ধরে মালিশ করুন।
- এক ঘন্টা পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
এই মিশ্রণটি আপনার চুলের জন্যে একটি ঔষধির কাজ করে ও চুলের ফলিকলে সঠিক পুষ্টি প্রদান করে। এর ফলে চুলের গোড়া মজবুত হয় ও রং ও কালো থাকে।
১০. লিকার চা
কি কি প্রয়োজন?
- চা পাতা- ২ চামচ
- জল- ১ কাপ
কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন?
- এক কাপ জলে চা পাতা ফুটিয়ে তার নির্যাসটি বের করে নিন।
- ঠান্ডা হলে সেটি ছেঁকে নিয়ে চুলে ও স্ক্যাল্পে ভালো করে লাগান।
- এরপর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।
- সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এই পদ্ধতি অবলম্বন করুন।
কিভাবের এটি সাহায্য করে?
লিকার চায়ে রয়েছে এন্টি-অক্সিডেন্ট যা পাকা চুল হওয়া রোধ করে ও চুলে একটি সুন্দর ও ঘন রং ফুটিয়ে তোলে।
১১. জবা ফুল
কি কি প্রয়োজন?
- জবা ফুল ও জবা গাছের পাতা কুচো করে কাটা- ৩ চামচ
- আমলকি গুঁড়ো- ৩ চামচ
- জল
কিভাবে বানাবেন ও ব্যবহার করবেন?
- সমস্ত উপকরণগুলি একসাথে মিশিয়ে একটি পেস্ট তৈরী করুন।
- এরপর এই মিশ্রণটি ভালো করে স্ক্যাল্প ও চুলে মেখে নিন।
- ৪৫ মিনিট এটি চুলে লাগিয়ে রাখুন।
- এরপর সালফেট মুক্ত একটি শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
কিভাবে এটি সাহায্য করে?
জবা ফুল ও জবা গাছের পাতা চুলের ফলিকলে পুষ্টি জুগিয়ে তাকে গোড়া থেকে মজবুত করে তোলে। এর ফলে পাকা চুলের সমস্যা অনায়াসে মিটে যায়।
পাকা চুল কালো করার আরও কিছু উপায় – Other Tips For White Hair Solution in Bengali
পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করা ছাড়াও আরো অনেক নিয়ম মেনে চলা খুব জরুরি। কারণ, শুধু প্রাকৃতিক উপায় দ্বারা পাকা চুল কালো করা সম্ভব নয়। এর সাথে প্রয়োজন সঠিক জীবনশৈলী ও সদভ্যেস। আসুন দেখে নেওয়া যাক আরো কিছু পাকা চুল কালো করার উপায়:
১. ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান পাকা চুলের একটি প্রধান কারণের মধ্যে পড়ে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে যাদের ঘন ঘন ধূমপান করার অভ্যেস আছে, তাদের ক্ষেত্রে পাকা চুলের সমস্যা দ্রুত দেখা গেছে। চুলের স্বাস্থ্যের জন্যে ধূমপানের মত অভ্যেসকে আজই ত্যাগ করুন। (৬)
২. ভিটামিন বি-১২ গ্রহণ করুন
ভিটামিন বি-১২ এর অভাবে দ্রুত পাকা চুল বেড়ে ওঠে কারণ এই ভিটামিনের অভাবে চুলের পিগমেন্টেশন নষ্ট হয় ও এনিমিয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়। প্রতিদিন একটি করে ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ ক্যাপসুল গ্রহণ করার অভ্যেস তৈরী করুন।
৩. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন
পাকা চুলের সমস্যা থেকে পেতে আজ থেকেই নিজের খাদ্য তালিকার দিকে ভালো করে লক্ষ্য রাখা শুরু করুন। খাদ্য তালিকার মধ্যে রাখুন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, মাংস অর্থাৎ রেড মিট কারণ এগুলি উচ্চ পরিমানে ভিটামিন বি-১২ সমৃদ্ধ। এছাড়া দুগ্ধ জাতীয় খাদ্য যেমন দুধ, পনির, চিজ, দই, ইত্যাদি খাওয়া অতি আবশ্যক।
৪. এন্টি-অক্সিডেন্ট যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন
চুল কালো রাখার জন্যে এন্টি-অক্সিডেন্ট খুব জরুরি কারণ এটি শরীরের বিষাক্ত পদার্থগুলোকে সহজেই নাশ করতে পারে। যেসব সবজি বা ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এন্টি-অক্সিডেন্ট যেমন বেরি, আঙ্গুর, শাক, বিনস, বাদাম, ইত্যাদি সেগুলি পাকা চুল রোধ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। প্রয়োজনে দিনে দুবার গ্রিন টি পান করুন, খুব ভাল ফল পাবেন।
৫. থাইরয়েডের দিকে নজর রাখুন
থাইরয়েড গ্রন্থির সাথে শরীরের বিভিন্ন কার্যকলাপের বিশেষ যোগাযোগ রয়েছে। যাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েড কম মাত্রায় থাকে অর্থাৎ হাইপোথাইরোয়েড, তাদের ক্ষেত্রে পাকা চুলের সমস্যা বেশি তাড়াতাড়ি দেখা যায়। এক্ষেত্রে আপনার অবশ্যই প্রয়োজনীয় হরমোন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত। এছাড়া খাদ্য তালিকার দিকেও বিশেষভাবে নজর রাখবেন।
৬. তেল মাখুন
আজকাল প্রায় সকলেই চুলে তেল মাখার অভ্যেস ত্যাগ করে দিয়েছে। তার প্রধান কারণ হল মানুষ তার ব্যস্ত জীবনে সময় বের করে উঠতে পারেনা, আর দ্বিতীয়ত কারণ হল, চুলে তেল মেখে কেউ বাইরে বেরোতে চায়না। কিন্তু পাকা চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে চুলের আসল পুষ্টি তেল থেকেই যোগানো সম্ভব। তাই সপ্তাহে অন্তত ৩ বার চুলে তেল মেখে সারারাত রেখে পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে ধুয়ে নেওয়ার অভ্যেস করুন।
৭. রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন
আধুনিক জীবন যাপন ও চুলের বিভিন্ন স্টাইলের কথা ভেবে আপনি হয়তো নানা রকমের শ্যাম্পু, হেয়ার কালার, স্ট্রেইটনার বা সলিউশন ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু, এভাবে আপনি যতই সৌন্দর্য্য লাভ করুন না কেন, তা আসলে ক্ষনিকের জন্যেই আপনাকে আনন্দ দেয়। বাস্তবিকভাবে, এগুলির মধ্যে থাকে উচ্চ পরিমাণে রাসায়নিক পদার্থ যা চুলের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এর ফলে দ্রুত পাকা চুল দেখা দিতে শুরু করে। তাই রাসায়নিক পদার্থ থেকে দূরে থাকুন।
৮. সঠিক ঘুম
প্রতিদিন কম করে ৮ ঘন্টা ঘুমোনোর চেষ্টা করুন। এটি একটি অন্যতম পাকা চুল কালো করার উপায়। অনিদ্রার ফলে শরীর সারাদিন ক্লান্ত থাকে ও অপুষ্টি থেকে ভুগতে শুরু করে। এর ফলে পাকা চুলের সমস্যা বেশি করে দেখা যায়। তাই, অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা দেখলে আজই ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিন।
৯. মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকুন
চুল দ্রুত পাকা হওয়ার এক অন্যতম কারণ হল মানসিক চাপ। প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনশৈলী ও দায়িত্ব মানুষকে প্রচুর পরিমাণে মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে বাধ্য করে। কিন্তু, মনে রাখবেন, মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়ও আপনারই হাতে রয়েছে। ভালো গান শুনুন, বই পড়ুন, সামাজিক সংগঠনে মেলা মেশা করুন, পরিবারের সাথে সময় কাটান, যোগ ব্যায়াম করুন, এইসব ভালো অভ্যেস আপনার মন ভালো রাখবে, আপনার শরীরও সতেজ থাকবে।
পাকা চুল কি সত্যিই আবার কালো করা সম্ভব?
পাকা চুলের সমস্যা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে সকলেরই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে পাকা চুল কালো করা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। জেনেটিক্সের ফলে যাদের কম বয়স থেকেই পাকা চুল দেখা দেয়, তাদের ক্ষেত্রে তা সরাসরি ঘরোয়া পদ্ধতি অবলম্বন করে কালো করা খুব একটা সম্ভব নয়। কিন্তু এর বাইরে যেসব কারণে পাকা চুল হয়ে থাকে, তা চাইলেই কালো করা যায়। এর জন্যে প্রয়োজন সঠিক পরিমাণ পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা ও যথাসাধ্য চুলের যত্ন নেওয়া। ওপরে আলোচনা করা যেই সমস্ত অভ্যেস ও পাকা চুল কালো করার ঘরোয়া পদ্ধতি আপনাকে জানানো হয়েছে সেগুলি যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে মেনে চলতে পারেন, তবে পাকা চুল যে শুধু কালো করতে পারবেন তা নয়, আপনি দীর্ঘদিনের জন্যে ঘন কালো চুলের অধিকারী হবেন।
বয়স বাড়লে পাকা চুল দেখা দেওয়া খুবই স্বাভাবিক কারণ আপনার বয়সের সাথে সাথে চুলের পিগমেন্টেশনও তার সাধারণ ক্ষমতা হারাতে শুরু করে। কিন্তু, তা বলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না যে এই পাকা চুল আপনার কম বয়সের সৌন্দর্য্যের বাধা হয়ে দাঁড়াক? তাহলে দেরি কিসের? একটু ধৈর্য্য ও কয়েকটি সাধারণ ঘরোয়া উপায় প্রয়োগ করেই দেখুন না; ফল অবশ্যই পাবেন। কে না চায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত সুন্দর কালো ঘন চুলের অধিকারী হতে? তাই আজ থেকেই মেনে চলুন কয়েকটি পাকা চুল কালো করার উপায়।
কেমন লাগলো আমাদের এই পোস্টটি? আপনারও কি জানা আছে আরো কোনো ঘরোয়া ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে পাকা চুল কালো করার উপায় ? তাহলে অবশ্যই জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে।
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.