ক্যাস্টর অয়েল (রেড়ির তেল) -এর উপকারীতা, ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক – Castor Oil Benefits, Uses and Side Effects in Bengali

Written by
Last Updated on

রেড়ির তেল একটি অতি সাধারণ এবং প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন ভেষজ তেল যা দৈনন্দিন নানান কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ত্বক , চুল ও স্বাস্থ্য সম্মৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক উপকরণে আছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস( যা প্রদাহ হ্রাস করে , জীবাণু সংক্রমন কমায় ) 1 যার নানান ব্যবহারের কথা আজ আমরা জানবো।সর্বপ্রথম জেনে নেওয়া যাক রেডির তেল সম্পর্কিত কিছু বৈশিষ্ট্য মূলক তথ্য।

রেড়ির তেল বা ক্যাস্টর অয়েল কি?

হালকা হলুদ রঙের এই তৈলিক পদার্থ, মূলত রিসিনাস কমিউনিস্ট প্রজাতির উদ্ভিদের বীজ থেকে নিষ্কাশন এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়।প্রাথমিক অবস্থায় এর মধ্যে বিষাক্ত এঞ্জাইম রেসিন থাকে যা ব্যবহার করা অত্যন্ত ক্ষতিকর।তাই হিটিং প্রসেসের মাধ্যমে এর বিষাক্ত প্রভাব কে ধ্বংস করে তবেই তাকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয় । ক্রান্তীয় আবহাওয়ার সম্পূর্ণ এলাকা উল্লেখ্য আফ্রিকা এবং ভারতে এই তেল পাওয়া যায়।বহু প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত এই তেল শুধুমাত্র দৈনন্দিক কাজে নয় প্রাচীন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাতেও বহুল পরিমাণে ব্যবহৃত হতো।

অন্যান্য নাম- আরান্ডি কা তেল ( হিন্দি ), আমুদামু ( তেলেগু ), এরান্ডলা তেলা ( মারাঠী ), আমানাক্ক এনি ( তামিল ), রেড়ির তেল ( বাঙ্গলা) ।

রেড়ির তেলের (ক্যাস্টর অয়েল) প্রকার – Types of Castor Oil in Bengali

রেড়ির বীজ থেকে, কোন প্রসেসের মাধ্যমে তেল নিষ্কাশিত হয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে, ক্যাস্টর অয়েল কে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়।

  • ১.কল্ড প্রেস্ড কাসটার অয়েল
  • ২. ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল।

কল্ড প্রেস্ড কাস্টরের তেলটি বীজ থেকে প্রচুর চাপে বের হয়। এই কারণ এটি হালকা , পরিষ্কার এবং পাতলা হয় । এবং রেড়ির বিচ কে ভাজার পর তারপর সেখান থেকে তেল বার করলে তাকে ব্ল্যাক ক্যাস্টর অয়েল বলা হয়।

চলুন এবার সংক্ষিপ্তভাবে জেনে নেওয়া যাক কাস্টার তেলের উপাদানের কথা।

রেড়ির তেলের (ক্যাস্টর অয়েল) পুষ্টির মান – Castor Oil Nutritional Value in Bengali

  • ওমেগা 3 ,
  • ওমেগা সিক্স ফ্যাটি আসিড ও
  • ভিটামিন ই সমৃদ্ধ ক্যাস্টর অয়েলে রয়েছে অনেক ধরনের পুষ্টিকর উপাদান যা চুলের ফলিকল এবং ত্বককে পুষ্টি যোগায়। এর আরো বিস্তারিত তথ্য প্রতিবেদন টি পড়তে পড়তে জানতে পারব ।

রেড়ির তেলের (ক্যাস্টর অয়েল) উপকারীতা – Benefits of Castor Oil in Bengali

1. উজ্বল ত্বক:

ঝকঝকে উজ্বল ত্বক আমাদের সবারই স্বপ্ন।সুন্দর দাগহীন ত্বক আজো মানুষের চোখ আকৃষ্ট করে। এই ত্বক পাওয়ার জন্য অযথা বাজার চলতি অনেক প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার আমরা করে থাকি।যা অনেক সময়ই লাভ এর বদলে লোকসান ঘটায়। আপনারা কি জানেন এই সমস্যার সমাধান আছে ক্যাস্টার অয়েলের কাছে।

ত্বকে উপস্থিত মেলানিনের জন্য আমাদের গায়ের রং শ্যামলা বা কালো লাগে। রেড়ির তেল বা ক্যাস্টর অয়েল সরাসরি মেলানিনের এর প্রোডাকশন বা উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে।ফলে ভেতর থেকে আমাদের ত্বক উজ্বল হতে থাকে। পরিষক পদার্থ এবং উপকারী ভিটামিন সমৃদ্ধ এই তেল ত্বকের প্রয়োজনীয় খাদ্যের অভাব মেটায়, ফলে অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের ত্বকে আসে এক অবর্ণনীয় লাবণ্য।

ক : কাস্টার অয়েল ও হলুদের প্যাক:

ব্যবহার বিধি :

  • 1 চা চামচ ক্যাস্টর অয়েলের সাথে 1/2(আধ ) চা চামচ হলুদ গুঁড়ো দিয়ে একটি সুন্দর পেস্ট তৈরি করে তা মুখে লাগালে সহজেই ত্বকের পরিবর্তন চোখে দেখতে পারবেন।
    হলুদে উপস্থিত গুরুত্বপূর্ণ এনজাইম কুরকিউমিন কালো দাগ দূর করতে সাহায্য করে এবং সর্বোপরি মেলানিন উৎপাদন রোধ করে।

খ : লেবুর রস, মধু ও ক্যাস্টর অয়েল:

ব্যবহার বিধি :

  • 1 চা-চামচ কাস্টার তেলের সাথে 1/2 (আধ ) চামচ লেবুর জুস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে কুড়ি মিনিট রেখে দিয়ে তারপর সেটিকে ধুয়ে ফেলুন।লেবুর রস ত্বকের স্বাভাবিক ব্লিচিং হিসাবে কাজে লাগে যা ত্বকের দাগ দূর করতে সাহায্য করে এর সাথে বড় পোর্স এর মুখ বন্ধ করে।

গ : ক্যাস্টর অয়েল এবং আলু:

ব্যবহার বিধি :

  • দু চা-চামচ আলুর রসের সাথে দুই চামচ ক্যাস্টর তেল এবং এক চামচ ওটমিল চূর্ণ দিয়ে পেস্ট বানিয়ে সেটা মুখে লাগান।

আলুতে উপস্থিত বিশেষ ধরনের এনজাইম কালো দাগ মুছতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি’ জিংক ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা কোলাজেন উৎপন্ন করে ত্বকের কুঁচকানো ভাব কমায়।

2. ব্রণ প্রতিরোধে:

Castor Oil for Acne Resistance in Bengali
Image: Shutterstock

আজকালের সময় একটি অতি সাধারন সমস্যা হল ব্রণ। সাধারণত কম বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে এটি একটি বড় মাথাব্যথার কারণ। অহেতুক চিন্তা,কাজের চাপ, বাইরের খাবার খাওয়া এবং সঠিক লাইফস্টাইল বা জীবনশৈলীর অভাবে অনেকেই ব্রণের সমস্যার শিকার। বাজার চলতি নানার প্রসাধনী সামগ্রী ত্বকের ওপর নিয়মিত ব্যবহার করার ফলে তা ত্বকের স্বাভাবিক ময়েশ্চারাইজার টেনে নেয় ।কাস্টার অয়েল ত্বকের সেই আদ্রতা বা ময়েশ্চারাইজার ব্যালেন্স করে।

ব্যবহার বিধি :

  • ত্বকের উপর খুব সামান্য কাস্টার অয়েল লাগান ।
  • তাকে গোলাকৃতি ভাবে ম্যাসাজ করুন।
  • এটিকে সারারাত আপনার ত্বকে লাগিয়ে রাখতে পারেন এবং সকালের ভালো করে ধুয়ে নিতে পারেন।

3. সুন্দর ও গোলাপী ঠোঁট :

বয়স বাড়ার সাথে সাথে এবং পারিপার্শ্বিক দূষণের কারণে আমাদের মুখের সাথে সাথে ঠোঁট গোলাপী ভাব নিস্তেজ হয়ে পরে । উদাহরণ স্বরূপ কালো ঠোঁট , খসখসে ঠোঁট ,ঠোঁট ফাটা ইত্যাদি ।

ব্যবহার বিধি :

  • রেডির তেলের সাথে চিনি মিশিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরী করুন ।
  • মিশ্রণটি ঠোঁটের ওপর অল্প লাগিয়ে স্ক্রাব করুন ।
  • এতে করে ঠোঁটের খসখসে চামড়া উঠে যাবে এবং ঠোঁট হবে কোমল ও নরম ।
  • এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে চিনি যেন তেলের মধ্যে সম্পূর্ণ গলে না যায়।

4. চোখের তোলার কালো ভাব দূরীকরণে :

দৈনন্দিন জীবনের চিন্তা , পরিশ্রম এবং ত্বকের যত্ন না নেবার ফলে চোখের তলার কালো ভাব এখন আমাদের মধ্যে বেশিরভাগই একটি অতি সাধারণ ও বড় সমস্যা।শরীরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় চোখের তলার চামড়া তুলনামূলকভাবে নরম হয়ে থাকে। তাই এর যত্ন অতি সাবধানে নিতে হবে।

ব্যবহার বিধি :

  • রাতের বেলা শোবার সময় সামান্য ক্যাস্টর অয়েলের সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে নিন ।
  • মধ্যমার সাহায্যে চোখের তলায় হালকাভাবে মিশ্রণটি মাসাজ করুন। কিছুদিনের মধ্যেই পার্থক্য চোখে পরতে শুরু করবে।
  • এক্ষেত্রে শুধু আলুর রসের সাথেও ক্যাস্টর অয়েল লাগানো যেতে পারে।

5. পিগমেন্টেশন রোধে :

অনেক সময় মুখে আমরা ডার্ক কালার বা চামড়ার স্বাভাবিক রং এর থেকে ডার্ক রঙের কিছু দাগ দেখতে পাই যা চলতি ভাষায় পিগমেন্টেশন নামে পরিচিত।আমরা আগেই জানলাম মেলানিনের মাধ্যমে আমাদের গায়ের রং নির্ধারিত হয়। যখন স্কিনের কোশ বার্ধক্যজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে,তা মেলানিন প্রোডাকশন কে ব্যাহত করে এবং পরিণাম স্বরূপ পিগমেন্টেশন তৈরি করে।ক্যাস্টর অয়েল উপস্থিত ফ্যাটি এসিড এর সমস্ত পিগমেন্টড কোষকে ধ্বংস করে নতুন কোষ সৃষ্টি করে।

ব্যবহার বিধি :

  • সামন্য তেল নিয়ে আক্রান্ত স্থানে হালকা হাতে ব্যবহার করুন।
  • এছাড়াও পূর্ব উল্লেখিত হলুদ, কাস্টার তেলের মিশ্রণও লাগানো যেতে পারে।
  • রাতে শোবার সময় গজ কাপড়ে এই তেল নিয়ে তা মুখের ওপর লাগিয়ে শুতে পারেন। এবং পরের দিন সকালে সাধারণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন ।এটি একটি মাক্স হিসেবে কাজ করবে। এক্ষেত্রে কাপড়টিকে ভালো করে না ধুয়ে দ্বিতীয় বার ব্যবহার করবেন না ।

6. স্ট্রেচ মার্কস দূর করতে:

আমাদের একটি সাধারণ ধারণা স্ট্রেচ মার্ক শুধুমাত্র গর্ভবতী মহিলাদের হয়, কিন্তু না , ওজন বৃদ্ধি ,বয়স বারা ইত্যাদি নানান কারণ এর ফলে স্ট্রেচ মার্কস হয়ে থাকে।

ব্যবহার বিধি :

  • হালকা হাতে মার্কস এর উপর কাস্টার অয়েল ম্যাসাজ করুন ।
  • অল্পদিনের মধ্যেই মার্কস গায়েব হয়ে যাবে ।

7. আন্টি এজিং বা রিঙ্কল্স দূর করতে :

Castor Oil for Wrinkles in Bengali
Image: Shutterstock

আমাদের ত্বকের মধ্যে এমন কিছু প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে যা আমাদের ত্বককে কোনোরকম বাহ্যিক প্রসাধনীর ব্যবহার ছাড়াই সুন্দর রাখতে যথেষ্ট ।কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথে ত্বকের সেই সব উপাদানের কার্যক্ষমতা আস্তে আস্তে কমতে থাকে।ফলস্বরূপ আমাদের ত্বক নানান সমস্যার সম্মুখীন হয়। উদাহরণস্বরূপ রিংকেলস, ত্বকের মধ্যে থাকা কোলাজেন উৎপাদন কম হয়ে যাওয়ায় জন্য ত্বকে মেচেতা, কুঁচকানো ভাব ইত্যাদির আবির্ভাব ঘটে । এক্ষেত্রেও নিয়মিত রেড়ির তেল ব্যবহারের এবং সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে রিঙ্কল্স থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।

ব্যবহার বিধি :

  • রাতের বেলা শোবার সময় মুখের মেকআপ ভালো করে তুলে নিন ।
  • হাত ও মুখ ভালো করে ধোঁয়া প্রয়োজন । নতুবা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের ভয় থাকে ।
  • হাতে সামান্য তেল নিয়ে সঠিক মাসাজ প্রক্রিয়া অবলম্বন করে মুখে মাখুন ।
  • এছারাও আপনারা রোজ ব্যবহৃত মশ্চারাইজারের সাথেও এই তেল মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ।

8. অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি:

কাসটার অয়েল এর মধ্যে anti-inflammatory প্রপেরটিজ ( যা প্রদাহ হ্রাস করে ) থাকার জন্য তার ত্বকের জ্বলন উপশমে সাহায্য করে।

9. ত্বকের ভালো ময়েশ্চারাইজার:

ত্বক ভালো রাখার জন্য আমরা বাজার চলতি অনেক ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী আমাদের ত্বকের ওপর ব্যবহার করে থাকি, যা কখনো কখনো উপকারের বদলে আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে বসে. শুধু তাই নয় ত্বকে উপস্থিত স্বাভাবিক আর্দ্রতা, জলীয় পদার্থকে পর্যন্ত শুষে নেয়, ফলে আমাদের ত্বক হয়ে ওঠে আরও শুষ্ক। কাস্টার্ ওয়েল এর রিসিনোলেইক অ্যাসিড ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনে এবং ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে।

চুলের জন্য রেড়ির তেলের উপকারীতা – Hair Benefits of Castor Oil in Bengali

ঘন সুন্দর কুচকানো চুল কে না চায়? আর সেটা যদি কোনরকম পরিশ্রম ছাড়াই শুধুমাত্র ঘরোয়া উপকরণ এর মাধ্যমে পাওয়া যায় তাহলে তো আরো ভালো ।চলুন জেনে নেওয়া যাক রেড়ির তেল সম্পর্কিত চুলের যত্নের কথা।

1. চুল ওঠা কমায়:

আজকালের জীবনে চুল ওঠা একটি অতি সাধারণ সমস্যা। চুল উঠে নতুন চুল গজাবে সেটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার । কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত সংখ্যায় চুল উঠলে তা চিন্তার বিষয়।

সপ্তাহে একবার মেথির সাথে কাস্টার অয়েল মাস্ক বানিয়ে চুলে লাগালে চুল ওঠার সমস্যা কমে এবং চুলের গোড়া শক্ত করে ।

2. খুশকি রোধে :

চুলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো খুশকি। নানান ধরনের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক সমস্যা খুশকির হবার মূল কারণ।চুলের নানান ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী যেরকম শ্যাম্পু, ডাই , হেয়ার স্প্রে , হেয়ার কালার ইত্যাদি নানা ধরনের প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে চুলের খুশকি হয়ে থাকে।এছাড়াও শুষ্ক স্ক্যাল্প থেকে খুশকি জন্মাতে পারে।দৈনিক ব্যবহৃত বা আপনার চুলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন তেলের সাথে রেড়ির তেল মিশিয়ে মাথায় লাগালে খুশকি সমস্যা অনেকটাই সমাধান করা সম্ভব।

3. পাকা চুলের সমস্যা কমায়:

Castor Oil for White hair in Bengali
Image: Shutterstock

বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের চুলে অবস্থিত ক্যারোটিন এবং মেলানিনের উৎপাদন কম হয়ে যায়। যে কারণে চুল কালো থেকে আস্তে আস্তে সাদাতে পরিণত হয়।

সাদা চুলের সমস্যা থেকে পরিত্রান পেতে চুলে নিয়মিত ওমেগা-থ্রি এবং ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অস্যিড এর সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুল ব্যবহার করা প্রয়োজন যা কাস্টার অয়েল এর মধ্যে সহজেই পাওয়া যায়।

সপ্তাহে একদিন হট কাস্টার অয়েল ম্যাসাজের মাধ্যমে সাদা চুলের সমস্যা দূর করা সম্ভব।

4. স্ক্যাল্প ইনফেকশন প্রতিরোধে :

আপনি হয়তো জানেন না ছত্রাক শুধু মাত্র পরে থাকা বস্তুর ওপর না ,আপনার শরীরেও বাসা বাঁধতে পারে । নিয়মিত চুলে জল লাগানো বা চুল ধোয়ার পর ভালোভাবে না মোছা ইত্যাদি নানান কারণে আপনার স্ক্যাল্প ছত্রাক গ্রস্থ বা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। ফলস্বরূপ স্ক্যাল্পে নানান ইনফেকশন হয়ে থাকে যার ফলে মাথায় চুলকানি ,খুশকির আবির্ভাব এবং ব্রণের সমস্যার তৈরি হতে পারে।কাস্টার অয়েল এ উপস্থিত অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস এর জন্য এই সমস্ত সমস্যা থেকে পরিত্রান পাওয়া সহজ।

স্বাস্থ্যের জন্য রেড়ির তেলের উপকারীতা – Health Benefits of Castor Oil in Bengali

কনস্টিপেশন বা পেটের সমস্যা- কম্প্লেমেন্টারি থেরাপিজ ইন ক্লিনিক্যাল প্রাক্টিস টেস্টের মাধ্যমে জানা গেছে নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল প্যাক ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে কনস্টিপেশন সমস্যার সমাধান সম্ভব।

অস্টিওআর্থারাইটিস – হাটুর অস্টিওআর্থারাইটিস সমস্যায় আক্রান্ত রোগীদের কাস্টার অয়েল সাপ্লিমেন্ট নেবার জন্য বলা হয়। ২০০৯ সালের সাইটোথেরাপি রিসারচার্জদের অনুষ্টিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে 50 জন অস্টিওআর্থারাইটিস রোগীকে দিনে তিনবার ক্যাস্টর অয়েল ক্যাপসুল চার সপ্তাহ দেবার পর এর পরিণাম ইতিবাচক।

ব্যবহার বিধি :

  • একটি বড় কাপড় বা তুলো নিন ।
  • সেটিকে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে ,জয়েন্ট পেইন (joint pain ) এর ওপর রেখে ,একটি প্লাস্টিক ব্যাগ জরিয়ে দিন ।
  • এরপর সেঁক ব্যাগের মধ্যে গরম জল নিয়ে জায়গাটিতে সেঁক নিন ।

দাদ – রিং ওয়ার্ম বা দাদ আজকাল সাধারণ ত্বকের এলার্জিগুলির মধ্যে একটি , যা সব বয়সের মানুষের মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। Castor তেলের একটি উপাদান যা আন্ডারলাইনিক অ্যাসিড হিসাবে পরিচিত। এটি Ringworms বা দাদ সহ বিভিন্ন ধরনের ত্বকের এলার্জি নিরাময় করতে সাহায্য করে। দাদের চিকিত্সার জন্য রেরির তেলের ব্যবহার করার গাইড

ব্যবহার বিধি :

  • 1/2 অনুপাতের মধ্যে নারকেল তেলের মধ্যে কাস্টরের তেল মিশ্রিত করুন, যেন নারিকেল তেলের পরিমাণের তুলনায় অর্ধেক পরিমাণের কস্টের তেল হয় ।
  • একটি তুলো বা কাপড় নিন এবং প্রস্তুত দ্রবণে ডুবিয়ে দাদ আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রাখুন ।
  • রাতে শোবার আগে এটিকে ব্যবহার করা যেতে পারে ।
  • সেরা ফলাফলের জন্য, প্রতিদিন প্রক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করুন।

অন্যান্য উপকারিতা :

লিম্ফ্যাটিক নিষ্কাশন, রক্ত ​​প্রবাহ, thymus গ্রন্থি ইত্যাদির কাজ কে সঠিক ভাবে বজায় রেখে শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

শুনলে অবাক হবেন চর্বি বা ওজন কমাতেও কাস্টার অয়েল ব্যবহার করা হয়।দু থেকে তিন চামচ সেবনের উপযুক্ত কাস্টার অয়েল খেলে ওজন বৃদ্ধি কমানো যায় কারণ কাসটার অয়েল সেবনে খিদে কম পায়। মেটাবলিজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে কাস্টের তেল প্যাকগুলি লিভার ডিটিক্সিফিকেশন সমর্থন করে, রক্ত প্রবাহ বাড়ায়, লিম্ফ্যাটিক সঞ্চালন বাড়ায়, প্রদাহ হ্রাস পায় কোনরকম

বি .দ্র . এছাড়াও, আপনাকে প্রচুর পরিমাণে জল খাতে হবে , সুস্থ খাদ্য অনুসরণ করতে হবে এবং সর্বপরি মাদক দ্রব সেবনে বিরত থাকতে হবে ।

রেড়ির তেলের (ক্যাস্টর অয়েল)পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া – Side Effects of Castor Oil in Bengali

Side Effects of Castor Oil in Bengali
Image: Shutterstock
  • কাস্টর তেল অতিরিক্ত সেবনে বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • কাস্টার তেলের মধ্যে বিষাক্ত রিসিন থাকার জন্য ডায়রিয়া হতে পারে
  • সেনসিটিভ ত্বকে কাস্টার অয়েল জ্বলুনি বা লাল ভাব সৃষ্টি করতে পারে।
  • আমরা জানি রেরির তেল একটি চমৎকার রেচক ওষুধ । একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত কাস্টার ওয়েল পেশী দুর্বলতা এবং পেশীর টান ভাব সৃষ্টি করতে পারে ।
  • মাথা ঘোরা তেলের অতিরিক্ত ব্যবহার মাত্রার উপসর্গগুলির মধ্যে একটি।
  • দুই বছরের কম শিশুদের এই তেল ব্যবহারে বিরত থাকুন ।

গর্ভাবস্থায় কিভাবে করবেন রেড়ির তেলের ব্যবহার – Castor Oil for Pregnancy in Bengali

কিছু ক্ষেত্রে শ্রম আবেশন বিশেষ প্রয়োজন । বিশেষত যখন গর্ভবতী মহিলা তার 40 সপ্তাহের পূর্ণ গর্ভধারণ অতিক্রম করেছে।এক্ষেত্রে একটি প্রচলিত পন্থা হলো রেড়ির তেলের ব্যবহার। কিন্তু কোনও সম্পূর্ণ ও নিষ্পত্তিমূলক গবেষণা পাওয়া যায় না ,যা দেখায় , যে গর্ভাবস্থায় ক্যাস্টর অয়েল এর ব্যবহার সম্পূর্ণ নিরাপদ।

যাইহোক, ক্যাস্টর অয়েলের পরিচিত ও সাধারণ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল বমিভাব।তাই গর্ভবতী মহিলাদের প্রসবের সময় এই তেল ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয় ।

বাচ্ছাদের জন্য রেড়ির তেলের উপকারীতা এবং ক্ষতিকর দিক – Castor Oil Benefits and Side Effects for Babies in Bengali

উপকারিতা :

  • শুষ্ক ত্বকের খুব ভাল ঔষধ ক্যাস্টর অয়েল। বাচ্চাদের শুষ্ক ত্বকের সমস্যা সমাধানে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
  • কাস্টর ওয়েল দিয়ে শিশুদের গা ভালো করে মাসাজ করা যেতে পারে ,এর ফলে তাদের শরীরের কাঠামো আরো সুন্দর ও দৃঢ় হবে।
  • শূলবেদনার উপশমে ব্যবহৃত হয়।
  • শিশুদের ডায়াপার ব্যবহার করার ফলে সেই সমস্ত জায়গায় ফুসকুড়ির সৃষ্টি হয় যা কিনা শিশুদের কাছে খুবই কষ্টকর । এই তেল ফুসকুড়ি এবং এ জাতীয় চর্ম রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা যেতে পারে ।

সতর্কতা:

  • শিশুদের ওপর রেড়ির তেলের ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করতে হবে কারণ এই তেল ঠান্ডা হওয়ায় শিশুদের বুকে ঠান্ডা জমতে পারে।
  • শিশুদের চোখ, ঠোঁট এবং মুখে এই তেল ব্যবহার করবেন না।
  • বিষাক্ত পদার্থ থাকার দরুন এই তেল কখনো শিশুদের খাওয়াবেন না।

আশা করা যায় এই প্রতিবেদনটির মাধ্যমে ক্যাস্টর অয়েল সম্পর্কিত একটি স্বচ্ছ ধারনা আপনাদের তৈরি হয়েছে। কোন কিছু অতিরিক্ত ভালো না ,সুতরাং কাস্টার অয়েলের ব্যবহারের আগে অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিন । সাথে সাথে সঠিক খাদ্যগ্রহন , নিয়মিত ব্যায়ামাদির অভ্যাস , এবং সঠিক জীবনশৈলীর অনুসরণ করে আপনার জীবনকে করে তুলুন সুন্দর ও স্বভাবিক । ভালো থাকুন এবং আমাদের প্রতিবেদনটি ভালো লাগলে লাইক , শেয়ার ও কমেন্ট করুন। আপনাদের সুযোগ্য মতামত আমাদের খুবই প্রয়োজন । তাই কমেন্ট করে আপনার মতামত জানান ।

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown
Latest Articles