সাত মাস বয়সী শিশুর ক্রিয়াকলাপ, বিকাশ এবং পরিচর্যা পদ্ধতি | Seventh Month Baby Development In Bengali

Written by Aastha Sirohi linkedin_iconfacebook_iconinsta_icon Experience: 3 years
Last Updated on

দেখতে দেখতে শিশুর বয়স সাত মাস হয়ে গেলো। এই সময় বাচ্চা উঠে বসতে শেখে ধীরে ধীরে। আর তার আওতায় থাকে দুধ খাওয়া, ঘুমোনো, কান্নাকাটি করা, খেলাধুলো আর নিজের জামা-কাপড় বা ন্যাপি নোংরা করা। এই সময় শিশুর ওজন ও উচ্চতা দুইই বাড়তে থাকে। তবে প্রত্যেক শিশুরই শারীরিক গঠন একজনের থেকে অন্যজনের আলাদা। ফলে বিকাশের গতিও প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই সকলের ক্ষেত্রেই যে এটি একদম ছকে বাধা হবে এমনটা নয়। তাই কারও কারও ক্ষেত্রে এই ওজন বা উচ্চতা কম-বেশি হতেই পারে। এতে ভয় পাওয়ার বা চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আর এর মানে এই নয় যে সেই শিশুর শারীরিক বিকাশ সঠিকভাবে হচ্ছে না। তাহলে শিশুর চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সাত মাস বয়সী শিশুর ওজন এবং উচ্চতা কত হওয়া উচিত?

সমস্ত বাবা-মা তাদের সন্তানের ওজন এবং দৈর্ঘ্য সম্পর্কে উদ্বিগ্ন। তাদের সন্তানের সঠিকভাবে বিকাশ হচ্ছে কিনা তা তাদের মনে সর্বদা একটি প্রশ্ন থাকে। পরিসংখ্যানগুলির বিষয়ে কথা বললে, একটি সাত মাস বয়সী বাচ্চা ছেলের গড় ওজন ৭.১ কেজি থেকে ৯.৩ কেজি এবং দৈর্ঘ্য ৬৫.৩ সেমি থেকে ৭১.৩ সেমি পর্যন্ত হতে পারে। একই সময়ে, একটি বাচ্চা মেয়ের গড় দৈর্ঘ্য ৬৩.২ থেকে ৬৯.৪ সেমি এবং ওজন ৬.৫ থেকে ৮.৫ কেজি হতে পারে (1)(2)

মনে রাখবেন, সাত মাস বয়সী শিশু সম্পর্কিত উপরের পরিসংখ্যানগুলি গড় গণনার উপর ভিত্তি করে উল্লেখ করা হয়েছে । সাধারণত, এদের মধ্যে পরিবর্তনগুলি পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, ডেটা পরিবর্তনের অর্থ এই নয় যে বাচ্চার বিকাশ ভাল হচ্ছে না। আপনার যদি মনে হয় বাচ্চার ওজন এবং দৈর্ঘ্য কমবেশি হয় তবে একবার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

এখন আমরা শিশুর বিকাশের সাথে সম্পর্কিত আরও কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

এই বয়সী শিশুদের বিকাশের উদাহরণগুলি কী কী?

মানসিক বিকাশ

মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে সাত মাসের মধ্যে শিশুর মধ্যে অনেকগুলি পরিবর্তন দেখা যায়। এই পরিবর্তনগুলি ইঙ্গিত দেয় যে শিশু ধীরে ধীরে বিকাশের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। আসুন আমাদের এই পরিবর্তনগুলি জানুন।

  • কথা বলার চেষ্টা: বয়সের এই পর্যায়ে শিশুরা তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করে। অন্যকে আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন ধরণের শব্দ করে। বিশেষত দুটি অক্ষর থেকে গঠিত শব্দগুলি কথা বলতে শুরু করে (3)
  • কৌতূহলী:  সাত মাসের বাচ্চার কোনও জিনিস চেনার বা জানার আগ্রহ জাগে। এই সময়ে, বাচ্চা প্রতিটি নতুন বা পুরানো জিনিস স্পর্শ করে বা চাটবার মাধ্যমে তার গঠন, আকৃতি এবং স্বাদ ইত্যাদি জানতে চেষ্টা করে।
  • বোঝার নির্দেশাবলী: এই সময়ে বাচ্চারা অঙ্গভঙ্গি বা নির্দেশাবলী বোঝার এবং তা মান্য করা শুরু করে। বাবা-মা যদি কোনো কারণে অসন্তুষ্টিতে ‘না’  বলেন, বাচ্চা তাদের মুখের ভাবগুলি বোঝার চেষ্টা করে (3), (4)

শারীরিক বিকাশ

এবার আমরা আলোচনা করব শিশুদের শারীরিক বিকাশ কি কি ঘটে তা নিয়ে । চলুন দেখে নিই এই সময়ে শিশুদের মধ্যে কী কী পরিবর্তন আসে।

  • শিশু তার পায়ে জোর পেতে শুরু করে।
  • হাতের সমর্থন ছাড়াই বসতে শেখে। শিশুরা ছয় মাস বয়সে সমর্থন ছাড়াই বসতে পারে তবে আংশিকভাবে ওজন সহ্য করার জন্য মাটিতে হাত রাখে । সাত মাসের শেষে, হাতের ওপর ভর ছাড়াই বসতে শিখবে।
  • এই বয়েসের শিশুর চোখগুলি প্রাপ্তবয়স্কদের চোখের মতো রঙিন গ্রেডিয়েন্টগুলি বোঝার ক্ষেত্রে পারদর্শী এবং ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি প্রখর হতে থাকে (5)

সামাজিক এবং মানসিক বিকাশ

এবার আপনাদের জানাব শিশুর সামাজিক এবং মানসিক বিকাশের দিকগুলির তথ্য। চলুন শুরু করা যাক।

  • আবেগ প্রকাশ করতে নিজের গলার আওয়াজ ব্যবহার করে: গলার আওয়াজ সাত মাস বয়সী আচরণের সহজাত বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। সুতরাং, যদি শিশুটি কোনো কারণে  হতাশ হয় বা ক্লান্ত হয়ে পড়লে গলার আওয়াজ বদলে যাবে । এই সময় থেকেই বাচ্চা  বাড়ির লোকের ডাকে সাড়া দিতে শুরু করে যেন কোনও কথোপকথনের চেষ্টা করছে।
  • বাবা মায়ের আবেগের প্রতিক্রিয়া: বাবাকে হাসতে দেখলে বাচ্চা হেসে ফেলে এবং বাবা-মা আতঙ্কিত হলে কাঁদতে থাকে। সাত মাস বয়সী শিশু তার চারপাশের লোকদের মুখের অভিব্যক্তিটি সঠিকভাবে বুঝতে শুরু করে, বিশেষত অভিভাবকদের মতো প্রাথমিক যত্নশীলদের।
  • দলে খেলতে উপভোগ করা: অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে খেলতে পছন্দ করতে শুরু করে ।

এবার আমরা নীচের অংশে আলোচনা করব যে, যখন শিশুর বয়স সাত  মাস হয়ে যায়, তখন তার কোন কোন টীকাকরণ হয়ে যাওয়া উচিৎ।

সাত  মাস বয়সী বাচ্চাকে কী কী ভ্যাকসিন বা টীকা দিতে হবে?

শিশুর সাত মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে যে যে টীকাগুলি দেওয়া হয়ে থাকে তা নীচে আলোচনা করা হল।

  • বিসিজি
  • হেপাটাইটিস বি-১
  • ওপিবি (জিরো ডোজ)
  • ডিটি ডব্লিউ পি-১
  • আইপিবি-১
  • হেপাটাইটিস বি-২
  • হিব-১
  • রোটাভাইরাস-১
  • পিসিবি-১

এবার প্রতিবেদনের নীচের অংশে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব শিশুর প্রত্যেকদিনের চাহিদা নিয়ে। অর্থাৎ খাবার, ঘুম এসবের কোনটি শিশুর কত পরিমাণে প্রয়োজন সেই তথ্যই আমরা তুলে ধরব আপনাদের সামনে।

সাত মাস বয়সী শিশুকে ঠিক কত পরিমাণ দুধ খাওয়ানো উচিৎ?

এই সময় শিশুর পাচনতন্ত্র খুব বেশি শক্তিশালী থাকে না। বরং এই সময় তা অনেকটাই দুর্বল থাকে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমরা আজ আপনাদের জানাব যে সাত মাস বয়সী একটি শিশু কত পরিমাণে মায়ের দুধ কিংবা বাজারজাত ফর্মুলা দুধ খেতে পারে, কিংবা খাওয়ানো উচিৎ।

মাতৃদুগ্ধঃ  শিশুদের পেট যে খুব ছোট হয় তা বলাই বাহুল্য। তাই জন্মের একদম পর থেকে পরের এক সপ্তাহ পর্যন্ত সে কেবলমাত্র ৩০-৬০ মিলিলিটার দুধই খেতে পারে। তবে শিশুর বয়স সাত  মাস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের আকারও বাড়তে থাকে। পাশাপাশি শিশুর পাচনতন্ত্রও আগের থেকে বেশি ভালো করে কাজ করে। এই সময় শিশু প্রত্যেক দু-চার ঘণ্টা অন্তর অন্তর একবারে ৯০-১২০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ খেতে পারে। এভাবে সে গোটা দিনে প্রায় ৯০০ মিলিলিটার পর্যন্ত দুধ ভালো ভাবে খেয়ে থাকে।

বাজারজাত ফর্মুলা দুধঃ এই বিষয়ে আলোচনা করার আগে জানিয়ে রাখি যে একজন সাত মাসের শিশুর জন্য মায়ের দুধের চেয়ে ভালো দুধ কিংবা খাবার আর কিছু হতেই পারে না। তবু কিছু কিছু পরিস্থিতিতে বা বাধ্য হয়ে অনেক সময় শিশুকে বাজারজাত ফর্মুলা দুধ দিতেই হয়। আর বাজারজাত এই ফর্মুলা দুধ দিতে হলে শিশুকে ১১০ মিলিলিটারের বেশি দুধ খাওয়ানো একেবারেই উচিৎ না।

এবার আমরা আলোচনা করব শিশুর ঘুম ও ঘুম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। পড়তে থাকুন।

সাত মাস বয়সী বাচ্চাদের স্বাস্থ্য নিয়ে তার বাবা-মায়ের উদ্বেগ ও চিন্তা

. কোষ্ঠকাঠিন্যঃ যখন কোনও শিশু মলত্যাগ করতে ১০-১৫ মিনিট বা তারও বেশি সময় লাগায়, কিংবা মলত্যাগ করার সময় যদি শিশুর মুখ লাল হয়ে যায় অথবা যদি শিশু তিন দিন পর্যন্ত মলত্যাগ না করে, তাহলে বুঝতে হবে যে শিশু কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছে। এই পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

. কাশিঃ ঠাণ্ডা লেগে গিয়ে সর্দি থেকে অনেক সময় শিশুদের কাশি শুরু হয়ে যায়। এর সঙ্গে আবার যেমন অনেক ক্ষেত্রে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয় তেমনই শ্বাস নিতেও অনেক শিশুর ভীষণ সমস্যা হয়।

. ডায়ারিয়াঃ শিশু মলত্যাগ করার পর যদি দেখেন সেটি একেবারে জলের মতো পাতলা হচ্ছে, এবং তা বারবার হচ্ছে, তাহলে বুঝতে হবে শিশুর শরীরে জলের পরিমাণ কমে গেছে। অর্থাৎ ডি-হাইড্রেশন থেকে শিশুর শরীরের ডায়ারিয়া হয়ে থাকে। তাই শিশুকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। সাধারণত দুধ খাওয়ার পরেই শিশুরা সামান্য পরিমাণে সামান্য শক্ত কিংবা সামান্য পাতলা মলত্যাগ করে থাকে। মূলত গতাস্ট্রোকোলিক রিফ্লেক্সের জন্যই এমনটা হয়ে থাকে এবং এটা ভীষণই স্বাভাবিক।

. বমিঃ যে কোনও খাবার খাওয়ার দু’ঘণ্টার মধ্যেই যদি সাত মাসের শিশু বারবার বমি করে ফেলে, তাহলে এটি কিন্তু যথেষ্ট চিন্তার বিষয়। এবং এর পাশাপাশি যদি তার শরীরে জ্বর এবং ডায়ারিয়ার প্রকোপ দেখা দেয়, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ।

আমার বাচ্চা কি দেখতে পায়?

সাত মাস বয়সী শিশুরা অনেকটাই বিকশিত হয়ে যায়। এই সময়ে তারা তাদের আশেপাশের জিনিস, মানুষ এবং ঘটে চলা সমস্ত কাণ্ড-কারখানাই দেখতে পায়।

আমার সন্তান কি শুনতে পায়?

এই বয়েসের শিশুরা কানে শুনতে পায় ভালোভাবে  । এই সময় কোনও জায়গা থেকে জোরে আওয়াজ এলে, শিশুর নিজের মাথা ঘুরিয়ে সেই দিকে তাকানোর চেষ্টা করে।

 আমার সন্তান কি স্বাদ কিংবা গন্ধ আলাদা করে বুঝতে পারে?

হ্যাঁ এই বয়েসের শিশুরা স্বাদ ও গন্ধ উভয়ই আলাদা করে বুঝতে পারে।

সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নঃ

এবার জেনে নেব সেই প্রশ্নগুলির উত্তর যা অধিকাংশ নতুন মায়ের মনে প্রায়শই ঘোরাফেরা করে।

একটি সাত  মাস বয়সী শিশুর জন্য কি প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক?

না, কোনও সাত মাস বয়সী শিশুর জন্য প্যাসিফায়ার ব্যবহার করা ঠিক নয়। এই বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (WHO) বলে যে, প্যাসিফায়ার এত ছোট বয়সের শিশুদের ব্যবহারের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়। এর ফলে শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মাতৃ দুগ্ধ পান করা বন্ধ করে দেয়। তাই ঠিক যে সময়ে আপনি আপনার সন্তানের মাতৃ দুগ্ধ খাওয়ার অভ্যেস ছাড়াতে চান, তখন থেকে তাকে প্যাসিফায়ার দেওয়া উচিৎ।

আমি আমার কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে কীভাবে শান্ত করব?

অনবরত কাঁদতে থাকা বাচ্চাকে আপনি গান শুনিয়ে ঘুম পাড়াতে পারেন কিংবা তাকে কোলে নিয়ে বা দোলনায় দোল খাওয়াতে পারেন। আবার কিছু কিছু শিশু অন্য ধরনের গান শুনলেও শান্ত হয়ে যায়।

বাচ্চারা কেন কাঁদে?

শিশুদের কান্নাকাটি করার একাধিক কারণ হতে পারে। সেই কারঙুলি হল যদি তাদের খিদে পায়, কিংবা যদি ডায়াপার নোংরা হয়ে যায়, বা পেটে যদি কোলিন বা গ্যাসের কারণে ব্যথা করে, ঘুম পায়, অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকার যখন অস্বস্তিতে ভোগে, শরীর সুস্থ না থাকে, দুধ খাওয়ার পরে ঢেকুর তুলতে না পারে ইত্যাদি। 

References

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Aastha Sirohi
Aastha SirohiBeauty & Lifestyle Writer
Aastha Sirohi is a beauty and lifestyle content writer with over three years of experience in writing for different genres. She has a master’s degree in English Literature from The English And Foreign Languages University and a bachelor’s degree in education from the University of Mysore.

Read full bio of Aastha Sirohi
Latest Articles