শিশুদের মধ্যে মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিসের প্রভাব
সন্তান জন্মের পর থেকেই মায়েরা তাদের সন্তানের শারীরিক অবস্থা নিয়ে সবসময় চিন্তিত থাকে। তেমনি প্রতিটি নতুন মায়ের মতো আমিও ছিলাম। আমার প্রথম সন্তানের জন্মের পরেই পেডায়েট্রিশিয়ান এর থেকে আমি জানতে পারি মেনিনজাইটিস এর সম্পর্কে। এছাড়াও শিশুকে দেওয়া প্রয়োজনীয় টিকার চার্টটি ও নিজের কাছে যত্ন করে রাখি। আমি আমাদের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে চার্টটি দেখে প্রত্যেকটি ভ্যাকসিন এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তখন আমাদের চিকিৎসক যথেষ্ট ধৈর্য পূর্ণভাবে আমাকে এর ব্যাখ্যা দেন। সেই চার্টে একটি জায়গায় লেখা ছিল মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস এর কথা। কেবল মাত্র এইটা ছাড়া বাকি সমস্ত টিকা গুলির সম্পর্কে আমি আমার বন্ধু বান্ধব এবং আত্মীয়দের কাছে জেনেছিলাম। তবে এই মেনিনজাইটিস টিকাকরণের বিষয়টি আমি আমার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকেই সম্পূর্ণ রূপে জেনেছিলাম। (১)
In This Article
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস কি?
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস হল একটি বিরল রোগ। যা মারাত্মক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে শিশুদের দেহে লক্ষ্য করা যায়। মূলত এটির সংক্রমনের ফলে মস্তিষ্ক এবং মেরুদন্ডের বিভিন্ন কোষগুলিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। প্রায় ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন শিশু এই রোগের শিকার হয়। মূলত গলার পিছনে মেনিনগোককাল ব্যাকটেরিয়া বহন করে চলে। যা ক্যারিয়ার হিসেবে পরিচিত তবে। এটি এতটাই সাংঘাতিক যে, এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে ২৪ ঘণ্টারও কম সময় এর মধ্যে জীবনহানির মতন সাংঘাতিক ঘটনা ঘটতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ১০ জনের মধ্যে একজন বেঁচে থাকার আশা দেখতে পারে। কেননা এই ব্যাকটেরিয়া আক্রান্ত হলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১০% থাকে। এছাড়াও শরীরের দাগ, বধিরতা কিংবা মস্তিষ্কে ক্ষয়ক্ষতির মতন বিভিন্ন গুরুতর জটিল রোগের সম্ভাবনা লক্ষ্য করা যায়। (২)
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস কারণ কি?
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস এর দুটি প্রাথমিক কারণ রয়েছে। একটি ভাইরাস এবং অপর একটি ব্যাকটেরিয়া। মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এবং এটি মূলত শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সি শিশু এবং ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে এই ধরনের মেনিনজাইটিসের সম্ভাবনা থাকে। (৩)
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিসের লক্ষণ গুলি কি কি?
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিসের প্রধান লক্ষণ গুলির সূচনা হয় জ্বরের মধ্য দিয়ে। এই লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে :
১) জ্বর
২) চামড়ায় লালভাব
৩) ফুসকুড়ি
৪) বমি
৫) মাথাব্যথা
৬) গলা ব্যথা
৭)শরীরে হালকা দুর্বল ভাব।
যদিও মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস এর লক্ষণ গুলির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এগুলি কখনও যে কোন একটি কিংবা একাধিক একসাথে দেখা যেতে পারে। কিংবা ধাপে ধাপে লক্ষণগুলি প্রকাশ পেতে পারে। তাই বাচ্চারা যখনই জ্বরে আক্রান্ত হবে তখনই শিশুদের প্রতি নজর রাখার চেষ্টা করুন। সম্ভব হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এছাড়াও এই লক্ষণগুলির পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে অন্যান্য কয়েকটি লক্ষণ দেখা যায়। (৪)
১) জ্বরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি
২) খিটখিটে ভাব
৩) শারীরিক অসুস্থতা
৪) ঘুম থেকে উঠলে অস্বস্তি
৫) ক্ষুধা হ্রাস
৬) খাবার বা পানীয় প্রত্যাখ্যান
৭) চেহারায় ফ্যাকাসে ভাব
৮) শরীরের ওজন কমতে থাকা
৯) গায়ে ফুসকুড়ি
১০) বমি
১১) ঘাড়ে ব্যথা
১২) শরীরের গিটে গিটে ব্যথা। (৫)
মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
মূলত ভাইরাস কিংবা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমনের ফলেই মেনিনগোকোকাল মেনিনজাইটিস এর মত রোগ দেখা যায়। এটি যথাযথ ভাবে চিকিৎসা না করলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এটি মূলত লালা কিংবা মৌখিক নিঃসরণের মাধ্যমেও ছড়িয়ে যেতে পারে। এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো উল্লেখিত লক্ষণগুলি দেখা মাত্রই চিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করা এবং যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। তবে এর সর্বোত্তম ব্যবস্থা হল টিকা দেওয়া। এটির প্রতিরোধমূলক টিকা দিলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। মেনিনগোকোকাল কনজুগেট ভ্যাকসিন পাওয়া যায়, যা নয় মাস বয়সী কিংবা তার কম বয়সী শিশুদের শরীরে দেওয়া যেতে পারে। তবে খুব বেশি দেরি না করে সময়মতো শিশুকে টিকাটি দিয়ে নিন এতে শিশু সুস্থ থাকবে এবং রোগমুক্ত থাকবে। (৬)
Author: Madhurima
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.