বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ ও প্রতিকার | Pneumonia In Babies: Symptoms And Treatment In Bengali

Written by MomJunction
Last Updated on

শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বরাবরের। প্রায়শই বহু শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এমনিতে এই রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি আকছার ঘটেই থাকে। কিন্তু সময় মতো এই রোগের চিকিৎসা না করালে তার ফল অনেক সময় হিতে বিপরীত হয়ে যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অর্থাৎ হু এর তরফে জানানো হয়েছে যে, ২০১৭ সালে পাঁচ বছরের চেয়ে কম বয়সী শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় মৃত্যুর হার ছিল ১৫ শতাংশ (1) । নিউমোনিয়া শিশুদের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায়, তার ফলে শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভোগে। এর জেরে অনেক সময় শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে বোঝাই যাচ্ছে শিশুদের নিউমোনিয়া হলে তার প্রভাব কতটা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে! তাই এর সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু শিশুদের কীভাবে নিউমোনিয়া হয়? কিংবা নিউমোনিয়া রুখতে কোনও ভ্যাক্সিন কি আদৌ আছে? সেসব নিয়ে আমাদের এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করব। এই লেখনীর মাধ্যমে প্রথমেই আমরা জানবো নিউমোনিয়া কী? এরপর আমরা আলোচনা করব নিউমোনিয়ার লক্ষণ, কারণ, প্রতিকার ও অন্যান্য আরও সমস্ত বিষয় নিয়ে।

তাহলে চলুন, শুরুতেই জেনে নিই নিউমোনিয়া কী?

নিউমোনিয়া কী?

নিউমোনিয়া একটি অত্যন্ত পরিচিত সংক্রামক রোগ, যা কম বয়সী শিশুদের আকছার হয়েই থাকে। এই রোগে শিশুদের ফুসফুস সংক্রামিত হয়। নিউমোনিয়াকে অনেকে ফুসফুস প্রদাহ কিংবা ফুসফুসে জ্বলন বলে থাকেন। ফুসফুসের ভেতর থাকে অ্যালভেওলি নামক বেশ কিছু বায়ু থলি থাকে। এই বায়ু থলি ফুলে উঠলে ফুসফুসে তীব্র সংক্রমণ দেখা দেয়। এই সংক্রমণই নিউমোনিয়া নামে পরিচিত। নিউমোনিয়া হলে অ্যালভেওলি ফুলে ওঠে এবং তাতে জল জমে যায়। ফলে তা ফুসফুসের বায়ু আদান-প্রদানের ক্ষমতাকে অনেকটাই দুর্বল করে দেয় (2)

এই রোগে মূলত সংক্রমণ বুক এবং ফুসফুসেই হয়ে থাকে। এর জেরে কখনও একটি আবার কখনও দুটি ফুসফুসেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। নিউমোনিয়া হলে শিশুদের ফুসফুস ফুলে যায়, আবার কখনও কখনও ফুসফুসে জলও জমে যায়। সেই কারণে এই রোগ হলে শিশুদের কাশির পাশাপাশি শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যাও দেখা যায় (3)

চলুন, এবার জেনে নেওয়া যাক যে নিউমোনিয়া ঠিক কত প্রকারের হয়?

নিউমোনিয়া কী কী ধরণের হয় ?

ফুসফুসের সংক্রমণের ওপর নির্ভর করে নিউমোনিয়া সাধারণত দুই প্রকারের হয়। যথা-

  • লোবার নিউমোনিয়া

লোবর নিউমোনিয়া একটি ফুসফুসের এক বা একাধিক অংশকে সংক্রামিত করে। এই নিউমোনিয়ার উপস্থিতি ফুসফুসের সংক্রমণকে দীর্ঘমেয়াদি করে তোলে।

  • ব্রঙ্কাইল নিউমোনিয়া

এই নিউমোনিয়াকে ব্রঙ্কোনিউমোনিয়াও বলা হয়। এর কারণে দুটি ফুসফুসেই ফুসকুড়ি কিংবা গোটা বের হয়। ফুসফুসের অল্প অংশে এই সংক্রমণ ছড়ালেও তা দীর্ঘমেয়াদী হয় না।

বুক বা ফুসফুসের সংক্রমণ কিংবা নিউমোনিয়া শুরুর দিকে শিশুদের কেবল জ্বর বা কাশির উপসর্গ দেখা দেয়। কিংবা তাদের যে শরীর ভালো নেই, তেমনও ইঙ্গিত তাদের তরফ থেকে পাওয়া যায়। তবে তারপরেও যদি তাদের চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখা হয়, তাহলে শিশুদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। তাই শিশুদের সামান্য শ্বাসকষ্ট দেখা দিলেও তা একেবারেই অবহেলা করা উচিত নয় ।

বাচ্চাদের নিউমোনিয়া হওয়ার কারণ

শিশুদের নিউমোনিয়া হওয়ার পেছনে মূলত তিনটি কারণ থাকে। যথা- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ফাংগাস। প্রতিটি বিভাগের মধ্যে থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার অন্যতম সম্ভাব্য কারণগুলি নীচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল (4)

১. ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত নিউমোনিয়া

  • স্ট্রেপটোকোক্কাস নিউমোনিয়া
  •  মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া
  • গ্রুপ-এ এবং গ্রুপ-বি স্ট্রেপটোকোক্কাস
  •  স্টেফাইলোকক্কাস অরিয়াস

২. ভাইরাস ঘটিত নিউমোনিয়া

  • রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াম ভাইরাস
  •  ইনফ্লুয়েঞ্জা
  •  রাইনোভাইরাস
  •  প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জা
  •  এডিনোভাইরাস

জানিয়ে রাখি, বাচ্চারা সবেচেয়ে বেশি যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় তা হল ভাইরাল নিউমোনিয়া। তবে ফাংগাস ঘটিত নিউমোনিয়া আবার বিশেষ করে সেই শিশুদেরই হয়, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ কম।

শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিগুলি কী কী?

এমন বেশ কিছু বিষয় রয়েছে যার ফলে শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় (5)। আমরা নীচে সেসব সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করলাম।

  • দু’বছরের কম বয়সী শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভাবে তৈরি হয় না। তাই সমস্ত ধরনের জীবাণুদের সঙ্গে জুঝে নেওয়ার ক্ষমতাও এদের থাকে না। এই বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।
  • ধোঁয়া এবং দূষণের সংস্পর্শে থাকা শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াইয় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। ধোয়া বা দূষণের কারণে শিশুদের ফুসফুস সংক্রামিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এই ধোয়ার কারণে সবচেয়ে বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  • ক্যান্সার কিংবা এইচআইভি এডসের চিকিৎসার কারণে জন্মের পর থেকেই কিছু কিছু শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভীষণ কম হয়। এই ধরণের শিশুরা খুব সহজে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  • কিছু কিছু শিশুর হাঁপানি এবং সিস্টিক ফাইব্রোসিসের মতো তীব্র এবং দীর্ঘমেয়াদী অসুখ থাকে। এর ফলে ছোট থেকে তাদের ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করে এবং তা সংক্রমণের দিকে এগোতে থাকে।
  • যেসব শিশুরা জন্মের পর থেকেই ফুসফুসের সমস্যায় ভোগে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই সাধারণের তুলনায় দুর্বল হয়। ফলে শিশুকে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত করার জীবাণুরাও সহজেই তাদের শরীরে বাসা বাঁধে।
  • ঢোক গিলতে, ওয়াক তুলতে কিংবা কাশির সময় যেসব শিশুর বেশ সমস্যা হয় এবং যারা ইতিমধ্যেই একবার হামে আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আবার বেশি ভিড়-ভাট্টা যুক্ত অঞ্চল কিংবা যেখানে অনেক লোক একসঙ্গে থাকছে, এমন পরিবেশে থাকলেও শিশুরা অনেক সময় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  •  কিছু কিছু শিশু জন্মের সময়ই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। শিশুর জন্ম অর্থাৎ ডেলিভারির সময় গ্রুপ-বি স্ট্রেপটোকোক্কাসের ছোঁয়া লাগলেও অনেক সময় শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।
  • যেসব শিশুর ফুসফুসে প্রথম থেকেই সংক্রমণ থাকে, সেইসব শিশুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়।

শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ

সব শিশুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ এক হয় না। একেকটি শিশুর ক্ষেত্রে এই রোগের লক্ষণ একেক ধরনের হয়। তবে ঠিক কী কারণে শিশুর নিউমোনিয়া হয়েছে, তার ওপরও এই রোগের লক্ষণ নির্ভর করে। শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে শুরুতেই যেসব লক্ষণ দেখা দেয়, তা নীচে আলোচনা করা হল (6)

  • কাশির সঙ্গে সঙ্গে কফ ওঠা
  • কাশির সময় বুকে ব্যথা
  • বমি কিংবা ডায়ারিয়ার প্রকোপ
  • খিদে কমে যাওয়া
  • ক্লান্তি চলে আসা
  • জ্বর আসা।

নিউমোনিয়া হলে এছাড়াও আরও বেশ কিছু লক্ষণ শিশুর শরীরে দেখা যায়। সেসব দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে শিশুকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ। সেগুলি নীচে দেওয়া হল-

  •  গরমকালেও যদি শিশুর ঠাণ্ডা লাগে
  •  যদি শিশু জোরে জোরে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়
  •  শ্বাস নেওয়ার সময় যদি শিশুর মুখ থেকে সাঁইসাঁই শব্দ বা সিটি বাজানোর মতো শব্দ বের  হয়
  •  জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে ঘাম হলে বা শিশুর শরীরে কাঁপুনি দেখা দিলে
  •  যদি ভীষণ কাশির সঙ্গে সঙ্গে লালচে, গাঢ় হলুদ কিংবা সবুজ রঙয়ের কফ বের হয়। আর কফের সঙ্গে যদি রক্ত বের হয় তাহলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  •  যদি শিশুর খিদে কমে যায় কিংবা সে একেবারেই কিছু না খায়।

এইসব লক্ষণ দেখা দিলে শিশুকে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে এবং তার সঠিক চিকিৎসা করাতে হবে। নইলে এই সমস্যা আরও বেড়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে।

শিশু এবং বাচ্চাদের মধ্যে নিউমোনিয়া নির্ণয় করার পদ্ধতি

উপরে আলোচিত লক্ষণগুলির মধ্যে যদি একটিও শিশুর শরীরে দেখা যায়, তাহলেই চিকিৎসক ওই শিশুর শরীরে নিউমোনিয়া রয়েছে কিনা তার পরীক্ষা করেন। যে পদ্ধতিতে নিউমোনিয়া পরীক্ষা করা হয়, তা নীচে আলোচিত হল (6)

১. রোগের লক্ষণের মূল্যায়ণ

প্রথমেই চিকিৎসক আপনার কাছে শিশুর রোগের লক্ষণ এবং পুরোনো রোগের বিষয়ে আপনাকে জিজ্ঞেস করবেন। এছাড়াও চিকিৎসক জিজ্ঞেস করবেন যে শিশু ধোঁয়া কিংবা ধুলোযুক্ত কোনও জায়গায় থাকে কিনা।

২. শারীরিক পরীক্ষা

এই ধাপে চিকিৎসক স্টেথোস্কোপের সাহায্যে শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস চলাচল ঠিক আছে কিনা, তা পরীক্ষা করবেন। এরপর তিনি শিশুর পালস (হৃদ স্পন্দন) অক্সিমিটারের পরীক্ষাও করতে পারেন। এর জন্য শিশুর আঙুলে ক্লিপের মতো একটি যন্ত্র লাগানো হয়। এর মাধ্যমে শিশুর রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপা হয়ে থাকে। যদি রক্তে অক্সিজেনের মাপ কম হয়, তাহলে বোঝা যেতে পারে যে এটি ফুসফুস কিংবা শ্বাস সম্বন্ধীয় কোনও রোগের উপসর্গ।

৩. বুকের এক্স-রে পরীক্ষা

বুকের এক্স-রে পরীক্ষার মাধ্যমেও ডাক্তার নিউমোনিয়া নির্ণয় করতে পারেন। আর এর মাধ্যমে খুব সহজেই বোঝা যায় যে এই নিউমোনিয়া লোবার নাকি ব্রঙ্কোনিউমোনিয়া।

৪. কফ পরীক্ষা

এই পরীক্ষার ক্ষেত্রে শিশুর কফের নমুনা নিয়ে তা পরীক্ষা করার জন্য ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়।

৫. রক্ত পরীক্ষা

এই পরীক্ষার সময় শ্বেত রক্তকণিকার গণনা করা হয়। কারণ সংক্রমণ হলে শ্বেত রক্তকণিকার পরিমাণে খুব বেশি বেড়ে যায়।

৬. ইনভেসিভ টেস্ট

কখনও কখনও এই রোগ নির্ধারণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডাক্তার সিটি স্ক্যান, ব্রঙ্কোস্কপি এবং প্লুরল ফ্লুইডের পরীক্ষা করানোর পরামর্শও দিয়ে থাকেন।

শিশু এবং বাচ্চাদের নিউমোনিয়া প্রতিকারের উপায়

শিশুদের শরীরে নিউমোনিয়া ধরা পড়লে ডাক্তাররা প্রথমেই নিশ্চিত হন যে ঠিক কী কারণে শিশু এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এরপর তা নিশ্চিত হওয়ার পর সেই বিষয়গুলি মাথায় রেখেই চিকিৎসক শিশুকে ওষুধ দেন। সেইসব ওষুধ সম্পর্কে নীচে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হল (7)

  • যদি শিশু ব্যাক্টেরিয়াল নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়, তাহলে ডাক্তার শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দিতে পারেন। তবে এই ওষুধের পরিমাণ কতটা হবে কিংবা কতদিনের জন্য এই ওষুধ শিশুকে দিতে হবে তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে যে নিউমোনিয়া শিশুর শরীরে কতটা ছড়িয়েছে। আবার এই রোগের প্রকোপ যদি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে গুরুতর হয়, তাহলে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে।
  • অ্যান্টি ফাংগাল এবং অ্যান্টি প্যারাসিটিক ওষুধও দেওয়া হয়ে থাকে।  কোনও ফাংগাস কিংবা প্যারাসাইটের কারণে যদি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় তাহলে ডাক্তার তাকে অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিপ্যারাসিটিক ওষুধ দিতে পারেন।
  • সাপোর্টিভ ট্রিটমেন্ট যেমন নিউমোনিয়ার সময় শিশুর শরীরে ব্যথা হলে কিংবা জ্বর এলে ডাক্তার তাকে প্যারাসিটামলের ডোজ দিতে পারেন। এছাড়া কাশির হাত থেকে আরাম পেতে অনেক সময় চিকিৎসক সিরাপও দিয়ে থাকেন।
  • এছাড়াও যতক্ষণ বেশি সময় সম্ভব শিশুকে ঘুম পারিয়ে রাখতে হবে। তাকে আরাম করতে দিতে হবে। অসুস্থ হলে শিশু যত বেশি আরাম করবে, তত তাড়াতাড়ি সে সুস্থ হয়ে উঠবে।

আবার যদি শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়, তাহলে সেখানে তার চিকিৎসা পদ্ধতি হবে নিম্নলিখিত-

  • যদি শিশু ডিহাইড্রেশনে ভোগে, তাহলে তাকে যথা সম্ভব তরল পদার্থ বা লিকুইড খাবার খাওয়াতে হবে।
  • ড্রিপ করে করে শিশুর শরীরে তার অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের ডোজ পৌঁছে দেওয়া হয় ।
  • শিশুর ফুসফুস থেকে কফ বের করার জন্য তার ফিজিয়োথেরাপিও করা হতে পারে।
  • শিশুকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্য তাকে অক্সিজেন থেরাপিও দেওয়া হতে পারে।

শিশুদের নিউমোনিয়া প্রতিকারের জন্য ঘরোয়া প্রতিকার

শিশুদের নিউমোনিয়া হলে বেশ কিছু ঘরোয়া উপাদানের মাধ্যমে তার প্রতিকার করা যেতে পারে। সেইসব উপাদানগুলির বিষয়ে আমরা নীচে আলোচনা করলাম।

১. হলুদ

শিশুর নিউমোনিয়া হলে হলুদ ব্যবহার করলে বহু উপকার পাওয়া যায়। হলুদের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ থাকে (8) এবং এটি বেশ কিছু রোগকে দূর করতে যথেষ্ট সাহায্য করে। নিউমোনিয়া হলে খানিক উষ্ণ জলে হলুদ মিশিয়ে তা শিশুর বুকে মালিশ করলে শিশু আরাম বোধ করে।

২. রসুন বাটা

শিশুদের নিউমোনিয়ার ঘরোয়া টোটকা হিসেবে রসুনের ভূমিকাও অনস্বীকার্য (9)। এরজন্য কয়েকটি রসুনের কোয়া নিয়ে তাকে পিষে একটি পেস্ট বানাতে হবে এবং রাতে ঘুম পাড়ানোর আগে তা শিশুর বুকে মালিশ করতে হবে। এর ফলে শিশুর শরীর গরম হবে এবং তার বুকের ভেতর জমে থাকা কফ বেরিয়ে আসবে।

৩. লবঙ্গ

 যদি আপনার শিশু ভরপেট এবং সুষম খাবার খায়, তাহলে নিউমোনিয়া হলে তার জন্য লবঙ্গ ভীষণ উপকারী হবে (10) । এর জন্য এক গ্লাসজলে ৫-৬টি লবঙ্গ, গোলমরিচ এবং এক গ্রাম খাবার সোডা দিয়ে ফুটিয়ে নিতে হবে। দিনে দু’বার করে এই মিশ্রণটি আপনি আপনার শিশুকে দিন। এছাড়া লবঙ্গ গরম করে তেলে মিশিয়ে সেই তেল শিশুর বুকে মালিশ করলেও খুব উপকার পাওয়া যায়।

৪. তুলসী

তুলসী গাছের পাতায় প্রচুর প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি -অক্সিডেন্ট থাকে (11)। যদি আপনার শিশু সুষম খাবার খায়, তাহলে নিউমোনিয়া হলে তাকে এই ঘরোয়া টোটকাটি দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে তুলসী গাছের কিছু পাতা নিয়ে পিষে তা থেকে রস বের করে নিন। এরপর তুলসীর রস একটু একটু করে শিশুকে সারাদিনে দু’বার খাওয়ান। এতে আপনার শিশু আরাম পাবে।

 বি.দ্র.: তবে মনে রাখবেন প্রত্যেক শিশুর নিউমোনিয়ার ধরন ও শারীরিক পরিস্থিতি আলাদা আলাদা হয়। তাই যে কোনও ঘরোয়া টোটকা শিশুকে দেওয়ার আগে অবশ্যই একবার আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।

শিশুর ক্ষেত্রে নিউমোনিয়া রোধের উপায়

শিশুর শরীরে যাতে নিউমোনিয়ার জীবাণু বাসা না বাঁধে তার জন্য বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে। কিছু কিছু সাবধানতা অবলম্বন করলেই আপনি আপনার শিশুকে নিউমোনিয়ার আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবেন। সেই উপায়গুলি নিয়ে নীচে উল্লেখ করা হল।

  • সম্পূর্ণ টীকাকরণ

আপনার শিশুকে নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছোটবেলাতেই তার সমস্ত টীকাকরণ করিয়ে নেওয়া। নিউমোকোকাল টীকা (পিসিবি) নিলে নিউমোনিয়া, সেপ্টিসিমিয়া (এক ধরনের সংক্রমণ), ম্যানেনজাইটিস (মস্তিষ্কের সংক্রামক রোগ, যা মূলত শিশুদেরই হয়ে থাকে) এবং রক্ত দূষিত হয়ে যাওয়ার মতো বেশ কিছু সমস্যা থেকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়া ডিপথেরিয়া, কালা জ্বর এবং এইচআইভি’র টীকাও নিউমোনিয়া হওয়ার হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করে।

  • পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন থাকুন

যাতে কোনওভাবেই ঘরে ব্যাক্টেরিয়া না ছড়ায় সেদিকে বিশেষ করে খেয়াল করুন। হাঁচি-কাশির সময় সবসময় নাক-মুখ ঢেকে রাখুন। এছাড়া মাঝেমাঝেই শিশুর হাত পরিষ্কার করে দিন।

  • শিশুকে দূষণ থেকে দূরে রাখুন

 শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত যেকোনও রোগের থেকে শিশুকে দূরে রাখতে হলে সবার আগে শিশুকে ধুলো-বালি যুক্ত জায়গা থেকে দূরে রাখুন। আশেপাশে কেউ ধূমপান করে, এমন জায়গা থেকেও শিশুকে সবসময় দূরে রাখুন। নইলে খুব ছোট থেকেই শিশুকে শ্বাসপ্রশ্বাস জনিত অসুখে ভুগতে হবে।

  • শিশুকে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগান

শিশুকে যেকোনও রোগের হাত থেকে দূরে রাখতে হলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টি জোগাতে হবে। এর ফলে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় হবে এবং সে সবরকম রোগের মোকাবিলা করতে পারবে। যদি আপনার শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হয়, তাহলে তাকে নিয়মিত স্তন্যপান করান। কারণ মাতৃদুগ্ধে যে অ্যান্টিবডি থাকে যা শিশুর প্রতিরক্ষা শক্তিকে মজবুত করতে সাহায্য করে। আর যদি আপনার শিশু সুষম খাবার খায়, তাহলে তাকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিযুক্ত খাবার সঠিক পরিমাণে খাওয়ান।

  • ভিড় যুক্ত এলাকা থেকে দূরে রাখুন

যেসব জায়গায় খুব বেশি ভিড়-ভাট্টা হয়, এমন জায়গা থেকে শিশুকে সবসময় দূরে রাখুন। কারণ এই ধরনের জায়গায় সংক্রমণ ছড়ানোর বেশি আশঙ্কা থাকে।

শিশুর শরীরে নিউমোনিয়ার লক্ষণ দেখা গেলেই তার চিকিৎসা শুরু করুন। আশা করি, এই লেখনীর মধ্যে দিয়ে  শিশুর নিউমোনিয়া সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য আপনি পেয়ে গিয়েছেন। তাই সাবধান থাকুন এবং শিশুর দিকে খেয়াল রাখুন। উপরে আলোচিত রোগের লক্ষণের মধ্যে একটিও আপনার শিশুর শরীরে দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে তার চিকিৎসা শুরু করে দিন।

বাচ্চার যত্ন নিন ও নিজেও সুস্থ থাকুন।

References

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown

Community Experiences

Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.

Latest Articles