বাচ্চাদের সর্দি কাশির সমস্যা | Cold In Babies In Bengali
In This Article
সদ্যজাত শিশুদের বা দু তিন বছরের শিশুদের সর্দি কাশি সহ ভাইরাস ঘটিত সংক্রমণ বেশি হয় কারণ তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম হয় এবং পুরোপুরি তৈরি হয় না। অনেকের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দশ বছর বয়স পর্যন্ত চলতে থাকে। বাচ্চাদের ক্রমাগত কাশির থেকে গলা ব্যথা এবং সাথে কাঁপুনি ও যন্ত্রণা হতে পারে। আপনার সন্তান যদি দীর্ঘদিন ধরে সর্দি কাশির কারণে অসুস্থ থাকে তাহলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার আরও ক্ষতি হতে পারে । এই জন্যই এর কারণ ও প্রতিরোধের উপায় জানা দরকার। এ সম্পর্কিত নানা তথ্য এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হল।
ঠান্ডা লাগলে বাচ্চাদের তা কীভাবে প্রভাবিত করে?
- ঠান্ডা লাগার ফলে হওয়া কাশি বাচ্চাদের কাশি শুরু হয় এবং রাতের দিকে এটি আরও খারাপ আকার ধারণ করে কারণ যখন শিশুটি শুয়ে থাকে, তখন শ্লেষ্মা তার নাক ও মুখের পিছন দিক দিয়ে গড়িয়ে পড়ে শ্বাসনালীতে যেতে পারে। মাঝে মাঝে এই কাশি ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে (1) ।
- যদি আপনার শিশু সবে সর্দি কাশি সেরেছে, কিন্তু সর্দি কমার পরও অনেক সপ্তাহ ধরে কাশির সমস্যা হচ্ছে, তাহলে এটি হুপিং কাশি হতে পারে। এই অবস্থাটি গুরুতর হতে পারে এবং শ্বাসের সমস্যার হতে পারে।
- যদি এক বছরের কম বয়সী শিশুর কাশি এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা লেগেই থাকে তবে তা ব্রঙ্কিওলাইটিসের লক্ষণ হতে পারে।
- ঠান্ডা লাগা বা সর্দিতে ভুগছে এমন শিশুর নাক মূলত বন্ধ থাকে। নাকজ দিয়ে জল গড়ানো বা সর্দি পড়া, চোখ দিয়ে জল পড়া এবং খাদ্যে অনিহা থাকতে পারে।
- শরীর ভালো না থাকায় বাচ্চাটি খিটখিটে হয়ে উঠতে পারে।
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে তা কিভাবে সারানো হয় ?
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগলে শীঘ্রই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এর পাশাপাশি নিচে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারগুলো মেনে চলার চেষ্টা করুন।
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ করার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার
- শিশুকে ভালভাবে বিশ্রাম নিতে দিন। বাচ্চাকে ক্লান্ত হতে দেবেন না।
- তরল জাতীয় খাবার খাওয়ান যেমন যেমন উষ্ণ দুধ, জল, স্যুপ ইত্যাদি। শরীরে যেন জলের কমতি না হয়।
- প্রয়োজনে হিউমিডিফার ব্যবহার করতে পারেন (1)।
- বাচ্চার ডায়েট যেন ঠিক থাকে, তাতে ভিটামিন সি জাতীয় ফল যেন অবশ্যই থাকে (2)।
- যদি সম্ভব হয় তাহলে আপনার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, কারণ বুকের দুধে থাকা অ্যান্টিবডি শিশুর দেহে জীবাণু, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে।
- মধু শ্লেষ্মানাশক হিসাবে বা শুষ্ক কাশি নরম করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত। আপনি এক চামচ মধু শিশুর কাশির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। নিশ্চিত করা উচিত যে এই প্রতিকারটি যেন 1 বছরের বেশি বয়সের বাচ্চাদের জন্য ব্যবহার করা হয়।
- আদা এবং তুলসী থেঁতো করে রস বের করে তাতে মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে পারেন।
- নারকেল তেলের সাথে একটি ছোট পেঁয়াজ, দুই থেকে তিনটে তুলসী পাতা এবং একটি পানের বোঁটা সহ গরম করুন। গ্যাস বন্ধ করার পর এক চিমটি কর্পূর যোগ করুন। তারপর সেই আপনার সোনার বুকে, ঘাড়ে এবং বগলে মালিশ করে দিন।
- রসুন এবং জোয়ান সর্দির চিকিৎসার জন্য ভালো। এগুলিতে আছে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং ভাইরাস বিরোধী বৈশিষ্ট্যে। তাই রসুনের দুটি বড় কোয়া এবং এক টেবিল চামচ জোয়ান নিয়ে বিনা তেলে কড়াইতে নেড়ে গরম করে নিন । ঠান্ডা হয়ে গেলে এটি একটি পরিষ্কার মসলিন কাপড়ের মধ্যে রেখে শক্ত থলি বানিয়ে নিন। থলিটিকে শিশুর বালিশ বা খাটের তলায় রেখে দিন। থলি থেকে যে সুন্দর গন্ধ বের হয় সেটা বন্ধ নাক খুলতে এবং সর্দি জমে যাওয়া থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করবে আপনার বাচ্চাকে।
- জলে কিছু হলুদ গুঁড়া মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে একটি হাতায় করে গরম করুন। তারপর বুকে, কপালে এবং পায়ের পাতার উপর পেস্টটি মাখিয়ে দিন। হলুদের তাপ শ্লেষ্মাকে শোষণ করে কষ্ট কমাতে সাহায্য করবে।
- কেশর তিলক একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিকার যেটিতে কেশরের কয়েকটি সুতা ঘষে একটি পেস্ট তৈরি করা হয় এবং রাতে শিশুর পায়ের তলায় ও কপালের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়। বিশ্বাস করা হয় যে এটি শিশুর কপালের মধ্যে জমে থাকা জল শোষণ করতে সাহায্য করে।
- ইউক্যালিপ্টাস তেলে শ্লেষ্মা( সর্দি ) দূর করার ক্ষমতা আছে (শ্লেষ্মাকে টেনে বের করে আনতে এবং দূর করতে সহায়তা করে) এবং এটি ঠান্ডা লাগা থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তুলোতে ইউক্যালিপটাস তেল এক-দু ফোঁটা যোগ করুন ও এটি শিশুর ঘরে রেখে দিন।
- টমেটো এবং রসুন স্যুপ আপনার শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করতে এবং ঠান্ডা লাগা ও কাশি হওয়া প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
- গুড় দিয়ে জোয়ানের জলের জীবাণুনাশক ক্ষমতা রয়েছে। এক কাপ জলে এক চিমটি জোয়ান এবং এক চা চামচ গুড় দিয়ে ফুটিয়ে নিন। তারপর ছেঁকে নিয়ে ঠান্ডা হতে দিন, এবং শিশুর কাশি দূর করতে প্রতিদিন একবার এক চা চামচ করে তাকে খাওয়ান।
- গাজরে বিটা ক্যারোটিন এবং কোলাইন রয়েছে যা হাঁপানির বিরুদ্ধে কার্যকর। গাজরের রস উষ্ণ জল দিয়ে পাতলা করে আপনার বাচ্চাকে খাওয়াতে পারেন।
- অর্ধেক কাপ নারকেল তেল গরম করুন এবং কিছু সজনে ডাঁটা গাছের পাতা যোগ করুন, এটি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। যখন পাতা থেকে তেল বের হয়, তখন মিশ্রণটিকে ঠান্ডা করুন। বাচ্চার কাশি, সর্দি জমে গেলে তার মাথায় এই তেল মাখাতে পারেন।
- চিকেন স্যুপ ঠান্ডা লাগার লক্ষণগুলি কমাতে পারে এবং সর্দি জমে যাওয়া ও কাশি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগা কি পুরোপুরি সেরে যেতে পারে ?
বাচ্চাদের ঠান্ডা লাগার কোনো প্রতিকার নেই। এটি নিজে থেকে সারতে পারে বা বয়সের সাথে সাথে এর প্রকোপ কমে যেতে পারে (3) এবং সব সময় ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী বাচ্চাকে ওষুধ খাওয়াবেন। ইউএস ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ) জানিয়েছে যে দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের ঠান্ডা লাগার ওষুধ বা ডিকনজেস্ট্যান্ট (4) দেওয়া উচিত নয়।
নিজের মন মতো বাচ্চাকে ওষুধ খাওবেন না। তবে এর প্রতিকারের জন্য কিছু ঘরোয়া প্রতিকার অনুসরণ করতে পারেন।
কখন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন ?
সর্দি কাশি হল একটি ভাইরাল সংক্রমণ (6) । যখন দেখছেন নিচে উল্লেখিত লক্ষণগুলি দেখা যাচ্ছে, তখন অবশ্যই পেডিয়াট্রিকের পরামর্শ নিন।
- ডায়াপার ভিজছে না অন্য সময়ের মতো
- দেহের তাপমাত্রা 100.4 ° F (38 ° C) এর বেশি
- ঠান্ডা লাগছে এবং কাঁপছে
- শ্বাস নিতে সমস্যা হয়
- শরীরে এক ধরণের জ্বালার সৃষ্টি হচ্ছে
- বমি করছে
- খাদ্যে অনিহা
- ডায়রিয়া
- ত্বকে অ্যালার্জি
- কান থেকে পুঁজ বের হচ্ছে।
নিউমোনিয়া বা ক্রাউটের মতো অসুস্থতার ঝুঁকি কমাতে তিন মাসেরও কম বয়সী বাচ্চার সর্দি লাগলে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
বাচ্চার যত্ন নিন ও সুস্থ থাকুন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী:
- বাচ্চাদের বারবার ঠাণ্ডা লাগা কি স্বাভাবিক?
উঃ বাচ্চাদের বারবার ঠাণ্ডা লাগা স্বাভাবিক হিসেবেই ধরা হয় কারণ এই সময় তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে (5) ।
- বাচ্চাদের মধ্যে ঠান্ডা লাগা কতদিন স্থায়ী হয়?
উঃ এটি রোগজীবাণুর ওপর নির্ভর করে । উদাহরণস্বরূপ, রাইনোভাইরাসজনিত ঠান্ডা লাগা দশ দিনের মধ্যে চলে যায়, অন্যদিকে করোনভাইরাস থেকে সর্দি সারতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
- বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে কি সর্দি কমবে ?
উঃ অনেক সময় সাহায্য করে থাকে বলে শোনা যায়। তবে এ সম্পর্কিত কোনো প্রমাণিত তথ্য নেই।
References
2. Support Your Health With Nutrition by Academy of Nutrition and Dietetics
3. About Common Cold; U.S. Centers for Disease Control and Prevention
4. Use Caution When Giving Cough and Cold Products to Kids by USDA
5. Children and Colds by American Academy of Pediatrics
Community Experiences
Join the conversation and become a part of our vibrant community! Share your stories, experiences, and insights to connect with like-minded individuals.