থাইরয়েড রোগের আহার – কি খাওয়া উচিত ও কি খাওয়া উচিত নয় – Thyroid Diet Chart in Bengali

Written by
Last Updated on

থাইরয়েড একটি অত্যন্ত গুরুতর রোগ যা বর্তমানে প্রায় ৬০% মানুষের হয়ে থাকে। প্রত্যেকটি মানুষের শরীরে থাইরয়েড বলে একটি গ্রন্থি আছে যা গলার ঠিক ওপরের কোণার অংশে দুদিকে দেখা যায়। এই গ্রন্থি তিন রকমের হরমোন নিঃসরণ করে- ট্রিওডোথাইরোনিন (T3), থোরোক্সিন (T4) এবং ক্যালসিটোনিন যা আপনার শরীরের নানারকমের কার্যকারিতা যেমন হজমের ক্ষমতা, মস্তিষ্কের কার্যকলাপ, মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ, হার্টের কার্যকলাপ, ঘুমের চক্র ও ভাবনা চিন্তার কার্জকপালগুলি সঠিকভাবে চালনা করে। যখনই এই থাইরয়েড গ্রন্থি কোনোরকম সমস্যার শিকার হয়, তখনই থাইরয়েড রোগ ধরা পড়ে।

থাইরয়েড কয় প্রকার – Types of Thyroid in Bengali

থাইরয়েড সাধারণত দুই প্রকারের হয়- হাইপারথাইডিসম ও হাইপোথাইরয়েডিজম। যখন থাইরয়েড গ্রন্থিগুলি থেকে অতিরিক্ত পরিমাণ হরমোন উৎপন্ন হয়, তখন তাকে বলে হাইপারথাইরোয়েডিজম;  আবার যখন অত্যন্ত কম পরিমাণে হরমোন নিঃসরণ হয় তখন তাকে বলা হয় হাইপো থাইরয়ডিজম। এই দুটির ফলেই শরীরে নানারকমের সমস্যা যেমন ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া, উচ্চতা না বাড়া, মস্তিষ্কের সঠিক কার্যকলাপ না হওয়া, অস্থিরতা, মাসিকের অনিয়ম, বিষন্নতা, ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

থাইরয়েডের চিকিৎসার জন্যে নানারকমের ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু যেকোনো ওষুধেরই আয়ু খুব কম কারণ একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে ওষুধ আর কাজ করেনা।  তাই, থাইরয়েডের আসল চিকিৎসা পদ্ধতি অনুযায়ী, ওষুধের থেকেও বেশি প্রতিদিনের আহার অর্থাৎ খাদ্য তালিকা সঠিক রাখলে ধীরে ধীরে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। যেকোনো থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের জন্যে নির্দিষ্ট ক্যালোরি অনুযায়ী তার খাদ্যতালিকা তৈরী করা হয়। তবে হাইপারথাইরোয়েডিজম এবং হাপোথাইরোয়েডিজমের খাদ্যতালিকা সম্পূর্ণ আলাদা। আপেক্ষিকভাবে বলা হয় যে একজন থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের দিনে ১০০০ ক্যালোরির বেশি খাদ্য খাওয়া উচিত নয়। আজকের এই নিবন্ধে আমরা থাইরয়েডের রোগের সঠিক আহার ও খাদ্যতালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে  আলোচনা করবো। চলুন দেখে নেওয়া যাক:

হাইপো থাইরয়েড এর আহার চার্ট – Hypothyroidism Diet Chart in Bengali

থাইরয়েড ডায়েট অর্থাৎ থাইরয়েড রোগের খাদ্যতালিকা খুব বেছে বেছে ঠিক করা প্রয়োজন। তার ওপর হাইপোথাইরয়েডের খাদ্যতালিকা হওয়া চাই বেশ পুষ্টিকর অথচ কম ক্যালোরি যুক্ত। নিচের তালিকায় হাইপোথাইরয়েডের একটি ডায়েট চার্ট দেওয়া হল:

কখন খাবেনকি কি খাওয়া উচিতক্যালোরি
ভোরবেলা (৭.০০ – ৭.৩০)১ কাপ গরম জলে একটি গোটা লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন২৫
জলখাবার (৮.১৫ – ৮.৪৫)১টি ডিম সেদ্ধ  +  ফ্লাক্স বীজ মেশানো ওটস  + ৩ টি ব্রাজিল বাদাম৩৩০
দুপুরে  (১২.০০ – ১২.৩০)ফলের স্যালাড অথবা চিংড়ি মাছ এবং লেটুসের স্যালাড৬০
বিকেলে  (৪.০০)১টি বেদনা  + ১ কাপ ডাবের জল১০৪
রাতে (৭.০০)সবজি দিয়ে তৈরী ১ কাপ ডাল৩০

হাইপো থাইরয়েডে কি খাওয়া উচিত – Food for Hyperthyroidism in Bengali

ওপরে দেওয়া খাদ্যতালিকাটির মধ্যে শুধু কয়েকটি একান্ত প্রয়োজনীয় খাদ্যের কথা বলা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু শুধুমাত্র এগুলো খেয়ে থাকতে পারা কঠিন, তাই আরো কিছু কিছু বিশেষ প্রয়োজনীয় খাদ্যের নাম উল্লেখ করা হচ্ছে যা হাইপোথাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের অবশ্যই খাওয়া উচিত:

১. আয়োডিন যুক্ত নুন: Iodised salt

একজন হাইপোথাইরয়েডে ভোগা মানুষের জন্যে আয়োডিন খুবই প্রয়োজনীয়। আয়োডিনের অভাবে হাইপোথাইরোয়েড থেকে গলগণ্ড হতে পারে (১) কারণ এই সময় শরীর নিজে থেকে আয়োডিন উৎপন্ন করতে পারেনা। তাই আপনাকে নিজে থেকে এমন খাদ্য খেতে হবে যা আয়োডিন ভরপুর। তাই রান্নায় সাধারণ নুন একেবারেই ব্যবহার না করে আয়োডিন যুক্ত নুন খাওয়ার অভ্যেস করুন।

২. মাছ: Fish

Fish2
Image: Shutterstock

মাছে রয়েছে ভরপুর ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ও সেলেনিয়াম (২)। ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড এল ডি এল কোলেস্টেরলকে কম করতে সাহায্য করে ও সেলেনিয়াম থাইরয়েড হরমোনকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, চিংড়ি, টুনা, সার্ডিন, স্যালমন, ইত্যাদি এই সমস্যা খাওয়া খুব উপকারী। তবে মনে রাখবেন, মাছ যেন অতিরিক্ত ভাজা বা রান্না করা না হয়; এতে মাছের আসল গুণ হারিয়ে যায়।

৩. টেংরীর স্যুপ: Bone broth

টেংরি অর্থাৎ খাসির মাংসের হাড় ফুটিয়ে যেই স্যুপ তৈরী হয়, সেটি যেকোনো হাইপোথাইরোয়েডিজমে আক্রান্ত মানুষের জন্যে খুব উপকারী। এই সময় প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ের জোর কম হয়ে আসে যার ফলে হাড়ের ভঙুরতটা দেখা দেয়। তাই এই সময় ক্যালসিয়াম যুক্ত খাদ্য খাওয়া খুবই জরুরি। প্রতিদিন এক বাটি টেংরীর স্যুপের মধ্যে কয়েকটি সবজি ভালো করে ফুটিয়ে সেটি খাওয়ার অভ্যেস করলে উপকার পাওয়া যায় (৩)

৪. ফল ও সবজি: Veggies and fruits

শাক সবজি এবং ফলে রয়েছে নানারকমের মিনারেল, ভিটামিন, এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার। যদিও কিছু কিছু সবজি এই সময় খাওয়া ঠিক নয়, যেমন-*-ফুলকপি, মিষ্টি আলু, পালংশাক, বাঁধাকপি, মুলো, ইত্যাদি। এগুলিকে গোইট্রোজেন বলা হয় (৪)। তবে এগুলি ভালো করে রান্না করলে গোইট্রোজেন উপাদানগুলি মরে যায়।

৫. দুগ্ধ পদার্থ যুক্ত খাদ্য: Dairy

কম ফ্যাট সম্পন্ন দুধ, দই এবং পনিরে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ আয়োডিন এবং সেলেনিয়াম যা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়া দুগ্ধজাত পদার্থে থাকা এমিনো এসিড লাইরোসিন হাইপোথাইরোয়েডিজমের নানারকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন বিষন্নতা, ক্লান্তি, ইত্যাদি দূর করতে সাহায্য করে (৫)

৬. মুরগির মাংস: Chicken

মুরগির মাংসে রয়েছে প্রয়োজনীয়  জিঙ্ক যা হাইপোথাইরয়েডের বিরুধ্যে কাজ করে ও সেটিকে  ট্রিওডোথাইরোনিন (T3) ও থোরোক্সিনে (T4) রূপান্তর করতে সাহায্য করে ()। সপ্তাহে অন্তত ৩ বার ২ টুকরো করে মাংস খাওয়ার অভ্যেস করলে ভালো।

৭. ডিম: Eggs

Eggs2
Image: Shutterstock

আয়োডিনের একটি সূত্র হল ডিম যা হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে (৭)। তবে এক্ষেত্রে ডিমের সাদা অংশটিই খাওয়া উচিৎ এবং  কুসুমটি বাদ দেওয়া উচিৎ। ডিমের কুসুম খেলে কোলেস্টরল বেড়ে যেতে পারে।

৮. শিম শস্য: Legumes

শিম জাতীয় শস্য বা ডাল হল আয়োডিন ও জিঙ্কে ভরপুর (৮)। প্রতিদিন নিয়ম করে ডাল, বিনস, ছোলা, মটরশুঁটি, ইত্যাদি খাওয়ার অভ্যেস করা ভালো। এতে থাইরয়েড গ্রন্থিগুলি থেকে প্রয়োজনীয় হরমোন নিঃসরণ হয়।

৯. অলিভ অয়েল: Olive oil

হাইপোথাইরয়েডিজম থাকলে, সমস্ত রান্না অলিভ ওয়েলে করা ভালো। অলিভ ওয়েলে রয়েছে প্রয়োজনীয় ফ্যাট এবং পুষ্টিকর উপাদান যা থাইরয়েড হরমোনগুলিকে সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে (৯)। অলিভ অয়েল এল ডি এল কোলেস্টরল নামিয়ে ওজন কমাতে ও হার্ট সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

১০. জল: Water

জল কোনো খাদ্য না হতে পারে, কিন্তু হাইপোথাইরোয়েডিজমের জন্যে জলের মত ওষুধ আর নেই। প্রতিদিন নিয়ম করে ৩ থেকে ৪ লিটার জল পান করার অভ্যেস করুন, কারণ শরীরের নানা রকমের বিষাক্ত পদার্থ অনায়াসে দূর করা যায় জলের মাধ্যমে। এছাড়া থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে যেসব অঙ্গগুলি সাহায্য করে সেগুলি জলের সাহায্যে কার্যকরী করা যায়।

হাইপো থাইরয়েডে কি খাওয়া উচিত নয় – Foods to Avoid in Hypothyroidism in Bengali

Foods to Avoid in Hypothyroidism
Image: Shutterstock

নিচের এই খাদ্যগুলি হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। বিস্তারিতভাবে জেনে নিন:

১. কাঁচা অথবা অর্ধেক রান্না করা শাক সবজি, বাঁধাকপি, ব্রকোলি, পালং শাক, ইত্যাদি।

২. গ্লুটেন যুক্ত খাদ্য।

৩. অতিরিক্ত চিনি যুক্ত খাদ্য।

৪. প্যাকেটজাত খাদ্য বা জাঙ্ক ফুড অথবা তেলে ভাজা খাদ্য যেমন আলুর চিপ্স, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, ওয়েফার, ইত্যাদি। এগুলির মধ্যে থাকে উচ্চ সোডিয়াম কিন্তু কোনো আয়োডিন নেই। এছাড়া এতে কোলেস্টরল বেড়ে যায়।

৯. হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে গ্রিন টি পান করা একেবারেই নিষিদ্ধ কারণ এতে রয়েছে এন্টি থাইরয়েড উপাদান (১০)

হাইপার থাইরয়েড এর আহার চার্ট – Hyperthyroidism Diet Chart in Bengali

কখনও কখনও থাইরয়েড গ্রন্থিগুলি একেবারে উল্টোভাবে কাজ করে, অর্থাৎ অতিরিক্ত পরিমানে থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ করে যাকে বলা হয় হাইপারথাইরয়েড। নিচে আপনার জন্যে রইলো হাইপার থাইরয়েডের আহার চার্ট:

কখন খাবেনকি কি খাবেন?ক্যালোরি
ভোরবেলায় (৭:০০ – ৭:৩০)২ গ্লাস  জল
জলখাবার  (৮:১৫ – ৮:৪৫)টমেটো +আপেল +আঙুরের তৈরী স্মুদি এবং দুটি সেদ্ধ ডিম৩০৭
মাঝ সকালে (১০:৩০)১টি মিডিয়াম সাইজের কাপ ভর্তি কচি গাজর লেবুর রস ও নুনের সাথে মাখিয়ে৭০
দুপুরে  (১২:৩০- ১:০০)টুনা/ মুরগির মাংস/ পালং শাকের সাথে মেশানো মাশরুম স্যালাড, টমেটো এবং মুলো৩৭০
বিকেলে (৪:০০)১ কাপ গ্রিন টি + ৩২ টি পিস্তা বাদাম৫৭০
রাতে  (৭:০০ – ৭:৩০) বিনস দিয়ে তৈরী স্যালাড, সবজি দিয়ে তৈরী মাছের ঝোল২৬৭

হাইপার থাইরয়েডে কি খাওয়া উচিত – Food for Hypothyroidism in Bengali

হাইপার থাইরয়ডিজমের ক্ষেত্রে যেই যেই লক্ষণগুলি সবথেকে বেশি করে ফুটে ওঠে সেগুলি হল ওজন অত্যাধিক কমে যাওয়া, উত্তেজনা হওয়া, মহিলাদের ক্ষেত্রে মাসিকের অনিয়ম, চোখ ফুলে যাওয়া, খিদে বেড়ে যাওয়া, ঘুমের অভাব ও ত্বকে সারাক্ষণ ঘাম ঘাম ভাব। এক্ষেত্রে যেসব খাদ্যগুলি সব থেকে বেশি করে খাওয়া উচিত সেগুলি হল:

১. কাঁচা সবজি ও ফল: Raw fruits and veggies

কাঁচা ও পাতা সমৃদ্ধ সবুজ শাক ও সবজি খেলে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসরণ হওয়াকে আটকানো যায়।  এর জন্যে যেসব সবজিখাওয়া উচিত সেগুলি হল ব্রকোলি, পালং শাক, বাঁধাকপি, গাজর, ফুলকপি, লেটুস, ইত্যাদি। ফলের মধ্যে খাওয়া উচিত কমলা লেবু, আপেল, টমেটো, আঙ্গুর, কিউই, জাম, ইত্যাদি।

২. ব্রাউন রাইস: Brown rice

ব্রাউন রাইস হল উচ্চ গোইট্রোজেনিক সমৃদ্ধ, যাতে রয়েছে ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল। প্রতিদিন ১/২ থেকে ১ কাপ ব্রাউন রাইস খাওয়ার অভ্যেস করা ভালো।

৩. প্রোটিন: Lean protein

প্রোটিন যেমন মুরগির মাংস, মাছ, মাশরুম, সয়াবিন ও ডাল খাওয়া হাইপোথাইরয়েডের ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। এসব প্রোটিন অনেকটা দেরিতে হজম হওয়ার ফলে পেট অনেকক্ষণ ভর্তি থাকে।

৪. গ্রিন টি: Green tea

Green tea2
Image: Shutterstock

হাইপার থাইরয়েড যখন নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয় তখন গ্রিন টি হল একটি অনবদ্য ঔষধীয় পানীয় যার মধ্যে রয়েছে এন্টি থাইরয়েড উপাদান ও ফ্লুরাইড। প্রতিদিন অন্তত ২ কাপ করে গ্রিন টি পান করার অভ্যেস করুন।

৫. ঔষধিক গাছ: Herbs

কিছু কিছু ঔষধীয় গুণ সমৃদ্ধ পাতা যেমন ধনে পাতা, অরিগ্যানো, তুলসী পাতা, পুদিনা, ইত্যাদি হাইপোথাইরয়েডিজম নিয়ন্ত্রণ করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই এগুলি রোজ খেলে উপকার পাওয়া যায়।

হাইপার থাইরয়েডে কি খাওয়া উচিত নয় – Foods to Avoid in Hyperthyroidism in Bengali

Foods to Avoid in Hyperthyroidism
Image: Shutterstock

হাইপোথাইরোয়েডে ভুগলে যেই সমস্ত খাদ্যগুলি একেবারেই খাওয়া উচিত নয় সেগুলি হল:

১. অতিরিক্ত আয়োডিন, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম সমৃদ্ধ খাদ্য যেমন সামুদ্রিক মাছ, ডিম, নুন, ব্রাজিল বাদাম, ইত্যাদি।

২. কৃত্রিম ভাবে তৈরী মিষ্টি জাতীয় সুইটনার।

৩. দুধ এবং দুগ্ধ পদার্থ যেমন দই, মাখন, পনির, চিজ, ইত্যাদি।

৪. মদ্যপান ত্যাগ করুন এবং যেকোনো বোতলবন্দি পানীয় পর্যন্ত খাওয়া নিষেধ।

৫. প্যাকেটজাত খাদ্য বা জনক ফুড এবং কৃত্রিমভাবে সুগন্ধযুক্ত বা রঙিন খাদ্য।

থাইরয়েড রোগের জন্য আরো কিছু টিপস – Other Tips for Thyroid Diet in Bengali

যদিও থাইরয়েডের ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকা একটি বিশাল ভূমিকা নিয়ে থাকে, তবুও খাদ্যের বাইরেও এমন কিছু নিয়মিত অভ্যেস ও জীবনশৈলী মেনে চলতে হবে যা হাইপোথাইরোয়েডিজম এবং হাইপারথাইরোয়েডিজম দুটির ক্ষেত্রেই খুব জরুরি। জেনে নেওয়া যাক কি কি করা উচিত ও কি কি করা উচিত নয়:

কি কি করা উচিত:

  • বেশি করে জল পান করুন

জল থাইরয়েডের ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় একটি ওষধির কাজ করে। জলের সাহায্যে নানারকমের বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এছাড়া জল মেদ ঝরাতে ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করতেও সাহায্য করে।

  • ডায়েটের দিকে খেয়াল রাখুন

একজন থাইরয়েডে আক্রান্ত মানুষের ১০০০ ক্যালোরির বেশি খাদ্য খাওয়া একেবারেই উচিত না। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে সঠিক খাদ্য তালিকা অর্থাৎ ডায়েট চার্ট বেছে নিয়ে নিয়মিত খাওয়া দাওয়া করুন।

  • যোগ ব্যয়াম করুন

থাইরয়েডের ফলে নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হয়, যার মধ্যে ওজন বৃদ্ধি খুব সাধারণ। নিয়মিত যোগা অথবা ব্যয়াম করা খুবই জরুরি। এতে শরীর সম্পূর্ণভাবে সচল থাকে ও মেজাজ ভাল থাকে।

  • ভালো করে ঘুমান

দিনে কম করে ৮ ঘন্টা ঘুম খুবই জরুরি। না ঘুমোনোর ফলে শরীরে আরো বেশি ক্লান্তি আসে ও সারাদিন অলস লাগে।

  • চিন্তা মুক্ত থাকুন

অতিরিক্ত বিষন্নতা বা মানসিক চাপ থেকেও শরীরে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে যার ফলে থাইরয়েড ধরা পড়ে। তাই সব সময় হাসি খুশি ও প্রানোজ্জল থাকার চেষ্টা করা দরকার।

কি কি করা উচিত নয়:

  • তৈলাক্ত খাদ্য থেকে দূরে থাকুন

বেশি ভাজা খাবার বা তৈলাক্ত খাবার খেলে থাইরয়েডের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই কম তেলে রান্না করা উচিৎ, অলিভ অয়েল ব্যবহার করা আরও ভালো।

  • বাইরের খাবার থেকে দূরে থাকুন

ফাস্ট ফুড থাইরয়েডের জন্যে অতিরিক্ত বিষাক্ত কারণ এতে থাইরয়েড উৎপন্ন করা হরমোনগুলি খুব খারাপভাবে বেড়ে যায়।

  • ধূমপান ও মদ্যপান বন্ধ করুন

ধূমপান বা মদ্যপান দুটিই হল থাইরয়েডের জন্যে ক্ষতিকারক। এই ধরণের নেশা বন্ধ না করলে থাইরয়েড শুধু হবে তা নয়, সেটি সারা জীবনেও আর কমবেনা।

  • নুন কম খান

রান্নায় যেটুকু নুনের প্রয়োজন হয় সেইটুকু ছাড়া পাতে নুন একেবারে না খাওয়া উচিত, প্রয়োজনে রান্নাতেও নুন কম ব্যবহার করতে হবে।

হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরোইয়েডিজম দুটিই হল খুব গুরুতর সমস্যা যা একেবারেই অবহেলা করা ঠিক না। তাই থাইরয়েডের সমস্যা যাতে কোনোদিনও না হয় তার জন্যে এর প্রবণতা থেকেও আজ থেকেই দূরে থাকতে হবে। সেইজন্যে আপনার উচিত আজ থেকেই নিজের খাদ্যতালিকা ও জীবনধারার দিকে নজর দেওয়া। আশা করি আমরা এই পোস্টে আপনাকে থাইরয়েড নিয়ে অনেক কিছু জানাতে পেরেছি। এ বিষয় কোনো মতামত থাকলে বা আরো কিছু জানা  থাকলে আমাদের অবশ্যই জানান কমেন্টের মাধ্যমে।

Was this article helpful?
thumbsupthumbsdown
Latest Articles